SEBA /
SMEBA CLASS 10 HISTORY CH 1 EXTRA QUESTIONS AND ANSWERS : PARTITION OF
BENGAL-SWADESHI MOVEMENT
ইতিহাস
প্রথম খণ্ড : বংগ বিভাজন (১৯০৫-১৯১১) স্বদেশী আন্দোলন ও ফলাফল।
EXTRA : অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর
সঠিক উত্তরটি বের কর ? MULTIPLE CHOICE
1. বঙ্গভঙ্গ কত সালে হয়েছিল ?
(i) ১৯০৪ সালে। (ii) ১৯০৭ সালে (iii) ১৯০৫ সালে (iv) ১৯০৯ সালে।
ANS: (iii)
2. কার শাসনকালে বঙ্গভঙ্গ করা হয় ?
(i) লর্ড কার্জন (ii) লর্ড লিটন (iii) লর্ড রিপন (iv) লর্ড ডালহৌসি।
ANS: (i)
3. বঙ্গভঙ্গ রদ (বাতিল) করা হয়
(i) ১৯০৯ সালে (ii) ১৯১০ সালে। (ii) ১৯১১ সালে (iv) ১৯১২ সালে।
ANS: (iii)
4. কত সালে কংগ্রেস বিভক্ত হয় ?
(i) ১৯০৯ সালে (ii) ১৯০৭ সালে (iii) ১৯১৬ সালে (iv) ১৯১৭ সালে।
ANS: (ii)
5. কোন অধিবেশনে কংগ্রেস বিভাজন হয় ?
(i) সুরাট অধিবেশনে (ii) নাগপুর অধিবেশনে (iii) লাহোর অধিবেশনে (iv) পাণ্ডু অধিবেশনে
ANS: (i).
6. স্বদেশী আন্দোলন আরম্ভ হয়
(i) ১৮৫৭ সালে। (i) ১৮৫৮ সালে। . (iii) ১৯০০ সালে (iv) ১৯০৫ সালে।
ANS: (iv)
7. মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়—
(i) ১৯০০ সালে (ii) ১৯০৬ সালে। (iii) ১৯১৬ সালে (iv) ১৯২০ সালে।
ANS: (ii)
8. মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা হলেন—
(i) স্যার সৈয়দ আহমেদ (ii) আবুল কালাম আজাদ (ii) নবাব সলিমুল্লা (iv) মহম্মদ আলী জিন্না।
ANS: (iii)
9. মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন—
(i) মহম্মদ আলী জিন্না (ii) নবাব সলিমুল্লা (iii) স্যার সৈয়দ আহমেদ (iv) আবুল কালাম আজাদ। ANS: (i).
10. কত সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল ?
(i) ১৯২০ সালে ১০ই এপ্রিল (ii) ১৯২১ সালের ২১ শে এপ্রিল
(iii) ১৯১৯ সালের ১৩ই এপ্রিল (iv) ১৯৩০ সালের ১৫ই এপ্রিল।
ANS: (iii)
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
Q.1. অবিভক্ত বঙ্গদেশের মোট জনসংখ্যা কত ছিল?
ANS: ৫৪ নিযুত।
Q.2.পূর্ববঙ্গ ও আসামের মোট আয়তন কত বর্গমাইল ছিল ?
ANS: ১,০৬, ৫৪০ বর্গমাইল।
Q.3. কোন তারিখে বঙ্গভঙ্গ প্রকল্প কার্যকরী করা হয়েছিল ?
ANS: ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর।
Q.4. বন্দেমাতরম্ সংগীতের রচয়িতা কে ছিলেন ?
ANS: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
Q.5. আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় স্থাপন করা কেমিকেল প্রতিষ্ঠানটির নাম কি ছিল ?
ANS: বেঙ্গল কেমিকেল।
Q.6. লাল-বাল-পাল কে কে ছিলেন ?
ANS: লালা লাজপত রায়, বাল গঙ্গাধর তিলক ও বিপিনচন্দ্র পাল।
Q.7. কোন তারিখে ব্রিটিশ সরকার দিল্লিতে বৈঠক ডেকে বঙ্গভঙ্গ প্রকল্প বাতিল করে ?
ANS: ১৯১১ সালের ২ ডিসেম্বর।
Q.8. কোন সনে মুসলিম লীগের সংগঠন গড়ে উঠেছিল ?
ANS: ১৯০৬ সনে।
Q.9. ব্রিটিশ-ভারত সরকার ঢাকার নবাব সলিমুল্লাকে কত টাকার ঋণ দিয়ে সরকারের পক্ষে এনেছিলেন ?
ANS: ১৪,০০,০০০ টাকা।
Q.10. ভাইসরয় লর্ড মিন্টোর ব্যক্তিগত সচিবের নাম কি ছিল ?
ANS: কর্ণেল ডানলপ স্মিথ।
Q.11. বঙ্গভঙ্গ কখন করা হয়েছিল ?
ANS: ১৯০৫ সালে।
Q.12. কার শাসনকালে বঙ্গভঙ্গ করা হয় ?
ANS: লর্ড কার্জনের শাসনকালে।
Q.13. বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সূচনা কখন হয় ?
ANS: ১৯০৫ সালের ৭ আগস্ট।
Q.14. বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে আন্দোলনকারীরা কোন গান গেয়েছিলেন ?
ANS: বন্দেমাতরম্।
Q.15. স্বদেশী আন্দোলনের যেকোন একটি কার্যসূচী লেখ।
ANS: বয়কট।
Q.16. জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ?
ANS: ১৯০৬ সালের ১৫ই আগস্ট।
Q.17. ১৯০৫ সালে কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল ?
ANS: বারাণসীতে।
Q.18. ১৯০৫ সালের জাতীয় কংগ্রেসের বেনারস অধিবেশনের সভাপতি কে ছিলেন ?
ANS: গোপালকৃষ্ণ গোখলে।
Q.19. ১৯০৬ সালে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল ?
ANS: কলকাতায়।
Q.20. ১৯০৬ সালে কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনের সভাপতি কে ছিলেন ?
ANS: দাদাভাই, নৌরোজী।
Q.21. ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসি কখন হয়েছিল ?
ANS: ১৯০৮ সালে।
Q.22. কর্ণেল ডালপ স্মিথ কে ছিলেন ?
ANS: ভাইসরয় লর্ড মিন্টোর ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন।
Q.23. মর্লি মিন্টো সংস্কার আইন কখন প্রণীত হয় ?
ANS: ১৯০৯ সালে।
Q.24. স্বদেশী আন্দোলনকালে প্রকাশিত একটি দৈনিক বাংলা পত্রিকার নাম লেখ।
ANS: যুগান্তর।
Q.25. স্বদেশী আন্দোলনকালে প্রতিষ্ঠিত একটি স্বদেশী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নাম লেখ।
ANS: বেঙ্গল কেমিকেল।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
1. স্বদেশী আন্দোলনের প্রধান কার্যসূচী তিনটি কি কি ছিল ?
ANS: স্বদেশী আন্দোলনের প্রধান কার্যসূচী হল— (ক) স্বদেশী (খ) বয়কট (গ) জাতীয় শিক্ষা।
2. স্বদেশী আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার দুটি কারণ উল্লেখ কর।
ANS: (ক) ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক আন্দোলন কঠোর হস্তে দমন করা।
(খ) ১৯০৭ সালে কংগ্রেস বিভাজনের ফলে আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে।
3. ১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইনের দুটি শর্ত (বৈশিষ্ট্য) উল্লেখ কর।
অথবা, ১৯০৯ সালের সংস্কার আইনের দুটি শর্ত (বৈশিষ্ট্য) উল্লেখ কর।
অথবা, মর্লি-মিন্টোর সংস্কার আইনের দুটি শর্ত (বৈশিষ্ট্য) উল্লেখ কর।
ANS: (ক) কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক সভায় বেসরকারি সভ্যসংখ্যা বৃদ্ধি করা।
(খ) হিন্দু মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচন প্রথার প্রবর্তন।
4. স্বদেশী আন্দোলনকালে বঙ্গদেশে গড়ে ওঠা দুটি স্বদেশী উদ্যোগের নাম উল্লেখ কর।
ANS: (ক) বঙ্গলক্ষ্মী কটন মিল, (খ) বেঙ্গল কেমিকেল।
5. স্বদেশী আন্দোলনের সন্ত্রাসবাদী ধারার চারজন মুখ্য প্রবক্তার নাম উল্লেখ কর।
ANS:
সন্ত্রাসবাদীরা হলেন - বিপিনচন্দ্র পাল, বাল গঙ্গাধর তিলক, লালা লাজপত রায়, ও অরবিন্দ ঘোষ ।
6. কংগ্রেসের যে কোন তিনজন নরমপন্থী নেতার নাম উল্লেখ কর।
ANS: নরমপন্থী নেতাগণ হলেন— ফিরোজ শাহ মেহতা, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও গোপালকৃষ্ণ গোখলে।
7. স্বদেশী আন্দোলনকালে বঙ্গদেশ হতে প্রকাশিত তিনটি সংবাদপত্রের নাম উল্লেখ কর।
ANS: (ক) যুগান্তর, (খ) বন্দেমাতরম্ ও (গ) সন্ধ্যা।
সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ
1. জাতীয় শিক্ষা,
2. মুসলিম লিগ,
3. লর্ড মিন্টো,
4. কর্ণেল ডানলপ স্মিথ,
5. বয়কট,
6. স্বদেশী।
ANS: 1. জাতীয় শিক্ষা : দেশের চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ শিক্ষাপ্রসারের ধারা রক্ষা করার জন্য জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। শচীন্দ্রনাথ বসুর উদ্যোগে কলকাতায় গঠিত হয় অ্যান্টি-সাকুলার সোসাইটি'। এই সংস্থা সরকারি আদেশে বিতাড়িত ছাত্রদের বিকল্প শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করে। প্রায় একই উদ্দেশ্যে সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘ডন সোসাইটি’। স্বদেশী শিক্ষাপ্রসারের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বদেশপ্রেম জাগ্রত করাও ছিল এই সমিতির লক্ষ্য। জাতীয় শিক্ষা রূপায়ণের জন্য অনেকেই উদার হাতে অর্থ সাহায্য করেন। প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘জাতীয় শিক্ষাপরিষদ’ (১৪ আগস্ট, ১৯০৬ খ্রিঃ)। এই পরিষদের উদ্যোগে কলকাতায় গড়ে ওঠে ‘বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ’। এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ ছিলেন শ্রীঅরবিন্দ ঘোষ। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার বিকাশও জাতীয় শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য ছিল। এই উদ্দেশ্যে স্থাপিত হয় ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’, বর্তমানে এটি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাপরিষদের তত্ত্বাবধানে জাতীয় শিক্ষা দ্রুত প্রসার লাভ করতে থাকে। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বাংলায় কয়েকশো মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে উঠে।
ANS: 2. মুসলিম লিগ : নবাব সলিমুল্লার নেতৃত্বে ১৯০৬ সনের ডিসেম্বর মাসে মুসলিম লিগের জন্ম হয়। ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে নিজ সম্প্রদায়ের স্বার্থ ও সুযোগ সুবিধা আদায় করা এবং কংগ্রেসের প্রভার ও প্রতিপত্তি খর্ব করার উদ্দেশ্যে মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা করা হয়।
ব্রিটিশ সরকার কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের মাধ্যমেই দেশে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপনের চেষ্টা করেছিল। মহম্মদ আলি জিন্না মুসলিম লিগের সভাপতি ছিলেন। শুরুতেই মুসলিম লিগ পাকিস্তানের দাবি উত্থাপন করে। দেশ বিভাজনের মাধ্যমে নতুন পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন ছিল মুসলিম লিগের একমাত্র উদ্দেশ্য। ১৯৪৬ সনে ক্যাবিনেট মিশন মুসলিম লীগের পাকিস্তান দাবী প্রত্যাখ্যান করে। ফলে সারাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেখা দেয়। ১৯৪৬ সালের ১৬ই আগস্ট ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ পালন করা হয়। অবশেষে লিগের দাবি মতো ১৯৪৭ সনে ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে ভারত ও
পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হয়।
ANS: 3. লর্ড মিন্টো : লর্ড মিন্টো ভারতের ভাইসরয় ছিলেন। তিনি লর্ড কার্জনের পর ভাইসরয় নিযুক্ত হন। ভাইসরয় হিসাবে কার্যভার গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে ভারতবর্ষ ও ইংল্যান্ডের মধ্যে দেশের শাসন সংস্কারের প্রশ্নটি বিশেষ অগ্রাধিকার লাভ করে। ইতিমধ্যে জন মর্লি ভারত পরিক্রমা মন্ত্রীরূপে কার্যভার গ্রহণ করেছিলেন। উভয়ের সম্মিলিত চেষ্টায় ১৯০৯ সালে একটি আইন বিধিবদ্ধ হয়। এটি মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইন নামে পরিচিত। এই আইন দ্বারা ভারতে ব্যাপক সাংবিধানিক সংস্কারের সাধন করা হয়। কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক সভায় বেসরকারী সভ্যসংখ্যা বৃদ্ধি
করা হয়। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শাসন পরিষদে ভারতীয় সদস্য নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। হিন্দু ও মুসলমানদের পৃথক নির্বাচন প্রথা প্রবর্তন করা হয়। ফলে এই দেশের সুপ্তপ্রায় সাম্প্রদায়িক মনোভাবকে পুনঃ জাগরিত করার পক্ষে সহায়ক হয়। এতে ভারতের জাতীয় আন্দোলনের প্রভূত ক্ষতি হয়। হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে আত্মঘাতী রাজনৈতিক বিরোধের সূত্রপাত হয়।
ANS: 4. কর্ণেল ডানলপ স্মিথ : কর্ণেল ডানলপ স্মিথ ভাইসরয় লর্ড মিন্টোর ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন। স্মিথ ও মিন্টো উভয়ের প্রধান লক্ষ্য ছিল—প্রথমত, মুসলমানগণকে স্বদেশী আন্দোলন হতে দূরে সরিয়ে রাখা এবং দ্বিতীয়ত, মুসলমানগণকে নিয়ে ভারতবর্ষে একদিকে কংগ্রেসের সমান্তরাল প্রতিদ্বন্দ্বী এবং অন্যদিকে ব্রিটিশ সরকারের সহযোগীরূপে রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলা। কর্ণেল ডানলপ স্মিথের প্রত্যক্ষ উস্কানি এবং সহযোগিতায় বোম্বাই-এ আগা খাঁর নেতৃত্বে ১৯০৬ সাল ১লা অক্টোবর তারিখে একটি মুসলিম দল সিমলাতে ভাইসরয় লর্ড মিন্টোর সঙ্গে গোপনে আলোচনায় মিলিত হয়। এর ফলস্বরূপ ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। |
ANS: 5. বয়কট : ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই জুলাই কৃষ্ণকুমার মিত্র সম্পাদিত ‘সঞ্জীবনী’ পত্রিকায় সরকারের বিরুদ্ধে বয়কটের ডাক দেওয়া হয়। ১৬ই জুলাই খুলনা জেলার বাগেরহাটে এবং ২১ শে জুলাই দিনাজপুরে আয়োজিত একটি সভাতে বয়কটের প্রস্তাব গৃহীত হয়। এই সকল প্রস্তাবে আগামী একবছরকাল জাতীয় শোকপালনের সিদ্ধান্ত এবং সরকারি দপ্তর, বিদ্যালয়, বিচারালয়, পঞ্চায়েত থেকে বাঙালি সদস্যরা পদত্যাগ করার অঙ্গীকার করেন। খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর, কলকাতা প্রভৃতি স্থানে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বয়কট আন্দোলনে ব্যাপক স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা দেয়। ভূস্বামীশ্রেণির নায়েব গোমস্তা প্রমুখ বয়কট আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা নেন। তাদের প্ররোচনায় সমাজের নিম্নস্তরের বিভিন্ন কর্মী বয়কট আন্দোলনে অংশ নেয়। ময়মনসিংহ, বরিশাল, ফরিদপুর, কালিঘাট প্রভৃতি অঞ্চলে, চর্মকার, ধোপা, নাপিত, পাচক, পুরোহিত প্রমুখ ইউরোপীয়দের সেবা করতে অস্বীকার করে। স্বদেশি শপথ গ্রহণের জন্য কালিঘাট মন্দিরে বিশেষ পূজায় সাধারণ মানুষ অংশ নেন।
১৯০৫-০৭ সময়কালে নিস্ক্রিয় প্রতিরোধ আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। ছাত্র, যুবা, কৃষক প্রমুখ দলে দলে প্রতিরোধ আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে। স্বদেশী প্রচারের মতো বয়কট আন্দোলনেও ছাত্র ও যুবসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কলকাতা ও পূর্ববাংলায় জেলাগুলিতে দলে দলে ছাত্ররা বিদ্যালয় বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়। বিলাতি বস্ত্র, মদ ও অন্যান্য দ্রব্যের দোকানের সামনে পিকেটিং-এর কাজে স্বেচ্ছাসেবী ভূমিকা পালন করে ছাত্রসমাজ।
ANS: 6. স্বদেশী : স্বদেশী আন্দোলনের প্রথম ধারাটি ছিল ‘গঠনমূলক স্বদেশী’। ড. সুমিত সরকার লিখেছেন, “নিষ্ফল ও আত্ম-অবমাননাকর ভিক্ষাবৃত্তির রাজনীতি বর্জন করে স্বদেশী শিল্প, জাতীয় শিক্ষা, গ্রামোন্নয়ন ও সংগঠনের মাধ্যমে আত্মশক্তি অর্জন করাই ছিল ওই ধারার লক্ষ্য। প্রফুল্লচন্দ্র রায়, নীলরতন সরকার, জে. চৌধুরী প্রমুখের ব্যবসায়িক উদ্যোগ, রবীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত ‘স্বদেশী ভাণ্ডার’ (১৮৯৭), ১৯০৩ এ স্থাপিত সরলাদেবীর ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ এবং ‘ডন সোসাইটি’র স্বদেশী বিপণি ইত্যাদির মাধ্যমে এই ধারার প্রকাশ ঘটে। ১৮৯০-১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কবিগুরু রচিত একাধিক প্রবন্ধে বাংলায় আত্মশক্তি অর্জন মানসিকতার প্রমাণ পাওয়া যায়। এই ধরনের কয়েকটি রচনা হল, ‘মন্ত্রী অভিষেক’ (১৮৯০), ‘শিক্ষার হেরফের’ (১৮৯২), ‘ইংরেজ ও ভারতবাসী’ (১৮৯৩), ‘অপমানের প্রতিকার’ (১৮৯৪), ‘অপরপক্ষের কথা' (১৮৯৮) ইত্যাদি। এগুলিতে তিনি নরমপন্থীদের
আবেদন-নিবেদন রাজনীতি বর্জন করে দেশবাসীকে আত্মশক্তি অর্জন দ্বারা বিদেশির অপশাসন রোধের আহ্বান জানান। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে ‘স্বদেশিসমাজ’ নামক বিখ্যাত বক্তৃতায় তিনি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ‘আত্মশক্তি’র ধারণাকে স্পষ্ট রূপ দেন। গ্রামবাংলায় স্বদেশী চেতনা প্রসারে সমিতিগুলি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। সমিতিগুলির মুখ্য কাজ ছিল দেশাত্মবোধক যাত্রা, গান, নাটক, লোকউৎসব, শরীরচর্চা ইত্যাদির মাধ্যমে গণসংযোগ ও স্বদেশচেতনা বৃদ্ধি করা। বাখরগঞ্জে মুকুন্দদাসের যাত্রাগানের আবেদন ছিল অত্যন্ত গভীর। ঢাকা, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ ও বাখরগঞ্জে ‘অনুশীলন সমিতি’, ‘ব্ৰতী’, ‘সুহৃদ ও সাধনা এবং স্বদেশ বান্ধব সমিতি ছিল খুবই সক্রিয়।
রচনাভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
1. ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ করা হল কেন ?
অথবা, ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জন কেন বঙ্গভঙ্গ করেন ?
অথবা, লর্ড কার্জনের বঙ্গ বিভাজনের প্রকৃত কারণ কি?
অথবা, বঙ্গভঙ্গ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।
ANS: ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পুরোভাগে ছিল বাংলা ও বাঙালী জাতি। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বাংলাদেশেই ছিল সমস্ত চিন্তানায়ক ও জাতীয় আন্দোলনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ। বাঙালীর শক্তি নষ্ট করার জন্য লর্ড কার্জন সুশাসনের অজুহাতে ১৯০৫ সালে বাংলাদেশকে দুভাগে ভাগ করেন। আসাম ও পূর্ববঙ্গ নিয়ে একটি এবং পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে আর একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ গঠিত হল।লর্ড কার্জনের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাঙালী জাতির ঐক্য বিনাশ করে তাদের জাতীয়তাবোধের উপর আঘাত হানা।জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ বাঙালী জাতিকে বিচ্ছিন্ন করে তাদের সংহতি ও জাতীয়তাবাদী ঐক্য বিনাশ করাই ছিল বঙ্গভঙ্গের মূল উদ্দেশ্য। এছাড়া বঙ্গভঙ্গের অন্তর্নিহিত অপর উদ্দেশ্য ছিল সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ রোপণ করা।
2. স্বদেশী আন্দোলন সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।
অথবা, স্বদেশী আন্দোলনের গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর।
ANS: লর্ড কার্জন শাসনকার্যের সুবিধার অজুহাত দেখিয়ে বাঙালীর ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে নষ্ট করবার জন্য ১৯০৫ সালে বাংলাদেশকে দুই ভাগে ভাগ করেন। এর ফলে সারা দেশব্যাপী বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে এক তুমুল আন্দোলন আরম্ভ হয়। দেশময় বিলাতী দ্রব্য বর্জনের আন্দোলন চলতে থাকে। ক্রমে এর প্রভাব সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। এটাই স্বদেশী আন্দোলন নামে খ্যাত। ইংরেজ সরকার এই আন্দোলন দমন করবার জন্য কঠোর নীতি অবলম্বন করেন। | ১৯০৪-০৫ সালে বিশেষত চরমপন্থীগণ অনুপ্রেরণা লাভ করে। আন্দোলনের পদ্ধতি সম্পর্কে নরমপন্থী ও চরমপন্থীদের মধ্যে মতানৈক্য ঘটে। এর ফলে ১৯০৭ সালে সুরাট অধিবেশনে কংগ্রেসে বিভাজন ঘটে। চরমপন্থীদের নেতা ছিলেন অরবিন্দ ঘোষ, বারীন ঘোষ প্রমুখ দেশপ্রেমিকগণ। গুপ্তভাবে ইংরেজ হত্যা আরম্ভ হল। ক্ষুদিরাম, কানাইলাল, প্রফুল্ল চাকী প্রমুখ বাংলার বীর সন্তানগণ ফাঁসির কাষ্ঠে প্রাণ দিলেন। ইংরেজ সরকারের এই নির্যাতন নীতিতে সারাভারতে প্রবল উত্তেজনা দেখা দেয়। ফলে ইংরেজ সরকার ভারতবাসীকে সন্তুষ্ট করার জন্য ও কিছু রাজনৈতিক অধিকার দেওয়ার জন্য ১৯০৯ সালে এক নতুন সংস্কার আইন প্রবর্তন করেন। কিন্তু এই সংস্কারে ভারতবাসী সন্তুষ্ট হল না। গণ আন্দোলনের গুরুত্ব বুঝতে পেরে সরকার ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করতে বাধ্য হলেন।
3. মর্লি মিন্টো সংস্কার সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।
অথবা, ১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইন সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।
অথবা, ১৯০৯ সালের মর্লি মিন্টো সংস্কার আইনের শর্তগুলি বর্ণনা কর।
ANS: ১৮৯২ সালের পরিষদ আইন ভারতবাসীকে সন্তুষ্ট করতে পারে নি। ভারতের জাতীয় কংগ্রেস শক্তিলাভ করে ভারতবাসীগণের রাজনৈতিক অধিকার বিস্তারের জন্য দাবী করতে লাগল। ব্রিটিশ সরকার এই দাবী উপেক্ষা করতে পারল না। তখন ভারত সচিব লর্ড মর্লি এবং বড়লাট লর্ড মিন্টোর সম্মিলিত চেষ্টায় একটি আইন বিধিবদ্ধ হয়। এটি তৃতীয় ভারতীয় পরিষদ আইন বা মর্লি-মিন্টো সংস্কার নামে পরিচিত।
এই আইন দ্বারা-(১) কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক সভায় বেসরকারী সভ্যসংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়।
(২) সভ্যগণকে বাৎসরিক আয়-ব্যয় এবং শাসনকার্য পরিচালনা সম্বন্ধে প্রস্তাব উপস্থিত করার এবং উত্থাপিত প্রস্তাব সম্বন্ধে ভোট দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়।
(৩) কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শাসক পরিষদে ভারতীয় সদস্য নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়।
(৪) হিন্দু ও মুসলমানদের পৃথক নির্বাচন প্রথা প্রবর্তন করা হয়।
এই আইনটি রচনার পশ্চাতে ইংরেজ শাসকগণের একটি মারাত্মক কূটনৈতিক দূরভিসন্ধি নিহিত ছিল। হিন্দু ও মুসলমানদের জন্য পৃথক পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা এই দেশের সুপ্তপ্রায় সাম্প্রদায়িক মনোভাবকে পুনঃ জাগরিত করবার পক্ষে সহায়ক হল। এর ফলে ভারতের জাতীয় আন্দোলনের প্রভূত ক্ষতি হয় এবং হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে আত্মঘাতী রাজনৈতিক বিরোধের সুত্রপাত হয়।
4. স্বদেশী আন্দোলন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
ANS: ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পুরোভাগে ছিল বাংলা ও বাঙালী জাতি। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ পর্বে এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বাংলাদেশেই ছিল সমস্ত চিন্তানায়ক ও জাতীয় আন্দোলনের অগ্রণী ব্যক্তিবর্গ। বাঙালী তার জাতীয় সাহিত্যে স্বাধীনতা লাভের প্রেরণা পেল। ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের “আনন্দমঠ”, নবীনচন্দ্র সেনের “পলাশীর যুদ্ধ”, দীনবন্ধু মিত্রের “নীলদর্পণ” প্রভৃতি গ্রন্থ পাঠে বাঙালীর মনে জাতীয়তাবোধের বিকাশ হল। বাংলাদেশে এই জাতীয়তাবোধের বিকাশ দেখে ইংরেজ সরকার ভয় পেল। সেই সময় ভারতের ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড কার্জন। কূটনীতিতে তিনি ছিলেন খুব পাকা ও ঘোর সাম্রাজ্যবাদী। বাঙালীর শক্তিকে নষ্ট করবার জন্য তিনি সুশাসনের অজুহাতে ১৯০৫ সালে বাংলাদেশকে দুই ভাগে ভাগ করেন। আসাম ও পূর্ববঙ্গ নিয়ে একটি এবং পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে আর একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ গঠিত হল। লর্ড কার্জনের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাঙালী জাতির ঐক্য বিনাশ করে তাদের জাতীয়তাবোধের উপর আঘাত হানা। জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ বাঙালী জাতিকে বিচ্ছিন্ন করে তাদের সংহতি ও জাতীয়তাবাদী ঐক্য বিনাশ করা ছিল বঙ্গভঙ্গের মূল উদ্দেশ্য। এছাড়া বঙ্গভঙ্গের অন্তর্নিহিত অপর উদ্দেশ্য ছিল সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষকে লালন করা। এইভাবে ১৯০৫ সালের ১৬ই অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হবে বলে ঘোষণা করা হল।
ফলাফল (স্বদেশী আন্দোলন) : লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গ বাঙালীর ঐক্য ও জাতীয়তাবোধের উপর যে কঠিন আঘাত হেনেছিল তাতে বাঙালী জাতি এক অভূতপূর্ব দৃঢ়তা ও শক্তি নিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অপকৌশলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। বাঙালী জাতির কাছে বঙ্গভঙ্গ মায়ের অঙ্গছেদনের মতই শোকাবহ, মর্মাহত ঘটনা বলে বিবেচিত হয়েছিল। বঙ্গভঙ্গ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বাংলার সর্বত্র গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-নগরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সোচ্চার হয়ে উঠে। লোকমান্য তিলক, লোখলে, রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, দেশপ্রেমিক অশ্বিনীকুমার দত্ত, বক্তা বিপিনচন্দ্র পাল, আনন্দমোহন বসু, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ প্রাতঃস্মরণীয় দেশনায়কগণের নেতৃত্বে দেশব্যাপী বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে এক তুমুল আন্দোলন আরম্ভ হল। ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের রচিত মন্ত্র “বন্দেমাতরম্” হল এই জাতীয় আন্দোলনের মন্ত্র। স্বামী বিবেকানন্দের প্রচারিত নির্ভীকবাণী এবং রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান জনসাধারণকে অনুপ্রাণিত করল। বাঙালীর মিলিত কণ্ঠে ধ্বনিত হল—
“বাঙালীর প্রাণ বাঙালীর মন, বাঙালীর ঘরে যত ভাই বোন,, এক হউক, এক হউক, এক হউক হে ভগবান।” | দেশময় বিলাতী দ্রব্য বর্জনের আন্দোলন চলতে লাগল। এটা স্বদেশী আন্দোলন নামে খ্যাত। ইংরেজ সরকার এই আন্দোলন দমন করবার জন্য কঠোর নীতি অবলম্বন করলেন। এর ফলে বিপ্লবীগণ স্থানে স্থানে হিংসাত্মক কার্য আরম্ভ করলেন। এই বিপ্লবীদের নেতা ছিলেন শ্রীঅরবিন্দ ঘোষ, বারীন ঘোষ প্রমুখ দেশপ্রেমিকগণ। গুপ্তভাবে ইংরেজ ইত্যা আরম্ভ হল। ক্ষুদিরাম, কানাইলাল, প্রফুল্ল চাকী প্রমুখ বাংলার বীরগণ সরকারের ফাঁসির কাঠে প্রাণ দিলেন। ফাঁসি ও দ্বীপান্তর হল বিপ্লবীদের ভাগ্যলিপি। তাদের নির্ভীক মৃত্যুবরণ বাঙালী যুবকদের মধ্যে নতুন প্রেরণার সৃষ্টি করল। ইংরেজ সরকারের এই নির্যাতন নীতিতে সারা ভারতে প্রবল উত্তেজনা, ও উন্মাদনার সৃষ্টি হল। নির্মম রাজকর্মচারীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার জন্য বিপ্লবীরা বাংলাদেশে “অনুশীলন”, “আত্মান্নোতি” প্রভৃতি অনেকগুলি গুপ্ত সমিতি শ্রীঅরবিন্দের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশে অগ্নিযুগের সূচনা করে। স্বদেশী আন্দোলন প্রশমিত করবার জন্য ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীকে কিছু রাজনৈতিক অধিকার ছেড়ে দিতে ১৯০৯ সালে এক নতুন সংস্কার আইন প্রবর্তন করেন। এটা মর্লেমিন্টো সংস্কার নামে পরিচিত। কিন্তু এই সংস্কারে ভারতবাসী সন্তুষ্ট হয় নি। গণ-আন্দোলনের গুরুত্ব বুঝতে পেরে ব্রিটিশ সরকার ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করতে বাধ্য হলেন।
5. বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন কাকে বলে ? সংক্ষেপে আলোচনা কর।
ANS: পটভূমি ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উৎসকেন্দ্র ছিল বাংলা। রাজনৈতিক সচেতনতা ও জাতীয়তাবোধে বাঙালী ছিল অগ্রগণ্য। পাশ্চাত্য শিক্ষায় অগ্রণী এবং জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ বাঙালীর স্বাধীনকার চেতনা ব্রিটিশ সরকারের কাম্য ছিল না। তাই রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন জাতীয়তাবাদী ঐক্যের মূলে কুঠারাঘাত করতে উদ্যত হয় ব্রিটিশ সরকার। লর্ড কার্জনের আমলে বাংলাদেশকে দ্বিখণ্ডিত করে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের স্থায়িত্বকে সুনিশ্চিত করার এক জঘন্য ষড়যন্ত্র করা হয়। এই ঘৃণ্য প্রয়াসের প্রতিবাদে সমগ্র বাংলা তথা ভারতে যে আন্দোলনের উদ্ভব হয়, তা বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন বা স্বদেশী আন্দোলন (১৯০৫-১১ খ্রিঃ) নামে খ্যাত। লর্ড কার্জনের আমলে বঙ্গবিভাগ হলেও, তিনি এর উদ্ভাবক ছিলেন না। ইতিপূর্বে ১৮৫৪, ১৮৭৪ ও ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে নানা অজুহাতে বাংলাকে ভাগ করার পরিকল্পনা হয়েছিল। তবে গণবিক্ষোভের ফলে সেগুলি কার্যকরী হয় নি। এখন লর্ড কার্জন গভীর রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি নিয়ে বাংলাকে বিভক্ত করতে তৎপর হন। তাঁর নির্দেশে বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর অ্যাণ্ডু ফ্রেজার নতুনভাবে বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব দেন। স্বরাষ্ট্র সচিব হাবার্ট রিজলের অনুমোদনক্রমে এটি ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের ৩রা ডিসেম্বর ‘রিজলেনোট' নামে প্রকাশিত হয়। শেষ পর্যন্ত স্থির হয় যে, সমগ্র চট্টগ্রাম, ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলাকে আসামের সাথে যুক্ত করে একটি নতুন প্রদেশ গঠন করা হবে। এই পরিকল্পনা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। সরকার নিরুপায় হয়ে এই প্রস্তাবও রদ করে এবং গোপনে বঙ্গভঙ্গের একটি নতুন পরিকল্পনা তৈরি করে। নতুন পরিকল্পনা অনুসারে স্থির হয় যে, ঢাকা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিভাগ, রাজশাহি বিভাগ, পার্বত্য ত্রিপুরা ও মালদহ জেলা, দার্জিলিংকে আসামের সঙ্গে যুক্ত করে পূর্ববঙ্গ ও আসাম নামে একটি নতুন প্রদেশ গঠন করা হবে। নবগঠিত, প্রদেশের শাসন-দায়িত্বে থাকবেন একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নর বা ছোটলাট এবং এর রাজধানী, হবে ঢাকা। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে গঠিত হবে বাংলা প্রদেশ এবং এর রাজধানী হবে কলকাতা।
লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের সপক্ষে যুক্তি দেখান যে,
(১) একজন গভর্নরের পক্ষৈ বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার মতো এত বড়ো প্রদেশে সুষ্ঠু শাসন প্রবর্তন করা সম্ভব হচ্ছে না।
(২) পূর্ববাংলা কলকাতার প্রভাব থেকে মুক্ত থাকলে ঐ অঞ্চলের শ্রী বিকাশ ত্বরান্বিত হবে।
(৩) পূর্ববাংলার মুসলিম অধিবাসীরা হিন্দু সংখ্যাগুরু পশ্চিমবাংলা থেকে মুক্ত হয়ে ন্যায়সঙ্গত অধিকার পাবে। (
৪) চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন এবং আসাম-চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগ সম্প্রসারণ করে চট্টগ্রাম বন্দর মারফত সস্তায় চা রপ্তানি সম্ভব হবে। এতে শ্রম ও অর্থ দুইই বাঁচবে।
বলা বাহুল্য, লর্ড কার্জনের উন্নত ও দক্ষ প্রশাসন প্রতিষ্ঠার যুক্তি ছিল একটি ছলনা মাত্র। আসলে বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা ছিল গভীর ষড়যন্ত্র ও দূরভিসন্ধির ফল। ভারতের জাতীয়তাবাদের প্রধান কেন্দ্র ছিল বাংলা। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বাংলাতেই প্রথম ধ্বনিত হয়। ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বেও ছিল বাঙালীদের সার্বিক প্রাধান্য। বাংলার ঐক্য ও জাতীয় চেতনার স্ফুরণ ইংরেজদের কাছে বিপদসংকেত বলে মনে হয়। লর্ড কার্জন বাংলাকে ভাগ করে একই সাথে বাংলার জাতীয়তাবোধ ও জাতীয় কংগ্রেসের ভিত্তি ভেঙ্গে ফেলার পরিকল্পনা করেন।
বাঙালির সমস্ত আবেগ ও যুক্তিকে অগ্রাহ্য করে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৯ শে জুলাই বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয় এবং ১৬ই অক্টোবর থেকে বঙ্গভঙ্গ কার্যকরী হবে বলে স্থির হয়। এর প্রতিবাদে এক প্রবল আন্দোলন শুরু হয়, যা ‘স্বদেশী আন্দোলন' নামে খ্যাত। ১৯০৫ থেকে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ, বঙ্গভঙ্গ প্রত্যাহার পর্যন্ত এই আন্দোলনের ঢেউ সারা বাংলা এবং ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে উত্তাল করে।
6. স্বদেশী আন্দোলনের মূল কাৰ্যসূচী কি ছিল ? প্রতিটি কাৰ্যসূচীর বিষয় উল্লেখ করে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
ANS: ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর করা হয়। সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠে। সারাদেশ ব্যাপি হরতাল ও ধমর্ঘটের ডাক দেওয়া হয়। দিনটি পালিত হয় “জাতীয়শোকদিবস” হিসাবে। রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে ১৬ই অক্টোবর ‘রাখি বন্ধন’ দিবস রূপে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আন্দোলনের অস্ত্র হিসাবে স্বদেশী, বয়কট ও জাতীয় শিক্ষা দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে।
(ক) বয়কট : ১৯০৪ সালের ১৩ই জুলাই, কৃষ্ণকুমার মিত্র সম্পাদিত “সঞ্জীবনী” পত্রিকায় সরকারের বিরুদ্ধে বয়কটের ডাক দেওয়া হয়। আগামী একবছর কাল জাতীয় শোক পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকারি দপ্তর, বিদ্যালয়, বিচারালয়, পঞ্চায়েত হতে বাঙালী সদস্যরা পদত্যাগ করার অঙ্গীকার করেন। বয়কট আন্দোলনে যুব ও ছাত্রসমাজ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। |
(খ) স্বদেশী : স্বদেশী আন্দোলনের প্রথম ধারাটি ছিল ‘গঠনমূলক স্বদেশী’। স্বদেশী শিল্প, জাতীয় শিক্ষা, গ্রামোন্নয়ন ও সংগঠনের মাধ্যমে আত্মশক্তি অর্জন করাই ছিল এই ধারার লক্ষ্য। প্রফুল্ল রায়, নীলরতন সরকার, জে. চৌধুরী প্রমুখের ব্যবসায়িক উদ্যোগে, রবীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত ‘স্বদেশী ভাণ্ডার’ প্রভৃতির মাধ্যমে এই ধারার প্রকাশ ঘটে। গ্রাম বাংলায় স্বদেশী চেতনা প্রসারে সমিতিগুলি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। ঢাকা, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ ও বাখরগঞ্জে ‘অনুশীলন সমিতি’, ‘ব্রতী’, ‘সুহৃদ’ ও ‘সাধনা এবং স্বদেশী বান্ধব’ সমিতি অত্যন্ত সক্রিয় ছিল।
(গ) জাতীয় শিক্ষা : দেশের চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ শিক্ষাপ্রসারের ধারা রক্ষা করবার জন্য জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলবার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। জাতীয় শিক্ষা রূপায়ণের জন্য অনেকেই উদার হাতে অর্থ সাহায্য করেন। ১৯০৬ সনের ১৪ আগস্ট জাতীয় শিক্ষা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই পরিষদের উদ্যোগে কলকাতায় গড়ে উঠে ‘বেঙ্গল ন্যাশানাল কলেজ’। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার বিকাশও জাতীয় শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য ছিল। এই উদ্দেশ্যে ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’ স্থাপিত হয়। বর্তমানে এটা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়েছে। জাতীয় শিক্ষা পরিষদের তত্ত্বাবধানে জাতীয় শিক্ষা দ্রুত প্রসার লাভ করতে থাকে। স্বদেশী আন্দোলন ভারতীয় জাতীয় জীবন ও আন্দোলনের ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। এই আন্দোলন সর্বপ্রথম ভারতের জাতীয়তাবোধকে প্রাণবন্ত ও গতিশীলরূপে উপস্থাপিত করে। আন্দোলনের সংগ্রামী কর্মসূচী ভারতীয় জনমতকে বুঝাতে সক্ষম হয় যে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ‘স্বরাজ’ অর্জন সম্ভব।
7. রাজনৈতিক দল হিসাবে মুসলিম লিগের পটভূমি সম্পর্কে সংক্ষেপে উল্লেখ কর।
ANS:
সূচনা : ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১লা অক্টোবর আগা খাঁর নেতৃত্বে ৩৫ জন সদস্যবিশিষ্ট এক মুসলিম প্রতিনিধি দল সিমলায় বড়লাট মিন্টোর সাথে সাক্ষাৎ করেন। এই প্রতিনিধি দল মুসলমানদের জন্য (১) সরকারি ও বেসরকারি চাকুরিতে সংরক্ষণ,
(২) পৌরসভা ও জেলাপরিষদগুলিতে বেশি সংখ্যায় মুসলমানদের প্রতিনিধিত্বের প্রতিশ্রুতি,
(৩) কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভাগুলিতে মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা এবং
(৪) একটি পৃথক মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি করেন।
লর্ড মিন্টো এই প্রস্তাবগুলি সহানুভূতির সাথে বিবেচনার প্রতিশ্রুতি দেন। ভারতে সাম্প্রদায়িকতার বিস্তারে সিমলা বৈঠকের গুরুত্ব অসীম। সিমলা বৈঠকে-
(১) ব্রিটিশ সরকার এই প্রতিনিধি দলকে ভারতীয় মুসলমান সম্প্রদায় বলে স্বীকৃতি দেয় এবং
(২) মুসলমানদের পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দ্বারা সরকার মুসলমান সম্প্রদায়কে ভারতে একটি স্বতন্ত্র জাতি’ বলে মেনে নেয়।
মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা : সিমলা বৈঠকের সাফল্য অভিজাত মুসলমানদের একটি নিজস্ব রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তুলতে উৎসাহিত করে। সিমলায় মুসলিম প্রতিনিধি দলের নেতা আগা খাঁ নিজ আত্মজীবনীতে স্পষ্ট লিখেছেন যে, তাঁর একান্ত ইচ্ছা হল মুসলমানদের জন্য একটি পৃথক রাজনৈতিক সংস্থা গড়ে তোলা এবং ভারতের মধ্যে মুসলমানদের স্বতন্ত্র জাতি হিসাবে ব্রিটিশ সরকারের স্বীকৃতি আদায় করা। সিমলা বৈঠকের পর এই কাজে প্রধান ভূমিকা নেন ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ খাঁ। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তিনি ‘সর্বভারতীয় মুসলিম মৈত্রী সংঘ’ গঠনের প্রস্তাবসহ একটি চিঠি মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন করেন। ১৯০৬-এর ৩০ শে ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত মহামেডান শিক্ষা সম্মেলনে তিনি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলিম নেতাদের আহ্বান করেন। এখানে সভাপতির ভাষণে ভিকার-উল-মুলক মুসলমানদের জন্য পৃথক সংগঠনের প্রস্তাব তোলেন এবং হাকিম আজমল খাঁ সেই প্রস্তাব সমর্থন করেন। প্রতিষ্ঠিত হয় ‘মুসলিম লিগ’। মহসিন-উল-মূলকও ভিকার-উল-মূলক-এর যুগ্ম সম্পাদক মনোনীত হন। মুসলিম লিগের চারটি মূল লক্ষ্য ঘোষণা করা হয়:-
(১) ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে মুসলমানদের
রাজনীতিতে অংশগ্রহন সুনিশ্চিত করা,
(২) ভারতীয় মুসলমানদের রাজনৈতিক স্বার্থ ও অধিকারগুলি রক্ষা করা ও বৃদ্ধি করা,
(৩) জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিদন্দি হওয়া এবং
(৪) উপযুক্ত উদ্দেশ্যগুলি ক্ষুগ্ন না করে অন্যান্য সম্প্রদায়ের সাথে সদ্ভাব ও মৈত্রী রক্ষা করা মুসলিম লিগের গঠনতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্যণীয়
ছিল ।
(১) কংগ্রেসের মতো লিগও ছিল উচ্চবিত্ত ও শিক্ষিত শ্রেণির সংগঠন। জমিদার ও জোতদার শ্রেণির স্বার্থে স্থাপিত এই সংগঠন সাধারণ মানুষ বা মধ্যবিত্ত শ্রেণির সুখদুঃখ সম্পর্কে আগ্রহী ছিল না।
(২) নবাবদের প্রাধান্য ছিল নিরঙ্কুশ। এর সদর কার্যালয় প্রথম স্থাপিত হয় আলিগড়ে এবং পরে লক্ষ্ণৌতে।
***********************
0 Comments
HELLO VIEWERS, PLEASE SEND YOUR COMMENTS AND SUGGESTION ON THE POST AND SHARE THE POST TO YOUR FRIEND CIRCLE.