ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 10 BENGALI RAPID READER
সেবা অসম দশম শ্রেনী বাংলা দ্রুত পঠন
বৈচিত্র্যপূর্ণ অসম
পাঠ : মিসিংগণ
মিসিংগণ
সারসংক্ষেপ:
মিসিংরা
অসমের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনজাতীয় জনগোষ্ঠী। ভারতবর্ষের সংবিধানে মিসিংদের অসমের
অনুসূচিত সমতল জনজাতি রূপে চিহ্নিত করা হয়েছে। মিসিদের পূর্ব বাসস্থান হিসেবে
অসমের উত্তরের পাহাড়কে চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্তমানে এরা জীবিকার সন্ধানে অসমের
সমতল অঞ্চলে চলে এসেছে। পণ্ডিতদের মতে আহোম রাজবংশ প্রতিষ্ঠার পূর্বেই মিসিংরা
সভ্যতার সংস্পর্শে এসে সমতল অঞ্চলে বসবাস করছে।
মিসিং জনগোষ্ঠীর
মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের বিবাহ প্রথা প্রচলিত রয়েছে। তাদের গোত্র গণনা পুরুষদের
দিক থেকে করা হয়। একই বংশের মধ্যে বিবাহের সম্বন্ধ হয় না। কৃষিকাজই মিসিংদের
প্রধান জীবিকা। এরা বছরে দুপ্রকারের ধান চাষ করে থাকে। ধান চাষ ছাড়াও এরা আদা, লংকা, কচু, আলু ও ডালের চাষ করে থাকে। মিসিং
গ্রামগুলোতে শান্তি-শৃভুলা-সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য একজন গাঁওবঢ়া থাকেন, যিনি অপরাধী ব্যক্তির বিচার করে
থাকেন। মিসিং পুরুষরা পরম্পরাগত মিরু, গালুগ, গনর, উগন, টঙালি ইত্যাদি পোশাক পরিধান করে।
আর মহিলারা রিহা-মেখলা, রিবি-গাছেং ইত্যাদির সঙ্গে
বিভিন্ন জাতের অলংকার পরিধান করে।
ধর্মীয়
দিক দিয়ে মিসিং জনগোষ্ঠীকে মহাপুরুষীয়া, শৈব, শাক্ত, তান্ত্রিক ও বিশেষভাবে কেবলিয়া
বা রাতি সেবাধর্ম পন্থা অবলম্বন করতে দেখা যায়, যদিও স্ব-ধর্ম হিসাবে ‘দঞি-পল’ ই
মিসিংদের মূল ধর্ম। মিসিংরা লোক বিশ্বাসে বেজায় বিশ্বাসী। ঘরের শুচি-অশুচি ও
উন্নতির সঙ্গে দেবতার রোষ দৃষ্টির সম্পর্কে আছে বলে লোক বিশ্বাস রয়েছে।
মিসিংদের
জাতীয় উৎসব আলি-আংয়ে লিগাঙ। এর সঙ্গে মাঘ বিহু, বহাগ বিহু এবং কাতি বিহুও তারা পালন করে।
মিসিং ভাষা লোক সাহিত্যের দিক থেকে চমকপ্রদ ভাষা। এই ভাষা চীন-তিব্বতীয় ভাষাভাষী
পরিবারের তিব্বত-বর্মী শাখার অন্তর্গত। পুরুষদের মতো মিসিং মহিলারাও কৃষিকাজ, গৃহকর্ম ইত্যাদিতে সমানভাবে অংশ
গ্রহণ করে।
মিসিং
কাব্য সাহিত্যকে উন্নতির পথে যারা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ভূগুমণি
কাগয়ুঙ এর নাম উল্লেখযোগ্য। তিনি রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্ত সাহিত্যিক। তার
রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা সর্বমোট ২৭টি। তার রচিত
কাব্য গ্রন্থের মধ্যে ‘কবিতা কলি’, ‘অনাহুত’, ‘মন বননির
জুই’ ও ‘কবিতা কুসুম’
উল্লেখযোগ্য। তার রচিত প্রবন্ধগুলির মধ্যে “আবেগিক
ঐক্য সাধনা ও শ্ৰীমন্ত শংকরদেব”, ‘আঞ্চলিক ভাষা বনাম ত্রিভাষা’, ‘মিসিং শব্দ কোষ', 'মিসিং লোজন' ইত্যাদি।
মিসিংদের
মধ্যে নিজের দেশকে পরাধীনতার গ্লানির হাত থেকে মুক্ত করার জন্য যারা জীবনকে তুচ্ছ
জ্ঞান করে শহিদের খাতায় নাম লিখিয়ে গেছেন তাদের মধ্যে কমলা মিরি অন্যতম। তিনি
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে কারাগারে বন্দী হন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।
মিসিং
কৃষ্টি সংস্কৃতির পিতৃপুরুষ হলেন ঐরাম বরি। তিনি লুপ্ত হওয়ার পথ থেকে মিসিং
সংস্কৃতির বর্ণাঢ্য ধারা সংরক্ষণ করার কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। তার চেষ্টায়
মিসিং কৃষ্টি সংস্কৃতি নূতন মাত্রা লাভ করে। মিসিং যাদব পায়েং ছিলেন একজন প্রকৃতি
প্রেমী। তিনি প্রায় চল্লিশ বছর ধরে গাছ লাগিয়ে বিশাল অরণ্য গড়ে তুলেছিলেন যা
সমস্ত বিশ্বে “মোলাই কাঠনি” নামে
পরিচিত। যার জন্য তিনি ভারত সরকারের তরফ থেকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন।
শব্দার্থ:
বুরঞ্জি -
ইতিহাস; প্রতিষ্ঠা
- স্থাপন; অনুমোদন -
স্বীকৃতি; সুষ্ঠভাবে
- ঠিকঠাকভাবে; সম্বল -
উপায়; সমাজচ্যুত
- সমাজ থেকে বহিষ্কৃত; পরম্পরাগত
- চিরাচরিত প্রথা; লোকবিশ্বাস
- সংস্কার; রোষদৃষ্টির
- কপিত দৃষ্টির; বৈষম্যহীনতা
- ভেদাভেদহীনতা; অপরিসীম - সীমাহীন; অনবদ্য - অসামান্য; বিলীন - লীন হওয়া; তৎকালীন - সেকালের।
অতি
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
Q.1
মিসিংরা অন্য কী নামে পরিচিত?
ANS:- মিসিংরা ‘মিরি' নামে পরিচিত।
Q.2 অসমের
দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ জনজাতীয় জনগোষ্ঠী কারা?
ANS:- মিসিং জনজাতি।
Q.3 ভারতবর্ষের
সংবিধানে মিসিংদের অসমে কী ধরনের জনজাতিরূপে ‘মিরি’ নামে চিহ্নিত
করা হয়েছে?
ANS:- অনুসূচীত সমতল জনজাতিরূপে।
Q.4 মিসিং
সমাজে ‘মিরি' শব্দের ব্যবহার কাদের ক্ষেত্রে করা
হয়?
ANS:- একশ্রেণীর মিকু বা পুরোহিতদের
ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
Q.5 ‘তানি' শব্দের অর্থ কী?
ANS:- ‘তানি’ শব্দের অর্থ মানুষ বা মানব।
Q.6 বুরঞ্জি
অনুসারে ‘মিরি’ শব্দের প্রচলন কখন থেকে ছিল?
ANS:- বুরঞ্জি অনুসারে শংকরদেবের আগেই
মিরি শব্দের প্রচলন ছিল।
Q.7 মিসিংদের
পূর্ব বাসস্থানরূপে কোন্ স্থানকে চিহ্নিত করা হয়েছে?
ANS:- অসমের উত্তরের পাহাড়কে।
Q.8 মিসিংরা
অরুণাচল পাহাড় থেকে কেন অসমের সমতলে নেমে এসেছিল?
ANS:- জীবিকার সন্ধানে।
Q.9 মিসিংগণের
বংশ বা গোত্র কাদের দিক থেকে করা হয়?
ANS:- পরিবারের পুরুষদের দিক থেকে।
Q.10 মিসিংদের
জীবিকার প্রধান সম্বল কী?
ANS:- কৃষিকাজই মিসিংদের জীবিকার
প্রধান সম্বল।
Q.11 মিসিংরা
বছরে কয় প্রকারের ধানের চাষ করে থাকে?
ANS:- দুপ্রকারের।
Q.12 মিসিং
গ্রামগুলোতে শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখার দায়িত্বে কে থাকেন? ANS:- একজন
গাঁওবুড়া।
Q.13 মিসিংগ্রামে
কোন ব্যক্তি অপরাধ করলে কার তত্ত্বাবধানে বিচার করা হয়?
ANS:- গাঁওবুড়ার তত্ত্বাবধানে বিচারের
ব্যবস্থা করা হয়।
Q.14 মিসিং
সমাজে ক্ষমার অযোগ্য দোষীকে কীভাবে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়?
ANS:- ক্ষমার অযোগ্য দোষীকে সমাজচ্যুত
করে শাস্তি দেওয়ার নিয়ম প্রচলিত আছে।
Q.15 মিসিং
ভাষা চীন-তিব্বতীয় ভাষার কোন্ শাখার অন্তর্গত?
ANS:- তিব্বত-বর্মী শাখার অন্তর্গত।
Q.16 ভৃগুমণির
শৈশবকাল কোথায় অতিবাহিত হয়েছিল?
ANS:- আলিমুর গ্রামে।
Q.17 ভৃগুমণির
রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা কতটি?
ANS:- ২৭টি।
Q.18 বুরঞ্জিবিদদের
মতে মিসিংরা কত শতকে সভ্যতার সংস্পর্শে এসে অসমে বাস করছে?
ANS:- ১২শ শতকের পূর্বেই।
Q.19 স্বধর্ম
হিসেবে মিসিংদের কোন ধর্ম মূলধর্ম?
ANS:- ‘দঞি-পল’ই মিসিংদের মূলধর্ম।
Q.20 মিসিংরা
কাকে আপদ বিপদে রক্ষা কবচ হিসেবে বিশ্বাস করে?
ANS:- মোরগকে।
Q.21 মিসিংদের
কোন্ পূজা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ?
ANS:- দবুর পূজা।
Q.22 মিসিংদের
জাতীয় উৎসবের নাম কী?
ANS:- আলি-আঃয়ে লৃগাঙ/লিগাং ।
Q.23 কীসের
মাধ্যমে মিসিংদের ঐতিহ্য ও শান্তিপ্রিয়তার পরিচয় পাওয়া যায়?
ANS:- গুমরাগর নৃত্যগীতের মাধ্যমে।
সংক্ষিপ্ত
প্রশ্নোত্তর
Q.1 ‘মিরি' শব্দের ব্যবহার কারা করেন না?
ANS:- মিসিংরা মিরি শব্দের ব্যবহার
করেন না। এই শব্দের ব্যবহার পুরোহিতের ক্ষেত্রে করা হয়।
Q.2 মিসিংদের
পূর্ব বাসস্থান কোথায় ছিল? বর্তমানে এরা
কোথায় বাস করছে?
ANS:- মিসিংদের পুর্ব বাসস্থান ছিল
অসমের উত্তরের পাহাড়ে। বর্তমানে এরা অসমের সমতলে বসবাস করছে।
Q.3 মিসিংদের
গোত্র গণনা কাদের দিক থেকে করা হয়? কুল
বিচারে কীসের ভাব থাকে না?
ANS:- মিসিংদের গোত্র গণনা পরিবারের
পুরুষদের দিক থেকে করা হয়। কুল বিচারে উচ্চনীচের ভাব থাকে না।
Q.4 মিসিংরা
বছরে কী কী প্রকারের ধানের চাষ করে?
ANS:- আউস এবং শালি। এই দু’প্রকারের।
Q.5 মিসিং
গ্রামগুলোতে কোনো ব্যক্তি অপরাধ করলে কীসের আয়োজন করা হয় এবং কার তত্ত্বাবধানে
দোষীর বিচার করা হয়?
ANS:- ‘কৌবাং' বা সভার আয়োজন করে গাঁওবুড়ার
তত্ত্বাবধানে দোষীর বিচার করা হয়।
Q.6 মিসিংদের
বিচারসভা কোথায় আয়োজন করা হয় এবং দোষীর কী শাস্তি দেওয়া হয়?
ANS:- মিসিংদের বিচারসভা গাঁওবুড়ার
প্রাঙ্গনে করা হয় এবং দোষীকে সমাজচ্যুত করা হয়।
Q.7 পোশাকের
দিক দিয়ে মিসিংদের প্রধান পোশাক কী এবং জাতীয় সম্পদ কী?
ANS:- পোশাকের দিক দিয়ে তাত শালের
কাপড় মিসিংরা পছন্দ করে। তাছাড়া গাদু বা মিরিজিম মিসিংদের জাতীয় সম্পদ।
Q.8 মিসিংদের
জাতীয় উৎসবগুলো কী কী?
ANS:- উৎসবগুলি হল আলি-আংয়ে লৃগাঙ, মাঘ বিহু, বহাগ বিহু ও কাতি বিহু ইত্যাদি।
Q.9 মিসিং
ভাষাকে কে, কয়টি স্তরে
ভাগ করে আলোচনা করেছেন?
ANS:- মিসিং ভাষাকে অধ্যাপক নাহেন্দ্র
পাদুন তিনটি স্তরে ভাগ করে আলোচনা করেছেন।
Q.10 মিসিংদের
প্রধান জাতীয় উৎসব কী? এই উৎসব কখন
আরম্ভ হয়?
ANS:- মিসিংদের প্রধান জাতীয় উৎসব
আলি-আঃয়ে লৃগাঙ। এই উৎসব ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার থেকে আরম্ভ হয়।
Q.11 ধান
চাষ ছাড়া মিসিংরা আর কী কী চাষ করে থাকে?
ANS:- ধান চাষ ছাড়া মিসিংরা ডাল, শস্য, বিভিন্ন প্রকারের আলু, কচু, আদা, লংকা ইত্যাদির চাষ করে থাকে।
সংক্ষিপ্ত
প্রশ্নোত্তর
Q.1 মিসিং
জনগোষ্ঠীর পুরুষদের তিন প্রকার পোশাকের নাম লেখো।
ANS:- মিরু গালুগ, গনর, উগন ও
টঙালি দুমৌ ইত্যাদি।
Q.2 মিসিং
মহিলাদের পোশাকাদির নাম লেখো।
ANS:- মিসিং মহিলাদের পোশাকাদির নাম হল
- রিহা মেখেলা, রিবি-গাচেং
ইত্যাদির সঙ্গে বিভিন্ন অলংকারও দেখা যায়। তাছাড়া তাদের তাতে তৈরি কাপড়ে
জঙ্গলের পাখি, হরিণ, মাছ ইত্যাদির ছবি অঙ্কন করে
থাকে।
Q.3 মিসিং
মহিলাদের কাজকর্মের বর্ণনা দাও।
ANS:- মিসিং সমাজ সুশৃঙ্খলিত সঙ্ঘবদ্ধ
সমাজ। এর প্রধান কারণ হল সমাজে শ্ৰেণীবৈষম্যহীনতা। পুরুষদের মতোই মিসিং মহিলারা
কৃষিকাজ, গৃহকর্ম
ইত্যাদিতে সমানভাবে অংশ গ্রহণ করে। কিছু সর্বজনীন কাজকর্মে মিসিং মহিলারাই অংশ
গ্রহণ করে থাকে।
Q.4 টীকা
লেখো :(ক) ভৃগুমণি কাগয়ুং (খ) শহিদ কমলা মিরি (গ) ঐরাম বরি (ঘ) পদ্মশ্রী যাদব
পায়েং ।
ANS:-
(ক)
ভৃগুমণি কাগয়ুং - ভূগুমণি মিসিং জনগোষ্ঠীর প্রথম রাষ্ট্রীয় পুরস্কার
প্রাপ্ত সাহিত্যিক। ভৃগুমণি পেশায় ছিলেন একজন শিক্ষক এবং এই শিক্ষকতায় থেকেও
সাহিত্যের সেবা করে গেছেন। অসমিয়া কাব্য সাহিত্যে তাঁর অবদান অপরিসীম। তাঁর রচিত
অসমিয়া কাব্যগুলি হল – ‘কবিতা কলি’, ‘অনাহুত’, ‘মন বননির
জুই’ ও ‘কবিতাকুসুম’ ইত্যাদি। তার সর্বাধিক জনপ্রিয়
কাব্যগ্রন্থ 'অনাহুত'। এই
কাব্যের জন্য তিনি রাষ্ট্রপতি পুরস্কার লাভ করেছিলেন। ভৃগুমণি রচিত ও সম্পাদিত
গ্রন্থের সংখ্যা সর্বমোট ২৭টি। বেশ কিছু প্রবন্ধও তিনি রচনা করেছেন। ভৃগুমণি
একজন সার্থক প্রবন্ধকার এবং প্রসিদ্ধ লোক সংস্কৃতির গবেষক। অসমিয়া ও মিসিং ভাষা
সাহিত্য-সংস্কৃতির গভীর অধ্যয়ন ও চর্চা তাঁর জীবনের ব্রত ছিল। এছাড়া তার প্রায়
পাঁচশোরও অধিক গবেষণামূলক ও মান্যতাপ্রাপ্ত প্রবন্ধ
বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
(খ) শহিদ
কমলা মিরি -
নিজের দেশমাতৃকাকে যারা পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত করবার জন্য নিজের জীবনকে
তুচ্ছ জ্ঞান করেছিলেন তাদের মধ্যে কমলা মিরি অন্যতম। শিবসাগর জিলার টেমেরা গ্রামে
কমলা মিরির জন্ম। পিতা চিকৌ লইং এবং মাতার নাম মঙ্গলি লইং। মহাত্মা গান্ধীর
নেতৃত্বে যখন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন জোর কদমে চলছিল, তখন কমলা মিরির নেতৃত্বে একদল
তরুণ যুবক তখনকার শিবসাগরে স্বাধীনতা আন্দোলনে বসিয়ে পড়েছিলেন। ১৯৪১ সালের
সেপ্টেম্বর মাসে গোলাঘাটে কংগ্রেসের কার্যালয়ে বিপ্লবের খবর সংগ্রহ করতে গেলে
কমলা ও তার সঙ্গীদলকে ব্রিটিশ সৈন্যরা বন্দী করে। কারাগারে বন্দী জীবন কাটাবার
সময় কমলার স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়লে তাকে কারাগারের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল।
কিন্তু ১৯৪৩ সালের ২৩ এপ্রিল দেশ্বাসীকে কাঁদিয়ে এই মহান দেশপ্রেমিকা পৃথিবী থেকে
চিরকালের জন্য বিদায় নিলেন।
(গ) ঐরাম
বরি -
মিসিং সংস্কৃতির পিতৃপুরুষ ঐরাম বরির জন্ম হয়েছিল - ১৮৭৭ সালে। তার পিতার নাম
তাকির বরি আর মায়ের নাম মঙলি বরি। ঐরাম বরি ১৯৫০ সালের বহু আগে থেকেই ইতিহাসের বুকে
বিলীন হবার উপক্রম এই মিসিং সংস্কৃতির বর্ণাঢ্য ধারা সংরক্ষণ করবার জন্য কাজে
আত্মনিয়োগ করেছিলেন। তিনি কৃষ্টি-প্রাণ একদল যুবক-যুবতীকে সঙ্গে নিয়ে মিসিংদের
মূল্যবান ঐ নিঃতম, চৌল্লয়া, লৌরোলি, ল:লে, কাবান, তৌব: ইত্যাদির প্রণালীবদ্ধভাবে
চর্চা, সংরক্ষণ
এবং সংবর্ধনের কাজে আদা জল খেয়ে লেগে থাকেন। এতে বরিদের এই দলটি জোনাই, পাচিঘাট থেকে আরম্ভ করে
গুয়াহাটি, যোরহাট, ডিব্ৰুগড়, মাজুলী পর্যন্ত কৃষ্টি সংস্কৃতির
প্রসার ঘটিয়েছে। তিনি “অয়ান
অঞ্চলের সংস্কার এবং উন্নয়ন সভা”র থেকে
আরম্ভ করে “ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম”
পর্যন্ত নানা মূল্যবান কাজ রূপায়ণ করে গিয়েছেন।
(ঘ)
পদ্মশ্রী যাদব পায়েং - প্রকৃতিপ্রেমী এবং পরিবেশকর্মী ভারতের
অরণ্য মানব যাদব পায়েং এর জন্ম তৎকালীন শিবসাগর জেলার বরঘোপ গ্রামে ১৯৫৯ সালে।
তার পিতার নাম লক্ষীনাথ পায়েং এবং মায়ের নাম আফুলী পাযেং! মাত্র দশম শ্রেণি
পর্যন্ত পড়া শ্ৰীযাদব ১৯৭৯ সন থেকে গাছ লাগাতে আরম্ভ করে চল্লিশটি বছর শুধু গাছই
লাগিয়েছেন এবং সেগুলিকে লালন পালন করেছেন। এভাবে তিনি এক গভীর অরণ্য গড়ে
তুলেছেন। আজ যা সমস্ত বিশ্বে “মোলাই
কাঠনি” নামে
পরিচিত। এই মোলাই অরণ্য বর্তমানের নবগঠিত মাজুলি জেলার ঔনা বা অরুণাপারের সীমান্তে
অবস্থিত। তার সৃষ্ট অরণ্যে হাতি,
হরিণ
এবং কাজিরাঙ্গা থেকে মাঝে মধ্যে আসা তিনটি গণ্ডারও রয়েছে। তাছাড়া গৃহপালিত
জন্তুর মধ্যে রয়েছে গরু, মোষ, শূয়র, হাঁস, মুরগী ইত্যাদি। পরিবেশ রক্ষার জন্য যাদব মোলাই পায়েং এর রূপায়ণ করা এই
মহান কাজের প্রতিদান হিসেবে ২০১২ সনে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ভারতের “অরণ্য
মানব” উপাধি
প্রদান করে। ২০১৫ সনে তিনি ভারত সরকারের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘পদ্মশ্রী' উপাধি লাভ করেন।
দীর্ঘ
প্রশ্নোত্তর
Q.1 মিসিংদের
ধর্ম সম্বন্ধে যা জান লেখো।
ANS:- মিসিং জনগোষ্ঠী মহাপুরুষীয়া, শৈব, শাক্ত, তান্ত্রিক ও বিশেষভাবে কেবলিয়া
বা রাতি সেবা ধর্মপন্থা অবলম্বন করতে দেখা যায়, যদিও স্বধর্ম হিসাবে ‘দঞি-পল’ই
মিসিংদের মূলধর্ম। মিসিংরা লোকবিশ্বাসে যথেষ্ট বিশ্বাসী। মোরগকে আপদ-বিপদের রক্ষা
কবচ হিসেবে বিশ্বাস করে। এদের মধ্যে ধর্মীয় উৎসব ‘দবুর পুজা’ বিশেষভাবে
তাৎপর্যপূর্ণ। বিভিন্ন দেবতার সন্তুষ্টির জন্য দবুর-এ পূজা অর্পণ করা হয়। ঘরের
শুচি অশুচি ও উন্নতির সঙ্গে দেবতার
কোপ দৃষ্টি আছে বলে জনমনে বিশ্বাস রয়েছে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনটাকে
দঞি-পল বা সূর্য-চন্দ্র দেবতারা পরিচালনা করেন বলে মিসিংদের বিশ্বাস।
Q.2 মিসিংদের
জাতীয় উৎসব আলি-আঃয়ে লৃগাং সম্বন্ধ যা জান লেখো।
ANS:- মিসিংদের প্রধান জাতীয় উৎসব আলি-অঃয়ে
লৃগাং। এই উৎসবের সঙ্গে তানি বঙহর চলুং, মপিন
উৎসবের সাদশ্য রয়েছে। মিসিং জনগোষ্ঠীর এই জাতীয় উৎসব আলি-আংয়ে গাং তিনটি পদের
সমষ্টি ‘আলি', 'আয়ে' এবং লৃগাং'। 'আলি’র মানে মাটির নীচে হওয়া বীজ, ‘আয়ে' হলো গাছের উপর হওয়া ফল, আর ‘লৃগাং' শব্দের অর্থ বীজরোপণ কার্যের
শুভারম্ভ। অর্থাৎ বিভিন্ন শষ্যের বীজ রোপণ কার্যের সূত্রপাত। তাই ফাল্গুন মাসের
প্রথম বুধবার এই উৎসবের শুভারম্ভ। এই দিনটির হিসাব রেখেই বীজ রোপণের সূত্রপাত করা
হয়। পুরাং আপিন বা টোপলা ভাতের সঙ্গে দিনচান, চান
অর্থাৎ শুকনো মাছ, মাংস এবং
আপঙেই এই উৎসবের প্রধান খাদ্য। আপং হচ্ছে মিসিং জনগোষ্ঠীর চির প্রচলিত পানীয়
দ্রব্য। আলি-আংয়ে লৃগাঙের দিন আপং ও লৃগাঙের উপাদান প্রথমে দেবতা, সম্মানীয় গৃহস্থদের উৎসর্গ করা
হয়। গুমরাগর নৃত্য-গীতের মাধ্যমে মিসিংদের ঐতিহ্য ও শান্তিপ্রিয়তার পরিচয়
পাওয়া যায়। এছাড়াও মাঘ বিহু,
বহাগ
বিহু ও কাতি বিহুকে মিসিংরা পরম্পরাগতভাবে পালন করে।
Q.3 মিসিং
ভাষা সম্বন্ধে যা জান লেখো।
ANS:- মিসিং ভাষা লোক সাহিত্যের দিক
থেকে একটি চমকপ্রদ ভাষা। এই ভাষা চীন তিব্বতীয় ভাষাভাষী পরিবারের তিব্বত-বর্মী শাখার
অন্তর্গত। অধ্যাপক নাহেন্দ্র পাদুন মিসিং ভাষার স্তরটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন।
এগুলি হল - আদি স্তর, মধ্যস্তর ও
আধুনিক স্তর। আদি স্তরে মির বা আঃবাঙ-এর স্তুতিমূলক গীত ও লোকস্তুতিগুলি
অন্তর্ভুক্ত। এই ভাগ আদি স্তর থেকে ১৮৮৬ সাল পর্যন্ত। পুরোহিত বা মিবুদের মুখে
মুখে এই শ্রেণীর স্তুতিগীত পরম্পরাগতভাবে চলে আসছিল। পরবর্তীকালে আবাং ও পৌরাণিক
গীতগুলিকে সংগ্রহ করে লিখিত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত সুরেন দলের “লেকেনিঃতম”
গ্রন্থ উল্লেখযোগ্য। মধ্যস্তরকে আবার দুভাগে বিভক্ত করা যায়।
প্রথম ভাগকে মিশনারি স্তর ও দ্বিতীয় ভাগকে মিসিং ভাষার অনুশীলন স্তর বলে অভিহিত
করা যায়। সম্প্রতি মিসিং ভাষার কবিতা, গল্প, নাটক, উপন্যাস, ব্যাকরণ, অভিধান ইত্যাদি রচনা করে কবি, গল্পকার, নাট্যকার ও ঔপন্যাসিকেরা মিসিং
ভাষা সাহিত্যের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছেন।
পাঠ্যপুস্তকের অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর
Q.1 মিসিং
জাতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
ANS:- অসমের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ
জনজাতীয় জনগোষ্ঠী হচ্ছে মিসিং জনজাতি। মিসিংরা মিরি নামেও পরিচিত। ভারতবর্ষের
সংবিধানে মিসিংদের অসমের অনুসূচীত সমতল জনজাতি রূপে মিরি নামে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মিসিং সমাজে মিরি শব্দের ব্যবহার তাদের এক শ্রেণির মিবু বা পুরোহিতদের ক্ষেত্রে
করা হয়। কারো কারো মত এই শব্দের প্রয়োগ পঞ্চদশ শতকে সর্বপ্রথম বৈষ্ণব ধর্মের
প্রবর্তক শংকরদেব করেছিলেন। মিসিংদের পূর্ব বাসস্থান রূপে অসমের উত্তরের পাহাড়কে
চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্তমানের অরুণাচলে আবর পাহাড় থেকে জীবিকার সন্ধানে মিসিংরা
অসমের সমতলে নেমে এসেছিল।
Q.2 মিসিং
জাতির তিন রকমের পোশাক আশাকের নাম বল।
ANS:- মিসিং জাতির তিন রকমের পোশাক
আশাক হল- মিবু গালুগ, গনর উগন, টঙালি দুমৌ ইত্যাদি।
Q.3 মিসিংদের
ধর্ম সম্পর্কে কী জান লেখো।
ANS:- মিসিং জনগোষ্ঠী মহাপুরুষীয়া, শৈব, শাক্ত, তান্ত্রিক ও বিশেষভাবে কেবলিয়া
বা রাতি সেবা ধর্মপন্থা অবলম্বন করতে দেখা যায়, যদিও স্বধর্ম হিসাবে ‘দঞি-পল’ই মিসিংদের
মূল ধর্ম। মিসিংরা লোকবিশ্বাসে যথেষ্ট বিশ্বাসী। মোরগকে আপদবিপদের রক্ষা কবচ
হিসেবে বিশ্বাস করে। এদের মধ্যে ধর্মীয় উৎসব দবুর পূজা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
বিভিন্ন দেবতার সন্তুষ্টির জন্য দবুর-এ পূজা অর্পণ করা হয়। ঘরের শুচি অশুচি ও
উন্নতির সঙ্গে দেবতার রোষদৃষ্টির সম্পর্ক আছে বলে
লোকবিশ্বাস রয়েছে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনটাকে সূর্যচন্দ্র দেবতারা
পরিচালনা করে বলে মিসিংদের বিশ্বাস।
Q.4 আলি
আয়ে লৃগাং কী এবং কখন অনুষ্ঠিত হয়?
ANS:- মিসিংদের জাতীয় উৎসব আলি আয়ে লৃগাং।
এটি ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনটির হিসাব রেখে বীজ রোপণের
সূত্রপাত হয়।
Q.5 আলি
আয়ে লৃগাং শব্দের ব্যুৎপত্তি লেখো।
ANS:- মিসিংদের জাতীয় উৎসব আলি আয়ে
নৃগাং তিনটি পদের সমষ্টি। আলি,
আয়ে
ও লৃগাং। আলি অর্থাৎ মাটির নীচে হওয়া বীজ, আয়ে
হলো গাছের ওপর হওয়া ফল, আর লৃগাং
শব্দের অর্থ বীজ রোপণ কার্যের শুভারম্ভ। অর্থাৎ বিভিন্ন শষ্যের বীজ রোপণ কাজের
সূত্রপাত।
Q.6 টীকা
ANS:-
(ক) ভৃগুমণি
কাগয়ুং :
খহুয়া ওয়াবরির সন্তান ভৃগুমণির জন্ম হল ১৯৩২ সালের অক্টোবর মাসে আলিমুর গ্রামে।
ভৃগুমণি জোরহাট জেবি কলেজ থেকে। আই. এ. এবং গুয়াহাটির বি. বরুয়া কলেজ থেকে ১৯৮৭
সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছিলেন। ১৯৯২ সালে মহীশূরের Institute of Indian Language থেকে মিসিং
প্রাপ্তবয়স্ক পাঠ্য পুথি প্রণয়নের জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন।
হাইস্কুলে
শিক্ষাগ্রহণের সময় তিনি অসমের শহিদ সাংবাদিক কমলা শইকিয়ার সঙ্গে ১৯৫২ সালে
দিখৌমুখ এম. ই. স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ১৯৫৮ সালে জোরহাট ভােকেশনাল কলেজিয়েট
হাইস্কুলে শিক্ষকরূপে যোগদান করেছিলেন। অসমিয়া কাব্য সাহিত্যের ক্ষেত্রে ভৃগুমণি
কাগয়ুঙের অবদান অপরিসীম। তার রচিত কাব্যগ্রন্থগুলি হল—কবিতাকলি, অনাহূত, মন বননির জুই ও কবিতা কুসুম
ইত্যাদি। সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশােনার সময় তিনি কুসুমকলি কাব্যগ্রন্থ রচনা
করেছিলেন। ভৃগুমণির সর্বাধিক জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ হল অনাহূত। এই কাব্যগ্রন্থের
জন্য ভারত সরকার তাকে ১৯৭১ সালে রাষ্ট্রপতির দ্বারা পুরস্কৃত করেছিলেন। এছাড়া ‘মন বননীর জুই’ কাব্যগ্রন্থের জন্যও তাকে ১৯৯৪
সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে সম্মানিত করা
হয়েছিল।
ভৃগুমণি
কাগয়ুঙ অসমিয়া ভাষার সঙ্গে সঙ্গে মিসিং ভাষাতেও কবিতা রচনা করেছিলেন। তার রচিত
সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা সর্বমোট ২৭টি। তার রচিত প্রবন্ধগুলির মধ্যে ‘আবেগিক ঐক্য সাধনাত ‘শ্ৰীমন্ত শংকরদেব’, ‘আঞ্চলিক
ভাষা বনাম ত্রিভাষা ‘মিসিং
কৃষ্টির চমু আভাস’, ‘ভাষা ও
শিক্ষার ভূমিকা’, ‘মিসিং
শব্দকোষ’, ‘মিসিং লোজন
ইত্যাদি।
ভৃগুমণি
একজন সার্থক প্রবন্ধকার এবং প্রসিদ্ধ লোকসংস্কৃতির গবেষক। অসমিয়া ও মিসিং ভাষা
সাহিত্য সংস্কৃতির গভীর অধ্যয়ন ও চর্চা তার জীবনের ব্রত ছিল।
(খ) কমলা
মিরি :
১৮৯৪ সালে শিবসাগর জেলার রাঙামাটি মৌজার অন্তর্গত ওপর টেমেরা গ্রামে কমলা মিরির
জন্ম হয়েছিল। কমলা মিরির পিতার নাম চিকৌ লইং এবং মাতার নাম মঙ্গলি লইং। কমলা
মিরির নেতৃত্বে মহরা মৌজার বংকুয়াল অঞ্চলে বিকারাম মিরি, বেজিয়া লইং, ভুটাই লইং, ধাতুরাম পেণ্ড, বোদা লইং, শম্বুরাম মিরি প্রভৃতিরা
স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ১৯৪২ সালের ৮
আগস্ট মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির সিদ্ধান্ত মর্মে ব্রিটিশের
বিরুদ্ধে ভারত ত্যাগ আন্দোলন ঘোষিত হয়েছিল। ৯ আগস্ট মহাত্মা গান্ধী জহরলাল নেহেরু
প্রভৃতি নেতাকে করায়ত্ত করে ব্রিটিশ সরকার কারাগারে নিক্ষেপ করেন। তখন কমলা মিরির
নেতৃত্বে ১৮.৮.১৯৪২ তারিখে রাঙামাটি মৌজার ওপর টেমেরা গ্রামে শান্তিসেনার দল গঠন
করে ১৮ জনের একটি দলকে গোলাঘাটে পিকেটিং করবার জন্যে নির্বাচন করা হয়। সভার
সিদ্ধান্ত অনুসারে কমলা মিরি মূল নেতৃত্ব বহন করেন।
১৯৪২ সালের
সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে গোলাঘাটে কংগ্রেসের কার্যালয়ে বিপ্লবের খবর সংগ্রহ
করতে গেলে কমলা মিরি ও তার সঙ্গীদলকে ব্রিটিশ সিপাহিরা বন্দী করে। একই বছর ৮
অক্টোবর গোলাঘাটের তখনকার দণ্ডাদীশ আশু দত্তই বন্দীদের বিচার করে প্রত্যেককে ৮
মাসের কারাদণ্ড দিয়ে জোরহাট কেন্দ্রীয় কারাগারে নিক্ষেপ করেন। কারাগারে
বন্দীজীবন কাটাবার সময় কমলার স্বাস্থ্য ভেঙে পড়লে কারাগারের হাসপাতালে ভর্তি
করানো হয়েছিল। ১৯৪৩ সালের ২৩ এপ্রিল এই মহান দেশপ্রেমিকের মৃত্যু হয়।
(গ) মিসিং
সংস্কৃতির পিতৃপুরুষ ঐরাম বরি : ঐরাম বরির জন্ম হয়েছিল ব্রিটিশ শাসনাধীন NEFA র অন্তর্গত
অয়ান গ্রামে ১৮৭৭ সালে। তার পিতার নাম তাকির বরি, মায়ের নাম মঙলি বরি।
১৯৫২ সালে
ঐরাম বরি মহাশয় একদল যুবক যুবতীকে নিয়ে মিসিংদের মূল্যবান নিঃতম, চৌম্নয়া, লৌরৌলি, ললে, কাবান, তৌবঃ, তৌকাংস, বৃনি, মিবু আঃবাং ইত্যাদির চর্চা, সংরক্ষণের চেষ্টা করেছিলেন।
বরিদেবের এই সাংস্কৃতিক দলটি জোনাই, পাচিঘাট
থেকে আরম্ভ করে গুয়াহাটি জোরহাট ডিব্ৰুগড়, মাজুলি
পর্যন্ত বর্ণাঢ্য কৃষ্টি সংস্কৃতির প্রসার ঘটিয়েছে।
তখনকার
নেফা প্রশাসনের অধিকারী আর্নল্ড সাহেব এবং মাথুর সাহেবের পরিকল্পনায় ঐরাম বরির
নেতৃত্বে স্থানীয় জনসাধারণ অয়ান চারআলি থেকে চিয়াং ব্রহ্মপুত্র পর্যন্ত দক্ষিণ
পূর্বে একটি পথ নির্মাণ করে। ১৯৫৮ সালে নেফা প্রশাসন উক্ত পথের শেষাংশে মিলিত
চিয়াং ব্রহ্মপুত্র ঘাটটিকে ঐরাম ঘাট নামে নামাঙ্কিত। করেন।
(ঘ) যাদব পায়েং : সমগ্র
পৃথিবীর মানব সমাজকে প্রকৃতি রক্ষার নীরব বাণী প্রদান করার জন্য এগিয়ে এসেছেন
জোরহাটের ককিলামুখের ১ নং মিসিং গ্রামের নিবাসী মাত্র দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া
শ্ৰীযাদব মোলাই পায়েং। ১৯৭৯ সালে গাছ লাগাতে শুরু করেছেন যাদব পায়েং এবং গত ৪০
বছর ধরে গাছই লাগিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি গাছে বাস করা ও সেখানে উড়ে বেড়াতে আসা
পশুপাখি কীটপতঙ্গগুলিকে লালন করেছেন।
বর্তমানে
১৩৬০ একর অর্থাৎ ৪০৫০ বিঘা জমিতে মোলাই অরণ্য ব্যাপ্ত। পায়েঙের মোলাই অরণ্যের
বিশাল পরিবারের মধ্যে মূল্যবান লাল চন্দন, সাদা
চন্দন, শিশুগাছ, গামরী, তিতাচপ, পাম ইত্যাদি মূল্যবান বৃক্ষের
পাশাপাশি বিভিন্ন ঔষধি লতাগুল্ম রয়েছে। চারটি বাঘ মোলাই অরণ্যের বিশেষ আকর্ষণ।
বছরে তিন চার মাসের জন্য বিচরণ করতে আসে ১১৫টি হাতি এবং ৫০০ এর অধিক হরিণ
মোলাই
অরণ্যের সদস্য। এখানে ৯০টি মোষ,
৫০টা
গরু এবং ১০টি শূকর আছে। শকুন,
কাদাখোচা, বক, হুতোম, হাড়গিলে, হাঁস, কাক, বাবুই, বাদুড়, ঘুঘু ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের পাখি
মোলাই অরণ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পরিবেশ রক্ষার জন্য যাদব মোলাই পায়েঙকে ২০১২ সালে
দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের “অরণ্য মানব”
উপাধি প্রদান করে। তদানীন্তন ভারতের রাষ্ট্রপতি এ. পি. জে. আব্দুল কালাম ১৫০ লাখ
টাকা সহ হীরাখচিত পুরস্কার প্রদান করেন। ২০১২ সালে প্যারিসের U. N. Global Conference এ তাকে
সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। প্রকৃতির নীরব সাধক যাদব পায়েংকে ২০১৫ সালে ভারত সরকার
ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক “পদ্মশ্রী”
উপাধি প্রদান করে। তিনি আজ পর্যন্ত চীন, তাইওয়ান, শ্রীলঙ্কা, আরব, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স থেকে সংবর্ধনা পেয়েছেন।
**********
0 Comments
HELLO VIEWERS, PLEASE SEND YOUR COMMENTS AND SUGGESTION ON THE POST AND SHARE THE POST TO YOUR FRIEND CIRCLE.