SEBA / SMEBA CLASS 10 HIST CH 1 SOLUTION : PARTITION OF BENGAL-SWADESHI MOVEMENT ইতিহাস প্রথম খণ্ড : বংগ বিভাজন (১৯০৫-১৯১১) স্বদেশী আন্দোলন ও ফলাফল। অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর



SEBA / SMEBA CLASS 10 HISTORY CH 1 SOLUTION : PARTITION OF BENGAL-SWADESHI MOVEMENT 

ইতিহাস 
প্রথম খণ্ড : বংগ বিভাজন (১৯০৫-১৯১১) স্বদেশী আন্দোলন ফলাফল।

অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
Q.1. বঙ্গ বিভাজন কোন ভাইসরয়ের শাসনকালে সংঘটিত হয়েছিল?
ANS: লর্ড কার্জনের শাসনকালে।
Q.2. ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের কোন তারিখে বঙ্গবিভাজন কার্যকরী হয়েছিল?
ANS: ১৬ই অক্টোবর।
Q.3. বিদেশীপণ্য বর্জনের প্রস্তাব কোন সভায় গ্রহণ করা হয়েছিল?
ANS: ১৯০৫ সনের জুলাই, দিনাজপুরের মহারাজার পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
Q.4. স্বদেশী আন্দোলনের সময়যুগান্তরনামক সংবাদপত্রখানা কে সম্পাদন করেছিলেন ?
ANS: ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত।
Q.5. বঙ্গদেশেজাতীয় শিক্ষা পরিষদনামক প্রতিষ্ঠানটি কখন গঠন করা হয়েছিল ?
ANS: ১৯০৬ সনের ১১ই মার্চ।
Q.6.বেঙ্গল কেমিকেলস্নামক উদ্যোগ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান উদ্যোক্তা কে ছিলেন ?
ANS: আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়।
Q.7. কার পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে স্বরাজপ্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল ?
ANS: দাদাভাই নওরোজীর পৌরোহিত্যে।
Q.8. বন্দিনী ভারতনামক নাটকখানার রচয়িতা কে ?
ANS: অম্বিকাগিরি রায়চৌধুরী।
Q.9. বঙ্গ বিভাজনকে কেন্দ্র করে জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যে কখন বিভাজন ঘটেছিল ?
ANS: ১৯০৭ সনে।
Q.10. বঙ্গদেশের একত্রিকরণ কখন হয়েছিল ?
ANS: ১৯১১ সনে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
Q.1. বঙ্গ বিভাজন সৃষ্টি করাপূর্ববঙ্গ আসামনামক প্রদেশটির সঙ্গে সংলগ্ন হওয়া বঙ্গদেশের প্রধান তিনটি ভৌগোলিক সংমণ্ডল উল্লেখ কর
ANS: ঢাকা, চট্টগ্রাম রাজশাহী এই তিনটি সংমণ্ডল।
Q.2. বঙ্গ বিভাজনের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য কি ছিল সংক্ষেপে লেখ।
ANS: বঙ্গবিভাজনের পরিকল্পনা ছিল দক্ষ ছলনাকারী প্রশাসক লর্ড কার্জনের গভীর ষড়যন্ত্র দুরভিসন্ধির ফল। ভারতের জাতীয়তাবাদের প্রধান কেন্দ্র ছিল বাংলাব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বাংলাতেই প্রথম ধ্বনিত হয় ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের ওপর ছিল বাঙ্গালীদের সার্বিক প্রাধান্য বাংলার ঐক্য জাতীয় চেতনার স্ফুরণ ইংরেজদের কাছে বিপদসংকেত বলে মনে হল লর্ড কার্জন বাংলাকে ভাগ করে একই সাথে বাংলার জাতীয়তাবোধ জাতীয় কংগ্রেসের ভিত্তিকে ভেঙ্গে ফেলার পরিকল্পনা করেন
Q.3. বঙ্গ বিভাজন বিরোধী আন্দোলনস্বদেশী আন্দোলননাম হয়েছিল কেন সংক্ষেপে লেখ।
ANS: ১৯০৫ সনের ১৯ জুলাই বঙ্গ বিভাজনের পরিকল্পনাটি সরকারিভাবে প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ববঙ্গ, উত্তর- বঙ্গ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদী সভার মাধ্যমে প্রবল গণসংগ্রামের জোয়ার ঘটেছিল। জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ এই সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েছিল। বঙ্গচ্ছেদের পরিণতি হিসাবে সঙ্গবদ্ধভাবে বিদেশী সামগ্রী বর্জন এবং স্বদেশী সামগ্রী গ্রহণের সিদ্ধান্ত অনুরোদিত হওয়ার পর এই আন্দোলনস্বদেশী আন্দোলন নামে পরিচিতি লাভ করে
Q.4. স্বদেশী আন্দোলনে জাতীয় শিক্ষার ভূমিকা বিষয়ে আলোচনা কর।
ANS: স্বদেশী আন্দোলন কেবল বিদেশী পণ্য বর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। বঙ্গদেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার উপর এর প্রভাব পড়েছিল। ছাত্রসমাজের মধ্যে দেখা দেওয়া আন্দোলনের প্রবণতার প্রতি লক্ষ্য রেখে বঙ্গপ্রদেশ সরকারের মুখ্য সচিব আর. ডব্লিউ. কার্লাইল এক আদেশে বলে ছাত্রদের আন্দোলনে অংশগ্রহণ না করতে হুশিয়ারী দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে সমগ্র বঙ্গদেশে প্রতিবাদের জোয়ার উঠেছিল।কার্লাইলের আদেশের প্রতিবাদে ছাত্রগণ ক্লাস বর্জন করে। বিপিনচন্দ্র পাল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আব্দুল রসুল প্রমুখ নেতা ছাত্রসমাজকে সরকারী শিক্ষানুষ্ঠান ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ১৯০৫ সনের ৫ই আগস্ট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতায় এক জনসভায় জাতীয় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা দিয়েছিলেন। পরের দিন অর্থাৎ ৬ই আগস্ট বিশাল জনতার উপস্থিতিতে তিনিবঙ্গ জাতীয় বিদ্যালয়নামক জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। ৮ই নভেম্বর রংপুরে দ্বিতীয় জাতীয় বিদ্যালয় স্থাপন হয়। রাসবিহারী বসুর নেতৃত্বে কলকাতার টাউন হলে ১৯০৬ সনের ১১ই মার্চ অনুষ্ঠিত সভায়জাতীয় শিক্ষা পরিষদগঠিত হয়
Q.5. স্বদেশী আন্দোলনের কালে বঙ্গদেশে জাতীয় শিল্পের বিকাশ কিভাবে হয়েছিল ?
ANS: স্বদেশী আন্দোলনের পটভূমিতে আত্মশক্তি বিকাশের মানসিকতাই বঙ্গদেশের জাতীয় শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় স্বদেশী পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন কুটির শিল্প এবং কতিপয় বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। সূতা কাটার কল, ক্ষুদ্র মাঝারি তাঁতশাল, সরিষার তেল, সাবান, চিনি, দেশলাই, বিস্কুট প্রভৃতির কারখানা গড়ে উঠেছিল। এর সঙ্গে জাতীয় ব্যাঙ্ক স্বদেশী বীমা কোম্পানীও গড়ে উঠেছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত ১৮৯৭ সনের স্বদেশী ভাণ্ডার একটি বৃহৎ বস্ত্র প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কৃষ্ণবিহারী সেনের প্রচেষ্টায় কলকাতার বউবাজারেইণ্ডিয়ান স্টোর্সনামক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। ঠাকুর পরিবারের কন্যা সরলাদেবী কর্নওয়ালিশ স্ট্রীটে (বর্তমান বিধান সরণী) ১৯০৩ সনেলক্ষ্মী ভাণ্ডারপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, নীলরতন সরকার প্রমুখ অসাধারণ ব্যক্তি বঙ্গদেশে বৃহৎ শিল্প গড়ে তোলার কথা চিন্তা করেছিলেন। নীলরতন সরকারবঙ্গলক্ষ্মী কটন মিলএবং আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়বেঙ্গল কেমিকেলস্নামক উদ্যোগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 
Q.6. স্বদেশী আন্দোলন দমন করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার কি কি আন্দোলন বিরোধী কার্যসূচী গ্রহণ করেছিল? 
ANS: ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের নরমপন্থী নেতাগণের সহযোগিতা আশা করেছিল। লর্ড কার্জন এই নেতৃবৃন্দকে হাতের মুঠিতে রাখার উদ্দেশ্যে তাদের নানাপ্রকার উপাধি, পদক পদ প্রদান করেছিলেন। উদারপন্থী কংগ্রেস সদস্যগণকে উচ্চন্যায়ালয়ে বিচারপতির পদ, ব্রিটিশ সংসদের সদস্য পদ, ভাইসরয় পদপর্যায়ের লোভনীয় সদস্য পদের প্রস্তাব দিয়ে বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনায় তাদের সমর্থন আশা করেছিল তথাপি কার্জন বঙ্গভঙ্গ - বিরোধী আন্দোলন দুর্বল করতে পারেনি ব্রিটিশ কঠোর আইন প্রণয়ণ করে জনমত প্রকাশে বাধা আরোপ করেছিল ১৯০৭ সনের ৩রা জুন ব্রিটিশ সরকার দেশীয় সংবাদপত্রের উপর সতর্কীকরণ জারি করেছিল।বন্দেমাতরম্‌” সঙ্গীতটি ১৯০৭ সনের ১৫ই আগস্ট নিষিদ্ধ করা হয়। বিভেদকামী নীতির প্রশ্রয় দিয়ে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শোষণ অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা করেছিল। হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে মুসলমানদের হতে বঙ্গ বিভাজনের তারা সহযোগিতা আদায় করতে চেষ্টা করেছিল। ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ বিরোধী গণ আন্দোলনকে খর্ব করার উদ্দেশ্যে পুলিশ সৈন্যবাহিনীর সাহায্যে হিংসা সন্ত্রাস চালিয়েছিল। ১৯০৮ সনের ১১ই ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের শীর্ষ নেতা কৃষকুমার দত্ত, মনোরঞ্জন গুহঠাকুরতা, সুবোধচন্দ্র মল্লিক, শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী, শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু, সতীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ভূপেন্দ্রনাথ নাগ, পুলিনবিহারী দাস, অশ্বিনীকুমার দত্তকে নির্বাসন দিয়েছিল
Q.7 স্বদেশী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ভারতীয় কংগ্রেসে কি কি পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছিল সংক্ষেপে লেখ
ANS: বঙ্গ বিভাজনে সৃষ্টি করা স্বদেশী আন্দোলনের প্রভাব ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের উপর পড়েছিল। উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে গোপালকৃষ্ণ গোখলের সভাপতিত্বে জাতীয় কংগ্রেসের একবিংশতিতম অধিবেশন বারাণসীতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। উক্ত অধিবেশনে তিনটি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছিল
() বঙ্গবিচ্ছেদ বন্ধ করা,
() বিদেশীপণ্য বর্জন করা,
() ইংল্যান্ডের যুবরাজ সপ্তম এডউয়ার্ডের ভারত ভ্রমণের সময় আয়োজিত সকল কার্যসূচী ভারতীয়গণের বর্জন করা।
প্রথম দুটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু তৃতীয় প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডার সূত্রপাত হয়েছিল। এই বিতর্ককে কেন্দ্র করে কংগ্রেসের মধ্যেচরমপন্থীনরমপন্থী গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়। ১৯০৬ সনের ২১ শে নভেম্বর কলকাতায় কংগ্রেসের দ্বা-বিংশতিতম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। বিপিনচন্দ্র পাল সভাপতি পদের জন্য বালগঙ্গধর তিলকের নাম প্রস্তাব করলে কংগ্রেসের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। পরে অবশ্য দুটি গোষ্ঠীর সমর্থনে দাদাভাই নৌরজী সভাপতি নির্বাচিত হন
১৯০৭ সনে সুরাটে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের ত্ৰয়োবিংশতিতম অধিবেশনে স্বরাজ সম্পর্কে গ্রহণ করা কংগ্রেসের স্থিতি সভাপতির ভাষণে উল্লেখ করবার জন্য তিলকের পূর্বের পরামর্শসমূহ নরমপন্থীগণ মেনে নেয় নি। ফলে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে চরম মতবিরোধ দেখা দেয়। এর ফলে জাতীয় কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে নরমপন্থী চরমপন্থী এই দুই গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে যায়
Q.8. স্বদেশী আন্দোলনের প্রভাব আসামের উপর কিভাবে পড়েছিল লেখ
ANS: স্বদেশী আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া আসামের উপরও বিস্তারিত হয়েছিল। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার ধুবড়ী, গৌরীপুর, গোয়ালপাড়া, গুয়াহাটি, তেজপুর, ডিব্ৰুগড় প্রভৃতি নগর অঞ্চলে এই আন্দোলনের প্রভাব পড়েছিল। অসম- কেশরী অম্বিকাগিরি রায়চৌধুরী গোবিন্দ লাহিড়ি গুয়াহাটির ছাত্রগণের মধ্যে বিদ্রোহী সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। তারা আসামের জেলাসমূহে স্বদেশী দ্রব্য ব্যবহারের জন্য প্রচার চালিয়েছিলেন। অম্বিকাগিরিবন্দিনী ভারত” নামে একখানি বিদ্রোহাত্মক নাটক রচনা করেছিলেন। পরে ব্রিটিশ সরকার এই নাটকখানি বাজেয়াপ্ত করে। ক্ষুদিরাম বসু, বরীন্দ্র ঘোষ, উল্লাসকর দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ করে অম্বিকাগিরিসেবা সংঘনামক একটি বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। ১৯০৬ সনের ৭ই সেপ্টেম্বর, বামফিল্ড ফুলারকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুয়াহাটি-শিলং রোডে একটি বোমা পোতা হয়। সন্দেহজনকভাবে পুলিশ ১৯১৪ সনে অম্বিকাগিরিকে গৃহবন্দী করে রাখে। ব্রিটিশ সরকার ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাকে স্বদেশী আন্দোলনের প্রভাব হতে মুক্ত রাখার চেষ্টা করেছিল। এই উদ্দেশ্যে সরকার কতিপয় জনহিতকর কার্য গ্রহণ করেছিল
Q.9. স্বদেশী আন্দোলনের তিনটি ফলাফল উল্লেখ করো
ANS: স্বদেশী আন্দোলনকে একটি সফল সক্রিয় আন্দোলন হিসাবে গণ্য করা হয় স্বদেশী আন্দোলন সাহিত্য, সমাজ, শিক্ষা, অর্থনীতি প্রভৃতি সকল দিকে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছিল
() জাতীয় সাহিত্য : স্বদেশানুভূতির জোয়ারে সাহিত্য সৃষ্টিতে বিশেষ প্রেরণা জুগিয়েছিল। স্বদেশী-আন্দোলনের পটভূমিতে বিভিন্ন সংবাদপত্র, গ্রন্থ, গান, নাটক, প্রবন্ধ প্রভৃতি প্রকাশিত হয়েছিল। ফলে জাতীয় সাহিত সমৃদ্ধি উৎকর্ষতা লাভ করে
() জাতীয় শিক্ষা : স্বদেশী আন্দোলন কেবল বিদেশী পণ্য বর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। বঙ্গদেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার উপরও এর প্রভাব পড়েছিল। ছাত্রসমাজের মধ্যে দেখা দেওয়া আন্দোলনের একতার প্রতি লক্ষ্য রেখে বঙ্গদেশের সরকারের মুখ্য সচিব আর. ডব্লিউ. কার্লাইল এক আদেশজারির মাধ্যমে ছাত্রগণকে আন্দোলনে যোগদান না করার নির্দেশ দেন। বিপিনচন পাল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আব্দুল রসুল প্রমুখ ছাত্রসমাজকে সরকারী শিক্ষানুষ্ঠান ত্যাগ করার আহ্বান জানান। বিভিন্ন মনীষি বিভিন্ন স্থানে স্বদেশী স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন ফলে জাতীয় শিক্ষার প্রসার ঘটে। () স্বদেশী শিল্পোদ্যোগ : স্বদেশী আন্দোলনের পটভূমিতে আত্মশক্তির বিকাশের মানসিকতা বঙ্গদেশে জাতীয় শিল্পকারখানা গড়ে তোলার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। স্বদেশী পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন কুটির শিল্প কতিপয় বৃহৎশিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। সূতাকাটার কল, ক্ষুদ্র মাঝারি তাঁত শিল্প, সরিষার তেল, সাবান, চিনি, দেশলাই, বিস্কুট প্রভৃতির কারখানা গড়ে উঠেছিল
Q.10. স্বদেশী আন্দোলনের তিনটি দুর্বল দিক বিচার করো।
ANS: স্বদেশী আন্দোলন গণচেতনা জাগরিত করলেও এর কতিপয় দুর্বল দিক পরিলক্ষিত হয়-
() স্বদেশী আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল সাম্রাজ্যবাদী শোষণ নীতির বিরুদ্ধে জনগণকে সজাগ করে তোলা। জনগণকে স্বদেশী আদর্শে স্বাবলম্বী হতে ও পরামর্শ দেওয়া হয়। অথচ স্বাবলম্বিতার বুনিয়াদ গড়ে তোলা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ গ্রহণ করেন নি। জনগণকে বিদেশী পণ্য পরিহার করে দ্বিগুণ মূল্যে স্বদেশী পণ্য ক্রয় করতে হয়। ফলে সমাজে দুর্বল দরিদ্র শ্রেণি আর্থিক দুর্দশায় ভুগছিল
() একদিকে সরকারী স্কুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিহার করতে সকল ছাত্রকে আহ্বান জানানো হয়। ছাত্র অভিভাবক এই আবেদনে সাড়া দেয়। কিন্তু সরকারী শিক্ষানুষ্ঠান ত্যাগ করা হাজার হাজার ছাত্র স্বদেশী স্কুলের অভাবে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা হতে বঞ্চিত হয়েছিল।
() স্বদেশী আন্দোলন হিন্দু-মুলমানদের মধ্যে একতা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়। এককথায় স্বদেশী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ব্রিটিশের কুটিল সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ নীতির উপর পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হয়েছিল। ১৯০৯ সনের মর্লেমিন্টো শাসন সংস্কার আইনে সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ একটি সরকারি নীতি হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল
Q.11. স্বদেশী আন্দোলনের তিনটি অবদান উল্লেখ করো।
ANS: স্বদেশী আন্দোলন ভারতবর্ষের রাজনৈতিক সামাজিক ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর প্রধান অবদানসমূহ নিম্নরূপ -
() স্বদেশী আন্দোলন ভারতবাসীকে গণ আন্দোলন সম্পর্কে একটি রাজনৈতিক শিক্ষা দিতে সক্ষম হয়েছিল। দেশের অধিকাংশ মানুষ আন্দোলনে সমবেত হলে যে গণ আন্দোলন জয়যুক্ত হওয়া সুনিশ্চিত, সেকথা ভারতবাসী স্বদেশী আন্দোলনের মাধ্যমে আয়ত্ত করতে পেরেছিল
() ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস সূচনালগ্নে আবেদন নিবেদনের মাধ্যমে সহনশীল চিন্তায় বিশ্বাস রেখে ব্রিটিশ সরকারের উপর ভারতীয়দের উন্নতি আশা করেছিল। কিন্তু বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে জাতীয় কংগ্রেসের চিন্তা-কর্মে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল।
() স্বদেশী আন্দোলনের মাধ্যমেই ভারতবাসী ব্রিটিশ সরকারের নিকট স্বরাজ দাবি করার সুযোগ লাভ করেছিল
স্বদেশী আন্দোলনের তীব্র উত্তেজনা জাতীয় কংগ্রেসকে দাদাভাই নৌরোজীর পৌরোহিত্যে ১৯০৬ সালে অনুষ্ঠিত কলকাতার অধিবেশনে সর্বপ্রথম ভারতবাসীর জন্য স্বরাজ দাবি করার প্রস্তাব গ্রহণ করতে বাধ্য করেছিল
সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ
() কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর :
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫শে বৈশাখ (১৮৬১ সনের ৭ই মে) কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল হতে রবীন্দ্রনাথ কবিতা লিখতে আরম্ভ করেন। সমস্ত জীবন ধরে তিনি কবিতা, গান, গল্প, প্রবন্ধ, নাটক, উপন্যাস প্রভৃতি রচনা করেন। ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ তাঁর কাব্যগ্রন্থ গীতাঞ্জলির জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। কিছুদিনের জন্য রবীন্দ্রনাথ রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গভঙ্গ অর্থাৎ স্বদেশী আন্দোলনে তিনি ঝাপিয়ে পড়েন। তার রচিত গানবাঙ্গালির প্রাণ বাঙ্গালির মন, এক হউক হে ভগবান...........” হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে ঐক্যবন্ধন করে। ১৯১৯ সনে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ব্রিটিশ প্রদত্তনাইটউপাধি ত্যাগ করেন। বাংলা ১৩৪৮ সনের ২২ শে শ্রাবণ (ইং ১৯৪১ সনের ৭ই আগস্ট) রাখীপূর্ণিমার দিন ৮০ বৎসর বয়সে বিশ্বকবির মহাপ্রয়াণ হয়। |
() মার্গারেট এলিজাবেথ নোবল (ভগিনী নিবেদিতা) :
ঊনবিংশ শতকে ভারতবর্ষের নবজাগরণের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুরুষ ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ।ভারতে মার্গারেট এলিজাবেথ বা ভগিনী নিবেদিতা তারই শ্রেষ্ঠ উপহার উত্তর আয়ারল্যান্ডের টাইরন প্রদেশের ডানগ্যানন নামক একটি ছোট শহরে ১৮৫৭ সনের ২৮ শে অক্টোবর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৯৮ সনের ২৮ শে জানুয়ারি তিনি ভারতে পদার্পণ করেন। কলকাতায় অবস্থান করে তিনি নারী, যুবক-যুবতীগণের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টিতে অনুপ্রেরণা জোগান। কলকাতায় অবস্থানকালে তিনি ইয়ংমেনস্ হিন্দু ইউনিয়ন, বিবেকানন্দ সোসাইটি, ডন সোসাইটি এবং অনুশীলন সমিতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হয়ে নারী যুবক-যুবতীগণকে দেশীয় শিল্পের মাধ্যমে স্বনির্ভরশীল হতে আবেদন জানিয়েছিলেন। ১৯০৫ সনের ১১ই ফেব্রুয়ারী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে ভাইসরয় লর্ড কার্জনের প্রাচ্যবাসীর প্রতি কটুক্তি নিবেদিতাকে আঘাত দিয়েছিল। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর উদ্দেশ্যে নিবেদিতা রাসবিহারী বসুর পৌরারোহিত্যে কলকাতার টাউন হলে ১৯০৫ সনে ১১ই মার্চ এক প্রতিবাদী সভা অনুষ্ঠিত করেন। মাত্র ৪৪ বছর বয়সে ১৯১১ সনের ১৩ অক্টোবর নিবেদিতা দেহত্যাগ করেন
() নবাব সলিমুল্লা :
নবাব সলিমুল্লা ঢাকার নবাব ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে ১৯০৬ সনের ৩০ শে ডিসেম্বর ঢাকায় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়।সর্বভারতীয় মুসলিম লীগনামক রাজনৈতিক দল স্থাপনের নেতৃত্ব বহন করা ব্যক্তি সলিমুল্লা সেদিন নবগঠিত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ঘোষণা করেছিলেন। তা হল :
() ব্রিটিশ সরকারের প্রতি মুসলমান সম্প্রদায়ের আনুগত্যের প্রসার ঘটবে।
() ব্রিটিশ সরকারকে মুসলমানদের রাজনৈতিক অধিকার স্বার্থের প্রতি সদা-সচেতন করে রাখা। () মুসলমানদের মনের ভয়ভীতি দূর করা
()শ্বহীদ ক্ষুদিরাম :
শ্বহীদ ক্ষুদিরাম বসু বাংলা তথা সমগ্র ভারতের মহান বিপ্লবী। তিনি ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লব  ঘোষণা করেন। শান্তিপ্রিয় পন্থায় তিনি বিশ্বাসী ছিলেন না। ১৯০৭ সনের ৬ই ডিসেম্বর বাংলার গভর্নর এন্ডু ফ্রেজারকে হত্যার উদ্দেশ্যে মেদিনীপুরে রেলগাড়ি লাইনচ্যুত করেছিলেন। ১৯০৮ সনের ৩০ এপ্রিল ক্ষুদিরাম বসু প্রফুল্ল চাকী মজফরপুর জেলা দণ্ডাধীশ কিংসফোর্ডের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশ্যে ভুলবশত ইংরেজ অধিবক্ত প্রিংগল কেনেডির পরিবার মিসেস্ কেনেডি তাঁর কন্যাকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন। ক্ষুদিরামকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ১৯০৮ সনের ১৩ই জুন আদালতে ক্ষুদিরামকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির হুকুম জারি করেছিল। ১৯০৮ সনের ১১ই আগস্ট তার ফাঁসি কার্যকর হয়।
(5) লাল-বাল-পাল :
লালা লাজপত রায়, বাল গঙ্গাধর তিলক বিপিনচন্দ্র পাল এই তিন নেতা লাল-বাল-পাল নামে খ্যাত। তিনজনই কংগ্রেসের চরমপন্থী নেতা ছিলেন। তারা সন্ত্রাসবাদী মত পোষণ করতেন। তাদের মতে আবেদন নিবেদন নহে সন্ত্রাসবাদী পথেই ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা অপরিহার্য চরমপন্থী নেতাদের কার্যকলাপে কংগ্রেসের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়, ফলে ১৯০৭ সনে কংগ্রেস বিভাজিত হয়
() অম্বিকাগিরি রায়চৌধুরী :
অম্বিকাগিরি রায়চৌধুরী ১৮৮৫ সনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আসামের বিখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী। তিনিআসামকেশরীনামে পরিচিত। তিনি আসামে স্বদেশী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ। করেন। তিনি আসামবাসীর মধ্যে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রচার চালিয়েছিলেন। অম্বিকাগিরিবন্দিনী ভারতনামক একখানা বিদ্রোহাত্মক নাটক রচনা করেছিলেন। ১৯০৬ সনের ৩১ শে জুলাই কটন কলেজিয়েট হাইস্কুলে নাটকখানা অভিনয় চলাকালে পুলিশ মঞ্চ হতে নাটকের পাণ্ডুলিপি বাজেয়াপ্ত করেছিল। অম্বিকাগিরি, ক্ষুদিরাম বসু, বারীন ঘোষ উল্লাসকর দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ করেসেবা সমিতিনামে একটি বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। ১৯০৬ সনের ৭ই সেপ্টেম্বর বামফিল্ড ফুলারকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুয়াহাটি শিলং পথে তিনি একটি বোমা পুতেছিলেন। পুলিশ ব্যাপারে তাকে জেরা করে এবং ১৯১৪ সন পর্যন্ত তাঁকে বরপেটায় অন্তরীণ বন্দীরূপে রাখে। ১৯৬৭ সনে অম্বিকাগিরি পরলোক গমন করেন

******************

Post a Comment

0 Comments