সেবা/অসম দশম শ্রেণী সমাজ বিজ্ঞান
সম্পদের অর্থ এবং গুরুত্ব
/ সম্পদের
শ্রেণিবিভাজন এবং ব্যবহার / সম্পদ ও সম্পত্তি
/ সম্পদ সংরক্ষণের অর্থ, প্রয়োজনীয়তা এবং পদ্ধতি
SEBA/ASSAM CLASS 10 SOCIAL SCIENCES
Visit – www.smartlearningservice.com
সেবা/অসম দশম শ্রেণী সমাজ বিজ্ঞান
সম্পদের অর্থ এবং গুরুত্ব / সম্পদের শ্রেণিবিভাজন এবং ব্যবহার / সম্পদ ও সম্পত্তি / সম্পদ সংরক্ষণের অর্থ, প্রয়োজনীয়তা এবং পদ্ধতি
SEBA/ASSAM CLASS 10 SOCIAL SCIENCES
অধ্যয়নের মূল বিষয়:
অর্থনৈতিক ভূগোলের সংজ্ঞা : ভূগোলের যে
শাখায় সম্পদের উৎপাদন, বিতরণ, উপভোগ ও
বিনিময়ের সঙ্গে জড়িত মানুষের কার্যকলাপ স্থান কাল সাপেক্ষে অধ্যয়ন করা হয়, তাকে অর্থনৈতিক ভূগোল বলা হয়।
সম্পদের সংজ্ঞা : মানুষের জীবন
ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল বস্তুকেই সম্পদ বলা হয়। পৃথিবীতে বিদ্যমান বায়ু, জল, সূর্যের রশ্মি, মাটি, গাছ-পালা, ফল-মূল, খনিজ পদার্থ
ইত্যাদি সবকিছুই মানুষের জন্য অত্যাবশ্যক বলে এই গুলোকে সম্পদ বলে অভিহিত করা হয়।
সম্পদের প্রধান বৈশিষ্ট্য : উপকারিতা, কার্যকারিতা এবং
পরিবর্তনশীলতা সম্পদের প্রধান ধর্ম।
সম্পদের প্রকার : সম্পদকে প্রধানত তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা
হয় প্রাকৃতিক সম্পদ, মনুষ্য সৃষ্ট সম্পদ এবং মানব সম্পদ।
সম্পদের সংরক্ষণ : সাধারণত কোনো ধরনের বিনাশ ও অপব্যবহার না করে
সম্পদের সম্ভাব্যপূর্ণ ব্যবহার করার কার্য বা ধারণাকে সম্পদ সংরক্ষণ
বলা হয়।
সম্পদের অর্থ এবং গুরুত্ব
মানুষের জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল
বস্তুকেই সম্পদ (Resource) বলা হয়। পৃথিবীতে বিদ্যমান বায়ু, জল, সূর্যরশ্মি, মাটি, গাছ-পালা, ফল-মূল, খনিজ পদার্থ
ইত্যাদি সবকয়টিই মানুষের জন্য আবশ্যকীয়। সুতরাং এগুলো সম্পদ। এই সম্পদগুলোর
প্রাচুর্যের জন্যই মানুষের মৌলিক প্রয়োজন — খাদ্য, আশ্রয় ও বস্ত্র এবং অন্যান্য বহু চাহিদা
পূরণের সঙ্গে সঙ্গে জীবন ধারণের মানের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য
যে পৃথিবীতে পাওয়া যায় বা পৃথিবীতে বিদ্যমান যে কোনো বস্তুই সম্পদ নয়। সম্পদ
হতে হলে এর কার্যকারিতা এবং উপকারিতা (Functionality and utility) গুণ দুটি থাকতে হবে। এধরনের দুটি গুণের জন্যই
সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে মানব কল্যাণ এবং আর্থ-সামাজিক উৎকর্ষ সাধন সম্ভবপর
হয়েছে। তাই সম্পদ এবং তার ব্যবহার মানব সমজের উন্নয়নের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে
জড়িত। উল্লেখযোগ্য যে প্রকৃতি,
মানুষ, সমাজ-সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তির আন্তঃক্রিয়ার ফলেই এক একটি সম্পদের
সৃষ্টি হয়। মানুষ সম্পদের সঙ্গে দুই ধরনে জড়িত - সম্পদের উৎপাদক এবং উপভোক্তা হিসেবে। মানুষের
প্রয়োজনীয় বহু সম্পদ যদিও প্রকৃতিই জোগান দেয়, তবুও এর
অধিকাংশেরই ব্যবহারিক দিকটি মানুষ প্রয়োজনানুসারে ঠিক করে নেয়। এছাড়াও
প্রকৃতিতে বিদ্যমান সামগ্রীগুলোর কার্যকারিতা এবং উপকারিতা সম্পৰ্কীয় গুণাবলি
মানুষের জ্ঞানের মাধ্যমেই উদঘাটিত হয়। মানুষের জ্ঞানের পরিসর বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে
নতুন নতুন সম্পদেরও সৃষ্টি হয় এবং ব্যবহার হয়। অর্থাৎ প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত
সম্পদ ছাড়াও বহু সম্পদ যেমন- প্রযুক্তি, বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, উদ্যোগ, কারখানা, স্কুল, কার্যালয়, কৃষিকার্যের সরঞ্জাম, যানবাহন ইত্যাদি মানুষ নিজেই প্রস্তুত করে।
তাই এধরনের সম্পদকে মানবসৃষ্ট সম্পদ (Man-made Resource) বলা হয়। এছাড়াও সম্পদের উৎপাদক বা সৃষ্টিকর্তা হিসেবে মানুষও এক প্রকারের
সম্পদ যাকে মানব সম্পদ (Human Resource) বলে গণ্য করা হয়। লক্ষণীয় যে, প্রাকৃতিক এবং মানব সৃষ্ট সম্পদের ব্যবহারের তারতম্য নির্ভর করে মানুষের
চাহিদার পরিবর্তন এবং নতুন প্রযুক্তির উন্নয়নের ওপর। তাই একই সম্পদের অর্থ স্থান
এবং কালভেদে আলাদা আলাদা হতে পারে।
সেবা/অসম দশম শ্রেণী সমাজ
বিজ্ঞান
সম্পদের
অর্থ এবং গুরুত্ব / সম্পদের শ্রেণিবিভাজন এবং ব্যবহার
/
সম্পদ
ও সম্পত্তি / সম্পদ সংরক্ষণের অর্থ, প্রয়োজনীয়তা এবং পদ্ধতি
SEBA/ASSAM
CLASS 10 SOCIAL SCIENCES
Visit – www.smartlearningservice.com
সম্পদ কি পরিবর্তনশীল?
সম্পদ পরিবর্তনশীল। আজ কোনো একটি সামগ্রী
মানুষ ব্যবহৃত না করলে বা মানুষের জন্য অপকারী হলেও ভবিষ্যতে সেই একই সামগ্রী মানব
কল্যাণে ব্যবহৃত হতে পারে। এর মধ্যে পৃথিবীতে প্রাপ্ত সামগ্রীগুলোর যেগুলো মানুষের
কোনো ধরনের উপকার বা অপকার সাধন করে না, সেগুলোকে
নিরপেক্ষ বা নিষ্ক্রিয় সামগ্রী (Neutral Stuff) বলা হয়। উদাহরণ স্বরূপে মানুষ যে দিন পর্যন্ত শক্তি উৎপাদনে কয়লা বা খনিজ
তেলের ব্যবহার জানত না, সেদিন পর্যন্ত এগুলো কেবল নিরপেক্ষ সামগ্রীই
ছিল। অন্যদিকে যে সব সামগ্রী বা পরিম,না মানুষের
তপকার সাধন করে, সে গুলোকে প্রতিরোধক (Resistance) বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ অনুর্বর মাটি, বন্যাজর্জরিত অঞ্চল ইত্যাদি এক-একটি প্রতিরোধক। এপ্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে
পশ্চিমবঙ্গে ঘন ঘন কন্যা সৃষ্টিকারী দামোদর নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণ করে জলবিদ্যুৎ
শক্তি উৎপাদন এবং জলসিঞ্চন ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত দামোদর নদকে প্রতিরোধক হিসেবে
গণ্য করা হত। সুতরাং মানুষের জ্ঞানের প্রসার এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে
পৃথিবীতে বিদ্যমান এধরনের বহু নিরপেক্ষ সামগ্রী এবং প্রতিরোধক মানুষের প্রচেষ্টাতে
সম্পদে রূপান্তরিত হয়েছে। সম্পদের এধরনের পরিবর্তনশীল বৈশিষ্ট্যের জন্যই আজ
উপকারী বলে গণ্য কোনো একটি সামগ্রী বা পরিঘটনা সময়ের গতিতে অপকারী বা নিষ্ক্রয়
হিসেবে রূপান্তরিত হতে পারে।
উল্লেখযোগ্য যে বহুক্ষেত্রে সম্পদ এবং
সম্পত্তিকে একই বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু অর্থনীতির সূত্র অনুসারে যে সব বস্তুর
বিনিময় মূল্য আছে, সেগুলোকেই সম্পত্তি (wealth) বলা হয়। লক্ষণীয় যে ব্যবহারোপযোগী হওয়া
ছাড়াও সম্পত্তির জোগান হবে তুলনামূলকভাবে সীমিত, এবং এটিকে
একজনের কাছ থেকে অন্যজনের কাছে মূল্যের বিনিময়ে হস্তান্তর করা যাবে। ভূমি বাড়ি
ঘর, যন্ত্রপাতি, কোম্পানির
শেয়ার ইত্যাদির সবকয়টিই হল সম্পদ। এগুলোর বাজার মূল্য আছে। কিন্তু সূর্যের রশ্মি, বায়ু, জল, মাটি, নদী-হ্রদ, শিক্ষা, সামাজিক
প্রতিষ্ঠান, উপযুক্ত সরকার, জনস্বাস্থ্য
ইত্যাদিকে সম্পত্তির শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। কারণ এর মধ্যে কয়েকটি
অপর্যাপ্ত এবং অন্য কয়েকটির হস্তান্তর সম্ভব নয়, এবং বাজার
মূল্যও নেই। সুতরাং
অর্থনৈতিক ভূগোল ও সম্পদ।
সম্পদ ও সম্পত্তি : সম্পর্ক ও
পার্থক্য
সকল সম্পত্তিই সম্পদ, কিন্তু সবকয়টি সম্পদ সম্পত্তি না-ও হতে পারে। এছাড়াও সম্পদের মাধ্যমে মানব
জাতির কল্যাণ হয়। কিন্তু সম্পত্তির মাধ্যমে মানুষের উপকার বা অপকার দুটিই হতে
পারে। উদাহরণস্বরূপ, বাজার মূল্যযুক্ত বিষ, রাসায়নিক কীটনাশক দ্রব্য ইত্যাদি সম্পত্তি। কিন্তু এর সেবন মানুষের জন্য
অপকারী বা বিপদজনক। তাই এধরনের সামগ্রী সম্পদ নয়।
সেবা/অসম দশম শ্রেণী সমাজ
বিজ্ঞান
সম্পদের
অর্থ এবং গুরুত্ব / সম্পদের শ্রেণিবিভাজন এবং ব্যবহার
/
সম্পদ
ও সম্পত্তি / সম্পদ সংরক্ষণের অর্থ, প্রয়োজনীয়তা এবং পদ্ধতি
SEBA/ASSAM
CLASS 10 SOCIAL SCIENCES
Visit – www.smartlearningservice.com
সম্পদের শ্রেণিবিভাজন এবং ব্যবহার :
যে ভাবে পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য সম্পদ
পাওয়া যায়, ঠিক সেভাবেই এর বিভাজনও বিভিন্ন ধরনে করা
যায়। সৃষ্টি-প্রক্রিয়া অনুসারে সম্পদগুলোকে প্রসারিত অর্থে প্রাকৃতিক, মনুষ্যসৃষ্ট এবং মানব সম্পদ হিসেবে বিভক্ত করা যায়। এছাড়াও সম্পদগুলোকে
জৈবিক ও অজৈবিক সম্পদ, নবীকরণযোগ্য ও অনবীকরণযোগ্য সম্পদ এবং
ব্যক্তিগত, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পদ হিসেবেও বিভক্ত
করা যায়।
যদিও সম্পদগুলোকে আলাদা আলাদা ধরনে বিভক্ত
করে বিভিন্ন শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তবুও বিভাজনের
তালিকায় অনেক সম্পদকেই একাধিক শ্রেণিতে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, উদ্ভিদ একটি প্রাকৃতিক সম্পদ, এটি আবার একটি জৈবিক সম্পদ, নবীকরণযোগ্য সম্পদ। এটি আবার ব্যক্তিগত বা জাতীয় সম্পদ হিসেবেও পরিগণিত হতে
পারে। ঠিক সেভাবেই সোনা একটি প্রাকৃতিক সম্পদ হওয়া ছাড়াও একটি অজৈবিক সম্পদ, অনবীকরণযোগ্য সম্পদ এবং ব্যক্তিগত বা জাতীয় সম্পদ ইত্যাদি পদবাচ্য হতে পারে।
প্রাকৃতিক, মনুষ্যসৃষ্ট ও মানব সম্পদ :
সূর্যের রশ্মি, বায়ু, জল, পলি, গাছ-পালা, জীব-জন্তু, খনিজ পদার্থ, নদনদী ইত্যাদি
যে সব সম্পদ
প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট হয়ে প্রকৃতিকে বিস্তৃত
হয়ে থাকে, সেগুলোকে প্রাকৃতিক সম্পদ (Natural Resource) বলা হয়। প্রাকৃতিক সম্পদসমূহ কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় এবং ধাতব ও অধাতব অবস্থায় পাওয়া যায়। এধরনের প্রাকৃতিক
সম্পদের বেশ কিছুকে কাঁচামাল হিসেবে কলকারখানা ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও
কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস
ইত্যাদিও প্রাকৃতিক সম্পদ এগুলোকে আমরা শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করি। আমরা জানি
যে প্রকৃতির কাছ থেকে আহরিত বহু সামগ্ৰীকেই প্রয়োজন সাপেক্ষে বিভিন্ন প্রযুক্তির
মাধ্যমে রূপান্তরিত করে মানুষের ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, বাঁশ থেকে কাগজ, কার্পাস থেকে কাপড়; খনিজ তেল থেকে নানা ধরনের রং,
ন্যাপথা, কৃত্ৰিম কাপড়, রাসায়নিক সার, কীটনাশক দ্রব্য, সাবান, প্লাস্টিক, কৃত্রিম রবার, মোম ইত্যাদি; গাছ-পালা থেকে নানা ধরনের ওষুধ, কাঠ, গৃহ নির্মাণ সামগ্রী ইত্যাদির কথা বলা যেতে
পারে। মানুষের প্রচেষ্টায় উৎপাদিত এধরনের সামগ্রীকে মনুষ্য সৃষ্ট সম্পদ বলা হয়।
প্রাকৃতিক সম্পদগুলোকে মানুষের ব্যবহারোপযোগী করে তুলতে মানুষের কার্যদক্ষতা, শিক্ষা, প্রযুক্তি এবং আগ্রহের প্রয়োজন হয়। এধরনের
গুণ থাকার জন্যই মানুষকে মানব সম্পদ বলে অভিহিত করা হয়। প্রকৃতপক্ষে মানুষই
সম্পদের সৃষ্টি কর্তা। প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদ এবং উদ্যোগের জন্য প্রয়োজনীয়
নিজস্ব কাঁচামালের অভাব সত্ত্বেও কেবল মাত্র দ্রুত বিকাশের জন্যই জাপান, সুইজারল্যান্ড, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর
ইত্যাদি দেশ পৃথিবীর এক একটি অগ্রণী এবং সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে। পরিগণিত হয়েছে।
জৈবিক ও অজৈবিক সম্পদ:
প্রাকৃতিক গঠন অনুসারে সম্পদসমূহের যেগুলোতে
জীব উপস্থিত থাকে, সেইগুলোকে জৈবিক সম্পদ (Biotic Resource) এবং যেগুলোতে কোনো জীব উপস্থিত থাকে না
সেগুলোকে অজৈবিক সম্পদ (Abiotic Resource) বলা হয়। উদ্ভিদ, প্রাণী, মাছ, শস্য ইত্যাদি
জৈবিক সম্পদ। অন্যদিকে মাটি,
শিলা, পাথর, জল, বায়ু, খনিজ পদার্থ, কয়লা ইত্যাদি
অজৈবিক সম্পদ। কিন্তু উল্লেখযোগ্য যে কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি উৎপত্তির দিকে থেকে জৈবিক মূলের অন্তর্গত। কিন্তু
সাম্প্রতিক অবস্থানের দিক থেকে নির্জীব হওয়ার জন্য, এগুলোকে অজৈবিক
সম্পদের শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
নবীকরণযোগ্য এবং অনবীকরণযোগ্য সম্পদ:
পৃথিবীতে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদগুলোর মধ্যে
কয়েকটি ব্যবহারের পরই একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায়। , এবং কয়েকটি
ক্রমান্বয়ে নিঃশেষ হয়ে যায়। যে সম্পদগুলোকে ব্যবহারের পরে নবীকরণ বা পনও
পর্ণীকত প্রক্রিয়াতে কখনও একেবারে নিঃশেষ না হওয়ার মতো করে রাখা যায়, সেই সম্পদগুলোকে নবীকরণযোগ্য বা পুনঃপূনীকৃত সম্পদ (Renewable or Inexhaustible Resource) বলা হয়। অর্থাৎ সর্যের রশ্মি, বায়, জল, গাছ-পালা, জীবজন্তু, মানুষ, শস্য হত্যাদি
নবকিরণ যোগ্য সম্পদ। অন্যদিকে যে সম্পদগুলো ব্যবহারের পরে একেবারে নিঃশেষ হয়ে
যায় বা নবাকরণযোগ্য করে তোলা যায় না, সে ধরনের সম্পদকে অনবীকরণযোগ্য বা ক্ষয়শীল
সম্পদ (Non-Renewable or
Exhaustible Resource) বলা হয়।
উদাহরণস্বরূপ কয়লা, খনিজ তেল, খনিজ পদার্থ
(যেমন- তামা, সোনা, চুনা পাথর, লোহা ইত্যাদি), প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি অনবীকরণযোগ্য সম্পদ।
ব্যক্তিগত, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পদ :
পৃথিবীতে প্রাপ্ত সকল সম্পদকেই
মালিকীসত্ত্বের ভিত্তিতে ব্যক্তিগত, জাতীয় ও
আন্তর্জাতিক সম্পদ হিসেবে শ্রেণি বিভাগে বিভক্ত করা যায়। মানুষের নিজ নিজ দখল বা
অধিকারভুক্ত ভূমি, সম্পত্তি এবং নিজস্ব ভালো গুণ যেমন— ভালো চরিত্র, শিক্ষা, কর্মদক্ষতা
ইত্যাদিকে ব্যক্তিগত সম্পদ (Individual
for Personal Resource) বলা হয়। একটি
দেশের তত্ত্বাবধান বা দখলে অবস্থিত সকল সম্পদ যেমন-~~ রা ভূ ঘাট, ভূমি, নদনদী, সেতু, অরণ্যের গাছ-পালা ও জীব-জন্তু, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রশাসনিক ব্যবস্থা, সরকার ইত্যাদিকে জাতীয় সম্পদ (National Resource) বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ কাজিরঙা রাষ্ট্রীয়
উদ্যানটিও একটি জাতীয় সম্পদ। অন্যদিকে সব কয়টি দেশের জাতীয় সম্পদ এবং সমগ্র
বিশ্বের অধীনস্থ সম্পদ যেমন—
সাগর-মহাসাগর, মহাসাগরের খনিজ সম্পদ, জীব-জন্তু, বায়ুমণ্ডল, অরণ্য অঞ্চল ইত্যাদিকে একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পদ (International Resource) বলা হয়। কারণ এই সবকয়টি সম্পদই মানব জাতির
কল্যাণে ব্যবহৃত হয়।
সেবা/অসম দশম শ্রেণী সমাজ
বিজ্ঞান
সম্পদের
অর্থ এবং গুরুত্ব / সম্পদের শ্রেণিবিভাজন এবং ব্যবহার
/
সম্পদ
ও সম্পত্তি / সম্পদ সংরক্ষণের অর্থ, প্রয়োজনীয়তা এবং পদ্ধতি
SEBA/ASSAM
CLASS 10 SOCIAL SCIENCES
Visit – www.smartlearningservice.com
সম্পদের সংরক্ষণ — সংরক্ষণের অর্থ, প্রয়োজনীয়তা এবং পদ্ধতি :
সম্পদসমূহ বিশেষত প্রাকৃতিক সম্পদ পৃথিবীর
সকল স্থানে সমানভাবে পাওয়া যায় না, এর মধ্যে অনেক
প্রাকৃতিক সম্পদ আবার অনবীকরণযোগ্য বা ক্ষয়শীল অর্থাৎ সীমিত। কিন্তু জনসংখ্যা
বৃদ্ধি এবং মানব সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এধরনের প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার
দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। আমেরিকা, কানাডা, জাপান, জার্মানি, ইংল্যান্ড ইত্যাদি
দেশ চীন এবং ভারতের মতো যদিও জনবহুল নয়, তবুও সেই
দেশগুলোয় প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার অত্যধিক। উল্লেখযোগ্য যে এই দেশগুলো
অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমগ্র বিশ্বে শীর্ষস্থান লাভ করতে সক্ষম হওয়ার মূলেই আছে খনিজ
সম্পদসমূহও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদরাজির অধিক মাত্রায় ব্যবহার। উল্লেখযোগ্য যে
উন্নত দেশগুলোতে উচ্চমাত্রায় সংঘটিত প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার এবং উন্নয়নশীল
দেশগুলোর জনবিস্ফোরণের ফলে বর্ধিত প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার সমগ্র বিশ্ব জুড়ে
অনেক প্রাকৃতিক সম্পদের বিশেষত অত্যাবশ্যক অনবীকরণযোগ্য সম্পদ নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার
এক ভয়াবহ ইংগিত প্রদান করেছে। এধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য বা সমস্যা
সমাধানের জন্য এক উপায় হিসাবে সমগ্র বিশ্বতেই সম্পদ সংরক্ষণ (Conservation of Resources) কার্যসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
সম্পদের ব্যবহার এবং তার সংরক্ষণ ওতপ্রোতভাবে
জড়িত। সাধারণত কোনো ধরনের বিনাশ এবং অপব্যবহার না করে সম্পদের সম্ভাব্য পূর্ণ
ব্যবহার করার কার্য বা ধারণাকে সম্পদ সংরক্ষণ (Conservation of Resources) বলা হয়। অর্থাৎ সম্পদ সংরক্ষণের মূল
উদ্দেশ্য হল যে প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত আমাদের প্রয়োজনীয় সম্পদগুলোকে এমনভাবে আহরণ
করে ব্যবহার করা যাতে তার মাধ্যমে আমরা সকলেই বহু সময় ধরে উপকৃত হই। সম্পদ
সংরক্ষণ বলতে অবশ্য সম্পদ ব্যবহার না করে কেবলমাত্র ভবিষ্যতের জন্য বাঁচিয়ে রাখার
কাজকেই সূচিত করা হয় না। উদাহরণস্বরূপ, খনিজ তেল
সংরক্ষণ বলতে কোনো ধরনের অপচয় না করে প্রকৃতি থেকে খনিজ তেল আহরণ করে সঠিক রূপে
বহুদিন ধরে ব্যবহার করার ব্যবস্থাকে বোঝানো হয়।
সম্পদ সংরক্ষণের ব্যবস্থাপনা যদিও
অনবীকরণযোগ্য সম্পদের সঙ্গে বেশিভাবে জড়িত, প্রকৃতপক্ষে
সংরক্ষণের ধারণাসমূহ প্রতিটি সম্পদের জন্যই প্রযোজ্য। উল্লেখযোগ্য যে অরণ্য
(নবীকরণযোগ্য সম্পদ) ধ্বংসের ফলে জীব-জন্তুর বাসভূমি এবং জৈব-বৈচিত্র্য হ্রাস হয়
এবং এক-একটি অঞ্চলের পারিবেশিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। তাই সমগ্র বিশ্বজুড়ে কয়েকটি
অমূল্য জৈবিক সম্পদ যেমন— বাঘ, হাতি, গন্ডার, ডলফিন ইত্যাদির সংরক্ষণের জন্য বহু যোজনা বা
প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও অসমের কয়েকপ্রকার মূল্যবান উদ্ভিদ যেমন
সর্পগন্ধা, কালমেঘ, অর্জুন, অগরু, চিরতা, জায়ফল, শতমূল, ইত্যাদি নিঃশেষ হতে শুরু করেছে। বিলুপ্ত
প্রায় প্রাণীর মধ্যে সোনালি বাঁদর, হলৌ বাঁদর, বন্য মহিষ, নল শুয়োর, শিশু, দেও হাঁস, ধনেশ পাখি, হাড়গিলা
ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এরই সঙ্গে শক্তির উৎস হিসেবে খনিজ তেল, কয়লা ইত্যাদি এবং কৃষিকার্যে রাসায়নিক সার, কীট নাশক
রাসায়নিক দ্রব্য ইত্যাদির ব্যবহার দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বায়ু, জল ও মাটির প্রদূষণ সংঘটিত হয়ে এক ভয়াবহ পরিবেশিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
সুতরাং আমাদের উন্নয়ণ প্রক্রিয়াটি যাতে ক্ষণস্থায়ী না হয়, সেজন্য সম্পদের পরিমিত ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের প্রয়োজনীয় সংরক্ষণ
ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, মাটি সংরক্ষণের
ক্ষেত্রে কৃষি কার্যের জন্য এক টুকরো মাটিকে আমাদের এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে
উর্বরতা নষ্ট না করে শস্যের ভালো উৎপাদন পাওয়া যায়। মাছ একপ্রকারের নবীকরণ যোগ্য
প্রাকৃতিক সম্পদ হলেও, এর দ্রুত আহরণের জন্য পৃথিবীর বেশ কয়েকটি
বৃহৎ মাছ উৎপাদন অঞ্চলে মাছের অভাব দেখা দিয়েছে। এছাড়াও যানবাহন এবং
উদ্যোগ-প্রতিষ্ঠানের দ্রুত বৃদ্ধি ও মানুষের বিলাসী জীবন যাপনের প্রসারের ফলে
অনবীকরণযোগ্য শক্তি সম্পদ কয়লা,
পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি নিঃশেষ হতে শুরু করেছে। এধরনের পরিস্থিতির জন্যই
সমগ্র বিশ্বে সম্পদের সংরক্ষণ এবং তার যুক্তিপূর্ণ ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
হয়ে উঠেছে। অন্যথায় এই পৃথিবীতে মানুষ এবং মানব সভ্যতার টিকে থাকা কঠিন হয়ে
পড়বে।
সম্পদ সংরক্ষণের প্রক্রিয়াটি নিজে নিজে
কার্যক্ষম হতে পারে না। এর সঠিক রূপায়ণের জন্য প্রয়োজন সুবিবেচিত এবং
সুপরিকল্পিত যোজনা। তাই সম্পদ সংরক্ষণকে ফলপ্রসূ করে তুলতে হলে নীচে উল্লিখিত
পদ্ধতিগুলোকে যোজনার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
(ক) বিকল্প সম্পদের সন্ধান: ব্যাপকভাবে
ব্যবহৃত কোনো একটি সম্পদের উৎপাদন চলতে থাকার সময়েই তার বিকল্প সম্পদের সম্ভাবনা
উদঘাটনের জন্য প্রযোজনীয় গবেষণা এবং জরিপ চালিয়ে যেতে হয়। উদাহরণ স্বরূপ
কার্পাস সুতোর পরিবর্তে কৃত্রিম আঁশ, প্রাকৃতিক
রবাবের পরিবর্তে কৃত্রিম রবার ইত্যাদি এক-একটি বিকল্প সম্পদ। এছাড়াও অনবীকরণযোগ্য
সম্পদ যেমন— কয়লা, খনিজ তেল
ইত্যাদি ব্যবহার সাস করার জন্য সৌরশক্তি, জলবিদ্যুৎশক্তি, বায়ুশক্তি, জৈব শক্তি ইত্যাদি নবীকরণযোগ্য সম্পদের
ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হয়।
(খ) পুনরাবর্তন: সীমিত পরিমাণে বিদ্যমান কাঁচা সামগ্রীর
ব্যবহার হ্রাস করার লক্ষ্যে ব্যবহারের উপযোগী 'বর্জিত দ্রব্যকে
পুনরাবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুনর্বার ব্যবহার করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, পুরানো পলিথিন ব্যাগ, প্লাষ্টিক, বোতল, কাগজ, লোহার সামগ্রী
ইত্যাদি পুনরাবর্তনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সম্পদের কাঁচা সামগ্রী কিছু পরিমাণ
হলেও সংরক্ষণ করা যায়।
(গ) অভিযোজন বা নবপ্রচলন: অধ্যয়ন এবং গবেষণার মাধ্যমে প্রকৃতি থেকে
আহরিত সম্পদকে বাবা বাশ, যাগী এবং বাশারত করতে হলে অভিযোজন বা নব
প্রচলন (Innovation) প্রক্রিয়ার প্রয়োগ করতে হয়। রাসায়নিক সার
প্রয়োগের ফলে মাটির সম্ভাব্য ঋণাত্মক প্রভাব রোধ করার জন্য জৈব সার প্রয়োগের ওপর বেশি গুরুত্ব
প্রদান করতে হয়।
(ঘ) বর্জিত দ্রব্যের পরিমাণ হ্রাস: কাঁচা মাল থেকে
প্রয়োজনীয় সম্পদে রূপান্তরের সময় বর্জিত দ্রব্যের উৎপাদন সীমিত রাখার ব্যবস্থা করলে যথেষ্ট
পরিমাণে সম্পদের সংরক্ষণ হতে পারে।
(ঙ) জ্ঞান ও শিক্ষার সম্প্রসারণ: সম্পদের উৎপাদন ও ব্যবহার কার্য সুচারুভাবে
পরিচালনা করার অমনি রান ও শিক্ষার সম্প্রসারণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সম্পদের অযথা
অপচয় রোধ করার জন্য জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হয়।
(চ) সংরক্ষণ সম্পর্কীয় আইনের কার্যকরীকরণ: সম্পদের
সংরক্ষণ কার্যকরীকরণের জন্য সংরক্ষণ সকীয় আইনের ব্যবস্থা কঠোর এবং সুনিশ্চিত
হওয়া দরকার এবং সঠিকভাবে রূপায়িত হওয়া দরকার।
(ছ) সম্পদের ভান্ডারের সঠিক মূল্যায়ণ: সম্পদ ব্যবহারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য
কোনো সম্পদের ভান্ডারের পরিমাণ সম্পর্কে সঠিকভাবে মূল্যায়ণ করা উচিত। এর মাধ্যমে
অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং বিকল্প সম্পদের সন্ধানেও গুরুত্ব
আরোপ করা যায়।
(জ) সম্পদসমূহের ভবিষ্যত প্রয়োজন নির্ধারণ : কোনো একটি সম্পদের বর্তমানের ব্যবহারের মান
এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রতি লক্ষ রেখে ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তা নির্ণয় করাও
অত্যন্ত দরকার।
সেবা/অসম দশম শ্রেণী সমাজ
বিজ্ঞান
সম্পদের
অর্থ এবং গুরুত্ব / সম্পদের শ্রেণিবিভাজন এবং ব্যবহার
/
সম্পদ
ও সম্পত্তি / সম্পদ সংরক্ষণের অর্থ, প্রয়োজনীয়তা এবং পদ্ধতি
SEBA/ASSAM
CLASS 10 SOCIAL SCIENCES
Visit – www.smartlearningservice.com
*******************
0 Comments
HELLO VIEWERS, PLEASE SEND YOUR COMMENTS AND SUGGESTION ON THE POST AND SHARE THE POST TO YOUR FRIEND CIRCLE.