ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 8-10 BENGALI RAPID
READER
সেবা অসম দশম শ্রেনী বাংলা দ্রুত পঠন
বৈচিত্র্যপূর্ণ অসম
পাঠ – রাভাগণ
রাভাগণ
সারসংক্ষেপ:
রাভারা মূলত আদিম জাতি।
এরা অসম মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছেন। নিজস্ব ঐতিহ্য, বিশ্বাস আখ্যান - উপাখ্যান দ্বারা রাভারা
সমৃদ্ধ জাতি। মঙ্গোলীয় গোষ্ঠী রাভা জাতি সামাজিক দিক থেকে বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত
যেমন - রংদানি, নাতি, দাহরি, মায়তরি, কোচ, বিতলিয়া, হানা, মদাহি ইত্যাদি। বর্তমানে রাভাদের বাসস্থান, জনসংখ্যা, পরিচয়
ক্রমাগতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে এবং বিজ্ঞানসম্মতভাবে অধ্যয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে
রাভা জাতির ঐতিহাসিক পটভূমি অধিক স্পষ্ট ও সঠিকভাবে পাওয়া যাবে। রাভা পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়
এবং আসামের একটি স্বল্প পরিচিত তপশিলি ভুক্ত উপজাতি। পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি এবং
আসামের গোয়ালপাড়া এবং কামরূপ জেলায় রাভাভাষী মানুষ বাস করেন। রাভা অসমের পঞ্চম
বৃহত্তম তপশিলি ভুক্ত উপজাতি।
রাভা জাতির যেভাবে পরিচয়
রয়েছে, ঠিক সেইভাবে তাদের নিজস্ব
ভাষা। রয়েছে। রাভা ভাষা নিশ্চিতভাবে ব্যাকরণ সম্মত ভাষা। গবেষণা ও অনুশীলনের অভাবে
পূর্বে রাভা ভাষা বিস্মৃতির গর্ভে লীন হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। যদিও বর্তমানে এই
ভাষা যথেষ্ট উদ্ধার হয়েছে আর পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের নতুন পদক্ষেপ নেওয়ায় রাভা
ভাষা পূনর্জীবিত হয়ে উঠেছে। |
আদিতে
রাভা সমাজ মাতৃতান্ত্রিক ছিল যদিও কালের পরম্পরায় পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায়
রূপান্তরিত হয়েছিল। ছেলেমেয়েরা মায়ের গোত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। পিতার গোত্র পাম' হলে আর মায়ের গোত্র ‘রংখ' হলে
ছেলেমেয়েরা রংখ' গোত্রের অন্তর্ভুক্ত হবে।
মায়ের গোত্রের তরফ থেকে যত গোত্রের জন্ম সেগুলোই হচ্ছে ‘মাহারি’ এবং মাহারি সূত্রে নিকটস্থ মাহারির সম্পত্তির
উপর পূর্ণ অধিকার থাকত।
নৃত্য ও
গীত রাভাদের সমাজের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তাঁদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের শুরু ও শেষে
থাকে নাচ ও গান। বলা হয় যে সকল রাভা মহিলাই নৃত্য ও গীতে পারদর্শী। রাভারা নিজস্ব কলা
সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধশালী জাতি গোষ্ঠী। রাভা সমাজ লোকগীত, লোককথা, লোক
বিশ্বাস ও লোক সংস্কৃতিতে ভরপুর। রাভাদের সমাজ জীবনে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন পজা, পার্বণ, উৎসব
উপলক্ষে রচিত ও গেয় গীত, শব্দ, সুর, তাল, লয়, বাদ্য, নৃত্য ইত্যাদি নৃত্যগীতে দুঃখ থেকে আনন্দ, প্রেম থেকে বিরহ এবং বিভিন্ন গাথার প্রকাশ
দেখা যায়।
রাভারা
প্রকৃতির উপাসক। রাভাদের মধ্যে প্রথাগত ভাবে মূর্তি পূজোর প্রচলন নেই। তবে
বর্তমানে তাঁরা মূল ধর্ম পালনের সাথে সাথে হিন্দু ধর্মের কিছু আচার আচরণ ও পালন
করেন। রাভাদের প্রধান দেবতা হলেন “ঋষি” বা “মহাকাল”।
বিষ্ণুপ্রসাদ
রাভা ভারতের অসম রাজ্যের একজন কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, অভিনেতা, চিত্রকার
ও মুক্তিযোদ্ধা, বিপ্লবী ছিলেন। কাশীর হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদর্শন করা
নটরা নৃত্যে মুগ্ধ হয়ে হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন
বিষ্ণুপ্রসাদ রাভাকে কলাগুরু উপাধি দিয়েছিলেন।
শব্দার্থ :
পুনর্জীবিত - পূনরায়
জীবিত; পূর্ণাঙ্গ - পুরোপুরি; লিঙ্গুইস্টিক - ভাষাতাত্ত্বিক; মাছরাঙা - এক ধরনের পক্ষী বিশেষ, যা মাছ শিকার করে; দেশদ্রোহী - দেশের শত্রু; উজ্জীবিত - নতুনভাবে বেঁচে ওঠা; আবাহন - আহ্বান/স্বাগতম; জনমানসের - লোকসম্মুখে; পেনসন - ভাতা; বেতার
- আকাশবাণী; অকাল - অসময়ে; শিল্পী - সৃষ্টিশীলতা; অসীম - সীমাহীন; নিঃশব্দে - শব্দহীনতা; প্রাবল্য - স্রোত।
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
Q.1 রাভারা কোন্ গোষ্ঠীর লোক?
ANS:- মঙ্গোলীয় গোষ্ঠী।
Q.2 রাভা ভাষা উত্তরণের সোনালী
যুগকে কী বলা হয়?
ANS:- ‘চাম্পায়’ ও প্রাক ‘চাম্পায়’ বলা হয়।
Q.3 রাভারা মূলত কোন জাতি?
ANS:- আদিম।
Q.4 রাভারা কী ধরনের উপাসক?
ANS:- জড় উপাসক।
Q.5 রাভারা কোন্ কোন্ রাজ্যে
ছড়িয়ে আছেন?
ANS:- অসম, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে।
Q.6 আদিতে রাভা সমাজ কী ছিল?
ANS:- মাতৃতান্ত্রিক ছিল।
Q.7 কালক্রমে রাভা সমাজ কোন্ সমাজ
ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়?
ANS:- পিতৃতান্ত্রিক।
Q.8 পিতার গোত্র ‘পাম' হলে
আর মায়ের গোত্র ‘রংখ’ হলে ছেলেমেয়েরা কোন গোত্রের অন্তর্ভুক্ত হবে?
ANS:- ‘রংখ’ গোত্রের।
Q.9 ‘লিঙ্গুইস্টিক
সার্ভে অফ ইণ্ডিয়া’ কত সালে প্রকাশিত হয়?
ANS:- ১৯০৩ সালে।
Q.10 কত সালে রাভা ভাষার সংবাদপত্র
‘চিঙি খুরাং' প্রকাশ পায়?
ANS:- ২০০৫ সালে।
Q.11 মায়ের গোত্রের তরফ থেকে যত
গোত্রের জন্ম, সেগুলোকে কী বলা হয়?
ANS:- মাহারি ।
Q.12 রাভাদের প্রধান দেবতা কে?
ANS:- রিসি বা মহাদেব ।
Q.13 রাভাদের কৃষ্টি সংস্কৃতির
প্রতীক স্বরূপ কী?
ANS:- মানচালেংকা।
Q.14 ছাভোর রাজ্যের রাজার নাম কী?
ANS:- পরশুরাম রাভা।
Q.15 ‘রাভা বুরঞ্জি’তে কোন্ কোন্ রাজাদের নাম রয়েছে?
ANS:- বীর রাজা দদান, মারুক্ষেত্রী।
Q.16 ফেডার ডোবাতে কার শেষ স্মৃতি
রয়েছে?
ANS:- দদানের শেষ স্মৃতি।
Q.17 কোন্ রাজার দ্বারা ‘বায়খো’ পূজা করা হয়েছিল?
ANS:- দদানের।
Q.18 আখ্যান অনুসারে রাভারা
প্রাচীনকাল থেকে কার পূজা অর্চনা করত?
ANS:- মহাদেবের।
Q.19 রাভারা মহাদেবের পূজা ছাড়া
আর কোন কোন দেবদেবীর পূজা করত?
ANS:- লাঙা দেবতা ও অন্যান্য
দেবদেবীর পূজাও করত।
Q.20 বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা কত সালে
জন্মগ্রহণ করেন?
ANS:- ১৯০৯ সালের ৩১
জানুয়ারিতে।
Q.21 কত খ্রিস্টাব্দে বিষ্ণুপ্রসাদ
রাভাকে দেশদ্রোহী সাজিয়ে কারারুদ্ধ করা হয়?
ANS:- ১৯৬২ সালে।
Q.22 কত বছর বয়সে বিষ্ণুপ্রসাদ
রাভা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন?
ANS:- ২১ বছর।
Q.23 প্রসন্ন পামের পিতা ও মাতার
নাম কী?
ANS:- পিতা কমলকুমার রাভা ও মাতা
দাখেল বালা রাভা।
Q.24 প্রসন্ন পামের কে? তার জন্ম কত খ্রিস্টাব্দে হয়েছিল?
ANS:- রাভা কৃষ্টির রূপকার। ১৯৩২
সালে।
Q.25 রাজেন রাভা কে? ‘অভিধানেই মোর শুরু’ উক্তিটি
কার?
ANS:- কৃতী শিক্ষক ও যশস্বী
সাহিত্যিক। রাজেন রাভার উক্তি।
Q.26 কত খ্রিস্টাব্দে, বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে
নৃত্য প্রদর্শন করেছিলেন?
ANS:- ১৯৩৯ সালে।
Q.27 কত খ্রিস্টাব্দে বিষ্ণুপ্রসাদ
রাভার মৃত্যু হয়?
ANS:- ১৯৬৯ সালের ২০ জুন।
Q.28 বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা'র দুটি মূল্যবান গ্রন্থের উল্লেখ করো।
ANS:- ‘সোনপাহি’ ও ‘মিচিং
কনেং'।
Q.29 কত সালে বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা
বিধায়ক নির্বাচিত হন এবং কার সঙ্গে প্রণয় সূত্রে আবদ্ধ হন?
ANS:- ১৯৬৭ সালে বিষ্ণুপ্রসাদ
রাভা বিধায়ক নির্বাচিত হন এবং মোহিনী রাভার সঙ্গে প্রণয় সূত্রে আবদ্ধ হন।
Q.30 বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা কী নামে
বিখ্যাত? তার পিতা ও মাতার নাম উল্লেখ
করো।
ANS:- কলাগুরু নামে বিখ্যাত।
পিতার নাম সর্দার বাহাদুর গোপাল চন্দ্র রাভা এবং মাতা নাম গেথি রাভা।
Q.31 বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা প্রবেশিকা
পরীক্ষায় কী পদক লাভ করেছিলেন এবং কোন মহাপুরুষের প্রতি তার প্রবল আসক্তি ছিল?
ANS:- ১৯২৬ সালে ‘কুইন এক্সপ্রেস’। মহাপুরুষ শংকরদেবের প্রতি
তার প্রবল আসক্তি ছিল।
Q.32 রাভারা সামাজিকভাবে কী রক্ষা
করে আসছে? এবং তারা কী শিকার করত?
ANS:- একতা রক্ষা করে আসছে। তারা
বন্যজন্তু শিকার, মৎস্য শিকার করত।
Q.33 রাভারা মূলত কোন গোষ্ঠীর? সামাজিক দিক থেকে রাভারা কী কী শাখায় বিভক্ত?
ANS:- মঙ্গোলীয় গোষ্ঠী। রংদানি, পাতি, দাহরি, মায়তরি, কোচ, বিতলিয়া, হানা, মদাহি ইত্যাদি শাখায় বিভক্ত।
Q.34 রাভা ভাষা উত্তরণের সোনালি
যুগকে কী বলা হয়? ‘চিঙি খুরাং’ কখন প্রকাশিত হয়?
ANS:- ‘চাম্পায়’ ও ‘প্রাক চাম্পায়’ বলা হয়। ২০০৫ সালে ‘চিঙি খুরাং’ প্রকাশিত
হয়।
Q.35 রাভারা কীসের উপাসক? কী কী বস্তু তারা উৎসর্গ করত?
ANS:- জড় উপাসক। পাথর, গাছপালা ইত্যাদির পূজা করে মোরগ, শূকর, কবুতর
ইত্যাদি উৎসর্গ করত।
Q.36 কার নৃত্য উপভোগ করে
বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার মনে অফুরন্ত প্রেরণা জেগেছিল? এবং
কার সান্নিধ্য পেয়ে তার জীবন উজীবিত হয়েছিল?
ANS:- পাভলভারের নৃত্য উপভোগ করে
বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার মনে অফুরন্ত প্রেরণা জেগেছিল। জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালার
সান্নিধ্য পেয়ে তার(পাভলভারের) জীবন উজীবিত হয়েছিল।
ছোট প্রশ্নোত্তর
Q.1 রাভারা মূলত কোন জাতি? তারা কোন্ কোন্ প্রদেশে ছড়িয়ে আছে? এবং কী কী শাখায় রাভারা বিভক্ত?
ANS:- রাভারা মূলত আদিম জাতি।
তাঁরা মেঘালয়, অসম ও পশ্চিমবঙ্গের
বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে। তারা বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত যেমন - রংদানি, পাতি, দাহরি, মায়তরি, কোচ, বিতলিয়া, হানা, মদাহি ইত্যাদি।
Q.2 রাভা ভাষার কয়টি অভিধান
রয়েছে? অভিধানগুলোর নাম কী? নিখিল রাভা সাহিত্য সভার উদ্যোগে কী কী
পাঠ্যপুস্তক প্রকাশিত হয়েছে?
ANS:- দুটি অভিধান রয়েছে। রাভা, ইংরাজি ও অসমিয়া ভাষার ‘সামলজসিনি রাওসামি’ নামের
পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনীয় পরিভাষা প্রকাশ পেয়েছে। বর্তমান নিখিল রাভা সাহিত্য সভার
উদ্যোগে ‘ফামানসিনি’ (পরিচয়) থেকে পৌরমৌতকাপসিনি (স্নাতকোত্তর)
শ্রেণি পর্যন্ত রাভা ভাষার ডিপ্লোমা কোর্সের পরীক্ষার জন্যে নিজস্ব প্রচেষ্টায়
পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ পেয়েছে।
Q.3 রাভা ভাষায় উত্তরণের
সোনালিযুগকে কী বলা হয়? চাম্পায় আলোচনার
মাধ্যমে রাভা ভাষার কীরূপ দেখা
যায়? ‘চিঙি খুরাং’ কখন প্রকাশ পায়?
ANS:- রাভা ভাষা উত্তরণের সোনালি
যুগকে ‘চাম্পায়’ ও ‘প্রাক চাম্পায়’ বলা হয়। চাম্পায় আলোচনার মাধ্যমে বা ভাষার জীবন্ত রূপ দেখা যায়। এর
বহু বছর পর অর্থাৎ ২০০৫ সালে রাভা ভাষার সংবাদপত্র ‘চিঙিখুরাং’ প্রকাশ
পায়।
Q.4 আদিতে রাভাদের মধ্যে কোন সমাজ
ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল? পাম কী? এবং রংখ কী?
ANS:- আদিতে রাভা সমাজে
মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। ‘পাম’ হলো রাভা জনসমাজের পৈতৃক গোত্র। আর ‘রংখ’ হলো
রাভা সমাজের মায়ের গোত্র।
Q.5 রাভাদের সমাজ ব্যবস্থা কী
ধরনের ছিল? সংক্ষেপে আলোচনা কর।
ANS:- আদিতে রাভা সমাজ
মাতৃতান্ত্রিক ছিল, যদিও কালের পরম্পরায় তারা
পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায়,
রূপান্তরিত
হয়। ছেলেমেয়েরা মায়ের গোত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। পিতার গোত্র ‘পাম’ হলে আর মায়ের গোত্র ‘রংখ’ হলে ছেলেমেয়েরা ‘রংখ’ গোত্রের
অন্তর্ভুক্ত হবে। মায়ের গোত্রের তরফ থেকে যত গোত্রের জন্ম, সেগুলোই হচ্ছে মাহারি এবং মাহারি সূত্রে
নিকটস্থ মাহারির সম্পত্তির উপর পূর্ণ অধিকার থাকত।
Q.6 রাভাদের সংস্কৃতির পরিচয়
দাও।
ANS:- রাভারা নিজস্ব
কলা-সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধশালী জাতি গোষ্ঠী, রাভা
সমাজ লোকগীতি, লোককথা, লোক উৎসব ও লোক-সংস্কৃতিতে ভরপুর। রাভাদের
সমাজ জীবনে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন পূজা-পার্বণ, উৎসব
উপলক্ষে রচিত ও গেয় গীত, শব্দ, প্রতাল, লয়, বাদ্য, নৃত্য
ইত্যাদি নৃত্যগীতে দুঃখ থেকে আনন্দ, প্রেম
থেকে বিরহ বিভিন্ন গাথার প্রকাশ দেখা যায়। রাভা কৃষ্টি সংস্কৃতিতে প্রাচীন কাল
থেকে প্রতীক স্বরূপ হচ্ছে ‘মানচালেংকা’ বা মাছরোকা পাখি (মাছরাঙা)। এটা রাভা
সমাজের লোক বিশ্বাস।
Q.7 রাভা সমাজে বীর বীরাঙ্গনাদের
সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
ANS:- বাহারিস্তান-ই-ঘায়েবি’ বুরঞ্জি অনুসারে সতেরো শতকের দ্বিতীয় দশকে ‘ছাম্ভোর রাজ্যের রাজা ছিলেন রাজা বীর পরশুরাম
রাভা। সেভাবেই রাভা বুরঞ্জিতে বীর রাজা দদান, মারুক্ষেত্রী
প্রভৃতি যোদ্ধাদের নাম রয়েছে। এই বীর বীরাঙ্গনাদের অজস্র অমর কাহিনি পুঞ্জীভূত
আছে। এই রাজাদের রাজত্বকালের অনেক স্মৃতি এখনও মাকরি পাহাড়, রংজুলি, কল্যাণপুরে
এখনো রয়েছে।
Q.8 রাভাদের উৎসব পূজা পার্বণের
বর্ণনা দাও।
ANS:- বুরঞ্জি অনুসারে রাভাদের
বীর রাজা দদানের দ্বারাই ‘বায়খো পুজা করা হয়েছিল
আর পরবর্তীকালে তা বায়খো পূজায় পরিণত হয়। রাভাদের প্রধান দেবতা রিসি বা মহাদেব।
আখ্যান অনুসারে রাভারা প্রাচীনকাল থেকেই মহাদেবের পূজা অর্চনা করত। সেইসঙ্গে লাঙা
দেবতা ও অন্যান্য দেবদেবীর পূজাও করত। রাভারা জড় উপাসক, পাথর, গাছপালা
ইত্যাদির পূজা করে মোরগ, শূকর, কবুতর ইত্যাদি উৎসর্গ করত।
Q.9 রাভাদের জীবিকা নির্বাহের
সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
ANS:- প্রাচীনকাল থেকে রাভারা
সামাজিকভাবে একতা রক্ষা করে আসছে। বন্যজন্তু শিকার, মৎস্য
শিকার ইত্যাদি পরুষ ও মহিলা উভয়ে একসঙ্গে করে। গ্রামের পূজাপার্বণ, বিবাহ, শ্রাদ্ধ
ইত্যাদিতে মহিলা ও পুরুষ উভয়েই অংশ গ্রহণ করে। প্রাচীনকালে সংঘটিত বিভিন্ন যুদ্ধ
বিগ্রহেও মহিলা ও পুরুষ উভয়ের সক্রিয় সহযোগিতার প্রমাণ রয়েছে। কৃষিকাজেও মহিলা
ও পুরুষ উভয়েই সমানভাবে অংশগ্রহণ করে। যুদ্ধ বিগ্রহের প্রতি অধিক আকর্ষণ থাকার
দরুণ রাভা জাতিকে ক্ষত্রিয় বলা হয়।
Q.10 টীকা লিখ :- (ক) বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা, (খ) রাজেন রাভা, (গ)
প্রসন্ন পাম, (ঘ) ড° বীরুবালা রাভা,
ANS:-
(ক) বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা :- কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, নৃত্যবিদ, অভিনেতা বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার জন্ম ঢাকা শহরের
সেনা শিবিরে ১৯০৯ সালের ৩১ জানুয়ারিতে হয়েছিল। সর্দার বাহাদুর গোপাল চন্দ্র রাভা
ও গেথি রাভার সন্তান বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা কলাগুরু নামে পরিচিত। ১৯২৬ সালে তিনি
তেজপুর হাইস্কুল থেকে প্রথমে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাশ করে 'কইন এক্সপ্রেস’ পদক
লাভ করেছিলেন।
(খ) রাজেন রাভা :- কৃতী, শিক্ষক, যশস্বী
সাহিত্যিক, গবেষক রাজেন রাভার জীবন
কৃতিত্বে পরিপূর্ণ। অভিধানেই মোর শুরু' বলতেন
রাজেন রাভা। তার 'রাভা। লোককথা', 'রাভা জনজাতি ইত্যাদি গ্রন্থ ছাড়াও চল্লিশটির
অধিক প্রবন্ধ রচনা করে অসমীয়া সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। ১৯২০ সালের ১৮
সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেছেন রাজেন রাভা।
(গ) প্রসন্ন পাম - রাভা কৃষ্টির রূপকায়
প্রসন্ন পামের জন্ম ১৯৩২ সালের ২০ তারিখ গোয়ালপাড়া জিলার বালিজান চক্রের
অন্তর্গত লাতাপারা গ্রামে হয়েছিল। তার পিতা কমলকুমার রাভা ও মাতা দাখেল বালা
রাভা। পূর্ব গারো পাহাড় জিলার মানিকগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে
প্রসন্ন পাম আগিয়া এম ভি স্কুল থেকে পাশ করেছিলেন।
(ঘ) ড° বীরুবালা রাভা : ১৯৪৯ সালে গোয়ালপাড়া
জিলার ঠাকুরবিলা গ্রামে বীরুবালা রাভার জন্ম হয়েছিল। তার পিতার নাম কালিয়ারাম
রাভা ও মাতা সাগরবালা রাভা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা
গ্রহণ করে মাত্র ১৫ বছর বয়সে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। বীরুবালা রাভার কর্মজীবন বোনাই
কাটাইয়ের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল।
দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর
Q.1 রাভা জাতির ক্রমবিকাশে
কলাগুরু বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার অবদান আলোচনা করো।
ANS:- কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, নৃত্যবিদ, অভিনেতা বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার জনা ঢাকা শহরের
সেনা শিবিরে ১৯০৯ সালের ৩১ জানুয়ারিতে হয়েছিল। সর্দার বাহাদর গোপাল চন্দ্র রাভা
ও গেথি রাভার সন্তান বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা কলাগুরু নামে বিচিত। বিষ্ণু রাভার প্রাথমিক
শিক্ষা ঢাকার ইংরাজি মাধ্যমের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু হয়েছিল।
১৯২৬ সালে তিনি তেজপুর
হাইস্কুল থেকে প্রথমে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাশ করে কইন এক্সপ্রেস’ পদক লাভ করেছিলেন। মহাপুরুষ শংকরদেবের প্রতি
তার প্রবল আসক্তি ছিল। একটা সময় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাবল্যে কলকাতা শহর
অস্থির হয়ে উঠেছিল। দেশপ্রেমী বিষ্ণুপ্রসাদ রাভাও সেই আন্দোলনে যোগদান করায়
বিটিশপ্রশাসনের দৃষ্টিতে ধরা পড়েছিলেন। সেই সময় বিষ্ণু রাভা রিপণ কলেজ ছেড়ে
কোচবিহারের ভিক্টোরিয়া কলেজে নিঃশব্দে ভর্তি হন। ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র ২১ বছর
বয়সি বিষ্ণপ্রসাদ রাভা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে ব্রিটিশ শাসনের
বিরুদ্ধে কবিতা লিখেছিলেন -
“রাজ্যে আছে দুইটি পাঁঠা একটি কালো একটি সাদা।
রাজ্যের যদি মঙ্গল চাও।
দুইটি পাঁঠা বলি দাও।” এভাবেই বিষ্ণু প্রসাদ রাভার জীবনের বৈপ্লবিক
সূত্রপাত হয়েছিল। ব্রিটিশ সরকারের ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে পড়ে ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ার
পথ বন্ধ হওয়ায় তিনি আবার মাইকেল কলেজে ভর্তি হয়ে শিক্ষা গ্রহণে ব্রতী
হয়েছিলেন। কলকাতায় গিয়ে হাতেকলম তুলে নিয়ে লিখতে শুরু করেন। আবাহন, বাঁহি ইত্যাদি কাগজে তার রচনা প্রকাশ হওয়ার
সঙ্গে সঙ্গে অসমিয়া সাহিত্য প্রেমিক সমাজে নতুন করে পরিচিত হলেন বিষ্ণুপ্রসাদ
রাভা।
Q.2 রাভা সমাজের উন্নতিতে রাজেন
রাভার অবদান আলোচনা করো।
ANS:- কৃতী শিক্ষক, যশস্বী সাহিত্যিক, গবেষক রাজেন রাভার জীবন কৃতিত্বে পরিপূর্ণ। ‘অভিধানেই মোর শুরু’ বলতেন রাজেন রাভা। তার রাভা লোককথা’, ‘রাভা জনজাতি ইত্যাদি গ্রন্থ ছাড়াও চল্লিশটির
অধিক প্রবন্ধ রচনা করে অসমিয়া সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। ১৯২০ সালের ১৮
সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন রাজেন রাভা।
আজীবন সাহিত্য সাধক, সমাজ ও মানবপ্রেমী রাজেন রাভার বর্ণাঢ্য জীবনের
প্রথম জীবন ভীষণ দুঃখ ও কষ্টের মধ্যে অতিবাহিত। ১৯৪৯ সালে তিনি জোরহাট নর্মাল
স্কুলে মাসিক ২০টাকা বৃত্তি পেয়ে অধ্যয়নের সুযোগ লাভ করেছিলেন। অবশ্য এর আগে
তিনি কৃষিকাজ করার সঙ্গে মণিহারি সামগ্রীরও ব্যবসা করেছিলেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে
যোগদান করে তিনি করব কিংবা মরব'
বাহিনীতে
ভর্তি হয়েছিলেন। ১৯৩৮ সালে জোরহাটের
কোকিলমুখে এক অধ্যক্ষের তত্ত্বাবধানে 'অসম
বঙ্গীয় সারস্বত আশ্রম-এর ঝাষ বিদ্যালয়ে এক বছর সংস্কৃত ও বাংলা ভাষা অধ্যয়ন করে
এই দুই ভাষা সুষ্ঠভাবে আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অবশ্য বিভিন্ন কারণবশত এই গবেষণামূলক
খিসিস) গ্রন্থটি বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেওয়ার সুযোগ না পেলেও এই গ্রন্থটি রাতাদের
বিষয়ে রচিত এক অসাধারণ গ্রন্থ হিসেবে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।
Q.3 রাভা কৃষ্টির রূপকার
প্রসন্ন পাম সম্বপর্কে আলোচনা করো।
ANS:- রাভা কৃষ্টির রূপকার
প্রসন্ন পামের জন্ম ১৯৩২ সালের ২০ তারিখ গোয়ালপাড়া জিলার বালিজান চক্রের
অন্তর্গত লাতাপারা গ্রামে হয়েছিল। তার পিতা কমল কুমার রাভা ও মাতা দাখেল বালা
রাভা। পূর্বে গারো পাহাড় জিলার মানিকগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা শুরু করে
প্রসন্ন পাম আগিয়া এম. ভি স্কুল থেকে পাশ করেছিলেন।
রাভা কৃষ্টির রূপকার
প্রসন্ন পাম বাল্যকাল থেকেই রাভা কৃষ্টির সাধনায় ব্রতী ছিলেন। বেতার শিল্পী
হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করে তিনি অনেক গীত রচনা করে সুর সৃষ্টি করেছিলেন। এই গীতের
সুর ও ছন্দ এখনও জনপ্রিয় রয়েছে। 'দদান
বীর নাটকের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জনকারী প্রসন্ন পামের মারুক্ষেত্রী (নাটক), সৃষ্টিবিধান, ময়রাশক্তি, লাঙামক্তি, কামগিরি
শক্তি, পিদান সংসার, মায়া হাসং. লেখা তেয়া জমা তংসা ইত্যাদি
গ্রন্থগুলি অপ্রকাশিত অবস্থায় থেকে যায়।।
ফলত প্রসন্ন পাম সমগ্র
জীবন ধরে রাভা কৃষ্টির অক্লান্তভাবে সাধনা করে ১৯৫২ সালে অমনী বালা রাভার সঙ্গে
পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন।
Q.4 রাভা সমাজের নেতৃত্ব
প্রদানকারী ড° বীরুবালা রাভার অবদান আলোচনা
করো।
ANS:- ডাইনি হত্যার মতো
অন্ধবিশ্বাসকে সমাজ থেকে নিশ্চিহ্ন করে একটি সুস্থ সমাজ গড়ার চেষ্টায় নিজেকে
উৎসর্গ করেছেন সংগ্রামী নেত্রী বীরুবালা রাভা। ১৯৪৯ সালে গোয়ালপাড়া জিলার
ঠাকুরবিলা গ্রামে বীরুবালা রাভার জন্ম হয়েছিল। তার পিতার নাম কালিয়ারাম রাভা ও
মাতা সাগরবালা রাভা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহণ করে
মাত্র ১৫ বছর বয়সে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। বীরুবালা রাভার কর্মজীবন বােনাই
কাটাইয়ের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। এর সঙ্গে তিনি সামাজিক কুসংস্কার ডাইনি হত্যার
বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। অক্লান্তভাবে এই কাজে আত্মনিয়ােগ করায়
বীরুবালা রাভা তার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেছিলেন। বর্তমানে
তিনি মিশন বীরুবালা’র মাধ্যমে ডাইনি হত্যার
মতো অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছেন।
পাঠ্যপুস্তকের অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর
Q.1 রাভাদের আদি বাসভূমি কোথায়
ছিল?
ANS:- রাভাদের আদি বাসভূমি হল
গারো পাহাড় জেলার ফুলবাড়ি থেকে দক্ষিণ কামরূপের রানা পর্যন্ত।
Q.2 সামাজিক দিক থেকে রাভারা কী
কী শাখায় বিভক্ত?
ANS:- সামাজিক দিক থেকে রাভারা
বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত—রংদানি, পাতি, দাহরি, মায়তরি, কোচ, বিতলিয়া, হানা, মদাহি ইত্যাদি।
Q.3 রাভা সংস্কৃতির প্রতীক কী?
ANS:- রাভা সংস্কৃতির প্রতীক হল—মানচালেংকা বা মাছরোকা পাখি।
Q.4 রাভাদের প্রধান দেবতা কে?
ANS:- রাভাদের প্রধান দেবতা রিসি
বা মহাদেব।
Q.5 রাভাদের প্রধান পূজোর নাম কী?
উত্তর। রাভাদের প্রধান পূজা
হল বায়খো পূজা।
Q.6 বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা সম্পর্কে
যা জানো লেখো।
ANS:- কবি সাহিত্যিক নাট্যকার
সঙ্গীতজ্ঞ নৃত্যবিদ অভিনেতা বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার জন্ম ঢাকা শহরের সেনা শিবিরে ১৯০৯
সালের ৩১ জানুয়ারী! সর্দার বাহাদুর গোপালচন্দ্র রাভা ও গেথি রাভার সন্তান বিষ্ণুপ্রসাদ
রাভা কলাগুক নামে পরিচিত।
ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র
২১ বছর বয়সি বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন।
ব্রিটিশ সরকারের ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে পড়ে ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ার পথ বন্ধ হওয়ায়
তিনি মাইকেল কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু পরীক্ষায় সর্বোচ্চ স্থান লাভ করেও পুলিশের
কুনজরে পড়ে তিনি মাইকেল কলেজ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। আবাহন, বাহি ইত্যাদি পত্রিকায় বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার
রচনা প্রকাশ হওয়ার সাথে অসমিয়া সাহিত্যে তিনি নতুন করে পরিচিতি লাভ করেন। অসমের
সাংস্কৃতিক জগতের বরেণ্য শিল্পী জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালার সঙ্গ পেয়ে বিষ্ণুপ্রসাদ
রাভা অধিক উজ্জীবিত হয়েছিলেন। ১৯৩৯ সালে কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে
বিষ্ণু রাভা নৃত্য প্রদর্শন করেছিলেন। ১৯৬২ সালে বিপ্লবী বিষ্ণুপ্রসাদ রাভাকে
দেশদ্রোহী সাজিয়ে কারারুদ্ধ করা হয়।
১৯৬৭ সালে বিষ্ণু রাভা
তেজপুর সমষ্টি থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন। সমগ্র জীবন দলিত ও অবহেলিতদের পক্ষে
সংগ্রামী জীবনযোদ্ধা বিষ্ণু রাভার জীবন অসীম ও দুঃখযন্ত্রণায় ভরা ছিল। ১৯৬৯ সালের
২০ জুন এই বিপ্লবী নেতার জীবনাবসান ঘটে।
Q.7 রাজেন রাভা সম্পর্কে যা জানো
লেখো।
ANS:- কৃতী শিক্ষক, যশস্বী সাহিত্যিক, গবেষক রাজেন রাভার ‘রাভা লোককথা’, ‘রাভা জনজাতি’ইত্যাদি
গ্রন্থছাড়াও ৪০টির অধিক প্রবন্ধ রয়েছে। ১৯২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাজেন রাভা
জন্মগ্রহণ করেছেন। আজীবন সাহিত্য সাধক, সমাজ
ও মানবপ্রেমী রাজেন রাভা বর্ণাঢ্য জীবনের প্রথম জীবন ভীষণ দুঃখ ও কষ্টের মধ্যে
কাটিয়েছেন। তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান করে করব কিংবা মরব' বাহিনীতে ভর্তি হয়েছিলেন। ১৯৩৮ সালে
জোরহাটের কোকিলা মুখে এক অধ্যক্ষের তত্ত্বাবধানে অসম বঙ্গীয় সারস্বত আশ্রম-এর ঋষি
বিদ্যালয়ে এক বছর সংস্কৃত ও বাংলা ভাষা অধ্যয়ন করেছিলেন। এরপর কোকরাঝাড় শুরু
ট্রেনিং কেন্দ্র থেকে (১৯৪৮) ডিস্টিংশন সহ প্রথম স্থান, জোরহাট নর্মাল স্কুলের ত্রিবার্ষিক পরীক্ষায়
(১৯৫২) পাঁচটি বিষয়ে লেটার মার্কসসহ দ্বিতীয় স্থান, তিতাবর বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কলেজ থেকে
প্রশিক্ষণ নিয়ে ওয়ার্ধার রাষ্ট্রভাষা প্রচার সমিতি (১৯৫৭) থেকে হিন্দি বিশারদ ও
শেষে Phd, ১৯২৭ সালে ডঃ মহেশ্বর
নেওগের তত্ত্বাবধানে The Rabhas : Their
language and Culture এবং Phd,
১৯৭৭
সালে (সংশােধিত The Rabhas : Their
Society and Culture with special reference to non-sanskritized groups) ডিগ্রি লাভ করেন।
তিনি অসম সাহিত্য সভার
বঙ্গাইগাঁও অধিবেশনের উপসভাপতি ও দুধনৈ অধিবেশনের অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি ছিলেন।
অসম সরকার তাকে সাহিত্যিক পেনশন দেওয়ার সাথে সাথে ১৯৪৬ সালে রাষ্ট্রীয় শ্রেষ্ঠ
শিক্ষকের পুরস্কার প্রদান করেন।
Q.8 প্রসন্ন পাম সম্পর্কে যা জানো
লেখো।
ANS:- রাভা কৃষ্টির রূপকার
প্রসন্ন পামের জন্ম ১৯৩২ সালের ২০ তারিখ গোয়ালপাড়া জেলার বালিজান চক্রের
অন্তর্গত লাতাপারা গ্রামে। তার পিতা কমলকুমার রাভা এবং মাতা দাখেল বালা রাভা। | রাভা কৃষ্টির রূপকার প্রসন্ন পাম বাল্যকাল
থেকেই রাভা কৃষ্টির সাধনায় ব্রতী ছিলেন। বেতার শিল্পী হিসাবে সুখ্যাতি অর্জন করে
তিনি অনেক গীত রচনা করে সুর সৃষ্টি করেছিলেন। এই গীতের সুর ও ছন্দ এখনো জনপ্রিয়
রয়েছে। দদান বীর নাটকের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জনকারী প্রসন্ন পামের মারুক্ষেত্রী
(নাটক) সৃষ্টিবিধান, ময়রাশক্তি, লাভামুক্তি, কামগিরিশক্তি, পিদান সংসার, মায়া
হাসং, লেখা তেয়া জমা তংসা
ইত্যাদি গ্রন্থগুলি অপ্রকাশিত অবস্থায় থেকে যায়। ১৯৭৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী এক
নির্বাচনের প্রচারে সহযোগী রূপে প্রচার কার্য চালানোর সময় মোটর দুর্ঘটনায় মারা
যান।
Q.9 ড. বীরুবালা রাভা সম্পর্কে যা
জানো লেখো।
ANS:- ডাইনি হত্যার মতো
অন্ধবিশ্বাসকে সমাজ থেকে নিশ্চিহ্ন করে একটি সুস্থ সমাজ গড়ার চেষ্টায় নিজেকে
উৎসর্গ করেছেন সংগ্রামী নেত্রী বীরুবালা রাভা। ১৯৪৯ সালে গোয়ালপাড়া জেলার
ঠাকুরবিলা গ্রামে বীরুবালা রাভার জন্ম হয়েছিল। তার পিতার নাম কালিয়ারাম রাভা ও
মাতা সাগরবালারাভা।
বীরুবালা নিজের কাজের
স্বীকৃতি যে পুরস্কারগুলি পেয়েছিলেন তা হল২০০৫ সাল— শান্তির
নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন। ২০০৫ ” – Real Hero এর স্বীকৃতি দেয় IBN 18 Network and Reliance Group. ২০১১ ” – সমাজপ্রাণ উপাধি। ২০১১” – উর্মিলা দাস মেমোরিয়াল পুরস্কার। ২০১২ ” – ডিব্রুগড় মহিলা ক্লাব প্রদত্ত জয়মতী
পুরস্কার। ২০১৩ ” - মেন অব দি ইয়ার পুরস্কার
লাভ। ২০১৪ ” – বীরাঙ্গনা মুলাগাভরু
পুরস্কার লাভ।
২০১৫ ” – গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা ডক্টরেট
ডিগ্রি লাভ। বর্তমানে মিশন বীরুবালার মাধ্যমে ডাইনি হত্যার মতো অন্ধবিশ্বাসের
বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছেন।
***********
0 Comments
HELLO VIEWERS, PLEASE SEND YOUR COMMENTS AND SUGGESTION ON THE POST AND SHARE THE POST TO YOUR FRIEND CIRCLE.