ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 10 BENGALI QUESTIONS & ANSWERS সেবা অসম দশম শ্রেনী বাংলা প্রশ্ন এবং উত্তর পাঠ : পিতা-পুত্র

 

ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 10 BENGALI QUESTIONS & ANSWERS

সেবা অসম দশম শ্রেনী বাংলা প্রশ্ন এবং উত্তর

 

পাঠ : পিতা-পুত্র

নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩-১৯১৩)

 


 

 

ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 10 BENGALI QUESTIONS & ANSWERS

পাঠ : পিতা-পুত্র

নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩-১৯১৩)

 

 

 

ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 10 BENGALI

QUESTIONS & ANSWERS

সেবা অসম দশম শ্রেনী বাংলা

প্রশ্ন এবং উত্তর

পাঠ : পিতা-পুত্র,

নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

 

শব্দার্থ:  

নির্বিরোধ - বিরোধহীন। খড়গ - ছুরি। মাতৃহারা - মাতাহীন। উপযুক্ত যোগ্য। প্রতিনিধি - প্রতিভূ, কারও নিমিত্তে কাজ করার জন্য নিয়োজিত ব্যক্তি। স্বকল্পিত - নিজ কল্পনাপ্রসূত। নির্মম - মমতাহীন। কল্পনা - ধারণা। সিংহাসন - মসনদ। প্রত্যাশী - পাইতে ইচ্ছুক, আগ্রহী। পাঞ্জা - ক্ষমতা। হুকুম - আদেশ, আজ্ঞা। দুস্কৃত - অন্যায়কারী। অরাজক - বিশৃঙ্খলাপূর্ণ। ভয়বিহ্বল - ভয়ে দিশাহারা। স্ত্রৈণ - স্ত্রীরবশীভূত। অধোমুখে - নতবদনে, নতমুখে। নিষ্ঠুর - নির্দয়। অনিবার্য - যা নিবারণ করা যায় না। পরমায়ু - আয়ুকাল, জীবন।

 

ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 10 BENGALI

QUESTIONS & ANSWERS

সেবা অসম দশম শ্রেনী বাংলা

প্রশ্ন এবং উত্তর

পাঠ : পিতা-পুত্র,

নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

 


 

নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের পরিচিতি : জীবনী

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩-১৯১৩)  কবি, নাট্যকার, গীতিকার। ১৮৬৩ সালের ১৯ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের  নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে তাঁর জন্ম। পিতা সুকণ্ঠ গায়ক  কার্তিকেয়চন্দ্র রায় ছিলেন কৃষ্ণনগরের দেওয়ান এবং মাতা প্রসন্নময়ী দেবী ছিলেন অদ্বৈত প্রভুর বংশধর। তাঁর দুই অগ্রজ রাজেন্দ্রলাল ও হরেন্দ্রলাল এবং এক ভ্রাতৃজায়াও সাহিত্যিক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।


দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

দ্বিজেন্দ্রলাল হুগলি কলেজ থেকে বিএ এবং  প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ (১৮৮৪) পাস করেন। পরে কিছুদিন চাকরি করে তিনি সরকারি বৃত্তি নিয়ে কৃষিবিদ্যা শেখার জন্য লন্ডন যান এবং সেখানে ১৮৮৬ সাল পর্যন্ত অবস্থান করেন। লন্ডনের সিসিটার কলেজ থেকে তিনি কৃষিবিদ্যায় এফ.আর.এ.এস ডিগ্রি এবং রয়েল এগ্রিকালচারাল কলেজ ও এগ্রিকালচারাল সোসাইটির এম.আর.এ.সি ও এম.আর.এস.এ উপাধি লাভ করেন। বিলেত থেকে ফিরে তিনি মধ্যপ্রদেশে জরিপ ও রাজস্ব নিরূপণ ট্রেনিং নেন এবং সরকারি ডেপুটির চাকরি পান; পরে তিনি দিনাজপুরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত হন।

দ্বিজেন্দ্রলাল ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা মানুষ; এজন্য কর্মক্ষেত্রে তিনি অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। ১৮৯০ সালে বর্ধমান এস্টেটের সুজামুটা পরগনায় সেটেলমেন্ট অফিসারের দায়িত্ব পালনকালে তিনি প্রজাদের স্বার্থে ছোটলাটের বিরোধিতা করতে কুণ্ঠিত হননি। বিলেত থেকে ফেরার পর প্রায়শ্চিত্ত করার প্রশ্ন উঠলে তিনি তা অস্বীকার করেন এবং এজন্য তাঁকে অনেক বিড়ম্বনা সইতে হয়। সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা আছে তাঁর একঘরে (১৮৮৯) নামক পুস্তিকায়।

দ্বিজেন্দ্রলাল ১৯০৫ সালে কলকাতায় পূর্ণিমা মিলননামে একটি সাহিত্যিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এটি তখনকার শিক্ষিত ও সংস্কৃতিসেবী বাঙালিদের তীর্থস্থানে পরিণত হয়। এ সময় তিনি ইভনিং ক্লাবনামে অপর একটি সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন এবং এর মাধ্যমে তিনি প্রথম অভিনয়ে অংশগ্রহণ করেন। বিলেতে থাকা অবস্থায় তিনি সেখানকার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয়-কৌশল ও রঙ্গালয়-ব্যবস্থা নিকট থেকে পর্যবেক্ষণ করেন, যা পরবর্তীকালে নাটক রচনা ও অভিনয়ে তাঁকে গভীরভাবে সহায়তা করে।

দ্বিজেন্দ্রলাল কৈশোরেই কাব্যচর্চা শুরু করেন। ছাত্রজীবনে তাঁর আর্য্যগাথা (১ম ভাগ, ১৮৮২) এবং বিলেতে থাকাকালে Lyrics of Ind (১৮৮৬) কাব্য প্রকাশিত হয়। ১৯০৩ সাল পর্যন্ত তিনি মূলত কাব্যই রচনা করেন এবং এ সময় পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ বারোটি।

এরমধ্যে  প্রহসন, কাব্যনাট্য, ব্যঙ্গ ও হাস্যরসাত্মক কবিতাও রয়েছে। জীবনের শেষ দশ বছর তিনি প্রধানত নাটক রচনা করেন। পৌরাণিক, সামাজিক, ঐতিহাসিক সব ধরনের নাটক রচনায়ই তিনি অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছেন। স্বদেশী আন্দোলনের ফলে তাঁর মধ্যে যে দেশাত্মবোধ জাগ্রত হয়েছিল, ঐতিহাসিক নাটকগুলিতে তার প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি ষোলোটি নাটক রচনা করেন। তাঁর প্রবন্ধমূলক রচনাগুলিও অসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর বহন করছে। দ্বিজেন্দ্রলালের উলে­খযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হলো: কাব্য আর্য্যগাথা (২য় ভাগ, ১৮৯৩), মন্দ্র (১৯০২), আলেখ্য (১৯০৭), ত্রিবেণী (১৯১২); নকশা-প্রহসন একঘরে (১৮৮৯), সমাজ-বিভ্রাট ও কল্কি অবতার (১৮৯৫), ত্র্যহস্পর্শ (১৯০০), প্রায়শ্চিত্ত (১৯০২), পুনর্জন্ম (১৯১১); পৌরাণিক নাটক পাষাণী (১৯০০), সীতা (১৯০৮), ভীষ্ম (১৯১৪); সামাজিক নাটক পরপারে (১৯১২), বঙ্গনারী (১৯১৬); ঐতিহাসিক নাটক তারাবাই (১৯০৩), রানা প্রতাপসিংহ (১৯০৫), মেবার-পতন (১৯০৮), নূরজাহান (১৯০৮), সাজাহান (১৯০৯), চন্দ্রগুপ্ত (১৯১১); প্রবন্ধগ্রন্থ কালিদাস ও ভবভূতি (১৯১০-১১) প্রভৃতি। ঐতিহাসিক নাটক রচনার জন্য তিনি যশস্বী হয়ে আছেন। তাঁর অধিকাংশ নাটক  কলকাতা ও তার বাইরে সফলভাবে মঞ্চস্থ হয়। সাহিত্যকর্ম হিসেবে তাঁর অনেক নাটক উচ্চশিক্ষার পাঠ্যতালিকাভুক্ত হয়েছে।

দ্বিজেন্দ্রলালের সঙ্গীতশিক্ষার  হাতেখড়ি পিতার নিকট। তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন পিতার নিকট থেকে। তারপর বিলেতে থাকা অবস্থায় তিনি পাশ্চাত্য  সঙ্গীত শিক্ষার মাধ্যমে তাঁর সঙ্গীতপ্রতিভাকে শানিত করেন, যা পরবর্তীকালে বাংলা গানের ক্ষেত্রে নতুন নতুন ধারা উদ্ভাবনে সহায়ক হয়।

উনিশ শতকের শেষদিকে এবং বিশ শতকের প্রথমদিকে বাংলা গানের আধুনিকীকরণে যে পঞ্চ গীতিকবি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন, দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁদের অন্যতম। রবীন্দ্রযুগে বাংলা কাব্যসঙ্গীতে বিভিন্ন ধারা প্রয়োগ ও  আধুনিক গান রচনায় তিনি ছিলেন একজন সার্থক রূপকার। নাটক রচনা ও পরিচালনায় তাঁর অসামান্য অবদান থাকলেও তিনি সঙ্গীতকার হিসেবেও সুপরিচিত ছিলেন। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি প্রায় পাঁচশত গান রচনা করেন। প্রথমদিকে তাঁর গান দ্বিজুবাবুর গাননামে পরিচিতি ছিল; পরবর্তীকালে তা দ্বিজেন্দ্রগীতিনামে পরিচিত হয়।

দ্বিজেন্দ্রলাল খুব অল্পবয়স থেকেই গান রচনা করতেন এবং নিজেই সুর দিয়ে গাইতেন। বিলেত যাওয়ার আগে মাত্র সতেরো বছর বয়সের মধ্যে লেখা একশো আটটি গান নিয়ে তাঁর প্রথম গীতসংকলন আর্য্যগাথা (প্রথম ভাগ) ১৮৮২ সালে প্রকাশিত হয়। কিশোর বয়সে লেখা এ গানগুলিতে প্রকৃতির মনোরম সৌন্দর্য ও লাবণ্য, জগতের শোক-জরাজাত দুঃখাবসন্নতা, ঈশ্বরভক্তি এবং স্বদেশপ্রেম প্রকাশ পেয়েছে। এ পর্বের একটি গান হলো: গগনভূষণ তুমি জনগণমনোহারী!/ কোথা যাও নিশানাথ, হে নীল নভোবিহারী!।

দ্বিজেন্দ্রলাল ১৮৮৭ সালে এগারো বছর বয়সের সুরবালা দেবীকে বিবাহ করে সংসারজীবন শুরু করেন। এ সময়কালে দাম্পত্যসুখমগ্ন দ্বিজেন্দ্রলাল রচনা করেন অপূর্ব সব প্রেমের গান, যা ১৮৯৩ সালে প্রকাশিত আর্য্যগাথা-র দ্বিতীয়ভাগে স্থান পায়। এ পর্বের দুটি গান হলো: ছিল বসি সে কুসুম-কাননে/ আর অমল অরুণ উজল আভা/ ভাসিতেছিল সে আননে।এবং আজ যেন রে প্রাণের মতন/ কাহারে বেসেছি ভালো!/ উঠেছে আজ মলয় বাতাস,/ ফুটেছে আজ মধুর আলো।প্রথম গানটি  কীর্তন ঢঙে রচিত এবং রবীন্দ্রনাথের খুব প্রিয় ছিল। এ ধরনের গান রচনার মূল প্রেরণা ছিল স্ত্রী-প্রণয়। তাই প্রথম ভাগের গানে যেখানে প্রকৃতিপ্রেম ও দেশপ্রেমের উচ্ছ্বাস দেখা যায়, সেখানে দ্বিতীয়ভাগের গানে দেখা যায় তাঁর প্রণয়োচ্ছ্বাস।

বাংলা গানের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কথা ও সুরের অপূর্ব সমন্বয়ে গান রচনা করার ক্ষমতা ছিল দ্বিজেন্দ্রলালের সহজাত। তদুপরি ওস্তাদ পিতার নিকট থেকে ভারতীয় মার্গসঙ্গীতে তালিম নেওয়ার ফলে সঙ্গীত রচনায় পাশ্চাত্য সুর আহরণ ও আত্তীকরণ তাঁর জন্য সহজসাধ্য হয়েছিল।

বিলেত থেকে ফেরার পর প্রথম দিকে তিনি বাংলা গান রচনায় সরাসরি পাশ্চাত্য রীতি প্রয়োগ করার চেষ্টা করেন, যা সেকালের শ্রোতৃবৃন্দের নিকট গ্রহণযোগ্য হয়নি। তাই পরবর্তীকালে পাশ্চাত্য রীতিকে বাংলা গানের আদর্শ অনুযায়ী পরিবর্তন করে তিনি ব্যবহার করতে শুরু করেন। এ পর্যায়ে বেশ কিছু স্কচ, আইরিশ ও ইংরেজি গান ভেঙ্গে তিনি বাংলা গান তৈরি করেন। এমন কয়েকটি গান আর্য্যগাথা-র দ্বিতীয় ভাগে পাওয়া যায়।

এর কিছুকাল পর তিনি বিভিন্ন বিষয়, যেমন প্রেম, হাসি, ব্যঙ্গ, দেশাত্মবোধ, ভক্তি ইত্যাদিকে আশ্রয় করে গান রচনা করেন। সেকালে দ্বিজেন্দ্রলালের মতো আধুনিক ঢঙে চমৎকার হাসির গান রচনা করা আর কারও পক্ষে সম্ভব হয়নি। এ দক্ষতা তিনি অর্জন করেছিলেন বিলেতে থাকাকালে। তিনি সেখানকার হাসির গান শুনে সেই ঢঙে গান রচনা করতেন।

সময়ের প্রেক্ষাপটে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত দ্বিজেন্দ্রলাল রচনা করেন অপূর্ব সব ব্যঙ্গরসাত্মক গান। স্বার্থপর রাজনীতিবিদ এবং তথাকথিত দেশভক্তদের উদ্দেশ্য করে রচিত এমন একটি ব্যঙ্গরসাত্মক গান নন্দলালগানটির মধ্য দিয়ে তিনি দেশসেবার নামে স্বার্থপরতার স্বরূপ তুলে ধরে তীব্র বিদ্রূপবাণ নিক্ষেপ করেন।

পরিহাসমূলক গান রচনাতেও দ্বিজেন্দ্রলাল সিদ্ধহস্ত ছিলেন। এমন একটি গানের কিছু অংশ: রাজা। দেখ হতে পার্তাম নিশ্চয় আমি মস্ত একটা বীর/ কিন্তু গোলাগুলির গোলে কেমন মাথা রয় না স্থির; পারিষদ বর্গ। হাঁ তা বটেইতো তা বটেইতো!দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁর নাটকে এ গানগুলি ব্যবহার করেছেন। এছাড়া শুধু নাটকের প্রয়োজনেই তিনি অনেক গান রচনা করেছেন। তাঁর গান নাটকে বেশি ব্যবহূত হওয়ায় সকলের নিকট তা খুব সহজেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

১৮৮৮ থেকে ১৮৯৩ সাল পর্যন্ত প্রায় পাঁচ বছর ভাগলপুর ও মুঙ্গেরে থাকার সময় প্রখ্যাত খেয়ালগায়ক সুরেন্দ্রনাথ মজুমদারের নিকট দ্বিজেন্দ্রলাল সঙ্গীত শিক্ষা করেন। সুরেন্দ্রনাথ খেয়ালগানে টপ্পার চাল মিশিয়ে এক ধরনের চমৎকার গান গাইতেন, যাকে বলা হয় টপখেয়াল। তাঁর সাহচর্যে দ্বিজেন্দ্রলাল একজন দক্ষ সঙ্গীতকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁর প্রেম ও বিরহমূলক বেশকিছু গান সুরেন্দ্রনাথ প্রবর্তিত এ টপখেয়াল রীতিতে রচিত।

১৯০৩ সালে স্ত্রী সুরবালার মুত্যু দ্বিজেন্দ্রলালের সঙ্গীতজীবনে বিরাট পরিবর্তন আনে। আনন্দ ও হাসির গান রচনার ভুবন থেকে তাঁর বিচ্যুতি ঘটে। এক সময় যিনি দাম্পত্য প্রেমের আবেশে রচনা করেছিলেন: তোমারেই ভালবেসেছি আমি/ তোমারেই ভালবাসিব। তোমারই দুঃখে কাঁদিব সখে/ তোমারই সুখে হাসিব\’- স্ত্রী-বিরহক্লিষ্ট সেই তিনিই আবার লেখেন: আজি তোমার কাছে/ ভাসিয়া যায় অন্তর আমার/ আজি সহসা ঝরিল/ চোখে কেন বারি ধার?’

১৯০৫ সালে  বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে যে গণজাগরণমূলক গান রচনার প্রচলন শুরু হয়, তাতে দ্বিজেন্দ্রলালের অবদান ছিল অসামান্য। এ সময় তিনি প্রচুর  দেশাত্মবোধক গান রচনা করেন যা স্বদেশীদের প্রচন্ডভাবে উদ্দীপিত করে। পরবর্তীকালে দেশাত্মবোধক গান রচনাতেই তাঁর সঙ্গীতপ্রতিভার পূর্ণ বিকাশ ঘটে। এভাবে দেখা যায় বিভিন্ন ঘটনা, যেমন বালিকাবধূর সাহচর্য, মাত্র ষোলো বছরে দাম্পত্য জীবনের সমাপ্তি, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন ইত্যাদির প্রভাবে দ্বিজেন্দ্রলালের সঙ্গীতচিন্তা ক্রমবিবর্তিত হয়েছে।

দ্বিজেন্দ্রলাল রচিত জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক গানগুলির মধ্যে বঙ্গ আমার জননী আমার’, ‘ধনধান্যপুষ্পভরাইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পরাধীন ভারতে বাঙালিদের মধ্যেই যেমন প্রথম বিপ­বীর জন্ম হয়েছিল, তেমনি বাঙালির কণ্ঠেই প্রথম জলদমন্দ্র ধ্বনিত হয়েছিল দ্বিজেন্দ্রলালের বঙ্গ আমার জননী আমারগানের মধ্য দিয়ে।

ভারতীয় রাগসঙ্গীতের কাঠামোয় পাশ্চাত্য সঙ্গীতের চালের সমন্বয়ে দ্বিজেন্দ্রলালের উদার ও ওজস্বী সুরে দেশাত্মবোধক গান রচনা বাংলা গানে এক অভিনব ধারার সূচনা করে। তাঁর গানে রয়েছে সুরের সাবলীলতা। একটি নির্দিষ্ট রাগকে অবলম্বন করেও রাগের সরাসরি প্রভাবকে ছাপিয়ে কথা ও সুরের অপূর্ব সমন্বয়ে সঙ্গীতে ভাব ফুটিয়ে তোলা রবীন্দ্রনাথের পরে একমাত্র দ্বিজেন্দ্রলালেই সম্ভব হয়েছে। তাঁর ধনধান্যপুষ্পভরাগানটিতে কেদারারাগের কাঠামোয় অন্তর উজারকরা দেশাত্মবোধক কথাগুলি সাজানো হয়েছে। এখানে সে যে আমার জন্মভূমিলাইনটিতে ইংরেজি গানের ঢঙে তিন রকম সুরের উত্থান-পতনের গতিতে সুর রচনা দ্বিজেন্দ্রলালের এক অসামান্য সৃষ্টি, যা আজও তাঁকে স্মরণীয় করে রেখেছে।

দ্বিজেন্দ্রলালের অসাধারণ সঙ্গীতপ্রতিভার সঙ্গে এক হয়ে গিয়েছিল বিদেশী শাসকদের প্রতি তাঁর বিদ্বেষী মনোভাব, যার প্রতিফলন ঘটেছে তাঁর রচিত বিভিন্ন স্বদেশী সঙ্গীতে। পাশ্চাত্য সঙ্গীতের চিত্তাকর্ষক দিকগুলি উত্তমরূপে আত্মস্থ করে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে তিনি তা প্রয়োগ করেন বাংলা গানে। বাংলা গানে প্রথম বিদেশী  কোরাস গানের ঢঙ প্রয়োগ তাঁর বিশেষ অবদান।

প্রেমের গান রচনায়ও তিনি ছিলেন কৃতবিদ্য। গানের কথার কোনো অংশে কতটা গতিতে সুরের আরোহণ-অবরোহণ হলে প্রেমের আবেগ কতখানি ফুটে উঠবে, সে বিষয়ে তাঁর সচেতনতা লক্ষণীয়। প্রেমের গানে কখনও কখনও বাংলা টপ্পার কোমল দোলা দিয়ে গানের আবেশ তৈরি করে মোহনীয় সুরসৃষ্টি তাঁর অসাধারণ কীর্তি। একজন শিল্পীর কণ্ঠের আয়ত্তের মধ্যে স্বর ক্ষেপণ করার মতো স্বরপরিকল্পনায় তিনি ছিলেন সদা সতর্ক। সে কারণে সুরের একটা উদার ও ওজস্বী ভাব সব সময় তাঁর গানে পরিলক্ষিত হয়।

অসাধারণ শিল্পকর্মের মূলতত্ত্ব যে সত্য, সুন্দর ও আনন্দ- দ্বিজেন্দ্রলালের সঙ্গীতকর্মে তার সার্থক প্রকাশ ঘটেছে; তাই তাঁর গানে রয়েছে মৌলিকত্বের ছাপ। বাংলা কাব্যসঙ্গীতে তথা আধুনিক বাংলা গানে সুর, ভাব ও বিষয়ভিত্তিক রচনায় বিভিন্ন ধারার সমন্বয়করণ দ্বিজেন্দ্রলালের এক মহৎ কীর্তি। একটি সুস্থ সঙ্গীতপরিমন্ডল সৃষ্টিতে তাঁর এ অবদান বাংলার সঙ্গীতাঙ্গনে সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ১৯১৩ সালের ১৭ মে কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।  [খান মোঃ সাঈদ]

গ্রন্থপঞ্জি:  দিলীপকুমার রায়, মহানুভব দ্বিজেন্দ্রলাল, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৬৬; করুণাময় গোস্বামী, সঙ্গীতকোষ, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ১৯৮৫; সুধীর চক্রবর্তী, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়-স্মরণ বিস্মরণ, কলকাতা, ১৯৮৯ ও বাংলা গানের সন্ধানে, কলকাতা, ১৯৯০।

অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

Q.1 সাজাহান কে?

ANS:- সাজাহান ভারতের মোগল সম্রাট।

Q.2 পিতা-পুত্র পাঠটি কোন্ নাটক থেকে গ্রহণ করা হয়েছে?

ANS:- সাজাহান নাটক থেকে।

Q.3 সাজাহান নাটকের নাট্যকার কে?

ANS:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায়।

Q.4 সম্রাটের জ্যেষ্ঠপুত্রের নাম কী ছিল?

ANS:- দারা।

Q.5 ঔরঙ্গজীব সম্রাট সাজাহানের জ্যেষ্ঠ/তৃতীয় পুত্র। (শুদ্ধ উত্তরটি লেখো)

ANS:- তৃতীয় পুত্র।

Q.6 সুজা কোথাকার নবাব ছিলেন?

ANS:- বাংলার।

Q.7 নাটকে স্বকল্পিত রাজাটি কে?

ANS:- মোরাদ।।

Q.8 যশোবন্ত সিংহ কে ছিলেন?

ANS:- মাড়ওয়ারের অধিপতি।

Q.9 জয়সিংহ কে?

ANS:- বিকানীরের মহারাজ।

Q.10 দারার স্ত্রীর নাম কী ছিল?

ANS:- নাদিরা।

Q.11 জাহানারা কে?

ANS:- সাজাহানের কন্যা।

Q.12 মোহাম্মদ কার পুত্র ছিল?

ANS:- ঔরঙ্গজীবের।

Q.13 দারার পুত্রের নাম কী ছিল?

ANS:- সোলেমান।

Q.14 মোরাদ কোথায় রাজত্ব করতেন?

ANS:- গুর্জরে।

Q.15 মোরাদ কে?

ANS:- সম্রাট সাজাহানের কনিষ্ঠ পুত্র এবং গুর্জরের নবাব।

Q.16 নাদিরা কার কন্যা?

ANS:- পারভেজের।

Q.17 আমি যাচ্ছি আপনার সিংহাসন রক্ষা করতেউক্তিটি কার?

ANS:- সাজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র দারার।।

Q.18 কিন্তু তুইও এর মধ্যে যাসনেউক্তিটি কার?

ANS:- উক্তিটি সম্রাট সাজাহানের।

Q.19 ঔরঙ্গজীব মোরাদের সঙ্গে কোথা থেকে যোগ দিয়েছে?

ANS:- দাক্ষিণাত্য থেকে।

Q.20 দারা মোরাদের বিরুদ্ধে কাকে পাঠালেন?

ANS:- যশোবন্ত সিংহকে।

Q.21 দিলির খাঁ কে?

ANS:- একজন সেনাধ্যক্ষ।

 

ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 10 BENGALI

QUESTIONS & ANSWERS

সেবা অসম দশম শ্রেনী বাংলা

প্রশ্ন এবং উত্তর

পাঠ : পিতা-পুত্র,

নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

Q.1 পিতা-পুত্র পাঠটি কোন্ নাটকের কোন্ অঙ্কের কোন্ দৃশ্য থেকে গ্রহণ করা হয়েছে?

ANS:-পিতা-পুত্রপাঠটি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত সাজাহাননাটকের প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্য থেকে নেওয়া হয়েছে।

Q.2 পিতা-পুত্র পাঠে পিতাপুত্রের পরিচয় দাও।

ANS:- এখানে পিতা ভারত সম্রাট সাজাহান। পুত্ররা হলেন - দারা, সুজা, মোরাদ ও ঔরঙ্গজীব। জ্যেষ্ঠ পুত্র দারা সম্রাট সাজাহানের নামে রাজ্য পরিচালনা করছেন। সুজা বাংলার নবাব। মোরাদ নিজে স্বকল্পিত রাজা। ঔরঙ্গজীব দাক্ষিণাত্যের দায়িত্বে ছিলেন।

Q.3 জাহানারার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

ANS:- জাহানারা ভারত সম্রাট সাজাহানের কন্যা। জাহানারা ব্যক্তিত্বময়ী রমণী এবং, ঔরদজীবের প্রতিস্পধিনী। পিতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও ভ্রাতার প্রতিও স্নেহময়ী।

Q.4 নাদিরা কার কন্যা? নাদিরার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

ANS:- নাদিরা পরভেজের কন্যা। নাদিরা কোমল স্বভাবের মেয়ে। দারার স্ত্রী। তিনি যুদ্ধ পছন্দ করেন না।

Q.5 কাল রাত্রে আমি একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছি।' কে, কখন এই উক্তিটি করেছিলেন?

ANS:- দাবার স্ত্রী নাদিরা এই উক্তিটি করেছিলেন।

দারা যখন তার অন্য ভাইদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে যাবেন বলে ষির করেছেন তখন নাদিরা স্বামীকে যুদ্ধযাত্রা থেকে বিরত থাকবার জন্য এই উক্তিটি করেছিলেন।

Q.6 আমি যাচ্ছি আপনার সিংহাসন রক্ষা করতে- কে, কাকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন?

ANS:- সম্রাট সাজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র দারা পিতাকে লক্ষ্য করে উক্তিটি বলেছিলেন।

Q.7 টীকা লেখো -  (ক) দারা (খ)সাজাহান ()ঔরঙ্গজীব

ANS:-

(ক) দারা : সম্রাট সাজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র। তাঁর মানববাচিত গুণের জন্য সম্রাট তাকে ভালোবাসতেন। হিন্দু দর্শন, বেদ, উপনিষদ ইত্যাদি পাঠে তার গভীর নিষ্ঠা ছিল। দিল্লীর সিংহাসনের প্রতি তার মোহ ছিল না। পিতৃভক্তি, পত্নীপ্রেম, উদারতা প্রভৃতি মানবিক গুণ গুলো দারা চরিত্রটিকে সাজাহান নাটকে অন্যতম প্রধান চরিত্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।

(খ) সাজাহান : ভারত সম্রাট সাজাহান। তিনি পক্ষাঘাতে আক্রান্ত। আগ্রার রাজপ্রাসাদে একমাত্র কন্যা জাহানারার তত্ত্বাবধানে দিন কাটাচ্ছেন। তার চারপূত্র দারা, সুজা, মোরাদ ও ঔরঙ্গজীব। এক কন্যা জাহানারা। তাঁর প্রিয় পত্নী মমতাজের স্মৃতি রক্ষার্থে মমতাজের সমাধির উপর পৃথিবী বিখ্যাত সৌধ তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন। তার শিল্পকীর্তি মোঘল যুগের শ্রেষ্ঠ অবদান।

() ঔরঙ্গজীব: ঔরঙ্গজীব ভারত-সম্রাট সাজাহানের তৃতীয় পুত্র। প্রথমে তিনি দাক্ষিণাত্যের রাজা ছিলেন। তাঁর বাহুবল ছিল অসাধারণ। তিনি একজন সাহসী ও ধার্মীক রাজা ছিলেন। ধর্মের দোহাই দিয়ে তিনি ধর্মভীরুদের কাবু করতেন। তিনি পিতাকে বন্দী, দাদা দারাকে হত্যা, ভাই মোরাদকে হত্যা করে রাজ্যলিপ্সা চরিতার্থ করেছিলেন।

 

ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 10 BENGALI

QUESTIONS & ANSWERS

সেবা অসম দশম শ্রেনী বাংলা

প্রশ্ন এবং উত্তর

পাঠ : পিতা-পুত্র,

নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

Q.1 আমি যাচ্ছি আপনার সিংহাসন রক্ষা কর্তে।উক্তিটি কার? কখন কাকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে, এর কারণ কী?

ANS:- উক্তিটি সম্রাট সাজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র দারার। সম্রাট সাজাহান যখন ঈশ্বরের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলছিলেন যে, ঈশ্বর পিতাদের বুক ভরা স্নেহ দিয়েছেন কেন? কেন তাদের হৃদয়কে তিনি লৌহ দিয়ে গড়েননি। এই কথাগুলি শোনে দারা পিতাকে লক্ষ্য করে উক্ত উক্তিটি করেছিলেন।

পিতা সাজাহান ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ্ব সহ্য করতে পারছেন না। তিনি যে পিতা। পিতার নিকট সব পুত্ৰই সমান স্নেহের অধিকারী। দারা পিতাকে বোঝাবার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, তিনি সিংহাসন লাভে প্রত্যাশী নন। তার জন্য যুদ্ধ চান না, সাম্রাজ্যও চান না। তিনি দর্শন, উপনিষদে এর চেয়ে বড়ো সাম্রাজ্য পেয়েছেন। তিনি যাচ্ছেন সম্রাট সাজাহানের সিংহাসন রক্ষা করতে।

Q.2 জহিানারা কে? তার পরিচয় দাও।

ANS:- জাহানারা সম্রাট সাজাহানের কন্যা। ভারত সম্রাট বৃদ্ধ সাজাহান আগ্রার রাজপ্রাসাদে জাহানার তত্ত্বাবধানাধীন ছিলেন। সাজাহান নাটকের এই চরিত্রটি অত্যন্ত উজ্জ্বল। তিনি দারার পক্ষে মত পোষণ করেছিলেন। আলোচ্য রচনাংশে পিতার প্রতি তার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি অন্যায় অবিচার সহ্য করতে পারতেন না। সাজাহান নাটকের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হল জাহানারা।

 

ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 10 BENGALI

QUESTIONS & ANSWERS

সেবা অসম দশম শ্রেনী বাংলা

প্রশ্ন এবং উত্তর

পাঠ : পিতা-পুত্র,

নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

 

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর

Q.1 সাজাহান শুধু পিতা নয় - সম্রাট।"- কথাটির তাৎপর্য লেখো

ANS:- সম্রাট সাজাহান বৃদ্ধ এবং পক্ষাঘাতে আক্রান্ত। তাই পিতার নামে দেশ শাসন করছেন তার জ্যেষ্ঠ পুত্র দারা। সম্রাটের দ্বিতীয় পুত্র সুজা তখন বাংলার নবাব। কিন্তু স্বভাবে তিনি উদ্ধত। মোরাদ নিজে স্বকল্পিত সম্রাট। তৃতীয় পুত্র ঔরংজীব তখন মোরাদের সহকারী হয়ে আগ্রায় প্রবেশ করার সুযোগ সন্ধানে তৎপর। এমন সময় সম্রাট সাজাহানের মৃত্যুর মিথ্যে সংবাদ সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে যায়। এই খবর পেয়ে সুজা, মোরাদ ও ঔরসজীব ভাবলেন যে, জ্যেষ্ঠ পুত্র দারা ভারত-সম্রাট হতে চলেছে। তাই তারা যে যেখানে ছিল সেখান থেকে আগ্রা অভিমুখে রওনা দেয় দারাকে প্রতিহত করতে। এখবর শুনে সাজাহান ভেঙ্গে পড়েন। তিনি ভাবেন ক্ষমতা দখলের লোভে ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ্ব প্রকারান্তরে তার বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ ঘোষণার সমান। তাই তিনি দারাকে ভাইদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে মানা করেন। কিন্তু সাজাহানের কন্যা জাহানারা দারার পক্ষে মত পোষণ করেন। তখন সাজাহান দারাকে বললেন যে, আক্রমণকারী তিন ভাইকে পীড়ন না কর বেঁধে নিয়ে আসতে। তাতে তাদের বোঝানো যাবে যে সাজাহান শুধু পিতা নন, সম্রাটও। পিতা হিসাবে স্নেহশীল হলেও তিনি সম্রাট হিসাবে কঠোর হাতে নিজ পুত্রদের দমন করতেও জানেন। এই উক্তির মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে সাজাহানের সম্রাট হিসাবে কর্তব্য পরায়ণতা ও পিতৃ স্নেহের দ্বন্দ্ব।

Q.2 দারার চরিত্র বর্ণনা করো

ANS:- দারা সাজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র। সম্রাট সাজাহান বৃদ্ধ। পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি একমাত্র কন্যা জাহানারার তত্ত্বাবধানাধীন ছিলেন। তাই জ্যেষ্ঠ পুত্র দারা পিতা সাজাহানের নামে দেশ শাসন করতেন। দারা দ্বন্দ্ব বা যুদ্ধ পছন্দ করতেন না। তার সব ভাই বিদ্রোহ ঘোষণা করলে তিনি পিতার সিংহাসন রক্ষাকল্পে তাদের সায়েস্তা করতে উদগ্রীব ছিলেন। এখানে আমরা পিতা ও দেশের প্রতি তার দায়বদ্ধতার পরিচয় পাই। তিনি পিতাকে বোঝাতে চান যে, সিংহাসনের প্রতি তার লোভ নেই। তিনি সাম্রাজ্য চান তিনি দর্শন, উপনিষদে এর চেয়েও বড়ো সাম্রাজ্য পেয়েছেন। এখানে আমরা তার উদার মনোভাবের পরিচয় পাই। তিনি সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন ছিলেন না। তাই তিনি দর্শন, উপনিষদ পাঠ করতেন। তিনি ছিলেন নির্লোভ। ভাইদের প্রতিও তার স্নেহ ভালবাসা ছিল। তাই তিনি তাদের বোঝাতে আগ্রহী ছিলেন। আলোচ্য নাট্যাংশে আমরা কর্তব্যপরায়ণতা, পিতৃভক্তি, স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা, সন্তানবৎসলতা প্ৰভতি চারিত্রিক বৈশিষ্টগুলি দারার মধ্যে দেখতে পাই।

Q.3 জয়সিংহ সম্পর্কে যা জান লেখো।

ANS:- রাজা জয়সিংহ ছিলেন জয়পুরের রাজা। রাজপুত বীর। তিনি ছিলেন প্রচণ্ড সুবিধাবাদী রাজা। তার আদর্শ সর্বদাই পরিবর্তিত হত। দারার ক্ষমতা কালে তিনি দারার অনুরাগী ছিলেন। তার চরিত্রে কোন মান-সম্মান, শৌর্য বীর্যের ছাপ ছিল না। তিনি হিন্দু হয়েও হিন্দুর প্রভুত্ব স্বীকার করতেন না। মোগল সাম্রাজ্যের ক্ষমতা হস্তান্তরকালে তিনি ঔরঙ্গজীবের পক্ষ অবলম্বন করেন। তিনি ঔরঙ্গজীবের স্তাবকতা করে নিজের ঐশ্বর্য বৃদ্ধি করতে ব্যস্ত ছিলেন। বুদ্ধি, কর্মনৈপুণ্য, ধৈৰ্য্য ইত্যাদি বিষয়ে জয়সিংহ ছিলেন মোগল সাম্রাজ্যের অদ্বিতীয় ব্যক্তি। তিনি ছিলেন সাদামাটা, ধুরন্ধর স্বভাবের লোক। আচার আচরণে ব্যবসায়ী প্রকৃতির লোকতার নির্দিষ্ট কোনো আদর্শ ছিল না। তিনি নিজ স্বার্থ সিদ্ধিতে মগ্ন থাকতেন। দেশ ও স্বজাতির জন্য তার কোনো মাথাব্যথা ছিল না।

Q.4 যশোবন্ত সিংহের চরিত্র আলোচনা করো।

ANS:- যশোবন্ত সিংহ যোধপুরের অধিপতি ছিলেন। যশোবন্ত সিংহের মধ্যে রাজপুতদের বীরত্ব লক্ষ্য করা যায়। তিনি ছিলেন ক্ষিপ্র, স্পষ্টবক্তা ও নির্ভীক। তার মধ্যে ক্ষত্রিয়দের গুণাবলি পরিলক্ষিত হয়। তিনি সাহসী ও বীর হলেও তার বীরত্ব কিন্তু ন্যায়ের অভিব্যক্তি স্বরূপ ছিল না। প্রয়োজনবোধে তিনি অন্যায় কার্য করেও তার প্রতাপকে জাহির করতে কার্পণ্য করতেন না। সাজাহান নাটকে দেখা যায়, যশোবন্ত সিংহ প্রথম দিকে দারার পক্ষে থাকলেও পরে তাকে পরিত্যাগ করে চলে যান। তার স্বপ্ন ছিল হিন্দু রাজ্য গড়ে তোলার। কিন্তু সেই স্বপ্ন আবার নিমেষেই উধাও হত। যশোবন্ত ছিলেন নিজের কাজে নিজেই আত্মতৃপ্ত মানুষ। রাজপুত বীরের শৌর্য-বীর্য তাঁর চরিত্রে থাকলেও চরিত্র দৃঢ়ভাবে গঠনের একান্ত অভাব তার মধ্যে দেখা গিয়েছিল। তিনি কখনও ঔরঙ্গজীবের বশ্যতা স্বীকার করেননি। অবশ্য পরে একসময় তাঁকে ঔরঙ্গজীবের বশ্যতা স্বীকার করতে দেখা যায়। যশোবন্ত ছিলেন লঘু চিত্তের অধিকারী। তিনি অস্থির মতির মানুষ ছিলেন। যশোবন্ত সিংহ সাজাহান নাটকের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।  

Q.5 কিন্তু তুইও এর মধ্যে যাস নে,’— উক্তিটি কার ? কখন কাকে, কেন করা হয়েছে? তার প্রকৃত কাজ কী হওয়া উচিত ছিল?

ANS:- উক্তিটি ভারত সম্রাট সাজাহানের। সাজাহান জাহানারাকে উক্ত উক্তিটি করেছেন।

সাজাহানের তিন পুত্র সুজা, মোরাদ এবং ঔরঙ্গীব আগ্রা আক্রমণ করতে প্ৰস্তৃত। জ্যেষ্ঠ পুত্র দারা পিতার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তিনি এদের বিদ্রোহ দমন করতে চাইছেন। জাহানারাও দারাকে সমর্থন করেছেন। সেও দারাকে যুদ্ধে যাবার জন্য অনুপ্রাণিত করছে। পত্নী নাদিরা দারাকে যুদ্ধে যেতে বারণ করছেন দেখে জাহানারা একটু অসন্তুষ্ট হয়। এ সময় সম্রাট সাজাহান জাহানারাকে ভাইদের দন্দ্বে অংশ গ্রহণ করতে বারণ করেন। তিনি জাহানারাকে জানান যে, সে যেন এ আবর্জনায় পা না দেয়।

সাজাহানের মতে, জাহানারার প্রকৃত কাজ হওয়া উচিত স্নেহ, ভক্তি ও অনুকম্পা করা। তিনি চান অন্তত সে যেন পবিত্র থাকে।

Q.6 ব্যাখ্যা করো। আমি এখন তা বলতে পারি না। সে বড় ভয়ানক না-নাথ,' এই যুদ্ধে কাজ নেই।

ANS:- আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত সাজাহান নাটকের প্রথম দৃশ্য থেকে চয়ন করা হয়েছে। এখানে সম্রাট সাজাহানের জ্যেষ্ঠ ছেলে দারার স্ত্রী নাদিরার পূর্বরাত্রের দুঃস্বপ্নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নাদিরা পারভেজের কন্যা। যুদ্ধের ভয়, অশ্রু বিসর্জন তার চরিত্রে শোভা পায় না।

সাজাহাননাটকের প্রথম অংকের প্রথম দৃশ্যের অন্তর্গত আলোচ্য উক্তিটি নাদিরা করেছেন। সম্রাট সাজাহানকে চিন্তিত দেখে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র দারা ভাইদের নিবৃত্ত করতে উদ্যত হলেন। কিন্তু ঠিক সেই সময় দারার স্ত্রী নাদিরা তাকে যুদ্ধে যেতে বারণ করলেন। কারণ তিনি একটি দুঃস্বপ্ন দেখেছেন। সেই স্বপ্ন ছিল ভীষণ ভয়ানক। তা তিনি এখন ব্যক্ত করতে পারবেন না। তিনি এ যুদ্ধের ফল ভালো দেখছেন না বলে স্বামী দারাকে যুদ্ধে না যাবার জন্য অনুরোধ করছেন।

Q.7 ব্যাখ্যা করো। - কিন্তু এ শান্তি তাদের - একার নয়।

ANS:- উদ্ধৃতাংশটি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের পিতা-পুত্র নাট্যাংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মূল নাটকের নাম সাজাহানআলোচ্য উক্তিটি সম্রাট সাজাহানের। এখানে তার পিতৃ সত্তা প্রবল হয়েছে।

পিতামাতার কাছে সব সন্তানই সমান। আগ্রায় প্রবেশ করাকে কেন্দ্র করে তার পুত্ররা যুদ্ধ করতে চাইছে। কিন্তু ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ্ব তিনি চাইছেন না, অবশ্য তাদের শাসন করতে চান। পিতা যখন পুত্রকে শাসন করে, তখন পুত্র ভাবে পিতা কি নিষ্ঠুর, কিন্তু সে জানে না যে, পিতার উদ্যত বেত্রের অর্ধেকখানি পড়ে সেই পিতারই পৃষ্ঠে। তাই সাজাহান মনে করেন যে, তাঁর বিদ্রোহী পুত্রদের দমন করতে গিয়ে তিনিই শাস্তির শিকার হচ্ছেন।

Q.8 ব্যাখ্যা করো পিতা, একি আপানার উপযুক্ত কথা। এ দৌর্বল্য কি সম্রাট সাজাহানকে সাজে।

ANS:- আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত পিতা-পুত্র নাট্যাংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মূল নাটক সাজাহান এর প্রথম অষ্টের প্রথম দৃশ্য থেকে সংকলিত হয়েছে।

আলোচ্য অংশে সাজাহান কন্যা জাহানারা পুত্র মোহে কাতর সম্রাট সাজাহানকে প্রশ্ন করে জানতে চেয়েছেন, পুল কি কেবল পিতার স্নেহের অধিকারী। পুত্র অবাধ্য হলে পিতাকে কি তাদের শাসন করতে হবে না। তখন সম্রাট সাজাহান জানান যে, তার হৃদয় শুধু এক শাসন জানেআর তা হল স্নেহের শাসন মাতৃহারা পুত্রকন্যাদের শাসন করতে তার প্রাণে চায় না। এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে উপরোক্ত কথাটি জাহানারা পিতাকে বলেছিলেন।

Q.9 ব্যাখ্যা করো তারা জানুক, সম্রাট সাজাহান স্নেহশীল, কিন্তু দুর্বল নয়

ANS:- আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটি দিয়ে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের পিতা পুত্রনাট্যাংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। এই পিতা-পুত্র নাট্যাংশটি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের মূল নাটক সাজাহান থেকে গৃহীত। এখানে পিতা সাজাহানের প্রতি পূত্র দারার শ্রদ্ধা ও ভক্তি প্রকাশ পেয়েছে।

সম্রাট সাজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র দারা পিতার কাছে প্রতিজ্ঞা করেন যে, তিনি তার ভাইদের কাউকে পীড়ন বা বধ করবেন না, তাদের বেঁধে পিতার পদতলে এনে দেবেন। যদি পিতার তখন ইচ্ছা হয়, তাদের ক্ষমা করবেন। তারা জানুক, সম্রাট সাজাহান স্নেহশীল কিন্তু দুর্বল নয়। আলোচ্য উদ্ধৃতাংশে দারার পিতা সাজাহানের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তি প্রকাশ পেয়েছে। সম্রাট সাজাহান এবং পিতা সাজাহান এই দুই সত্তাকেই তিনি সম্মান দেখিয়েছেন।

Q.10 কালরাত্রে আমি একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছি- তাৎপর্য লেখো

ANS:- সম্রাট সাজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র দারার স্ত্রী নাদিরা দারাকে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেন। এতে জাহানারা আশ্চর্য হন। দারা এর কারণ জানতে চাইলে নাদিরা বলেন যে, তিনি আগের দিন রাত্রে এক দুঃস্বপ্ন দেখেছেন। দারা দুঃস্বপ্ন সম্পর্কে জানতে চাইলে তার স্ত্রী নাদিরা তাঁকে জানান, সেটা এক ভয়ানক দুঃস্বপ্ন তা তিনি ব্যক্ত করতে পারবেন না। তাই তিনি বলছেন এ যুদ্ধে কাজ নেই। এখানে আমরা নাদিরার নরম স্বভাবের পরিচয় পাই। তিনি স্বামীর হিতাকাঙক্ষী। তাই তিনি যুদ্ধ চাননি।

Q.11 এ যুদ্ধ অনিবার্য, আমি যাই।- উক্তিটির তাৎপর্য লেখো।

ANS:- দারা ভাইদের বিদ্রোহ থামাতে চান। পিতার সিংহাসন রক্ষা করতে তিনি উদ্যত। দারার স্ত্রী নাদিরা দারাকে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করলে সাজাহান কন্যা জাহানারা দারাকে বলেন, “দারা এ কি তুমি ভাবছো! এত তরল তুমি! এত স্ত্রৈণ। পিতার সম্মতি পেয়ে এখন স্ত্রীর সম্মতি নিতে হবে না কি। মনে রেখো দারা, কঠোর কর্তব্য সম্মুখে। আর ভাববার সময় নাই জাহানারার এই সতর্কবাণীতে দারার মধ্যে কর্তব্যবোধ জেগে ওঠে। তিনি স্ত্রীর অনুরোধ উপেক্ষা করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হন। তাই তিনি বলেন যে যুদ্ধ অনিবার্য, তিনি যুদ্ধ করতে যাবেন।

Q.12 ব্যাখ্যা করো কিন্তু, তুইও এর মধ্যে যাস নে, তোর কাজ - স্নেহ-ভক্তিঅনুকম্পা।

ANS:- উদ্ধৃতাংশটি সাজাহাননাটকের প্রথম অংকের প্রথম দৃশ্যের অন্তর্গত। উদ্ধৃতিটির দ্বারা সম্রাট সাজাহান কন্যা জাহানারাকে ভাইদের দ্বন্দ্বে অংশগ্রহণ করতে বারণ করেছেন।

সাজাহানের তিন পুত্র সুজা, মোরাদ এবং ঔরঙ্গীব আগ্রা আক্রমণ করতে প্ৰস্তৃত। জ্যেষ্ঠ পুত্র দারা পিতার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তিনি এদের বিদ্রোহ দমন করতে চাইছেন। জাহানারাও দারাকে সমর্থন করেছেন। সেও দারাকে যুদ্ধে যাবার জন্য অনুপ্রাণিত করছে। পত্নী নাদিরা দারাকে যুদ্ধে যেতে বারণ করছেন দেখে জাহানারা একটু অসন্তুষ্ট হয়। এ সময় সম্রাট সাজাহান জাহানারাকে ভাইদের দন্দ্বে অংশ গ্রহণ করতে বারণ করেন। তিনি জাহানারাকে জানান যে, সে যেন এ আবর্জনায় পা না দেয়।

সাজাহানের মতে, জাহানারার প্রকৃত কাজ হওয়া উচিত স্নেহ, ভক্তি ও অনুকম্পা করা। তিনি চান অন্তত সে যেন পবিত্র থাকে।

 

ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 10 BENGALI

QUESTIONS & ANSWERS

সেবা অসম দশম শ্রেনী বাংলা

প্রশ্ন এবং উত্তর

পাঠ : পিতা-পুত্র,

নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

 

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর

Q.1 সাজাহানের পিতৃস্নেহের যথাযথ বর্ণনা দাও।

ANS:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত পিতা পুত্রপাঠ্যাংশটি তার রচিত মুল নাটক সাজাহান এর প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্য থেকে গৃহীত। এই নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র হল সাজাহান। তিনি ট্রাজিক নায়ক। নাটকে সাজাহানের সম্রাট সত্তা ও পিতৃসত্তার প্রশ্ন প্রকাশ পেয়েছে। সাজাহান ছিলেন ভারতবর্ষের সম্রাটকিন্তু একই সঙ্গে তিনি ছিলেন পুত্র কন্যার জনকতাঁর চার পুত্র এবং এক কন্যা ছিল। চার পুত্ররা হলেন, দারা, সুজা, মোরাদ ও ঔরংগজীব একমাত্র কন্যার নাম জাহানারা। দারা ছিলেন সম্রাটের জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং ঔরংগজীব ছিলেন তৃতীয় পুত্র। সম্রাট সাজাহান বৃদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি পক্ষাঘাতে আক্রান্ত। আগ্রার রাজপ্রাসাদে একমাত্র মাহারা জাহানারার তত্ত্বাবধানাধীনে আছেন। জ্যেষ্ঠ পুত্র দারা পিতার নামে সাম্রাজ্য পরিচালনা করছেন। এমতাবস্থায় হঠ্যাৎ সম্রাটের মৃত্যুর মিথ্যে খবর সারাদেশে রটে যায়। এই খবর পেয়ে তার তিন পুত্র আগ্রায় প্রবেশ করা নিয়ে দ্বন্দ্বে তৎপর হয়ে ওঠেসম্রাটের কাছে এই সংবাদ পৌঁছামাত্র তিনি অস্থির হয়ে ওঠেন। তাঁর পিতৃসত্তা জেগে ওঠেতিনি চিন্তা করতে থাকেন কীভাবে এই যুদ্ধ থামানো যায়। কারণ তিনি বুঝতে পারছেন তাঁর পুত্ররা ভুল করছে। ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ খুব সাংঘাতিক ব্যাপার। তিনি দারাকে বললেন তাদের রুখতে। পিতা সাজাহানের কাছে তার পুত্ররা এখনও শিশুর মতোসম্রাট সাজাহান দারার প্রতি স্নেহশীল হলেও অন্যান্য পুত্রদের প্রতিও তার একই পরিমাণ স্নেহ, মায়া-মমতা আছে। তিনি কেবল জানেন স্নেহের শাসন। তার মাতৃহারা সন্তান, বেতের ঘা তাদের পিঠে পড়লে তার অর্ধেক পিতার পিঠেই পড়ে। সে কথা পুত্ররা জানতে পারে না। আলোচ্য নাট্যাংশে সাজাহানের পিতৃবাৎসল্য বোধের পরিচয় পাওয়া যায়।

Q.2 পিতা-পুত্রপাঠটির সারাংশ লেখো

ANS:- পাঠের বিষয়বস্তু :

ভারতসম্রাট সাজাহান বৃদ্ধ। তিনি পক্ষাঘাতে আক্রান্ত। আগ্রার রাজপ্রাসাদে একমাত্র কন্যা জাহানার তত্ত্বাবধানাধীন। সম্রাটের চার পুত্র দারা, সুজা, মোরাদ ও ঔরঙ্গজীব। জ্যেষ্ঠপুত্র দারা পিতার নামে রাজ্য পরিচালনা করছেন। সম্রাটের দ্বিতীয় পুত্র, সুজা বাংলার নবাব। সে উদ্ধত স্বভাবের মানুষ। মোরাদ নিজেই স্বকল্পিত সম্রাট। আর ঔরঙ্গজীব মোরাদের সহকারী হয়ে আগ্রায় প্রবেশ করার সুযোগ সন্ধানে তৎপর হয়ে আছেন। হঠাৎ পক্ষাঘাতে আক্রান্ত সম্রাটের ভিত্তিহীন মৃত্যু সংবাদ ভারতের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে সুজা, মোরাদ ও ঔরঙ্গজীব দারার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে এবং সকলে একই সঙ্গে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। খবরটি দারার কাছে পৌছলে দারা তার বিদ্রোহী ভ্রাতাদের সমুচিত শাস্তি দেবার ওন্য কৃত সংকল্প হন। ভগ্নী জাহানারা দারার পক্ষে মতপোষণ করায় সম্রাট শাজাহান মেয়েকে এ ব্যাপারে চুপ থাকতে আদেশ দেন। এতে জাহানারা সম্মত হননি। ভ্রাতাদের বিদ্রোহ দমনে অথর্ব পিতা সাজাহান প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেন। তিনি মনে করেন পরিণত বয়স্ক পুত্রেরা এখনও তার নিকট অল্প বয়স্ক নির্বোধ শিশু মাত্র। তিনি চান তাঁর পুত্রদের আগ্রায় আনয়ন করে মৃদু ভৎসনা দ্বারা সম্রাট বিরোধী কার্যকলাপ থেকে নিবৃত্ত করতে। কারণ তিনি এখনও জীবিত আছেন।

সম্রাট জ্যেষ্ঠ পুত্র দারার প্রতি স্নেহশীল হলেও অন্যান্য পুত্রদের প্রতিও তার সম পরিমাণ স্নেহ মমতা-মায়াবোধ আছে। দারাকে নির্দেশ দেন দারা যেন তার ভাইদের প্রতি খড়্গ হস্ত না হন। নিরুৎসাহ দারা পিতার প্রতি শ্রদ্ধাবশত তাঁর বাক্য লঙ্ঘন করতে পারেননি। কন্যা জাহানারা এমতাবস্থায় তার পিতার নিকট জানতে চায় যে এটা কি সম্রাট সাজাহানের উপযুক্ত কথা? এ দৌর্বল্য কি তার সাজে? পিতা জানান যে তারা তার পুত্র, তিনি শুধু জানেন স্নেহের শাসন। মাতৃহারা সন্তানেরা সম্রাটের হৃদয়ের এক শাসনই জানবে। তা হল স্নেহের শাসন। তার কাছে স্নেহ ছাড়া আর কোনও যুক্তি নেই। দারার স্ত্রী নাদিরাও দারাকে এইযুদ্ধ থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানায়। দারা শেষবার জানায় যে এ যুদ্ধ অনিবার্য, তিনি সৈনদের যুদ্ধে যাবার আজ্ঞা দিতে চান। তখন সম্রাট সাজাহান জাহানারাকে জানান, সে যেন এ আবর্জনায় পা না রাখে। তিনি চান অন্তত জাহানারা পবিত্র থাকুক।

Q.3 পিতা-পুত্র নাট্যাংশ অবলম্বনে দারা চরিত্র বর্ণনা করো

ANS:- দারা সাজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র। সম্রাট সাজাহান বৃদ্ধ। পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি একমাত্র কন্যা জাহানারার তত্ত্বাবধানাধীন ছিলেন। তাই জ্যেষ্ঠ পুত্র দারা পিতা সাজাহানের নামে দেশ শাসন করতেন। দারা দ্বন্দ্ব বা যুদ্ধ পছন্দ করতেন না। তার সব ভাই বিদ্রোহ ঘোষণা করলে তিনি পিতার সিংহাসন রক্ষাকল্পে তাদের সায়েস্তা করতে উদগ্রীব ছিলেন। এখানে আমরা পিতা ও দেশের প্রতি তার দায়বদ্ধতার পরিচয় পাই। তিনি পিতাকে বোঝাতে চান যে, সিংহাসনের প্রতি তার লোভ নেই। তিনি সাম্রাজ্য চান তিনি দর্শন, উপনিষদে এর চেয়েও বড়ো সাম্রাজ্য পেয়েছেন। এখানে আমরা তার উদার মনোভাবের পরিচয় পাই। তিনি সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন ছিলেন না। তাই তিনি দর্শন, উপনিষদ পাঠ করতেন। তিনি ছিলেন নির্লোভ। ভাইদের প্রতিও তার স্নেহ ভালবাসা ছিল। তাই তিনি তাদের বোঝাতে আগ্রহী ছিলেন। আলোচ্য নাট্যাংশে আমরা কর্তব্যপরায়ণতা, পিতৃভক্তি, স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা, সন্তানবৎসলতা প্ৰভতি চারিত্রিক বৈশিষ্টগুলি দারার মধ্যে দেখতে পাই।

Q.4 পিতা-পুত্র নাট্যাংশের রচয়িতা কে? মূল নাটকটির নাম কী? নাট্যকার সম্পর্কে লেখো।

ANS:-পিতা-পুত্র নাট্যাংশের রচয়িতা দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। মূল নাটকটির নাম সাজাহান এবং নাট্যকারের নাম দ্বিজেন্দ্রলাল রায়।


নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় একাধারে ছিলেন কবি এবং নাট্যকার। পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে ১৮৬৩ সালে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্ম হয়। তার পিতার নাম কার্তিকেয়চন্দ্র রায়। তার মাতার নাম প্রসন্নময়ী দেবী। প্রসন্নময়ী দেবী শান্তিপুরের অদ্বৈত ঠাকুরের বংশধর ছিলেন। দ্বিজেন্দ্রলাল বাল্যকালে অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তাঁদের বাসভবন ছিল সে সময়কার কৃষ্ণনগরের সাহিত্য সংগীত চর্চার কেন্দ্রস্থল। বিদ্যাসাগর, মধুসূদন, বঙ্কিমচন্দ্র, অক্ষয়কুমার, ভুদেব চন্দ্র, দীনবন্ধু মিত্র প্রভৃতি জ্ঞানীগুণী ব্যক্তির সঙ্গে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের পিতৃদেব কার্তিকেয় চন্দ্রের গভীর বন্ধুত্ব ছিল। তাই বাল্যকাল থেকেই দ্বিজেন্দ্রলাল সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশে বড়ো হয়েছেন।

বাল্যকাল থেকেই তিনি কবিতাও গান রচনা শুরু করেন। নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ১৮৭৬ সালে কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রাস পরীক্ষায় পাশ করে (১৮৮৩) সালে হুগলি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে বি এ. পাশ করেন। পরে ১৮৮৪ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরাজি সাহিত্যে এম. এ. পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।১৮৮৭ সালে তিনি ডাক্তার প্রতাপচন্দ্র মজুমদারের কন্যা সুরবালাকে বিয়ে করেন। বিয়ের ষোল বছর পর তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়। পত্নী বিয়োগের পূর্বে তিনি প্রধানত কবিতা, গান ও প্রহসন রচনা করতেন। কিন্তু পত্নীর মৃত্যুর পর তিনি তার জনপ্রিয় বিখ্যাত ঐতিহাসিক নাটকগুলো রচনা করেন।

ঐতিহাসিক, পৌরাণিক, পারিবারিক ও সামাজিক সবধরনের নাটকই দ্বিজেন্দ্রলাল রায় লিখেছিলেন। তবে ঐতিহাসিক নাটক রচনায় তার কৃতিত্ব সর্বাধিক। তার সাজাহান, ‘নূরজাহান’, ‘মেবার পতন', ‘চন্দ্রগুপ্ত', ‘দুর্গাদাসএবং রাণা প্রতাপ নাটকগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁর নাটকের সংখ্যা মোট ১৪টি। ১৯১৩ সালের ১৭ মে তাঁর জীবনাবসান ঘটে।

Q.5 রাজা জয়সিংহ সম্পর্কে টীকা লেখো।

ANS:- রাজা জয়সিংহ ছিলেন জয়পুরের রাজা। রাজপুত বীর। তিনি ছিলেন প্রচণ্ড সুবিধাবাদী রাজা। তার আদর্শ সর্বদাই পরিবর্তিত হত। দারার ক্ষমতা কালে তিনি দারার অনুরাগী ছিলেন। তার চরিত্রে কোন মান-সম্মান, শৌর্য বীর্যের ছাপ ছিল না। তিনি হিন্দু হয়েও হিন্দুর প্রভুত্ব স্বীকার করতেন না। মোগল সাম্রাজ্যের ক্ষমতা হস্তান্তরকালে তিনি ঔরঙ্গজীবের পক্ষ অবলম্বন করেন। তিনি ঔরঙ্গজীবের স্তাবকতা করে নিজের ঐশ্বর্য বৃদ্ধি করতে ব্যস্ত ছিলেন। বুদ্ধি, কর্মনৈপুণ্য, ধৈৰ্য্য ইত্যাদি বিষয়ে জয়সিংহ ছিলেন মোগল সাম্রাজ্যের অদ্বিতীয় ব্যক্তি। তিনি ছিলেন সাদামাটা, ধুরন্ধর স্বভাবের লোক। আচার আচরণে ব্যবসায়ী প্রকৃতির লোক। তার নির্দিষ্ট কোনো আদর্শ ছিল না। তিনি নিজ স্বার্থ সিদ্ধিতে মগ্ন থাকতেন। দেশ ও স্বজাতির জন্য তার কোনো মাথাব্যথা ছিল না।

Q.6 পিতা-পুত্র পাঠটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো

ANS:- নামকরণঃ


নামকরণ সাহিত্যকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আলোচ্য নাটকে পুত্র স্নেহের পরকাষ্ঠা দেখানো হয়েছে। পিতা সম্রাট সাজাহান, চার পুত্র দারা, সুজা, মোরাদ ও ঔরঙ্গজীব এবং কন্যা জাহানারাকে নিয়ে নাটকের বিষয়বস্তু রচিত হয়েছে। কে রাজা হবে - তা নিয়ে যুদ্ধ। এই ব্যাপারে জ্যেষ্ঠ পুত্র দারা ও পিতা সাজাহানের মধ্যে কথোপকথন চলছে। কথার মাঝে চলে এলো কন্যা জাহানারা ও দারা পত্নী নাদিরা। জাহানারা যুদ্ধের পক্ষে মত পোষণ করলেও পিতা সাজাহান তা চাইছেন না। কারণ ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ ভালো দেখায় না। দারা সিংহাসন বা সাম্রাজ্য কিছুই চান না। তিনি চান পিতার সিংহাসন রক্ষা করতে। নাদিরা দারাকে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকতে বলেন। সাজাহান মেয়ে জাহানারাকে জিগ্গেস করলেন যে, তিনিও এই যুদ্ধের মধ্যে আছেন কিনা। কিন্তু জাহানারা জানিয়ে দিলেন যে তিনি এই যুদ্ধের মধ্যে নেই। সাজাহান তাকে বললেন, “এই নির্মম কাজের মধ্যে তুই থাকিস না; তোর কাজ স্নেহ, ভক্তি অনুকম্পা। এ আবর্জনায় তুইও নামিস নে। তুই অন্তত পবিত্র থাক।"

আতোচ্য পাঠ্যাংশে পিতা সাজাহানের অন্তরের আর্তি, পুত্রদের অন্তর্কলহের মর্মবেদনা এবং সর্বোপরি পুত্র স্নেহের আতিশয্য অন্তত সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। তাই এই নাঠাংশটির নাম পিতা পুত্র সার্থক হয়েছে।

 

ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 10 BENGALI

QUESTIONS & ANSWERS

সেবা অসম দশম শ্রেনী বাংলা

প্রশ্ন এবং উত্তর

পাঠ : পিতা-পুত্র,

নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

 

ক্রিয়াকলাপ

Q.1 শূন্যস্থান পূর্ণ করো

(ক) আমার হৃদয় এক ___ জানে। সে শুধু ___ শাসন।

(খ) আমি দর্শনে ___ এর চেয়ে বড় সাম্রাজ্য পেয়েছি।

(গ) আমি যাচ্ছি আপনার ___ রক্ষা করতে।

(ঘ) তার জানুক সম্রাট ___ ___ কিন্তু ___ নয়?

(ঙ) আমার পুত্র ___ সুজার বিরুদ্ধে যাত্রা কর্বার জন্য লিখছি।

(চ) আর তার সঙ্গে ___ মহারাজ ___ আর ___ দিলীর খাঁকে পাঠাচ্ছি।

ANS:-

(ক) শাসন, স্নেহের।

(খ) উপনিষদে।

(গ) সিংহাসন।

(ঘ) সাজাহান, স্নেহশীল, দুর্বল।

(ঙ) সোলেমানকে।

(চ) বিকানীরের, জয়সিংহ, সৈন্যাধক্ষ।

 

ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 10 BENGALI

QUESTIONS & ANSWERS

সেবা অসম দশম শ্রেনী বাংলা

প্রশ্ন এবং উত্তর

পাঠ : পিতা-পুত্র,

নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

 

পাঠভিত্তিক ব্যাকরণ

Q.1 ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম লেখো

শাসনক্ষম, মাতৃহারা, সিংহাসন, সৈন্যাধক্ষ, অরাজক, নির্মম  

ANS:-  

১। শাসনক্ষম - শাসনে অক্ষম।(৭মী তৎপুরুষ)

২। মাতৃহারা - মাতার দ্বারা হারা (তৃতীয়া তৎপুরুষ)

৩) সিংহাসন - সিংহ চিহ্নিত আসন (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়)

৪) সৈন্যাধক্ষ - সৈন্যদের অধ্যক্ষ (ষষ্ঠী তৎপুরুষ)

৫) অরাজক - ন-রাজক (নঞ তৎপুরুষ)।

৬) নির্মম - মমতা নেই যেখানে (কর্মধারয় সমাস)

Q.2 বাক্যসংকোচন বা এককথায় প্রকাশ করো।  

যা বলা যায় না, রাজা নেই যেখানে, যে পরে জন্মগ্রহণ করে, যা দুঃখে লাভ করা যায়, বিধান করে যে, বিচলিত মন যার, বিষ্ণুর গদা, অশ্ব রাখার স্থান, আকাশ ও পৃথিবী, গভীর ধ্বনি, হাতি বাঁধিবার শিকল, চোখের মণি, হস্তীর শাবক, পিতার মতে, পতিপুত্রহীনা নারী, লাল পদ্ম, শ্বেত পদ্ম, হাতীর চিৎকার, পক্ষীর কলরব।

ANS:-

যা বলা যায় না - অবাচ্য।

রাজা নেই যেখানে - অরাজক।

যে পরে জন্মগ্রহণ করে - অনুজ।

যা দুঃখে লাভ করা যায় - দুর্লভ।

বিধান করে যে - বিধায়ক।

বিচলিত মন যার - বিমনা।

বিষ্ণুর গদা - কৌমুদকী ।

অশ্ব রাখার স্থান - মন্দুরা।

আকাশ ও পৃথিবী - ক্রন্দসী।

গভীর ধ্বনি - মন্ত্র।

হাতি বাঁধিবার শিকল - আন্দু।

চোখের মণি - কণীনিকা।

পিতার মতো - পিতৃ সম।

পতি-পুত্রহীনা নারী - অধীরা।

লাল পদ্ম - কোকনদ।

শ্বেত পদ্ম - পুন্নাগ।

হাতীর চিৎকার - বৃংহন।

পক্ষীর কলরব - কূজন।

Q.3 বিপরীতার্থক শব্দ লেখো

ANS:-

আসামী - ফরিয়াদী। নাস্তিক - আস্তিক প্রলয় - সৃষ্টি উদ্ধত - বিনীত অপচয় - সঞ্চয় আরম্ভ - সমাপ্ত অনুগ্রহ - নিগ্রহ ভীত - সাহসী বন্ধন - মুক্তি তিরস্কার - পুরস্কার অজ্ঞ - বিজ্ঞ। নবীন - প্রবীণ। বিনাশ - সষ্টি। বিধি - বিধিহীন। সস্তা - দামী। পূজক - নিন্দনীয়। সাদৃশ্য - বৈসাদৃশ্য। প্রসারণ - সংকোচনবর্ধমান - হ্রাসমান ন্য়ূন - প্রচুর।

 

দেশপ্রেম আর প্রেরণার কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়


পঞ্চকবির এক কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের মৃত্যুবার্ষিকী আজ।  বাংলা সাহিত্য, নাটক, গান, ছড়া কিংবা কবিতা সব দিকেই রয়েছে তার অবাধ বিচরণ।  প্রায় ৫শতাধিক গান রচনা করেছেন তিনি।  তার গান, কবিতা গুলো বাঙালীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে স্থায়ীভাবে।  কবির রচিত গানগুলো দ্বিজেন্দ্রগীতী নামেই পরিচিত।  সংক্ষেপে ডিএল রায় নামেও পরিচিতি পেয়েছেন তিনি।

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্ম ১৮৬৩ সালের ১৯ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ার কৃষ্ণনগরে।  তাঁর পিতা কার্তিকেয়চন্দ্র রায় ছিলেন কৃষ্ণনগর রাজবংশের দেওয়ান।  তাঁর বাড়িতে বহু গুণীজনের সমাবেশ হত।  কার্তিকেয়চন্দ্র নিজেও ছিলেন একজন বিশিষ্ট খেয়াল গায়ক ও সাহিত্যিক। পিতার কাছ থেকেই গানের দীক্ষা হয় দ্বিজেন্দ্রের।  পিতা ও পুত্র দ্বিজেন্দ্রলালকে নিয়ে প্রচলিত একটি ঘটনা সাহিত্য মহলে উল্লেখযোগ্য;

দ্বিজেন্দ্রলালের বয়স যখন পাঁচ বছর।  পিতা কার্তিক চন্দ্র রায় ছিলেন একজন সুগায়ক।  একদিন তিনি হারমোনিয়াম বাজিয়ে খেয়াল গান গাইছেন। দ্বিজেন্দ্রলাল একমনে শুনছে।  গাইতে গাইতে পিতা কি একটা কাজে হঠাত্ উঠে গেলেন।  দ্বিজেন্দ্রলাল সেই অবসরে হারমোনিয়াম নিয়ে বসলো এবং চাবি টিপতে লাগলো।  কিছুক্ষণ পরে কার্তিক চন্দ্র ফিরে এসে শিশু পুত্রের কাণ্ড দেখে অবাক।  ছেলে তার গাওয়া কঠিন গানটি ঠিক ভাবে শুরু করে গাইছে।

ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময়ে আরেক অদ্ভুত ঘটনার জন্মদেন তিনি । একদিন ক্লাসের বেশিরভাগ ছাত্র পড়া তৈরি করে আসেনি।  তাই শিক্ষক তাদের বললেন- তোমরা সব ঘরের ধারে দাঁড়িয়ে পড়া মুখস্ত করছাত্ররা তাই করতে লাগল।

খানিক পরে তিনি দ্বিজেন্দ্রলালের দিকে তাকিয়ে বললেন-তুমি কি করছো? , তোমার বই নেই? তাহলে কি করে পড়বে?”

দ্বিজেন্দ্র বলল-আমার পড়া মুখস্থ হয়ে গেছে

শিক্ষক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন- কিভাবে?”

দ্বিজেন্দ্র জবাব দিল-ওদের পড়া শুনে শুনে

শিক্ষক পরীক্ষা করে দেখলেন সত্যিই তার পড়া শুনেই মুখস্থ হয়ে গেছে, অথচ সেই সব ছাত্রদের কেউ বই দেখে পড়া মুখস্ত করতে পারেনি।

গতানুগতিক রীতিনীতি ও প্রথাবিরোধী শ্লেষ আর ব্যঙ্গ বিদ্রুপে ভরা অজস্র হাসির গান তার সঙ্গীতের ভাণ্ডার পরিপূর্ণ করেছে।  তার গানে রয়েছে আধ্যাত্বিক আকর্ষণও।  তার দেশপ্রেম ও তেজদীপ্ততা বার বার বিট্রিশ প্রভুদের বিরক্তির কারণ হয়েছে।

বিলেত থেকে উচ্চরত ডিগ্রি নিয়ে আসা ম্যাজিস্ট্রেট ডিএল রায়ের চাকরি জীবন ছিলো অনিশ্চিয়তায় আক্রান্ত।  ১৮৯০ সালে বর্ধমান এস্টেটের সুজামুতা পরগনায় সেটেলমেন্ট অফিসার হিসাবে কর্মরত অবস্থায় কৃষকদের অধিকার বিষয়ে তাঁর সাথে বাংলার ইংরেজ গভর্নরের বিবাদ ঘটে।

জীবনের স্বল্প পরিসরে তিনি রচনা করেন ২২-২৪ টি নাটক।  তার প্রতিটি নাটকই ছিলো দেশপ্রেমে উজ্জল দীপশিখা।  তাঁর নাটকগুলি চার শ্রেণিতে বিন্যস্ত : প্রহসন, কাব্যনাট্য, ঐতিহাসিক নাটক ও সামাজিক নাটক।

মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে পড়া ব্যাঙ্গ কবিতা, নন্দলাল আজও বাঙালির উপমা হয়ে রয়েছে।  তার রচিত গান, ‘‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা”, “বঙ্গ আমার! জননী আমার! ধাত্রী আমার! আমার দেশইত্যাদি আজও সমানভাবে দেশপ্রেমের শিহরিত জাগায়।  কবির রচিত গানগুলোকে পাঁচ শ্রেণীতে বিভাজিত করেছেন দিজেন্দ্রগবেষকরা সেগুলো হলো দেশপ্রেম, প্রেম,পূজা, প্রকৃতি ও বিবিধ।  তবে পরিতাপের বিষয় তার ৫শতাধিক গানের মাত্র একশর অধিক গান বর্তমানে রুয়াপনযোগ্য।  বাকীগুলোর স্বরলিপী অপ্রাপ্ত রয়েছে।  তার গানে যেমন স্বদেশ প্রেমের বিচরণ রয়েছে তেমনি রয়েছে নর-নারী জীবনের সুখ, দুখ আনন্দ বেনদার সংমিশ্রণ।  উচ্চশিক্ষা নিতে ইংল্যান্ডে থাকাকালীন ১৮৮৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর একমাত্র ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ Lyrics of Ind তিন বছর বিদেশে থাকার পর দেশে ফিরে সংস্কারাছন্ন হিন্দু সমাজের নানা সামাজিক উৎপীড়ন সহ্য করতে হয় তাকে ।

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের বিখ্যাত নাটকগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য একঘরে, কল্কি-অবতার, বিরহ, সীতা, তারাবাঈ, দুর্গাদাস, রাণা প্রতাপসিংহ, মেবার পতন, নূরজাহান, সাজাহান, চন্দ্রগুপ্ত, সিংহল-বিজয় ইত্যাদি।  আর্যগাথা, ১ম খণ্ড (১৮৮৪),আর্যগাথা, ২য় খণ্ড (১৮৮৪), আষাঢ়ে (১৮৯৯),হাসির গান (১৯০০), মন্দ্র (১৯০২), আলেখ্য (১৯০৭), ত্রিবেণী (১৯১২) ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

শেষ জীবনে দ্বিজেন্দ্রলাল ছেড়ে দেন মাছ বা মাংস খাওয়া।  হয়ে যান সম্পূর্ণ নিরামিষভোজী।  মাত্র ৫০ বছর আয়ু পেয়েছিলেন এই গুণীজন।  প্রায়ই বলতেন তিনি আমরা বাঙালীরা নাকি জাতি হিসেবে জেগে ওঠতে পারি নি।  ১৯১৩ সালের ১৭ মে পরলোক গমণ করেন এই কীর্তিমান বাঙালী।

 

জাতীয়তাবাদী দ্বিজেন্দ্রলাল

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩ - ১৯১৩) বাংলা নাট্যসাহিত্য, কাব্য ও সংগীতের জগতে এক অবিস্মরণীয় প্রতিভা। চলতি বর্ষে তাঁর জন্মের সার্ধশতবর্ষ পূর্ণ হতে চলেছে। ক্ষোভের কথা এই, যে ডি. এল. রায়ের দু-একটি নাটক ছাড়া দেশপ্রেমী এবং সুসাহিত্যিক এই মানুষটি বাঙালি সমাজে বিস্মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিলেন। এ দেশের বারোমাসে তেরো পার্বণ। বরেণ্য মানুষের জন্মের বিশেষ বিশেষ বছর পূর্তিতে আমরা তাদের স্মরণ করে হৈ চৈ করি। অনেক সময় সেই স্বর্ণময় দিনটির অপেক্ষায় এই সব কৃতী মানুষদের দীর্ঘদিন প্রতীক্ষা করে থাকতে হয়। মৃত্যুর রজতজয়ন্তী বা সুবর্ণজয়ন্তীর মতো বিশেষ বিশেষ দিনটি ছাড়া তাঁরা আবার বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যান। শুধু দ্বিজেন্দ্রলাল নন, তাঁর পুত্র দিলীপকুমার রায়ের উপন্যাস বা প্রবন্ধও একালে সাহিত্যবোদ্ধাদের আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে নি।

দ্বিজেন্দ্রগীতির ভাব ও ভাষার ঐশ্বর্য বড়ো কম নয়। কিন্তু গায়িকা কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায় মারা যাওয়ার পর দ্বিজেন্দ্রগীতির চর্চাও সীমিত। দ্বিজেন্দ্রলালের ঐতিহাসিক নাটক বা হাসির গান বাংলা সাহিত্যের মূল্যবান সম্পদ। এই ঐশ্বর্য সম্পর্কে কয়জন বাঙালি তেমন করে খবর রাখেন তা হাতে গুণে বলা যায়। দ্বিজেন্দ্রলাল মাত্র পঞ্চাশ বছর বেঁচে ছিলেন। অথচ ঐ বয়সে তাঁর রচিত সাহিত্য সম্ভার প্রচুর। স্বাভাবিক কবিপ্রতিভা থাকা সত্ত্বেও তিনি পরবর্তীকালে তাঁর প্রাপ্য মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। দ্বিজেন্দ্রলালের শেষ কবিতার বই ১৯১২ খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত। 'চৈতালি' 'গীতাঞ্জলি' ছাড়াও তখন রবীন্দ্রনাথের আরও কয়েকটি কবিতার বই বার হয়েছে বটে, বাকি সবই ভবিষ্যতের গর্ভে নিহিত। দ্বিজেন্দ্রলালের খণ্ডিত সাহিত্যজীবনে গানে, কবিতায়, নাটকে দৃপ্ত, দুঃসাহসী পদক্ষেপ ও নির্ভেজাল স্বাতন্ত্র্য ভেবে দেখার বিষয়। উনিশ শতকের শেষে মধ্যবিত্ত বাঙালি ভদ্রলোকদের জাতীয়তাবাদী ধারণায় একটা টানাপোড়েন ছিল। ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থায় এ-দেশের জাতীয়তাবাদের ধরনটি অনেকাংশে ছিল পশ্চিমী সভ্যতার ছাঁচে ঢালা ফসল। ইংরেজের আধিপত্য, শাসন আর শোষণে বাঙালি অধৈর্য হয়ে পড়লেও য়ুরোপীয়ান সভ্যতার গরিমাময় সংস্কৃতিকে অস্বীকার করার উপায় ছিল না। আর এই দোটনায় ছাপ তৎকালীন বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের কাজে ও কথায় প্রকাশিত হয়ে পড়ছিল। দ্বিজেন্দ্রলাল তার ব্যতিক্রম নন। 'বড়ো ইংরেজের' গুণগ্রাহী বাঙালি 'ছোটো ইংরেজের' এই দুঃশাসন আর লাঞ্ছনায় ব্যথিত হয়েছিলেন তীব্রভাবে। হয়তো এই কারণে দেবকুমার রায়চৌধুরী প্রণীত দ্বিজেন্দ্রলালের জীবনীতে 'স্বদেশী আন্দোলন ও তন্ময়তা' এবং 'রাজভক্তি', দুটি আলাদা অধ্যায়ের শিরোনাম বলে বিবেচিত, এটা তৎকালীন ভাবও ভাবনারই প্রতিচ্ছবি।

কৃষিবিদ্যা শিক্ষার জন্য 'বিলেত' যাওয়ার পথে জাহাজে সাহেবদের সঙ্গে কথাবার্তায় তেজস্বী দ্বিজেন্দ্রলাল ইলবার্ট বিল প্রসঙ্গে বলেছিলেন — 'ইংরেজের কি অধিকার যে বাঙ্গালীকে জয় করিয়া তাহার উপর প্রভুত্ব করে? পরাক্রান্ত মনুষ্য দুর্ব্বলকে অযথা পীড়ন করিতে না পারে ইহার জন্য যদি আইন-আদালত থাকে তবে পরাক্রান্ত জাতি দুর্ব্বল জাতিকে পীড়ন করিতে না পারে ইহার জন্য, কি আরো উচ্চতর আইন ও আদালতে থাকা উচিত নহে।' (দ্বিজেন্দ্রলাল, দেবকুমার রায়চৌধুরী, দ্বিতীয় সং, আশ্বিন ১৩৭১, বসুধারা প্রকাশনী) কখনো তীব্র শ্লেষভরে বলেছেন যে ইংরেজ জাতি বড় অহঙ্কারী তারা তাদের ক্ষুদ্র দ্বীপকে অমরাবতী ও পৃথিবীর ভাবী কেন্দ্র মনে করে। মনে রাখতে হবে যে বিলেত যাত্রাকালে জাহাজে ইংরেজ পুঙ্গবদের মধ্যে একমদ্বিতীয়ম্‌ ভারতীয়টি এইসব উক্তি করার মতো সাহস ও শক্তি সঞ্চয় করে রেখেছিলেন। লণ্ডনে গিয়ে ভারতীয় পোশাক পরে রাজপথে হেঁটেছেন। ভারতীয় পোশাক কি হওয়া উচিত এ-বিষয়ে বিলেতের পত্রাবলীতে দ্বিজেন্দ্রলালের সুচিন্তিত অভিমত আছে। দেশহিতৈষিতার ধারাটি বহুকাল ধরে দ্বিজেন্দ্রলাল সযত্নে অন্তরে লালন করে এসেছিলেন। তাই লণ্ডন থেকে ফেরার পর হিন্দু সমাজ তাঁকে জাতিচ্যুত করতে চাইলে দ্বিজেন্দ্রলালের মনে হয়েছিল এ-দেশের সমাজের লোকজন নানা অকাজে নিদারুণ শক্তিক্ষয় আর সময়ের অপব্যয় করে চলেছে। ইংরেজের অধীনে চাকুরি করতে তাঁর ভাল লাগত না। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মাঝে মাঝে বিরোধ ঘটত। শেষে স্বেচ্ছাবসর নিয়েছিলেন।

১৯০৫ খ্রীষ্টাব্দের বঙ্গ ভঙ্গের প্রচেষ্টা হয়তো বাঙালিকে এখনও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে রেখেছে। সুতরাং সেই সময়ের ঐ তাৎপর্যপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনায় জনজীবন যে কীরকম তীব্রভাবে অস্থির হয়ে পড়েছিল তা সহজে বোঝা যায়। স্বদেশী আন্দোলনের সূচনাপর্ব থেকে দ্বিজেন্দ্রলালের ঐতিহাসিক নাটকগুলি আগুনে ঘৃতাহুতির মতো কাজ করেছিল। স্বদেশী সভায় বক্তৃতা দিয়ে লোক মাতিয়ে তিনি জনগণের হাততালি কুড়োননি, কিন্তু ভবিষ্যৎদ্রষ্টা, সুরসিক এই সাহিত্যিকের মনে এই আন্দোলনের প্রবণতা নিয়ে একটা সংশয় দানা বেঁধেছিল। বিলেতি দ্রব্য বর্জনের বিষয়টি যেন জনগণের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া না হয়। তা স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বাভাবিক হলে ক্ষতি নেই। তাঁর মতে—'আমি বলি, এই বিদ্বেষমূলক বয়কটের দ্বারা আমাদের পরিণামে সর্ব্বনাশ হবে, ইহাতে আমাদের স্থায়ী কল্যাণ কোনোমতেও সম্ভব নয়। এদেশ যদি আজ পর-প্রসঙ্গ ও বিজাতি-বিদ্বেষ ভুলিয়া, প্রকৃত আত্মোন্নতি ও নিজেদের কল্যাণ সাধনে তৎপর হয় তবে এমন কোন শক্তিই নাই যে তাহার সে বল-দৃপ্ত গতি রোধ করিতে পারে।' (১৯০৪, ৭ই নভেম্বর, দেবকুমার রায়চৌধুরীকে লেখা চিঠি)। এই 'বিদ্বেষমূলক বয়কটের প্রসঙ্গ' রবীন্দ্রনাথের 'ঘরে বাইরে' উপন্যাসে আরও একবার খুঁজে পাওয়া যাবে।

দেশাত্মবোধক গান রচনায়, সুর সংযোগ ও উদাত্ত কণ্ঠের গায়কীতে শ্রোতাদের উদ্বুদ্ধ করতে দ্বিজেন্দ্রলালের জুড়ি ছিল না। আত্মীয় পরিজনদের অনুরোধে জ্বলন্ত স্বদেশপ্রেমের গান লিখে তাঁকে তা নষ্ট করে দিতে হয়েছিল। ইংরেজ সরকারের প্রখর দৃষ্টি তাঁর উপর বরাবর ছিল। এই গানগুলি রক্ষা পেলে আরও উজ্জ্বল নানা দেশাত্মবোধক সংগীত বাঙালি উপহার পেত। আবার কখনও দ্বিজেন্দ্রলালের মনে হয়েছে আবেগের আতিশয্যে 'বন্দে মাতরম্‌' ধ্বনির গভীরতা ও তাৎপর্য হারিয়ে যেতে বসেছে। ভাবপ্রবণতায় কবি আপ্লুত হতে পারেন, স্বদেশকর্মী ঐ পথে হাঁটলে অনিবার্য বিপদের সম্ভাবনা। এমন দেশহিতৈষীর খোঁজ তিনি রাখতেন যাঁরা সভাপতির পদ অলঙ্কৃত করতে না পারলে কোনো সভাতে পদার্পণ করেন না। কবি ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলালের মতে 'কিছু ছাড়িতে চাও না, দেশ উদ্ধার করিবে Conference (সভা) করিয়া? ধিক্‌!' আধুনিককালেও এমন দেশপ্রেমী বিরল নয়। এই দেশব্রতী মানুষটি লিখেছেন তাঁর কবিতায়

'কথায় কথায় যাচ্ছে শুধু কথা বেড়ে,
গানে গানে ছেয়ে পড়ল দেশটা;
কিছুই বোঝা যাচ্ছে না ক নেড়ে চেড়ে
কি রকম যে দাঁড়ায় এখন শেষটা।
সভায় সভায়, মাঠে ঘাটে, গোলেমালে,
বক্তৃতাতে আকাশ পাতাল ফাট্‌ছে;
যাদের সময় কাট্‌ত না ক কোনকালে,
তাদের এখন খাসা সময় কাট্‌ছে।
নেতায় নেতায় ক্রমেই দেশটা ভ'রে গেল,
সবাই নেতা সবাই উপদেষ্টা,—
চেঁচিয়ে ত সবার গলা ধ'রে গেল,
অন্য কিছুর দেখাও যায় না চেষ্টা।
লিখে লিখে সম্পাদকে কবিগণে
ভীষণ তেজে অনুপ্রাসে কাঁদছে;
সবাই বলছে কি কাজ এখন 'পিটিশনে'
সবাই কিন্তু পায়ে ধ'রেই সাধ্‌ছে।'

১০৬ বছর আগে লেখা এই কবিতার সঙ্গে আধুনিক ভারতবর্ষের রাজনৈতিক মানচিত্র মিলিয়ে নিতে অসুবিধা হবার কথা নয়। দেশের জন্য, স্বাদেশিকতার টানে দ্বিজেন্দ্রলালের প্রাণ অস্থির হয়েছে বারবার। মনের ভিতরকার স্বদেশপ্রেমের আঁচটুকু তাঁর ব্যক্তিগত জীবনকে স্থির থাকতে দেয় নি। ১৯০৬ খ্রীষ্টাব্দে দেবকুমার রায়চৌধুরীকে তিনি একটি চিঠিতে লিখেছেন—'চাকুরি জীবনে ক্রমাগত transfer (বদলি) আমাকে যথার্থই যেন অস্থির করে তুলেছে। এত বদলি করছে কেন জান? আমার বিশ্বাস স্বদেশী আন্দোলনে যোগদান, আর ঐ প্রতাপসিংহ নাটকই তার মূল। কিন্তু কি বুদ্ধি! এমনি একটু হয়রাণ করলেই বুঝি আমি অমনি আমার সব মত ও বিশ্বাসকে বর্জন করব?' (দ্বিজেন্দ্রলাল, দেবকুমার রায়চৌধুরী, বসুধারা প্রকাশনী, ২য় সংস্করণ)।

'প্রতাপসিংহ' (১৯০৫), 'দুর্গাদাস' (১৯০৬), 'নূরজাহান' (১৯০৮), 'মেবারপতন' (১৯০৮), 'সাজাহান' (১৯০৯) দ্বিজেন্দ্রলালের এই সমস্ত নাটকে স্বদেশী আন্দোলন সম্পর্কে তাঁর ভাব ও ভাবনাটি মূর্ত হয়ে উঠেছিল। দেশ তাঁর কাছে কোনো ভৌগোলিক পরিধি মাত্র ছিল না। তা হয়ে উঠেছিল সজীব মাতৃমূর্তি। দ্বিজেন্দ্রলালের গানে দেশমাতৃকার ছবিটি উজ্জ্বল ও সুস্পষ্ট। তিনি লিখেছেন

'জননী! তোমার সন্তান তরে কত না বেদনা, কত না হর্ষ,
জগৎ পালিনি! জগত্তারিণি, জগজ্জননী ভারতবর্ষ।'

বিশ্বাস, প্রেম আর মনুষ্যত্বই একটা গোটা জাতিকে নিবিড় বন্ধনে বেঁধে রাখতে পারে একথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল। 'সবুজপত্র' পত্রিকার সম্পাদক প্রমথ চৌধুরীর মতে দ্বিজেন্দ্রলাল স্বজাতিকে এই শিক্ষা দিয়েছেন যে যদি দেশের দৈন্য দূর করতে হয় তার জন্য আমাদের মনে ও চরিত্রে যোগ্য এবং সক্ষম হতে হবে, সবল হতে হবে। তাঁর দেশপ্রীতির চরমবাণী এই যে 'আবার তোরা মানুষ হ'হিংসা-কবলিত নেতৃ-অধ্যুষিত আমাদের এ-সমাজে দেশ ও জাতি সম্পর্কে দ্বিজেন্দ্রলালের মূল্যায়ন আজও সমান প্রাসঙ্গিক ও জরুরি। 'সমাজ বিভ্রাট' 'কল্কি অবতার', 'বিরহ', 'ত্র্যহস্পর্শ', 'পুনর্জন্ম' এসব প্রহসন বা নক্‌শায় সামাজিক অসঙ্গতিকে তীব্র ব্যঙ্গাত্মক ভাষায় কশাঘাত করেছেন তিনি। এই কশাঘাতের অন্তরালে রয়েছে দেশের প্রতি তীব্র মমত্ববোধ।

স্বাদেশিকতার অনুপ্রেরণা জোগাতে তাঁর ঐতিহাসিক নাটকগুলি রচিত হয়েছিল, জাতিপ্রেমের বাড়াবাড়ি যে অন্য দেশ বা জাতির প্রতি বিদ্বেষ বা ঘৃণার সৃষ্টি করতে পারে এবং স্বজাতির প্রতি তীব্র অন্ধ অনুরাগ ও যুক্তিহীন আনুগত্য মনুষ্যত্বকে ধ্বংস করে দিতে পারে এ আশঙ্কাও কবি দ্বিজেন্দ্রলালের মনে উঁকিঝুঁকি দিত। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এই কবি মানুষটি এ ধরনের স্বদেশপ্রেমকে জলাঞ্জলি দেওয়ার কথা বলেছেন বারবার। 'মেবারপতন' নাটকে মানসী চরিত্রটি জাতিপ্রেমের সংকীর্ণ চৌহদ্দি ছাড়িয়ে বিশ্বপ্রেমের দিকে এগিয়ে গেছে। কবিপুত্র দিলীপকুমার রায় 'মেবারপতন' নাটক সম্পর্কে লিখেছেন —"I began to revere his patriotism, too, the first fire of which had made him swiftly famous in Swadeshi days. When he wrote patriotic dramas one after the other ... It was then the heyday of Bengali Patriotism and he caught its contagion, a contagion we should avoid today. But in those days we took militant patriotism as its face value and so persuaded ourselves that it was the panacea for all the evils our flesh was heir to. We know better now. But in the first flush of our patriotic adolescence we had all devoutly believed in the gospel of nationalism ... and had burned with hatred everything foreign ....... It was at this point that Dwijendralal grew maddeningly & utterly sick of patriotism. It was at this turning point of his life that he wrote Fall of Mevar." (Translator's note : Page VII - IX : Fall of Mevar; 1958)

দ্বিজেন্দ্রলালের ঐতিহাসিক নাটকগুলি সম্পর্কে ব্রিটিশ সরকার অসন্তুষ্ট হলেও সরাসরি সেগুলি নিষিদ্ধ করা হয় নি। তাঁর 'মেবার পতন' নাটকে পৃথিবীতে ধর্মের নামে রক্তপাতকে বন্ধ করতে বলা হয়েছে। এই নাটক লেখার আর কিছুকাল পরে জাতীয়তাবোধের উন্মত্ততায় হিটলারের দানবীয় ধ্বংসলীলা আর পৈশাচিক তাণ্ডব প্রত্যক্ষ করেছিল সারা পৃথিবী।

'বিশ্বময় জাগায়ে তোল / ভায়ের প্রতি ভায়ের টান'—'মেবার পতন' নাটকে এটাই মূল কথা। এই বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধের আকাঙ্খাটি হিংসায় উন্মত্ত আধুনিক পৃথিবীতে সবচেয়ে কাম্য। আর তাই দ্বিজেন্দ্রলালের জীবনদর্শন, তাঁর সাহিত্য ভাবনার শেষ কথাটি আজকের জটিল, যান্ত্রিক আর পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ জীবনযাত্রায় আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। দ্বিজেন্দ্রলাল নিজে কখনও খ্যাতির প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারেন নি বা তাঁকে ঘিরে কোনও সাহিত্যিক ভক্তমণ্ডলী সেকালে সৃষ্টি হয় নি। মৃত্যুর পর অচিরেই রবীন্দ্রপ্রজ্ঞার তীব্র উজ্জ্বল আলোয় তিনি বাঙালির মন থেকে সাময়িক ভাবে বিস্মৃত হলেন। জন্মের সার্ধ-শতবর্ষে পৌঁছে এই প্রতিভাধর, অকালমৃত মানুষটি যাতে হৃত মর্যাদা এবং প্রাপ্য শ্রদ্ধাটুকু ফিরে পান সে বিষয়ে তাঁর উত্তরসূরীদের আর একবার ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে তা সুনিশ্চিত।

  

DOWNLOAD PDF



*******

Post a Comment

0 Comments