বিশ্ব পরিবেশ দিবস –
2021
WORLD ENVIRONMENT DAY – 2021
প্রতিদিন যেভাবে দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে আমাদের পরিবেশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে
উঠছে। বিভিন্ন মারণ রোগের শিকার হচ্ছে সমস্ত প্রাণী জগৎ। দূষণমুক্ত পরিবেশ গঠনে প্রতি বছর ৫ ই জুন বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতার
মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনতার উদ্দেশ্যে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয়। আজ ৫ জুন ২০২১ বিশ্ব পরিবেশ দিবস যাহা আজকের আলোচ্য বিষয়।
আসুন এই পৃথিবীকে
বাসযোগ্য করে তুলি
আসুন সবাই মিলে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন
করি।
শুভ বিশ্ব পরিবেশ দিবস
এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবস
এবারের পরিবেশ দিবস ২০২১-র থিম (Environment Day 2021 Theme)
এই বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের থিম “বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধার করা” (Ecosystem Restoration)। ইকোলজিকাল রিস্টোরেশন সোসাইটি "ইকোলজিকাল রিস্টোরেশন" কে
"ইচ্ছাকৃত ক্রিয়াকলাপ হিসাবে সংজ্ঞা দেয় যা তার স্বাস্থ্য, অখণ্ডতা এবং টেকসইতার
বিষয়ে সম্মতি দিয়ে বাস্তুসংস্থানের পুনরুদ্ধার শুরু করে বা ত্বরান্বিত
করে"। বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধারে ক্ষয় নিয়ন্ত্রণ, বনভূমি, দেশীয় প্রজাতি এবং আগাছা
অপসারণ, অশান্ত অঞ্চলগুলির
উদ্দীপনা, দিবালোকের স্রোত, দেশীয় প্রজাতির
পুনঃপ্রবর্তন (স্থানীয়ভাবে অভিযোজিত দেশীয় প্রজাতি), এবং আবাসস্থল এবং ব্যাপ্তিসহ বিভিন্ন প্রকল্প, লক্ষ্যযুক্ত প্রজাতির জন্য উন্নতি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অনেক গবেষকে প্রক্রিয়াটিকে "সামাজিক-পরিবেশগত
পুনরুদ্ধার" বলে অভিহিত।
প্রাক আলোচনা:
মানুষ এবং পরিবেশ সভ্যতার সেই আদিম লগ্ন থেকে
পরস্পর পরস্পরের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। মানুষ জীবনে বেঁচে থাকার সকল প্রকার
উপাদান সংগ্রহ করে তার চারপাশের পরিবেশ থেকেই। আবার সেই মানুষই স্বার্থপরের মত
পরিবেশকে শোষণ করে যথেচ্ছভাবে। যে পরিবেশের উপর ভিত্তি করে মানব সভ্যতার এতো
উন্নতি ও সমৃদ্ধি, সেই পরিবেশের এমন শোষণ সভ্যতার পক্ষে
প্রতিকূল হয়ে দাঁড়ায়। ফলে দেখা দেয় পরিবেশের নানা ধরনের ব্যাপক
অবক্ষয়, বিপর্যয় এবং যার ফলস্বরূপ আসে নানা প্রকার
ব্যাধি, বিপর্যস্ত হয় বিশ্ব সমাজ। প্রকৃতির সাথে
সম্পর্কের অবক্ষয় মানুষকে ঠেলে দেয় নিশ্চিত ধ্বংসের পথে। তাই পরিবেশ ও মানুষের
পারস্পারিক অঙ্গীভূত নিবিড় সম্পর্ককে উদযাপনের উদ্দেশ্যে প্রতিবছরের জুন মাসের ৫
তারিখে পালন করা হয় বিশ্ব পরিবেশ দিবস। মানুষ ও প্রকৃতির চিরন্তন বন্ধনকে আরো
সুদৃঢ় করে তোলার ক্ষেত্রে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
মানব সভ্যতা এবং পরিবেশের মধ্যে সম্পর্ক:
মানব সভ্যতা এবং প্রকৃতির পারস্পারিক
বন্ধন চিরন্তন, শাশ্বত, অবিচ্ছেদ্য তথা
অনবদ্য। মানুষ নিজের জন্ম লগ্ন থেকেই বেঁচে থাকার সকল প্রকার সকল প্রকার উপাদানের
জন্য পরিবেশের উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। পরিবেশের ন্যূনতম সাহায্য ছাড়া মানব
সভ্যতার অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না। তাই আদিম যুগে মানুষ নিজের পরিবেশকে ঈশ্বর
রুপে শ্রদ্ধা করত।
পারস্পারিক গূঢ় এই মিথস্ক্রিয়ার
মাধ্যমেই মানব সভ্যতা সমৃদ্ধির মুখ দেখে। কিন্তু আধুনিক যুগের সূচনা লগ্নে যখন
মানুষ বস্তুকেন্দ্রিক জীবনযাপনের মায়াজালে জড়িয়ে পড়ল তখন থেকে পরিবেশের উপর
শুরু হলো ইচ্ছেমত শোষণ। যে পরিবেশকে আশ্রয় করে মানুষ নিজের সভ্যতা গড়ে তুলে
জীবনের উপাদান সংগ্রহ করত, সামান্য সুখ ভোগের সংকীর্ণ স্বার্থ চরিতার্থ করার নেশায়
মেতে উঠে এবার তারই ওপর শুরু করলো ব্যাপক যথেচ্ছাচার। মানুষের লোভের করাল গ্রাসে
ধ্বংস হতে থাকলো প্রকৃতি।
পরিবেশের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার:
বিশ্ব পরিবেশ দিবসের গুরুত্ব অনুধাবন
করার প্রাথমিক পর্যায়ে পরিবেশের উপর সভ্যতার নির্ভরশীলতা এবং যথেচ্ছাচার সম্পর্কে
অবগত হওয়া বিশেষ প্রয়োজন। আধুনিক সভ্যতা, বিশেষ করে
শিল্প বিপ্লবের পর থেকে মানুষের জীবন আবর্তিত হতে শুরু করল বস্তুকেন্দ্রিক
ভোগবিলাসকে ভিত্তি করে। সেই ভোগের বাসনা মেটাতে ব্যাপক যথেচ্ছাচার শুরু হল
পরিবেশের উপর।
আধুনিক যুগের প্রথম পর্যায়ে মানুষ
তথাকথিত উন্নয়নের উদ্দেশ্যে বিশ্ব জুড়ে বিস্তৃত বনভূমি নির্বিচারে ধ্বংস করতে
শুরু করল। অন্যদিকে শিল্প বিপ্লবের অমোঘ ফল হিসেবে দূষিত হতে থাকলো ভূমি, জল, বায়ু।
একদিকে যেমন সমুদ্রের জলে মিশতে থাকলো বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ, অন্যদিকে
তেমন বাতাসে নির্গত হল নানা বিষাক্ত গ্যাসের বাষ্প।
কৃষির উন্নতি ও অধিক ফলনের আশায় জমির
ওপর শুরু হলো ব্যাপক মাত্রায় কীটনাশক রাসায়নিক সারের প্রয়োগ। পৃথিবীকে তথাকথিত
সুস্থভাবে বসবাসযোগ্য করে তোলার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রাণীকূলের উপর শুরু হল
নির্বিচার হত্যালীলা। বিশ্ব থেকে একে একে নির্মূল হয়ে যেতে থাকলো নানা
গুরুত্বপূর্ণ পোকামাকড়, পশুপাখি, এমনকি অমূল্য
সম্পদ গাছপালা।
ধ্বংস ও বিপর্যয়:
আমাদের মনে রাখা দরকার পৃথিবীতে
পরিবেশের প্রত্যেকটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উপাদানও মানব সভ্যতার অস্তিত্বের মতনই
সমানভাবেই প্রাসঙ্গিক। এই প্রাসঙ্গিকতার দ্বারা সৃষ্টির ভারসাম্য রক্ষা হয়ে থাকে।
বিশ্বসংসারের এই সকল প্রাসঙ্গিক ও অপরিহার্য উপাদানকে ধ্বংস করলে সৃষ্টির আদিমতম
ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। ফলে প্রকৃতির উপর অনিয়ন্ত্রিত যথেচ্ছাচার ফিরে আসে ভয়ঙ্কর
বিপর্যয়ের রূপ নিয়ে।
মানুষ বর্তমান যুগে তেমনি বিভিন্ন
বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। প্রকৃতির প্রতি মানুষের চূড়ান্ত অবহেলা ও
নির্বিচার শোষণে বিধ্বস্ত পৃথিবীর বুকে ধ্বংসের অভিশাপরূপে নেমে আসছে বিপর্যয়।
যেমন সমুদ্রের বুকে মানুষের কদর্য লালসার অনিবার্য ফল হিসেবে ক্রমাগত ধ্বংস হয়ে
চলেছে সমুদ্রের বৈচিত্র্যময় জীবজগৎ, যার
সরাসরি প্রভাব পড়ছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে। অন্যদিকে আধুনিক কথাকথিত উন্নয়নের
আগুনে গরম হয়ে উঠছে সমগ্র পৃথিবীর আবহাওয়া যার অনিবার্য ফল বিশ্ব উষ্ণায়ন বা
গ্লোবাল ওয়ার্মিং।
আধুনিক শিল্পের নানা বিষবাষ্পের
রোষানলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাণিজগতের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য অপরিহার্য ওজোন স্তর।
আকাশ থেকে শান্তির বারিধারার বদলে আজ নেমে আসছে অ্যাসিড বৃষ্টি। ভূমির উপর অধিক
ফলনের লোভে অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় কীটনাশক রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে ভূমি
উর্বরতা হারিয়ে বন্ধ্যাত্বপ্রাপ্ত হচ্ছে। মানুষের জীবনধারণের শস্যে তথা পানীয়
জলে মিশে যাচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিক।
বিশ্ব পরিবেশ দিবসের অতীত:
৫ জুন বিশ্বের অন্যতম মেগা ইভেন্ট হিসাবে এই দিনটিকে পালন করে রাষ্ট্রপুঞ্জ। বিশ্বে সবুজায়ন ও প্রকৃতির গুরুত্ব বোঝাতেই এই দিনটিকে পালন করা হয়। ১৯৭২ সালে প্রথম বিশ্ব পরিবেশ দিবসের ঘোষণা করে রাষ্ট্রপুঞ্জ। সেটা ছিল মানব পরিবেশ নিয়ে আলোচনার স্টকহোম সম্মেলনের প্রথম দিন। মাত্র দু-বছরের মধ্যেই শুরু হয়ে যায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপনের পালা। ১৯৭৪ সালে ঘটা করে এই পরিবশে দিবস পালন শুরু হয়। প্রথমবার আমেরিকায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়। যার থিম রাখা হয় 'অনলি ওয়ান আর্থ'। স্থির হয়, প্রতি বছর পরিবেশ দিবস পালন করবে বিভিন্ন আয়োজক দেশ। সেই অনুযায়ী শুরু হয় পথা চলা।
বিশ্ব পরিবেশ দিবসের পটভূমি:
পরিবেশের ওপর মানুষের যথেচ্ছাচারের
অনিবার্য ফল হিসেবে নেমে আসা নানা বিপর্যয়ে প্রতিনিয়ত বিধ্বস্ত হচ্ছে মানব
সভ্যতাও। বিপদের এই পর্যায়ে আমাদের মনে রাখা দরকার যে পরিবেশ ও প্রকৃতি মানব
সভ্যতার উপর নির্ভরশীল নয় বরং মানব সভ্যতাই সর্বতোভাবে নির্ভরশীল এই বিশ্ব
প্রকৃতির উপর। প্রাণী জগতের উপর মানুষের নির্বিচার শোষণে বিপর্যস্ত বাস্তুতন্ত্রে
আজ নানাভাবে টান পড়ছে সর্বভুক মানবজাতির খাদ্যভান্ডারেও।
মানুষের পানীয় জল হয়ে উঠছে বিষাক্ত, অন্যদিকে
রাসায়নিক, কীটনাশক আর হাইব্রিডের বাড়বাড়ন্তে জীবনধারণের অন্নও উঠছে
বিষিয়ে। আবার এত কিছুর উপরে বিষাক্ত বায়ুর মধ্যে প্রতিনিয়ত নিঃশ্বাস নিতে বাধ্য
হচ্ছে আধুনিক যুগের উন্নত মানুষ। খুব স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে শরীরের ভিতরে দানা
বাঁধছে নানা প্রকার মারণ রোগ। ক্রমশ বেড়েই চলেছে হৃদরোগ, ফুসফুসের
ব্যাধি, চর্মরোগ, অ্যালঝাইমার, ক্যান্সার
ইত্যাদির প্রবণতা।
আশার কথা হলো, বিংশ
শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বহু শুভবুদ্ধি সম্পন্ন
মানুষ সভ্যতার এই ভয়ানক পরিণতির কথা আঁচ করতে পেরে পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্ব আরোপ
করার কথা বলেন। ক্রমেই পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন বিশ্বজুড়ে জোরদার হতে থাকে।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্দিষ্ট একটি সাংগঠনিক সংবিধি তৈরি করে পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্ব
আরোপ করার দাবি উঠতে থাকে। এইভাবে ধীরে ধীরে প্রস্তুত হয় বিশ্ব পরিবেশ দিবস
প্রতিষ্ঠার পটভূমি।
দিবসের সূচনা:
বিশ্ব পরিবেশ সুরক্ষা সংক্রান্ত
আন্দোলনের ক্ষেত্রে বরাবরের অগ্রগণ্য ছিল পশ্চিম ইউরোপের স্ক্যান্ডিনেভিয়ান
দেশগুলি। এদের মধ্যেও পরিবেশ রক্ষায় সর্বাপেক্ষা এগিয়ে সুইডেন। বর্তমানে
সুইডেনের অত্যন্ত পরিবেশ-সচেতন স্কুলপড়ুয়া গ্রেটা থুনবার্গ আমাদের সকলের পরিচিত।
এই সুইডেনের সরকার ১৯৬৮ সালের জুন মাস
নাগাদ সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কাছে সমকালীন প্রকৃতি ও
পরিবেশের ব্যাপক দূষণ সম্পর্কে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে একটি রিপোর্ট পেশ করে।
জাতিপুঞ্জ এই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই পরিবেশ রক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে বিশদে আলোচনার
উদ্দেশ্যে সকল সদস্য রাষ্ট্রের সম্মতিক্রমে ১৯৭২ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে
৫ই জুন থেকে ১৬ই জুন বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলনের আয়োজন করে।
এই সম্মেলনে পরিবেশ সুরক্ষা সংক্রান্ত
বিভিন্ন বিষয় বিশদে আলোচিত হয়। এটিই ছিল পৃথিবীর প্রথম পরিবেশ সংক্রান্ত কোনো আন্তর্জাতিক
সম্মেলন। এই সম্মেলনের পরের বছরই ১৯৭৩ সাল থেকে জুন মাসের ৫ তারিখকে সম্মিলিত
জাতিপুঞ্জ আন্তর্জাতিক বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের গুরুত্ব:
পৃথিবীতে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসাবে
একটি দিনকে আলাদা করে পালনের গুরুত্ব অপরিসীম। যে পরিবেশের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে
আজকের উন্নত মানব সভ্যতা, যে পরিবেশ আমাদের সমাজকে দিয়েছে বর্তমানের সমৃদ্ধি, সেই
পরিবেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য একটি দিন উৎসর্গ করা আমাদের সকলের পবিত্র
কর্তব্য।
আমাদের চারপাশের প্রকৃতি বা পরিবেশই
হলো বর্তমানকালের অহংকারী মানুষের উন্নত সমৃদ্ধ সভ্যতার মূল ধারক। এই ধারক ও
বাহকের মূলসত্তাই যখন গোড়া থেকে বিষিয়ে ওঠে সভ্যতারই ক্রিয়াকলাপে, তখন
আপাতদৃষ্টিতে উন্নত বলে মনে হওয়া সমাজ অচিরেই ভেঙে পড়ে তাসের ঘরের মতোন। সেই
ভাঙ্গনকে আটকানোর জন্য প্রয়োজন পরিবেশ রক্ষার।
আর এখানেই বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে একটি
দিন পালনের গুরুত্ব। এই দিনটি পালন এর মধ্যে দিয়ে সমাজের সর্বস্তরের কাছে পৌঁছে
যায় পরিবেশ সচেতনতার বার্তা। পরিবেশ এবং সভ্যতার পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া সম্বন্ধে
বহুলাংশে অজ্ঞ সাধারন মানুষ এই দিনটি পালনের মধ্য দিয়ে মানব জাতির অস্তিত্ব
রক্ষায় পরিবেশের গুরুত্বের অসীমতা সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে।
পৃথিবীজুড়ে কর্মসূচি:
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ঘোষণার পরের বছরই
১৯৭৪ সালের ৫ই জুন পৃথিবীজুড়ে সর্বপ্রথম পালিত হয় বিশ্ব পরিবেশ দিবস। সূচনা
লগ্নে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের পালন মূলত পৃথিবীর প্রথম সারির উন্নত দেশগুলির মধ্যে
সীমাবদ্ধ থাকলেও পরবর্তীকালে সময়ের সাথে সাথে তা ছড়িয়ে পড়েছে সমগ্র
বিশ্বজুড়ে। বর্তমানে পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশই একটু একটু করে পরিবেশের গুরুত্ব
সম্পর্কে সচেতন হয়ে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সময় যত এগোচ্ছে ততোই বাড়ছে বিশ্ব
পরিবেশ দিবস পালনের গুরুত্ব, উদ্যম এবং
প্রয়োজনীয়তাও। প্রত্যেক বছর উত্তর গোলার্ধে বসন্ত ঋতুতে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে
দিনটি শরৎ ঋতুতে মহা ধুমধাম সহকারে পালিত হয়। বিশ্বজুড়ে এই দিন বিভিন্ন কর্মসূচী
পালিত হয়। জাতীয়, আন্তর্জাতিক তথা তৃণমূল স্তর থেকে পরিবেশ সংরক্ষণের
উদ্দেশ্যে গৃহীত হয় এই সকল কর্মসূচি।
এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো
পরিচ্ছন্নতার প্রসার, দূষণ রোধ এবং বৃক্ষরোপণ। আন্তর্জাতিক স্তরে অন্তর্দেশীয়
লাভজনক তথা অলাভজনক বিভিন্ন সংস্থা এমনকি নানা অন্তর্দেশীয় কোম্পানিও এই দিনটিতে
বিশ্বব্যাপী বনসৃজন, বন সংরক্ষণ, সাগর
মহাসাগর পরিষ্কার করা, সকল প্রকার দূষণ রোধের মতন নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে।
এই বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের থিম 'বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধার করা' (Ecosystem Restoration)। বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধারে ক্ষয় নিয়ন্ত্রণ, বনভূমি, দেশীয় প্রজাতি এবং
আগাছা অপসারণ, অশান্ত অঞ্চলগুলির
উদ্দীপনা, দিবালোকের স্রোত, দেশীয় প্রজাতির
পুনঃপ্রবর্তন (স্থানীয়ভাবে স্থানীয়ভাবে অভিযোজিত দেশীয় প্রজাতি), এবং আবাসস্থল এবং
ব্যাপ্তিসহ বিভিন্ন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে including
লক্ষ্যযুক্ত প্রজাতির জন্য উন্নতি। তাছাড়া
বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটি দেশের সরকারের তরফে গৃহীত হয় পরিবেশ সচেতনতা
মূলক নানা কর্মসূচি। এই সকল কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করে পৃথিবীর স্কুল-কলেজের
পড়ুয়ারাও। তাছাড়া সমাজের সকল স্তরে এই দিনে পরিবেশের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা
বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়।
পরিশেষে বলি বর্তমানকালে
বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক পরিবেশেকে রক্ষা এবং সুস্থ
স্বাভাবিক পরিবেশের পুনঃস্থাপনের উদ্দেশ্যে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের গুরুত্ব
অসীম। সময়ের সাথে সাথে এই অসীমতা বাড়ছে বৈ কমছে না। তবে পরিবেশের রক্ষার
ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে একটি দিনকে পালন করাই যথেষ্ট নয়।
এই দিনটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো
সুস্থ পরিবেশের পুনঃস্থাপন। সমাজের সর্বস্তরে সকল মানুষ যদি পরিবেশের গুরুত্ব
সম্পর্কে অনতিবিলম্বে সচেতন না হয়ে ওঠে তাহলে এই মহৎ উদ্দেশ্য অধরাই থেকে যায়।
সেজন্য বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের সাথে সাথে এই দিনটি পালনের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও
আমাদের সর্বপ্রথম সচেতন হয়ে উঠতে হবে।
সেই সাথে উদ্যোগ নিতে হবে নিজেদের
চারপাশের মানুষের মধ্যে সচেতনতার প্রসারের জন্যে। আর সর্বোপরি পরিবেশ সম্পর্কে নিজেদের
মূল্যবোধকে গড়ে তুলতে হবে দৃঢ়ভাবে। একমাত্র তাহলেই বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের
প্রকৃত উদ্দেশ্য সাফল্যমন্ডিত হয়ে উঠবে।
তোমাদের জন্য কাজ:
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে থিম সহ একটি ছবি অঙ্কণ করে গ্রোপে পষ্ট করো এবং আজকের দিনটিতে কি কি কাজ করলে
লিখো।
0 Comments
HELLO VIEWERS, PLEASE SEND YOUR COMMENTS AND SUGGESTION ON THE POST AND SHARE THE POST TO YOUR FRIEND CIRCLE.