SEBA/SMEBA CLASS 10 BENGALI SOLUTIONS

SEBA/SMEBA CLASS 10 BENGALI

 

QUESTIONS & ANSWERS

 

 

সেবা দশম শ্রেনী বাংলা প্রশ্ন এবং উত্তর

 

পাঠ : প্রার্থনা (কবিতা)

 

কবি - বিদ্যাপতি (আনু: ১৩৫২-১৪৪৮ খ্রিস্টাব্দ)

 

সারাংশ :

কবি বিদ্যাপতি তাঁর পরম আরাধ্য ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণকে মিনতি করে বলেছেন যে চিরস্থায়ী, শাশ্বত ঈশ্বরকে ভুলে তিনি এতদিন মায়াময় সংসারের মোহে আচ্ছন্ন হয়েছিলেন। উত্তপ্ত বালুকারাশিতে এক বিন্দু জল পতিত হলে তা যেভাবে অস্তিত্বহীন হয় ঠিক সেভাবে এই ক্ষণস্থায়ী সংসারে একান্ত আপনজন সবই অস্তিত্বহীন হয়। সংসারের মোহজালে আবৃত হয়ে তিনি তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ব্যয় করে জীবনকে ব্যর্থতায় পরিণত করেছেন। তার আক্ষেপ এই যে, তার এই ব্যর্থ মূল্যহীন জীবনের আর কোনও প্রয়োজন নেই। ঈশ্বর জগতের ত্রাতা। তিনি দীনের প্রতি দয়াশীল। তাই কবির বিশ্বাস দয়াময়, ঈশ্বরের কৃপা ও করুণা থেকে তিনি বঞ্চিত হবেন না। কবি বলছেন, জীবনের শৈশব ও যৌবনের রঙ্গরসে মজে গিয়ে বার্ধক্যের অনেক সময়ও বৃথাই পার করেদিলেন। এর মধ্যে তার জীবনে কৃষ্ণ ভজনের অবকাশ ঘটেনি। সমগ্র সৃষ্টি ঈশ্বরের মধ্যে জন্মে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আবার ঈশ্বরেই বিলীন হয়। কবি বিদ্যাপতি তাই বলছেন, শেষকালে মৃত্যুজনিত ভয় থেকে উদ্ধার পেতে হলে ঈশ্বর ছাড়া আর কোনো গতি নেই। জগতে তিনিই একমাত্র উদ্ধার কর্তা, সুতরাং উদ্ধার করার দায়িত্ব এখন ঈশ্বরের।

 

 

কিছু শব্দার্থ :

শব্দ

অর্থ

শব্দ

অর্থ

শব্দ

অর্থ

শব্দ

অর্থ

তাতল

উত্তপ্ত

মিত

মিত্র

তুহু্ঁ

তুমি

জরা

বার্ধক্য

সৈকত

বালু

তোহে

তোমাকে

সমর্পিলু

সমর্পণ করলাম

ভজব

ভজন করব

বারি

জল

বিসরি

ভুলে গিয়ে/ বিস্মৃত হয়ে

জগৎ তারণ

জগৎ ত্রাতা

মাধব

পৃথিবীর স্বামী, শ্রীকৃষ্ণ

গোঙায়লু

অতিবাহিত করলাম

তাহে

তাতে

বিশোয়াসা

বিশ্বাস

নিন্দে

নিদ্রায়

সূত

পুত্র

অব

এখন

মঝু

আমার

 

 

 

অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

Q.1 প্রার্থনা কবিতাটির কবি কে?

Ans:- কবি বিদ্যাপতি

Q.2 কবি বিদ্যাপতির পিতার নাম কী?

Ans:- গণপতি ঠাকুর।

Q.3 বিদ্যাপতি প্রকৃতপক্ষে কোথাকার কবি?

Ans:- মিথিলার কবি।

Q.4 বিদ্যাপতি কোন্ রাজার সভাকবি ছিলেন?

Ans:- মিথিলার রাজা শিব সিংহের।

Q.5 বিদ্যাপতি কার বিস্মৃতিতে অনুতপ্ত?

Ans:- শ্রীকৃষ্ণের।

Q.6 কবি বিদ্যাপতি কার কাছে প্রার্থনা করছেন?

Ans:- ঈশ্বর অর্থাৎ মাধবের কাছে।

Q.7 এতদিন কবি কীসের মায়ায় আবদ্ধ ছিলেন?

Ans:- সংসারের

Q.8 কে দীন দয়াময়?

Ans:- ঈশ্বর।

Q.9 চতুরানন কাকে বলা হয়েছে?

Ans:- ব্রহ্মাকে।

Q.10 কবি কাকে ভুলেছিলেন বলে অনুতাপ করেছেন?

Ans:- শ্রীকৃষ্ণ (মাধব) কে।

Q.11 বিশোয়াস' কোন শব্দের অন্তর্গত?

Ans:- ব্রজবুলি।

Q.12 বিশোয়াস' শব্দের অর্থ কী?

Ans:- আস্থা।

Q.13 আধ জন্ম' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

Ans:- জীবনের অর্ধেক সময়।

Q.14 কবি কোন্ ভয়ের কথা বলেছেন?

Ans:- শেষকালে মৃত্যুজনিত ভয়ের কথা।

Q.15 ব্রজবুলি ভাষায় রচিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কাব্যের নাম লেখো।

Ans:-ভানু সিংহের পদাবলী'

Q.16 তাতল' শব্দের অর্থ কী?

Ans:- উত্তপ্ত।

Q.17 সৈকতশব্দের অর্থ কী?

Ans:- বালু।

Q.18 বিসরি' শব্দের অর্থ কী?

Ans:- বিস্মৃত হয়ে/ ভুলে গিয়ে।

Q.19 ‘জগ-তারণ বলতে কবি বিদ্যাপতি কাকে বুঝিয়েছেন?

Ans:- ঈশ্বর অর্থাৎ মাধবকে।

Q.20 নিন্দে শব্দের অর্থ কী?

Ans:- নিদ্রায়।

 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

 

Q.10 কবি কাকে ভুলেছিলেন, কেন ভুলেছিলেন?

Ans:- কবি তার পরম আরাধ্য ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণকে ভুলেছিলেন।

কবি তার একান্ত আপনজন দ্বারা পরিবৃত এই ক্ষণস্থায়ী সংসারে মোহমায়ায় আচ্ছন্ন ছিলেন। তাই তিনি তার পরম আরাধ্য শ্রীকৃষ্ণকে ভুলেছিলেন।

Q.10 কবি কেন আশাবাদী যে ঈশ্বর তাকে কৃপা করবেন?

Ans:- জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে কবি নিজেকে ঈশ্বরের চরণে সমর্পণ করলেন। মন সংসারের মোহে আবদ্ধ হয়ে তিনি ঈশ্বরকে ভুলে থাকলেও ঈশ্বর তাকে কৃপা করবেন। কারণ ঈশ্বর জগতের এাতা। তিনি দীনের প্রতি দয়াশীল। তাই কবি আশাবাদী যে জগতে দয়াময় ঈশ্বর তাকে কৃপা ও করুণা থেকে বঞ্চিত করবেন না।

Q.10 জীবনের অর্ধেক কাল পর্যন্ত কবি কীভাবে সময় অতিবাহিত করছেন?

Ans:- স্ত্রী, সন্তান, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে এই মায়াময় সংসারে কবি ঈশ্বরকে ভূলে গিয়ে জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলছেন, জীবনের অর্ধেক সময় তিনি নিদ্রায় অতিবাহিত করেছেন। তিনি শৈশব থেকে বার্ধক্যের গুরায় এসে এখন উপস্থিত হয়ে অনুতপ্ত হয়েছেন

Q.10 কবি ঈশ্বরকে কোন কোন নামে সম্বোধন করছেন?

Ans:- কবি ঈশ্বরকে মাধব', 'জগ তারণ', ‘দীন-দয়াময়’, আদি অনাদি নাথ ইত্যাদি নামে সম্বোধন করছেন।

Q.10 মাধব' শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ লেখো।

Ans:- মাধব শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ হল মা মা অর্থাৎ পৃথিবী এবং ধরাপৃথিবীর স্বামী।

Q.10 ব্রজবুলি ভাষা সম্বন্ধে যা জান লেখো।

Ans:- ব্রজবুলি একটি সম্পূর্ণ কৃত্রিম ভাগ। এটি ব্রজ বা বৃন্দাবনের ভাষা নয়। এটি হিন্দি, ওড়িয়া, মৈথিলি, বাংলা ও অসমিয়া শব্দের সংশ্যি গঠিত একটি বিশেষ ভাষা।

Q.10  তাতল সৈকত বারিবিন্দুসম বলতে কবি কী বুঝাতে চেয়েছেন?

Ans:- ‘তাতল সৈকত বারিবিন্দুসম বলতে কবি বোঝাতে চেয়েছেন উত্তপ্ত বালুকা রাশির উপর পতিত জলবিন্দুর মতো মোহ মায়াময় সংসারের সব ক্ষণস্থায়ী

Q.10 কবি কার উপর কেন বিশ্বাস রাখেন?

Ans:- জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কবি নিজেকে ঈশ্বরের চরণে সমর্পন করেছেন তিনি ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস রাখেন কারণ ঈশ্বর জগতের ত্রাতা তিনি দিনের প্রতি দয়াশীল  তাই দয়াময় ঈশ্বরের চরণে নিজেকে সমর্পণ করলে তিনি অবশ্যই কবিকে সংসারের জাগতিক দুঃখ কষ্ট থেকে উদ্ধার করবেন

Q.10 মাধব, হাম পরিণাম নিরাশা' কবির এমন মনােভাবের কারণ কী ?

Ans:- আলোচ্য পংক্তিটির মাধ্যমে কবি তার আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন।

কবি এতদিন চিরস্থায়ী শাশ্বত ঈশ্বরকে ভূলে মায়াময় সংসারের মোহে আচ্ছন্ন হয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন তার আক্ষেপ তিনি স্ত্রী পুত্র মিত্র পরিবৃত হয়ে এতটাই মগ্ন ছিলেন যে তিনি ঈশ্বরকে বৃস্মিত হয়ে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় অতিবাহিত করে জীবনকে ব্যর্থতায় পরিণত করেছেন তাই কবির এখন মনে হচ্ছে যে ব্যর্থ মূল্যহীন এই জীবনের আর কোন প্রয়োজন নেই এর ফলে তার পরিণাম নিরাশা জনক হবে বলে তিনি শ্রী কৃষ্ণ অর্থাৎ মাধবের চরণে দুঃখ প্রকাশ করেছেন

Q.10 তুয়া বিনু গতি নাহি আরা’ - কেন কবি এমন ভাবছেন?

Ans:- জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কবির মনে ভয়ের সঞ্চার হয়েছে এই ভেবে যে মৃত্যু কতই না কষ্টদায়ক। তাই কবি বিদ্যাপতি বলছেন, শেষকালে মৃত্যজনিত ভয় থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য ঈশ্বর ছাড়া আর কোনো গতি নেই। একমাত্র ঈশ্বরই কবিকে এই ভয় থেকে উদ্ধার করতে পারেন

Q.10 প্রার্থনা কবিতায় কবিৰ আক্ষেপ কী?

Ans:- প্রার্থনা কবিতায় কবি বিদ্যাপতির আক্ষেপ এই যে, তিনি স্ত্রী-পুত্র-মিত্র পরিবৃত হয়ে জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। তিনি বোঝতে পারেননি এই মায়াময় সংসারের সবই ক্ষণস্থায়ী। কবির আরও আক্ষেপ, তিনি তার জীবনের অর্ধেক সময় নিদ্রায় কাটিয়ে দিয়েছেন। তিনি শৈশব থেকে বার্ধক্যের জরগ্রস্থতায় এসে উপস্থিত হয়েছেন। কিন্তু এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে তার ঈশবের নাম নেওয়ার অবকাশ ঘটেনি। জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় অতিবাহিত করে জীবনকে ব্যর্থতায় পরিণত করেছেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তার এখন মনে হচ্ছে এই ব্যর্থ ও মূল্যহীন জীবনের আর কোনও প্রয়োজন নেই।

Q.10 নিধুবন কোন স্থানে অবস্থিত বা কেন বিখ্যাত?

Ans:- নিধুবন বৃন্দাবনে অবস্থিত একটি বন। এটি রাধাকৃষ্ণের প্রমোদ বিহারের উদ্যান। এখানে রাধাকৃষ্ণ ক্রীড়াকৌতুক ও আমোদ প্রমোদে সময় অতিবাহিত করেছেন

 

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর

 

Q.11 প্রার্থনা' কবিতাটির অবলম্বনে কবির বক্তব্য বিষয় পরিস্ফুট করো।

Ans:-প্রার্থনা' কবিতায় কবি তার পরম আরাধ্য শ্রীকৃষ্ণ অর্থাৎ মাধবের কাছে নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে সমর্পণ করেছেন। কবির আক্ষেপ, তিনি এতদিন স্ত্রী, পুত্র, বন্ধুবান্ধব নিয়ে এই মায়াময় সংসারের মোহে আচ্ছন্ন হয়ে চিরস্থায়ী ও শাশ্বত ঈশ্বরকে ভূলে গিয়েছিলেন। আজ তিনি উপলব্ধি করছেন যে উত্তপ্ত বালুকারাশিতে একবিন্দু জল পতিত হলে যে ভাবে বিলীন হয় ঠিক সেইভাবে এই ক্ষণস্থায়ী সংসারের সবই বিলীন হয়। সংসারের মোহে তিনি তার জীবনের শ্রেষ্ট সময় ব্যয় করে জীবনকে ব্যর্থতায় পূর্ণ করেছেন। তাই তার আক্ষেপ এই যে, ব্যর্থ ও মূল্যহীন এই জীবনের আর কোনও গুরুত্ব নেই। ঈশ্বর জগতের ত্রাতা এবং দীনের প্রতি দয়াশীল। তাই কবির বিশ্বাস জগতের পরিত্রাতা দীন-দয়াল ঈশ্বরের কৃপা ও করুণা থেকে তিনি বঞ্চিত হবেন না। এখন তিনি সবকিছু ভুলে ঈশ্বরের চরণে নিজেকে সমর্পণ করে আক্ষেপ করছেন এই বলে যে তার অর্ধেক জীবন কেটেছে নিদ্রায়। তিনি শৈশব পার হয়ে এখন বার্ধক্যের জরাগ্রস্ত অবস্থায় এসে উপস্থিত হয়েছেন। যৌবনে তিনি রঙ্গরসে মেতেছেন। তাই তিনি ঈশ্বর ভজনার সময় পাননি। তিনি ঈশ্বরের বন্দনা করে বলছেন, কত ব্রহ্মার মৃত্যু হচ্ছে কিন্তু ঈশ্বরের কোনো অবসান নেই। তার মধ্যে সবার জন্ম হয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো তার কৃপায় সবই তার মধ্যে বিলীন হয়। তাই কবি বলছেন যে, শেষকালে মৃত্যুজনিত ভয় থেকে উদ্ধার করবার জন্য ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ নেই। কারণ তিনিই জগতে একমাত্র উদ্ধারকর্তা। সুতরাং উদ্ধার করবার দায়িত্ব এখন ঈশ্বরের অর্থাৎ মাধবের।

Q.11 'সগর-লহরী সমানা’ - উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো

Ans:- আলোচ্য উক্তিটি কবি বিদ্যাপতি রচিত প্রার্থনা কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। উক্ত উক্তিটির মাধ্যমে কবি ঈশ্বরের মহিমার গুণকীর্তন করেছেন।

এখানে কবি বিদ্যাপতি বোঝাতে চেয়েছেন যে সমুদ্রের ঢেউ যেভাবে সমুদ্রের মধ্যে উৎপত্তি হয়ে আবার তা সমুদ্রেই বিলীন হয় ঠিক সেভাবে ঈশ্বর অর্থাৎ পরমাত্মা থেকে অগণিত জীবাত্মার সৃষ্টি হয়ে আবার সে সব জীবাত্মা ঈশ্বরের কৃপায় মুক্তি লাভ করে ঈশ্বরেই বিলীন হয়। কবি এই উক্তিটির মাধ্যমে ঈশ্বরের স্বরূপ বর্ণনা করেছেন। এখানে তিনি সমুদ্রের স্বরূপের সঙ্গে পরমাত্মা এবং সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে জীবান্তার তুলনা করেছেন।

Q.11 প্রার্থনা কবিতার কবি বিদ্যাপতির পরিচয় দাও অথবা টীকা লেখ।

Ans:- কবি বিদ্যাপতির পরিচয় :

বিদ্যাপতি ১৩৫১ খ্রিস্টাব্দে মিথিলার এক বিদগ্ধ ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের বৈষ্ণব পদাবলি ধারায় অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হলেন বিদ্যাপতি। কবি তার পিতার নাম গণপতি ঠাকুর। তিনি মিথিলার রাজা শিব সিংহের সভাকবি ছিলেন। মিথিলার কবি হলেও বাংলা কাব্য সাহিত্য ভাণ্ডারকে তিনি নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। তার রচিত পদগুলি বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। সংস্কৃত সাহিত্যেও তার অসাধারণ পাণ্ডিত্যের পরিচয় পাওয়া যায়। ১৪৪৮ খ্রীস্টাব্দে তিনি পরলোক গমন করেন।

Q.11 প্রার্থনা কবিতায় কবি যেভাবে আত্মবিশ্লেষণ করেছেন তা বর্ণনা করো।

Ans:-প্রার্থনা কবিতায় কবি বিদ্যাপতি তার মানব জীবনকে ঈশ্বরের চরণে সমর্পণ করছেন। আলোচ্য কবিতায় তিনি নানাভাবে আত্মবিশ্লেষণ করেছেন। কবি আত্মবিশ্লেষণের মাধ্যমে তার জীবনের ব্যর্থতার কথা ব্যক্ত করেছেন। যেমন তিনি আক্ষেপ করেছেন যে তিনি স্ত্রী-পুত্র, বন্ধুবান্ধব নিয়ে ক্ষণস্থায়ী সংসারের মোহে আচ্ছন্ন হয়ে ঈশ্বর ভজনা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কারণ জীবনের অর্ধেক সময় তিনি নিদ্রায় কাটিয়েছেন। শৈশব থেকে শুরু করে এখন বার্ধক্যের জরাগ্রস্ততায় এসে উপস্থিত হয়েছেন। যৌবনে বসে মেতে ছিলেন। আবার তিনি যখন নিজেকে দীন বলে ভেবেছেন তখন তার মনে হয়েছে ঈশ্বর দীনের প্রতি দয়াশীল, তাই ঈশ্বরের কাছে নিজেকে সমর্পণ করলে তিনি অবশ্যই তাঁর কৃপা ও করুণা লাভ করবেন। জীবনের অন্তিম সময়ে মৃত্যুজনিত ভয় থেকে অবশ্যই ঈশ্বর তাকে রক্ষা করবেন। তাই তিনি সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের চরণে নিজেকে সমর্পণ করছেন। এইভাবে আলোচ্য কবিতায় কবি আত্মবিশ্লেষণের মাধ্যমে ঈশ্বরের মহিমা এবং ঈশ্বরের প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস ব্যক্ত করেছেন।

Q.11 মাধব হাম পরিণাম নিরাশা', কার কোন্ রচনা থেকে পংক্তিটি উদ্ধৃত করা হয়েছে? মাধব বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? কবির এই মন্তব্যের যথার্থতা আলোচনা করো।

Ans:- পংক্তিটি কবি বিদ্যাপতি রচিত প্রার্থনা কবিতা থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে।

মাধব বলতে শ্রীকৃষ্ণকে বোঝানো হয়েছে। কবি বিদ্যাপতি কবিতায় তাঁর পরম আরাধ্য শ্রীকৃষ্ণকে মাধব' বলে সম্বোধন করেছেন।

কবি বিদ্যাপতি মিনতি করে বলেছেন যে, চিরস্থায়ী ও শাশ্বত ঈশ্বরকে ভুলে তিনি এতদিন স্ত্রী, সন্তান ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে মায়াময় সংসারের মোহে আচ্ছন্ন হয়েছিলেন। কিন্তু আজ তিনি বোঝতে পারছেন যে এ সবই উত্তপ্ত বালুকা রাশিতে পতিত একবিন্দু জলের মতো, যা নিমিষেই বিলীন হয়ে যায় অর্থাৎ এই মায়াময় সংসার ক্ষণস্থায়ী। তাই তিনি ঈশ্বর ভজনা না করে জীবনকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করেছেন। ফলে এর পরিণাম নিরাশাজনক হবে বলে তিনি শ্রীকৃষ্ণপদে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

Q.11 প্রার্থনা কবিতায় কবির আক্ষেপ কী? সেখান থেকে উত্তরণের কী পথ নিয়েছেন। অথবা, ‘প্রার্থনা কবিতায় কবি কী প্রার্থনা করলেন?

Ans:- প্রার্থনা কবিতায় কবি বিদ্যাপতির আক্ষেপ এই যে, তিনি স্ত্রী-পুত্র-মিত্র পরিবৃত হয়ে জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। তিনি বোঝতে পারেননি এই মায়াময় সংসারের সবই ক্ষণস্থায়ী। কবির আরও আক্ষেপ, তিনি তার জীবনের অর্ধেক সময় নিদ্রায় কাটিয়ে দিয়েছেন। তিনি শৈশব থেকে বার্ধক্যের জরগ্রস্থতায় এসে উপস্থিত হয়েছেন। কিন্তু এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে তার ঈশবের নাম নেওয়ার অবকাশ ঘটেনি। জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় অতিবাহিত করে জীবনকে ব্যর্থতায় পরিণত করেছেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তার এখন মনে হচ্ছে এই ব্যর্থ ও মূল্যহীন জীবনের আর কোনও প্রয়োজন নেই।

কিন্তু আজ তিনি নিজেকে ঈশ্বর অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের চরণে সমর্পণ করেছেন। কারণ তিনি জানেন শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া তাকে উদ্ধার করার মতো আর কেউ নেই। ঈশ্বর জগতের ত্রাতা। তিনি দীনের প্রতি দয়াশীল। তাই তার মতো দীনকে মৃত্যজনিত ভয় থেকে একমাত্র ঈশ্বরই উদ্ধার করতে পারবেন। এই মৃত্যুজনিত ভয় থেকে পরিত্রাণ পেতে তিনি ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস রাখছেন।

Q.11 প্রার্থনা' কবিতাটির সারমর্ম লেখো।

Ans:- প্রার্থনা' কবিতায় কবি তার পরম আরাধ্য শ্রীকৃষ্ণের চরণে পরিপূর্ণ সমর্পণের ভাব প্রকাশ করেছেন। কবি সারাজীবন চিরস্থায়ী ও শাশ্বত ঈশ্বরকে ভুলে স্ত্রী-পুত্র, মিত্র পরিবৃত হয়ে মায়াময় সংসারে ডুবে ছিলেন। কিন্তু আজ তিনি বোঝতে পারছেন এ সৰই উত্তপ্ত বালুকারাশিতে পতিত একবিন্দু জলের মতো যা নিমেষেই শুকিয়ে যায়। কবির আক্ষেপ এই যে সংসারের মোহে আবদ্ধ হয়ে তিনি জীবনের শ্রেষ্ট সময় অতিবাহিত করে তার জীবনকে ব্যর্থতায় পূর্ণ করেছেন এবং এর পরিণতি যে ভাল হবে না তাও তিনি অনুধাবন করতে পারছেন। তবুও তার বিশ্বাস ঈশ্বরের কৃপা ও করুণা থেকে তিনি বঞ্চিত হবেন না। কারণ ঈশ্বর জগতের পরিত্রাতা এবং দীনের প্রতি দয়াশীল। তিনি আজ পরিতাপের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণকে বলছেন, তার জীবনের অর্ধেক সময় কেটেছে নিদ্রায়। শৈশব থেকে শুরু করে এখন বার্ধক্যের জরাগ্রস্ত অবস্থায় এসে তিনি উপস্থিত হয়েছেন। যৌবনে তিনি রমণীদের নিয়ে রঙ্গরসে মেতেছেন। তাই তার ঈশ্বর ভজনের অবকাশ ঘটেনি। কবি বলছেন, কত ব্রহ্মা মরে যাচ্ছেন কিন্তু ঈশ্বরের কোনো অবসান নেই। তার মধ্যেই সবার জন্ম হচ্ছে। আবার তারই কৃপায় সবাই তার মধ্যেই বিলীন হচ্ছে। তাই কবি ঈশ্বরের চরণে নিজেকে সমর্পণ করে মৃত্যুজনিত ভয় থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইছেন।

Q.11 প্রার্থনা কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।

Ans:- প্রাথনা' কবিতার নামকরণের সার্থকতা:

বৈষ্ণব পদাবলির পদগুলির প্রত্যেকটি রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলার এক একটি বিষয়কে ভিত্তি করে রচিত। 'অভিসার বিষয়কে পদগুলিতে নানা বাধা অতিক্রম করে শ্রীকৃষ্ণের কাছে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল রাধাকে নিয়ে রচিত। পদ রচয়িতাগণ এই বিষয়কে ভিত্তি করে বিভিন্ন পদ রচনা করেছেন। মানব জীবনকে ঈশ্বরের চরণে সমর্পণ করার প্রয়াস নিয়ে যে পদগুলি রচিত, সেই পদগুলি প্রার্থনা বিষয়ক পদের অন্তর্ভুক্ত। আলোচ্য কবিতাটিতে কবি বিদ্যাপতি মাধবের চরণে নিজেকে সমর্পণ করেছেন। জীবনের অনেক মূল্যবান সময় মায়াময়, ক্ষণস্থায়ী সংসারের মোহে ডুবে থেকে তিনি ভগবৎ চিন্তা না করে কাটিয়ে দিয়েছেন। জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে তিনি জীবনের আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছেন। তাই আলোচ্য কবিতাটিতে কবি বিদ্যাপতির প্রার্থনাই মূলত প্রাধান্য পেয়েছে। সুতরাং এই পদটি, ‘প্রাথনা' বিষয়ক পদ। তাই আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে আলোচ্য কবিতাটি নাম করণ যথার্থ সার্থক হয়েছে।

 

ক্রিয়াকলাপ

 

Q.11 শূন্যস্থান পূর্ণ করো।

) তাঁতল ______ বারিবিন্দুসম।

Ans:- তাঁতল সৈকত বারিবিন্দুসম।

) মাধব ______ পরিণাম নিরাশা।

Ans:- মাধব হাম পরিণাম নিরাশা।

) ______ জগতারণ, দীন দয়াময়।

Ans:- তুহু্ঁ জগতারণ, দীন দয়াময়।

) আধ জনম হাম নিন্দে ______

Ans:- আধ জনম হাম নিন্দে গোঙায়লু্ঁ

) ______ রমণী রসরঙ্গে মাতলু।

Ans:- নিধুবনে রমণী রসরঙ্গে মাতলু।

 

Q.11 পাঠ অনুসরণে শুদ্ধ করে লেখো।

() সূত-মিত পুরুষ সমাজে।

Ans:- সূত-মিত রমণী সমাজে।

() তুহু্ঁ জগন্নাথ, দীন দয়াময়।

Ans:- তুহু্ঁ জগ-তারণ, দীন দয়াময়।

পাঠভিত্তিক ব্যাকরণ

Q.11 ‘প্রার্থনা' কবিতা থেকে কয়েকটি ব্রজবুলি শব্দের উল্লেখ করো।

Ans:- বিসরি, তুহু্, বিশোয়াসা, যাওত, তুয়া, সগর, তোহে, ভণয়ে, আরা, কহায়সি।

 

Q.11 প্রার্থনা কবিতায় উল্লেখিত সর্বনাম পদগুলি লেখো।

Ans:- তোহে, তুই, হাম, তুয়া।

 

Q.11 নিচের শব্দগুলির গদ্যরূপ লেখো।

সমর্পিলু: অব: জনম: নিন্দে: মাতলু: ভজব।

Ans:-   সমর্পিলু = সমৰ্পণ করিলাম। অব =   এখন।

জনম =  জন্ম।        নিন্দে = নিদ্রায়।

মাতলু = মাতালাম।      ভজব = ভজনা করবো।

 

Q.11 পদ পরিবর্তন করো।

সমাজ, শিশু, জন্ম, মন, বিধি।

Ans:- সমাজ = সামাজিক।     শিশু = শৈশব। জন্ম = জন্মান্তর।

মন = মানসিক     বিধি = বিধান।

 

Q.11 বিশিষ্টার্থক শব্দ প্রয়োগে অর্থপূর্ণ বাক্য রচনা করো।

গোবরে পদ্মফুল; খয়ের খাঁ; চোখের বালি; টনক নড়া; ঠোঁট কাটা।

Ans:-

গোবরে পদ্মফুল (নিচ কূলে প্রতিভাবান ব্যক্তির জন্ম) : একজন ঠেলাচালকের ঘরে জন্মেও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে এ যেন গোবরে পদ্মফুল।

খয়ের খাঁ (তোষামোদকারী) : খয়ের খাঁয়ে পরিণত লোকরা অপরের লোকসান কখনও বোঝেনা।

চোখের বালি (সহ্য করতে না পারা) : বিমলের কাছে পাড়ার ছেলেরা যেন চোখের বালি।

টনক নড়া (আচমকা জ্ঞানোদয়) : ঈশ্বর ভজনে জীবনের শেষকালে দেখি তোমার টনক নড়ল।

ঠোঁট কাটা (স্পষ্ট কথা বলা) : ঠোঁট কাটা লোকরাই সর্বদা সত্যতার প্রতি আগ্রহ দেখায়।

 

 

DOWNLOAD PDF

****************************

 


Post a Comment

0 Comments