Class : 9
Warm Welcome,
SEBA / SMEBA Class 9 Geography
(Social Sciences)
Chapter 2 Atmosphere
in Bangla
সেবা (আসাম) নবম শ্রেণী ভূগোল (সমাজবিজ্ঞান)
দ্বিতীয় অধ্যায় : বায়ুমণ্ডল : গঠন, বায়ুর চাপ এবং বায়ুপ্রবাহ
1. পৃথিবীর চারদিকে ভূপৃষ্ঠ থেকে উপর দিকে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসীয় অবস্থায় বিরাজমান বায়ুর আবরণকে বায়ুমন্ডল বলে।
2. মাটি, জল ও বায়ুমন্ডলের সংমিশ্রণে পৃথিবীর উপরিভাগে জীবের সৃষ্টি, বিকাশ এবং বসবাসের এক অনুকূল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
ইহাকে জীবমণ্ডল বলা হয়।
3. বায়ুমন্ডলের গুরুত্ব:-
জীব জগতের মানুষ, উদ্ভিদ এবং প্রাণীর জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাসসমূহের যোগান ছাড়াও বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর উপর ভাগে তাপ এবং জলীয় বাষ্প বিতরণ ও সঞ্চালনে সাহায্য করে।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত গ্যাসসমূহ একটি নির্দিষ্ট এবং সঠিক অনুপাতে আছে বলেই ভূপৃষ্ঠে মানুষ এবং অন্যান্য জীবের অনুকূল উষ্ণতা বিরাজ করে।
বায়ু গতিশীল, ফলে উষ্ণতা ও শীতলতার ভারসাম্য রক্ষা করে।
সূর্য থেকে নির্গত অতিবেগুনী রশ্মিকে পৃথিবীতে আসতে বাধা দেয়।
বায়ুমণ্ডলেই সৃষ্টি হয় আবহাওয়া ও জলবায়ু।
বায়ুমণ্ডলের জন্যই পৃথিবীতে বৃষ্টি হয় এবং প্রাণী ও উদ্ভিদ বেঁচে থাকে। মোটকথা বায়ুমন্ডলের গুরুত্ব অপরিসীম ও ইহা ছাড়া জীবের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না।
4. বায়ুমণ্ডলের গঠন:-
বায়ুমণ্ডল বিভিন্ন গ্যাস, জলীয় বাষ্প ও ধূলিকণার সংমিশ্রণে গঠিত।
বায়ুমন্ডলে নাইট্রোজেনের পরিমাণ সবচাইতে বেশি প্রায় 78.8 শতাংশ।
ইহা ছাড়াও অন্যান্য গ্যাস যেমন অক্সিজেন(20.94%), কার্বন ডাই অক্সাইড(0.036%), আর্গণ(0.093%), এবং অন্যান্য গ্যাস(0.014%) মিশ্রিত অবস্থায় আছে।
ইহা ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে জলীয়বাষ্প, ধুওয়া, ধূলিকণা ও জলের কনা সংমিশ্রণ হয়ে আছে।
বায়ুমণ্ডলের অবস্থান, উচ্চতা ইত্যাদির সঙ্গে এই উপাদানগুলো প্রভাব বিস্তার করে এবং বায়ুর ঘনত্ব, চাপ ও উত্তাপের পরিবর্তন ঘটায়।
5. গোলকীয় উষ্ণতা:-
উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রাকৃতিক ভাবে বায়ুমন্ডলে অবস্থিত অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের সমতা রক্ষা করে।
কিন্তু সম্প্রতি বিশ্বে দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি প্রাপ্ত কয়লা, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার এবং অরণ্য ধ্বংসের ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি হয়েছে।
কার্বন-ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে উষ্ণতা শোষণ করে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতাকে বৃদ্ধি করিতেছে ইহাকে গোলকীয় উষ্ণতা বৃদ্ধি বলা হয়।
6. ওজোন গ্যাসের গুরুত্ব:
বায়ুমন্ডলে ওজোন গ্যাসের পরিমাণ একেবারে কম তবুও তাহার গুরুত্ব লক্ষণীয়।
বায়ুমণ্ডলের প্রায় 40-50 কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থিত ওজোন গ্যাস সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে পৃথিবীতে আসতে দেয় না। ফলে জীবজগতকে এক সম্ভাব্য বিপদ থেকে রক্ষা করে চলেছে।
অন্যথা পৃথিবীর উপরিভাগে জীবজগৎ বেঁচে থাকা অসম্ভব।
7. বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের গুরুত্ব:-
জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলের নিম্ন উচ্চতায় অবস্থিত। ইহা সৌরশক্তি শোষন করে পৃথিবীপৃষ্ঠে অতি শীতলতা ও অতি উষ্ণতাকে ভারসাম্যতা প্রদান করে। এর ফলে জীবজগত নির্দিষ্ট উষ্ণতা ও শীতলতা বাছাই করে জীবিত রয়েছে।
8. বায়ুমন্ডলে ধূলিকণার গুরুত্ব:-
বায়ুমন্ডলে উড়ন্ত ধূলিকণা গুলো সূর্যের আলো বিক্ষেপণ এ সহায়তা করে। জলীয় বাষ্প এই ধূলিকণা কে আশ্রয় করে ঘনীভূত হয়ে মেঘের সৃষ্টি করে পৃথিবীতে বৃষ্টিপাত ঘটায়। বহু ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ সৃষ্টি করতে এই ধূলিকণা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে।
9. বায়ুমণ্ডলের প্রসার:-
বায়ুমণ্ডল পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 10 হাজার কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত। বায়ুমন্ডলের গ্যাসসমূহের রাসায়নিক গঠন অনুসারে বায়ুমণ্ডলকে হোমোস্ফিয়ার এবং হেটেরোস্ফিয়ার এই দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়। হোমোস্ফিয়ারকে আবার ট্রপোস্ফিয়ার, স্ট্রাটোস্ফিয়ার এবং মেসোস্ফিয়ার এই তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। হেটেরোস্ফিয়ারকে আবার থার্মোস্ফিয়ার এবং এক্সোস্ফিয়ার এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়। হোমোস্ফিয়ার ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 80 (আশী) কিলোমিটার পর্যন্ত প্রসারিত, কিন্তু হেটেরোস্ফিয়ার 80 - 10000 কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। হোমোস্ফিয়ারের গ্যাসসমূহের রাসায়নিক গঠন প্রায় একই। কিন্তু হেটেরোস্ফিয়ারের গ্যাসসমূহের রাসায়নিক গঠন এক নয়।
চিত্র
- বায়ুমণ্ডলের স্তর
ও রাসায়নিক
গঠন
10. হোমোস্ফিয়ার:- ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 80 কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত। বায়ুমন্ডলের গ্যাসগুলির রাসায়নিক গঠন প্রায় একই থাকে। বায়ুমণ্ডলের এই স্তরটিকে হোমোস্ফিয়ার বলে।
11. হেটেরোস্ফিয়ার:- ভূপৃষ্ঠ থেকে 80 কিলোমিটার উচ্চতার পর থেকে উপর দিকে বায়ুমন্ডলে গ্যাসের বিশেষ রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে স্বতন্ত্র অবস্থার সৃষ্টি হয়। বায়ুমণ্ডলের এই স্তরটিকে হেটেরোস্ফিয়ার বলা হয়।
12. উচ্চতা ও উষ্ণতার ভিত্তিতে বায়ুমন্ডলকে নিম্নরূপে ভাগ করা যায়:-
ক) হোমোস্ফিয়ার 0
- 80 কি.মি.
a) ট্রপোস্ফিয়ার 0 - 10 কি.মি.
ট্রপোপোজ 10 - 16 কি.মি.
b) স্ট্রাটোস্ফিয়ার 16-42 কি.মি.
স্ট্রেটোপজ 42-48 কি.মি.
c) মেসোস্ফিয়ার 48-80 কি.মি.
মেসোপজ 80-92 কি.মি.
খ) হেটেরোস্ফিয়ার 80-10000 কি.মি.
a)
থার্মোস্ফিয়ার 80-800 কি.মি.
b)
এক্সোস্ফিয়ার 800-10000 কি.মি.
13. ট্রপোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্য:-
Ø
ইহা বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নিম্ন স্তর
Ø
বিষুব অঞ্চলে সর্বোচ্চ উচ্চতা 16 কিলোমিটার
Ø
মেরু অঞ্চলে সর্বোচ্চ উচ্চতা 8 কিলোমিটার
Ø
বায়ুমণ্ডলের মোট গ্যাসের তিন-চতুর্থাংশ (¾), সম্পূর্ণ জলীয়বাষ্প, এবং ধূলিকণা এই স্তরেই থাকে
Ø
উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ল্যাপস হারে কিলোমিটার প্রতি 6.5 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড উষ্ণতা হ্রাস পায়
Ø
বাতাসের গতি, মেঘ, বৃষ্টি, ঝড় ইত্যাদি এই স্তরেই ঘটে
Ø
এই স্তরের উর্ধ্বসীমাকে ট্রপোপজ বলে ও উষ্ণতা হ্রাস পেয়ে (-) 60 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হয়
14. স্ট্রাটোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্য :
Ø
ট্রপোস্ফিয়ারের উপরে 16 থেকে 42 কিলোমিটার পর্যন্ত স্ট্রাটোস্ফিয়ার বিস্তৃত
Ø
কোন ধরনের আবহাওয়াজনিত ঘটনা এই স্তরে ঘটে না
Ø
উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উষ্ণতাও বৃদ্ধি পায়
Ø
উচ্চ ভাগে উষ্ণতা -60° ডিগ্রী থেকে 0° সেন্টি গ্রেড হয়
Ø
মেঘবিহীন এই স্তরে বাতাসের গতি প্রায় আনুভূমিক। তাই উড়োজাহাজ চলাচলের জন্য সুবিধাজনক।
Ø
এই স্তরেই ওজোন স্তর অবস্থিত যা সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মিকে শোষণ করে পৃথিবীতে আসতে দেয় না।
Ø
স্ট্রাটোস্ফিয়ারের উর্ধ্বসীমা কে স্ট্রাটোপজ বলে
15. মেসোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্য:-
Ø
স্ট্রাটোস্ফিয়ারের উপরে 48 থেকে 80 কিলোমিটার পর্যন্ত মেসোস্ফিয়ার বিস্তৃত
Ø
এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উষ্ণতা হ্রাস পায়
Ø
মেসোস্ফিয়ারের উচ্চসীমাকে মেসোপজ বলে এবং উষ্ণতা হ্রাস পেয়ে -100 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেট হয়
16. থার্মোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্য:-
Ø
মেসোস্ফিয়ারের উপরে 92 থেকে 800 কিলোমিটার পর্যন্ত থার্মোস্ফিয়ার বিস্তৃত।
Ø
এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উষ্ণতা বৃদ্ধি হয়। তাই এই স্তরের নাম থার্মোস্ফিয়ার।
Ø
সর্বাধিক উষ্ণতা 1650 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এবং ঘনত্ব শূন্যে পতিত হয় ।
Ø
এই স্তরে বৈদ্যুতিক আধার সম্পন্ন আয়ন কনা থাকায় পৃথিবী থেকে প্রেরিত বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয় ফলে সংবাদ ও সংকেত প্রেরণ সম্ভব হয়।
17. এক্সোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্য:-
Ø
থার্মোস্ফিয়ারের উপরে 800 থেকে 10000 কিলোমিটার পর্যন্ত এক্সোস্ফিয়ার বিস্তৃত।
Ø
এক্সোস্ফিয়ার বায়ুমণ্ডলের শীর্ষতম স্তর
Ø
এই স্তরে বায়ুর অণু-পরমাণুর ঘনত্ব একেবারে নিম্ন
Ø
হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসের জন্য এই স্তরে বায়ু অধিক হালকা
Ø
এই স্তরে বায়ুর উষ্ণতা 5550 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেট পর্যন্ত হয়
18. বায়ুমন্ডলের চাপ:-
প্রতি একক ক্ষেত্রফলে বায়ু যে বল প্রয়োগ করে তাকে বায়ুমন্ডলের চাপ বলে। সাগর পৃষ্ঠ থেকে বায়ুমন্ডলের চাপের মাপ নেওয়া হয়। ব্যারোমিটারের মারফত বায়ুর চাপ মাপা হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় সমুদ্রপৃষ্ঠে এই চাপ 76 সেন্টিমিটার ধরা হয়। বায়ুর সম্প্রসারণ ও সংকোচনের ফলে বায়ুর ঘনত্ব কম বেশি হয় ও চাপও কম বেশি হয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে বায়ুর চাপ ক্রমশ হ্রাস পায়।
19. বায়ুর চাপের তারতম্যের কারণ:-
A) বায়ুর উষ্ণতা:- পৃথিবীপৃষ্ঠে তাপের বিতরণ কোন স্থানের ভৌগোলিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে কোন স্থান ঠান্ডা বা নাতিশীতোষ্ণ বা গরম হয়।
এই তারতম্য বায়ুর চাপের উপর প্রভাব ফেলে।
বায়ুর উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে ঘনত্ব হ্রাস পায় ও চাপও কমে।
আবার উত্তাপ হ্রাস পেলে জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা কমে ও চাপও বৃদ্ধি পায়।
বিষুব অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলে চাপ বেশি।
B) পৃথিবী পৃষ্ঠের উচ্চতা:- সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে বায়ুমন্ডলের গভীরতা হ্রাস পায়, ভর, ও চাপও কম হয়।
গতিকে পার্বত্য অঞ্চল থেকে সমুদ্রটট অঞ্চলে বায়ুর চাপ অধিক।
প্রতি 900 ফুট উচ্চতায় 1 ইঞ্চি বা 34 মিলিবার চাপ কমে।
20. পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয় সমূহ:-
পৃথিবীর উপরিভাগে উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে বায়ু গতি করে যাকে বাতাস বলে।
বায়ুমন্ডলের চাপ এর তুলনামূলক তারতম্য অনুসারে পৃথিবী পৃষ্ঠে প্রধানত চারটি(4) চাপবলয় বা চাপমন্ডল সনাক্ত করা হয়েছে।
Ø
নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়:- এই অঞ্চল বিষুবরেখার উত্তর ও দক্ষিনে 10 ডিগ্রি অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই অঞ্চলে সারা বছর সূর্যের আলো লম্বভাবে পরে, জলভাগের পরিমান বেশি, জলীয়বাষ্পের পরিমাণও বেশি। ফলে বায়ুর চাপ বেশি, ঘনত্ব কম ও হালকা হয় এবং নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। বায়ুর গতি ঊর্ধ্বগামী হয় এবং শান্ত থাকে। ফলে এই অঞ্চলকে নিরক্ষীয় শান্ত বলয়ও বলা হয়।
Ø
উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয়:- এই অঞ্চল উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের 25 থেকে 35 ডিগ্রি অক্ষাংশে অবস্থিত। মেরু ও বিষুবীয় অঞ্চল থেকে আগত শীতল ও ভারি বায়ু এই অঞ্চলে অবস্থান করে। শীতল ও ভারি বায়ু মিলিত হয়ে উচ্চচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয় ও বায়ুর গতি নিম্নমুখী হয়। তাই এখানে বাতাস বা বায়ু প্রবাহ অনুভূত হয় না।
Ø
উপ - মেরুদেশীয় নিম্নচাপ বলয়:-এই বলয় 60 ডিগ্রী থেকে 70 ডিগ্রি উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত।
এই অঞ্চলে পৃথিবীর আবর্তনের গতি তুলনামূলক ভাবে মেরু অঞ্চল থেকে বেশি হওয়ায় উপমেরু অঞ্চলের বায়ু উপক্রান্তীয় অঞ্চল এর দিকে বিক্ষিপ্ত হয়।
বায়ুর পরিমাণ হ্রাস পেয়ে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।
Ø
মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয়:- দুই মেরু অঞ্চল বরফাবৃত ও শীতল বায়ুতে জলীয় বাষ্প প্রায় থাকে না এবং সব সময় বায়ুর উচ্চচাপ থাকে।
21. অশ্ব অক্ষাংশ:- 25 থেকে 35 ডিগ্রি উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয়ে বাতাসের চলাচল প্রায় না থাকায় জাহাজ চলাচলের অসুবিধা হয়।
মধ্যযুগে ইউরোপীয় নাবিকরা জাহাজ চালাতে না পেরে জাহাজের বোঝা কমানোর জন্য জাহাজে বয়ে নিয়ে আনা ঘোড়াগুলিকে সাগরে ফেলে দিতেন। এজন্য এই উচ্চচাপ বলয় কে অশ্ব - অক্ষাংশও বলে।
22. চাপ কক্ষ: একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও জলভাগ ও স্থলভাগের তাপের তারতম্যের জন্য এবং ঋতু পরিবর্তনের ফলে একই চাপ বলয়ে ছোট ছোট চাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়। ইহাকে চাপকক্ষ বলে।
23. বাতাস বা বায়ুপ্রবাহ ও বায়ুপ্রবাহ তন্ত্র:-
বায়ুর গতিশীল অবস্থাকে বাতাস বা বায়ু প্রবাহ বলে। বায়ুর গতি সাধারণত দুই প্রকারের:-
Ø
আনুভূমিক প্রবাহ এবং
Ø
উলম্বিক প্রবাহ
আনুভূমিক প্রবাহ পৃথিবীর সমান্তরাল ভাবে প্রবাহিত হয়। কিন্তু উলম্বিক প্রবাহ ভূপৃষ্ঠ থেকে ঊর্ধ্বগামী বা ভূপৃষ্ঠের দিকে নিম্নগামী হয়।
বায়ু প্রবাহ বায়ুমন্ডলে সংগঠিত বহু ক্রিয়া-কলাপ এর একটি অতি প্রয়োজনীয় মাধ্যম যা অহরহ উত্তাপ, আদ্রতা এবং বায়ুমন্ডলের অন্যান্য বহু ভৌতিক গুনাগুন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বহন করে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। তাই প্রসারিত অর্থে একে বায়ুপ্রবাহ তন্ত্র বলে।
24. বাতাসের উৎপত্তি ও গতির কারক সমূহ:-
কোন স্থানের বায়ুমণ্ডলের উত্তাপের ও বায়ুমণ্ডলীয় চাপের উপর নির্ভর করে বাতাসের উৎপত্তি হয়। বায়ু গরম হলে হালকা হয়, চাপ কমে ও বাতাস ঊর্ধ্বগতি করে। সেই শূন্যস্থান আবার পূর্ণ করিতে ঠান্ডা অঞ্চল থেকে শীতল বাতাস সেই স্থানে প্রবাহিত হয়ে আসে। বাতাস বা বায়ুপ্রবাহের চরিত্র, গতি, দিক, বেগ ইত্যাদি চারটি কারকের দ্বারা প্রভাবিত হয়।
Ø
চাপনতি শক্তি:- দুটি স্থানের মধ্যেকার বায়ুমণ্ডলীয় চাপের হারকে চাপনতি বলে। দুটি স্থানের মধ্যে চাপের পার্থক্য বেশি হলে বাতাসের গতিও বেশি হয়। কিন্তু দূরত্ব বেশি হলে গতিবেগ হ্রাস পায়। বায়ু যেহেতু উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে গতি করে ফলে এই দুই অঞ্চলের মধ্যেকার চাপনতি এবং বাতাসের দিকও নির্ণয় করে।
Ø
মধ্যাকর্ষণ শক্তি:- পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি বায়ুমন্ডলকে ধরে রেখেছে। ফলে বায়ুর ওজন বা ভার বা চাপ মধ্যাকর্ষণ শক্তির উপর নির্ভর করে। কিন্তু ভূপৃষ্ঠ থেকে যতই উপরের দিকে যাওয়া যায় ততই মধ্যাকর্ষণ শক্তি হ্রাস পায়, ফলে উলম্বিক চাপের তারতম্য হয় এবং উলম্বিক বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়।
Ø
অপকেন্দ্রিক শক্তি:- পৃথিবীর আবর্তনের ফলে উৎপন্ন হওয়া কেন্দ্র থেকে বহির্মুখী অপকেন্দ্রিক শক্তি বাতাসের গতি ও দিকেরও বিক্ষেপণ ঘটায়। 1844 সালে ফরাসি গণিতজ্ঞ গ্যাসপার্ড ডি কোরিওলিস দ্বারা আবিষ্কৃত এই শক্তিকে কোরিওলিস বল বলে। এই বল বাতাসকে উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাটার দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে বিক্ষেপিত করে। যাকে ফেরেলের সূত্রও বলে। কোরিওলিস বলের মান বিষুব রেখায় শূন্য কিন্তু মেরুতে সর্বোচ্চ হয়। গতিকে পৃথিবীর আবর্তন বিষুব অঞ্চল ছাড়া বাকি সকল অঞ্চলেই প্রভাব ফেলে।
Ø
ঘর্ষণ শক্তি:- বাতাস যখন ভূপৃষ্ঠের পৃষ্ঠদেশে আনুভূমিকভাবে প্রবাহিত হয় এবং পৃষ্ঠদেশ যদি পাহাড়, পর্বত, গাছপালা, সুউচ্চ অট্টালিকা দ্বারা আবৃত থাকে তখন ঘর্ষণ শক্তিও বেশি হয়, এবং গতিবেগ হ্রাস পায়। পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের কিছু উপরে, খালি জায়গার উপরে অথবা বরফাবৃত অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বাতাসের ঘর্ষণ শক্তি কম হয় ও গতিবেগও বেশি হয়।
চাপনতির ফলে ভূপৃষ্ঠে বাতাসের সৃষ্টি হয়। কিন্তু বায়ু প্রবাহের সময় মধ্যাকর্ষণ শক্তি, অপকেন্দ্রিক শক্তি, ঘর্ষণ শক্তি দ্বারা উদ্ভুদ্ধ পরিগামি শক্তিই বায়ুর দিক ও গতি নির্ধারণ করে এবং বাতাসের গতিকে সরল রেখার বদলে বক্র-আকৃতি করে।
25. যে দিক থেকে বাতাস প্রবাহিত হয় সেই দিকের নাম অনুসারে বাতাসের নামকরণ করা হয় বা নাম দেওয়া হয় যেমন পশ্চিমা বাতাস, পূর্বা বাতাস ইত্যাদি।
26. ভূ-পৃষ্টের যে দিক থেকে বাতাস আসে বা প্রবাহিত হয় তাকে পবনমুখী এবং যে দিকে প্রবাহিত হয় তাকে পবনবিমুখ বলে।
27. উইন্ড ভেন নামক যন্ত্রের সাহায্যে বাতাসের দিক ডিগ্রিতে নির্ণয় করা হয়।
28. বাতাসের গতিবেগ অ্যানিমোমিটার এর সাহায্যে মাপা হয়। অ্যানিমোগ্রাফ যন্ত্র দ্বারা বাতাসের দিক ও গতিবেগ লিপিবদ্ধ করা হয়।
29. স্যার ফ্রান্সিস বিউফর্ট, বিউফর্ট স্ক্যালের উদ্ভাবন করেন 1805 সালে।
![]() |
| স্যার ফ্রান্সিস বিউফর্ট |
30. বাতাসের গতিবেগ “নট” এ প্রকাশ করা হয়। 1 নট মানে এক নটিক্যাল মাইল প্রতি ঘন্টায় অর্থাৎ 1.854 কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় বা 30.9 মিটার প্রতি মিনিটে।
31. বাতাসের শ্রেণী বিভাজন, বৈশিষ্ট্য ও বিতরণ:-
বিস্তৃতির ওপর নির্ভর করে বাতাস বা বায়ুপ্রবাহকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়।
Ø মুখ্য
বা প্রাথমিক বায়ু প্রবাহ:-পৃথিবীপৃষ্ঠে অবস্থিত স্থায়ী চাপ বলয়ের বিতরণের উপর নির্ভর করে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে চলন্ত বায়ুপ্রবাহকে প্রাথমিক বা মুখ্য বায়ুপ্রবাহ বলে। বাণিজ্য বাতাস, পশ্চিমা বাতাস এবং মেরুদেশীয় বায়ু এর অন্তর্গত। প্রাথমিক বায়ু প্রবাহ অন্যান্য বায়ুপ্রবাহের পরিবেশ সৃষ্টি করে। পৃথিবীর দুই গোলার্ধের উপক্রান্তীয় এবং মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় ও উপ মেরুদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে এই বাতাস নিয়মিতভাবে ধাবিত হয়। সেজন্য এই বাতাসকে নিয়মিত বাতাস বা নিত্য বাতাসও বলে।
Ø গৌণ বাতাস:- ভুঅবয়বের প্রকৃতি ও ভূমি জলরাশির বৃষ্টির বিভিন্নতা, আঞ্চলিক এবং ঋতুভিত্তিক তাপ ও চাপের তারতম্যের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে সৃষ্টি হওয়া বায়ুপ্রবাহ গুলিকে গৌণ বায়ু প্রবাহ বলে। বায়ুরাশি, বাতাগ্র, ঘূর্ণি বাতাস, মৌসুমী বাতাস ইত্যাদি গৌণ বাতাসের অন্তর্গত।
Ø
স্থানীয় বাতাস:- ভূ-অবয়বের বিভিন্নতা এবং উচ্চতার পার্থক্যের জন্য সীমিত অঞ্চল জুড়ে যে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় তাকে স্থানীয় বাতাস বলে। এই বাতাস অস্থায়ী এবং অনিয়মিত যেমন- জল বাতাস, স্থল বাতাস, পার্বত্য বাতাস, সমতল বায়ু, চিনুক, লু, ফন আদি।
32. বাণিজ্য
বাতাস:- 30° উত্তর এবং 30° দক্ষিণ অক্ষাংশের আশেপাশে উপক্রান্তীয় চাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত পৃষ্ঠবায়ুকে বাণিজ্য বাতাস বলে। কোরিওলিস বলের জন্য উত্তর গোলার্ধে উত্তর পূর্ব দিক থেকে দক্ষিণ পশ্চিম দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ পূর্ব দিক থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়। ক্রান্তীয় অঞ্চলের এই বাতাস নিরক্ষীয় অঞ্চলে মিলিত হয় এক বিভাজকের সৃষ্টি করে থাকে, যাকে আন্ত-ক্রান্তীয় অভিসারী মন্ডল বলে। বাতাস দুর্বল ও শান্ত হয়ে যায় বলে এই অঞ্চলকে শান্ত বলয় বা নির্বাত বলয়ও বলা হয়।
33. মেরু পশ্চিমা বাতাস (Westerlies):- উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে উচ্চ অক্ষাংশের উপমেরুর দিকে অবস্থিত নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে নিয়মিতভাবে প্রবাহিত বায়ু প্রবাহকে মেরু পশ্চিমা বাতাস বলে। উত্তর গোলার্ধে 30° থেকে 35° ডিগ্রি অক্ষাংশে অবস্থিত এই অঞ্চলকে “অশ্ব অক্ষাংশ” এবং দক্ষিণ গোলার্ধে 40° থেকে 60° ডিগ্রি অক্ষাংশেরর মধ্যে এই অঞ্চলের 40° ডিগ্রী অক্ষাংশকে “গর্জনমুখর চল্লিশ”, 50° ডিগ্রি অক্ষাংশকে “ভয়ানক পঞ্চাশ”, এবং 60° ডিগ্রি অক্ষাংশকে “আর্তনাদ ষাট” বলা হয়।
34. মেরু প্রবাহ:- মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থিত উপ মেরুদেশীয় নিম্নচাপ এর দিকে যে স্বাভাবিক বায়ু প্রবাহ বয়ে থাকে তাকে মেরুপ্রবাহ বা মেরুদেশীয় বাতাস বলে। পৃথিবীর দুই গোলার্ধে এই প্রবাহ পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়। একে মেরুপূর্বা বলেও জানা যায়। এই অঞ্চলে মেরুদেশীয় বাতাস এবং পশ্চিমা বাতাসের মিলন ঘটে ফলে ক্রান্তীয় অঞ্চলের উচ্চ স্তর দিয়ে পশ্চিমা প্রবাহের মতো এক তীব্রবেগী (ঘন্টায় প্রায় 640 কিলোমিটার) পূর্বমুখী বায়ু প্রবাহিত হয় যাকে জেট প্রবাহ বলে।
35. বায়ুরাশি বা বায়ুপুঞ্জ:- উত্তাপ, আর্দ্রতা ইত্যাদির সমগুণ সম্পন্ন বৃহদাকৃতির এক একটি বায়ুবলয়কে বায়ু রাশি বা বায়ুপুঞ্জ বলে। বায়ুপুঞ্জ এর উৎপত্তিস্থান ও তার চরিত্রের উপর নির্ভর করে তাকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়।
Ø ক্রান্তীয় অঞ্চলের মহাদেশীয় বায়ুপুঞ্জ
Ø ক্রান্তীয় অঞ্চলের মহাসাগরীয় বায়ুপুঞ্জ
Ø মেরু অঞ্চলের মহাদেশীয় বায়ুপুঞ্জ
Ø মেরু অঞ্চলের মহাসাগরীয় বায়ুপুঞ্জ
36. জলবায়ু নির্ধারণে বায়ুপুঞ্জের ভূমিকা:-
কোন এক অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে বায়ুপুঞ্জ স্থির অবস্থায় থাকলে সেই অঞ্চলের ভূপৃষ্ঠে তাপ, আদ্রতা প্রভৃতি গুনাগুন আহরণ করে এবং এই বায়ুপুঞ্জ যখন অন্য অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন সেই অঞ্চলের আবহাওয়া পরিবর্তন বা নির্ধারণ করে। গতিশীল বায়ুরাশির প্রবাহ উষ্ণ অঞ্চল হইতে শীতল অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় এবং বায়ুমণ্ডলের সমতা রক্ষা করে ও আর্দ্রতার পরিবর্তন সাধন করে। দীর্ঘ বৎসর ধরে এরূপ বৈশিষ্ট্য সেই অঞ্চলের জলবায়ু নির্ধারণ করে।
37. বাতাগ্র:-
ইহার সৃষ্টি এবং শ্রেণি বিভাজন:-
দুটি বিপরীত গুণসম্পন্ন বায়ুপুঞ্জ পরস্পরের সম্মুখীন হলে সরাসরি মিশ্রন না ঘটিয়ে পরস্পরের মধ্যে এক বিচ্ছেদ রেখার সৃষ্টি করে একে বাতাগ্র বলে।
বাতাগ্র সৃষ্টির জন্য দুইটি বিশেষ অবস্থার প্রয়োজন:-
Ø বায়ুরাশির একটির তুলনায় অপরটি শীতল ও ভারী হতে হবে এবং
Ø বায়ুপ্রবাহ অভিসারী অর্থাৎ বিপরীত দিক থেকে পরস্পরের অভিমুখে প্রবাহিত হতে হবে।
প্রকৃতি ও গুনাগুনের উপর ভিত্তি করে বাতাগ্রকে চারটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়:-
Ø শীতল বাতাগ্র
Ø উষ্ণ বাতাগ্র
Ø অচল বাতাগ্র এবং
Ø অন্তধূর্ত বাতাগ্র
38. ঘূর্ণি বাতাস:-
নিম্নচাপকে কেন্দ্র করে বাতাস যখন তীব্রবেগে চক্রাকার গতি লাভ করে তখন তাকে ঘূর্ণি বাতাস বা চক্রাবাত বলে। ঘূর্ণি বাতাস দুই প্রকারের:-
Ø ক্রান্তীয় ঘূর্ণি বাতাস এবং
Ø বহিক্রান্তীয় ঘূর্ণি বাতাস
39. বিপ্রতীপ ঘূর্ণি বাতাস:-
যখন একটি ব্যাপক অঞ্চল জুড়ে উচ্চচাপ বলয় গঠিত হয় এবং তার কেন্দ্র থেকে চক্রাকারে অপসারী বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় তখন তাকে বিপ্রতীপ ঘূর্ণি বাতাস বলা হয়। স্যার ফ্রান্সিস গ্যালটন 1861 সালে সর্বপ্রথম এই শব্দ ব্যবহার করেন।
প্রতীপ ঘূর্ণি বাতাস দুই প্রকারের:-
Ø উপক্রান্তীয় উষ্ণ প্রতিপ ঘূর্ণি বাতাস এবং
Ø উচ্চ অক্ষাংশীয় শীতল প্রতিপ ঘূর্ণি বাতাস
40. মৌসুমী বাতাস,
এর সৃষ্টি, প্রভাব বা গুরুত্ব:-
ঋতু পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে প্রবাহিত সাময়িক বায়ুপ্রবাহকে মৌসুমী বাতাস বলে। আরবিয়ান “মনসিন” শব্দ থেকে উৎপত্তি মৌসুমী এক প্রকার পৃষ্ঠিয় বাতাস। গৃষ্মকালের গতিপ্রবাহ শীতকালের সম্পূর্ণ বিপরীত। দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব চীন ইত্যাদি অঞ্চলে এই বাতাস প্রবাহিত হয়।
গ্রীষ্মকালে জলপিষ্ঠের তুলনায় ভূভাগে উষ্ণতা বেশি হয় ফলে ভূভাগে নিম্নচাপ ও জলভাগে উচ্চ চাপের সৃষ্টি হয়। গতিকে গ্রীষ্মকালে মহাসাগর থেকে ভূভাগের দিকে শীতল ও সিক্ত বাতাস প্রবাহিত হয় এবং মুষলধারে বৃষ্টি হয়। শীতকাল ইহার সম্পূর্ণ বিপরীত। জলপৃষ্ঠের তুলনায় ভূভাগে উষ্ণতা কম হয় অর্থাৎ ভূভাগে উচ্চচাপ ও জলভাগে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। বায়ু ভূভাগ থেকে জলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়। এই বায়ু শুষ্ক ফলে বৃষ্টি পাত ঘটে না। শীত অনুভূত হয়। কিন্তু এই শুষ্ক বায়ু সাগরের উপর দিয়ে কিছুদূর প্রবাহিত হইলে সাগরের উপর থেকে জলীয়বাষ্প আহরণ করে আবার সম্মুখ পথের ভূখণ্ডে বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে।
41. স্থানীয় বাতাস ও আবহাওয়া নির্ধারণে ইহার ভূমিকা:-
ভু-অবয়বের বিভিন্নতা এবং উচ্চতার পার্থক্যের জন্য সীমিত অঞ্চল জুড়ে যে বায়ু প্রবাহের সৃষ্টি হয় তাকে স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ বলে। জলবাতাস, স্থলবাতাস,পার্বত্য বাতাস, সমতল বায়ু, লু, চিনুক, ফন ইত্যাদি স্থানীয় বাতাস।
স্থানীয় বাতাস অস্থায়ী বা অনিয়মিত। উষ্ণ ও আর্দ্র স্থানীয়বায়ু জলীয় বাষ্পের সাথে মিলে মেঘ ও বৃষ্টি ঘটাতে পারে। স্থানীয় উষ্ণ বায়ু তুষার আবৃত অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হলে বরফ গলাতেও পারে এবং গাছপালার উৎপন্ন হতে পারে। স্থানীয়ভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় এবং বায়ুপ্রবাহ ঘটে। উষ্ণ ও শুষ্ক বায়ু কয়েকদিন ধরে প্রবাহিত হলে ধুলোর ঝড় সৃষ্টি করে বিস্তর ক্ষতি সাধন করতে পারে। উত্তর ভারতের গঙ্গা সমতলে গ্রীষ্মকালে প্রবাহিত স্থানীয় বাতাসকে “লু” বলে।
42. জলবাতাস ও স্থলবাতাস:-
জল বাতাস এবং স্থলবাতাস স্থানীয় বাতাস। দিনের বেলা জলভাগ থেকে স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত বাতাস কে জলবাতাস এবং রাত্রের বেলা স্থলভাগ থেকে জলভাগের দিকে প্রবাহিত বাতাস কে স্থলবাতাস বলে।
জলভাগ ও স্থলভাগের উত্তাপ গ্রহণ ও ত্যাগ করার ক্ষমতা ভিন্ন ভিন্ন। স্থলভাগ দিনের বেলা অতি কম সময়ে তাপ শোষণ করে উত্তপ্ত হয় এবং রাত্রের বেলা খুব তাড়াতাড়ি তাপ ত্যাগ করে শীতল হয়।
কিন্তু জলভাগে দিনের বেলা অতি ধীরে ধীরে তাপ শোষণ করে এবং রাত্রের বেলা অতি ধীরে ধীরে তাপ ত্যাগ করে। এই পরিঘটনা দিনের বেলা জলভাগ থেকে স্থলভাগের উষ্ণতা বৃদ্ধি করে এবং জলভাগে উচ্চচাপ ও স্থলভাগে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এর ফলে জলভাগ থেকে স্থলভাগের দিকে শীতল বায়ু প্রবাহিত হয়। রাত্রে এর উল্টো বা বিপরীত হয় এবং স্থলভাগ থেকে জলভাগের দিকে বায়ু প্রবাহিত হয়।
43. বিভিন্ন স্থানের স্থানীয় বাতাস এবং তাদের নাম:-
চিনুক = যুক্তরাষ্ট্র, ফন = আল্পস পর্বতমালা, চিরক্কো = উত্তর আফ্রিকার সাহারা
খানসিন = ইজিপ্ট, সিমুম = আরব, লু = ভারত, মিস্ট্রাল = ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল অঞ্চল
WATCH VIDEOS ONLINE:
AND DO ON..........
*************************************












0 Comments
HELLO VIEWERS, PLEASE SEND YOUR COMMENTS AND SUGGESTION ON THE POST AND SHARE THE POST TO YOUR FRIEND CIRCLE.