ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 9 BENGALI QUESTIONS & ANSWERS সেবা অসম নবম শ্রেনী বাংলা প্রশ্ন এবং উত্তর পাঠ - কবর

 

ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 9 BENGALI QUESTIONS & ANSWERS

সেবা অসম নবম শ্রেনী বাংলা প্রশ্ন এবং উত্তর

পাঠ - কবর

কবি : জসীম উদ্দিন

 



কবর

জসীম উদ্দিন

++++++++++

এই খানে তোর দাদির কবর ডালিম-গাছের তলে,
তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।
এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ,
পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।
এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে হইতাম সারা,
সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা!
সোনালি ঊষার সোনামুখ তার আমার নয়নে ভরি
লাঙল লইয়া খেতে ছুটিলাম গাঁয়ের ও-পথ ধরি।
যাইবার কালে ফিরে ফিরে তারে দেখে লইতাম কত
এ কথা লইয়া ভাবি-সাব মোরে তামাশা করিত শত।
এমনি করিয়া জানি না কখন জীবনের সাথে মিশে
ছোট-খাট তার হাসি ব্যথা মাঝে হারা হয়ে গেনু দিশে।

 

বাপের বাড়িতে যাইবার কাল কহিত ধরিয়া পা
আমারে দেখিতে যাইও কিন্তু উজান-তলীর গাঁ।
শাপলার হাটে তরমুজ বেচি পয়সা করি দেড়ী,
পুঁতির মালার একছড়া নিতে কখনও হত না দেরি।
দেড় পয়সার তামাক এবং মাজন লইয়া গাঁটে,
সন্ধাবেলায় ছুটে যাইতাম শ্বশুরবাড়ির বাটে!
হেস না­ হেস না­ শোন দাদু, সেই তামাক মাজন পেয়ে,
দাদি যে তোমার কত খুশি হত দেখিতিস যদি চেয়ে!
নথ নেড়ে নেড়ে কহিত হাসিয়া, এতদিন পরে এলে,
পথ পানে চেয়ে আমি যে হেথায় কেঁদে মরি আঁখিজলে।
আমারে ছাড়িয়া এত ব্যথা যার কেমন করিয়া হায়,
কবর দেশেতে ঘুমায়ে রয়েছে নিঝঝুম নিরালায়!
হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, আয় খোদা! দয়াময়,
আমার দাদীর তরেতে যেন গো ভেস্ত নসিব হয়।

তারপর এই শূন্য জীবনে যত কাটিয়াছি পাড়ি
যেখানে যাহারে জড়ায়ে ধরেছি সেই চলে গেছে ছাড়ি।
শত কাফনের, শত কবরের অঙ্ক হৃদয়ে আঁকি,
গণিয়া গণিয়া ভুল করে গণি সারা দিনরাত জাগি।
এই মোর হাতে কোদাল ধরিয়া কঠিন মাটির তলে,
গাড়িয়া দিয়াছি কত সোনামুখ নাওয়ায়ে চোখের জলে।
মাটিরে আমি যে বড় ভালবাসি, মাটিতে মিশায়ে বুক,
আয়-আয় দাদু, গলাগলি ধরি কেঁদে যদি হয় সুখ।

এইখানে তোর বাপজি ঘুমায়, এইখানে তোর মা,
কাঁদছিস তুই? কী করিব দাদু! পরাণ যে মানে না।
সেই ফালগুনে বাপ তোর এসে কহিল আমারে ডাকি,
বা-জান, আমার শরীর আজিকে কী যে করে থাকি থাকি।
ঘরের মেঝেতে সপটি বিছায়ে কহিলাম বাছা শোও,
সেই শোওয়া তার শেষ শোওয়া হবে তাহা কী জানিত কেউ?
গোরের কাফনে সাজায়ে তাহারে চলিলাম যবে বয়ে,
তুমি যে কহিলা বা-জানরে মোর কোথা যাও দাদু লয়ে?
তোমার কথার উত্তর দিতে কথা থেমে গেল মুখে,
সারা দুনিয়ার যত ভাষা আছে কেঁদে ফিরে গেল দুখে!

তোমার বাপের লাঙল-জোয়াল দুহাতে জঢ়ায়ে ধরি,
তোমার মায়ে যে কতই কাঁদিতে সারা দিনমান ভরি।

++++++++++
গাছের পাতার সেই বেদনায় বুনো পথে যেতো ঝরে,
ফালগুনী হাওয়া কাঁদিয়া উঠিত শুনো-মাঠখানি ভরে।
পথ দিয়া যেতে গেঁয়ো পথিকেরা মুছিয়া যাইত চোখ,
চরণে তাদের কাঁদিয়া উঠিত গাছের পাতার শোক।
আথালে দুইটি জোয়ান বলদ সারা মাঠ পানে চাহি,
হাম্বা রবেতে বুক ফাটাইত নয়নের জলে নাহি।
গলাটি তাদের জড়ায়ে ধরিয়া কাঁদিত তোমার মা,
চোখের জলের গহীন সায়রে ডুবায়ে সকল গাঁ।

ঊদাসিনী সেই পল্লী-বালার নয়নের জল বুঝি,
কবর দেশের আন্ধারে ঘরে পথ পেয়েছিল খুজি।
তাই জীবনের প্রথম বেলায় ডাকিয়া আনিল সাঁঝ,
হায় অভাগিনী আপনি পরিল মরণ-বিষের তাজ।
মরিবার কালে তোরে কাছে ডেকে কহিল, বাছারে যাই,
বড় ব্যথা র, দুনিয়াতে তোর মা বলিতে কেহ নাই;
দুলাল আমার, যাদুরে আমার, লক্ষী আমার ওরে,
কত ব্যথা মোর আমি জানি বাছা ছাড়িয়া যাইতে তোরে।
ফোঁটায় ফোঁটায় দুইটি গন্ড ভিজায়ে নয়ন­জলে,
কী জানি আশিস করে গেল তোরে মরণ­ব্যথার ছলে।

ক্ষণপরে মোরে ডাকিয়া কহিল­ আমার কবর গায়
স্বামীর মাথার মাথালখানিরে ঝুলাইয়া দিও বায়।
সেই যে মাথাল পচিয়া গলিয়া মিশেছে মাটির সনে,
পরাণের ব্যথা মরে নাকো সে যে কেঁদে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে।
জোড়মানিকেরা ঘুমায়ে রয়েছে এইখানে তরু­ছায়,
গাছের শাখারা স্নেহের মায়ায় লুটায়ে পড়েছে গায়।
জোনকি­মেয়েরা সারারাত জাগি জ্বালাইয়া দেয় আলো,
ঝিঁঝিরা বাজায় ঘুমের নূপুর কত যেন বেসে ভালো।
হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, রহমান খোদা! আয়;
ভেস্ত নসিব করিও আজিকে আমার বাপ ও মায়!

এখানে তোর বুজির কবর, পরীর মতন মেয়ে,
বিয়ে দিয়েছিনু কাজিদের বাড়ি বনিয়াদি ঘর পেয়ে।
এত আদরের বুজিরে তাহারা ভালবাসিত না মোটে,
হাতেতে যদিও না মারিত তারে শত যে মারিত ঠোঁটে।
খবরের পর খবর পাঠাত, দাদু যেন কাল এসে
দুদিনের তরে নিয়ে যায় মোরে বাপের বাড়ির দেশে।
শ্বশুর তাহার কশাই চামার, চাহে কি ছাড়িয়া দিতে
অনেক কহিয়া সেবার তাহারে আনিলাম এক শীতে।
সেই সোনামুখ মলিন হয়েছে ফোটে না সেথায় হাসি,
কালো দুটি চোখে রহিয়া রহিয়া অশ্রু উঠিছে ভাসি।
বাপের মায়ের কবরে বসিয়া কাঁদিয়া কাটাত দিন,
কে জানিত হায়, তাহারও পরাণে বাজিবে মরণ­বীণ!
কী জানি পচানো জ্বরেতে ধরিল আর উঠিল না ফিরে,
এইখানে তারে কবর দিয়েছি দেখে যাও দাদু! ধীরে।

ব্যথাতুরা সেই হতভাগিনীরে বাসে নাই কেহ ভালো,
কবরে তাহার জড়ায়ে রয়েছে বুনো ঘাসগুলি কালো।
বনের ঘুঘুরা উহু উহু করি কেঁদে মরে রাতদিন,
পাতায় পাতায় কেঁপে উঠে যেন তারি বেদনার বীণ।
হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, আয় খোদা! দয়াময়।
আমার বু­জীর তরেতে যেন গো ভেস্ত নসিব হয়।

হেথায় ঘুমায় তোর ছোট ফুপু, সাত বছরের মেয়ে,
রামধনু বুঝি নেমে এসেছিল ভেস্তের দ্বার বেয়ে।
ছোট বয়সেই মায়েরে হারায়ে কী জানি ভাবিত সদা,
অতটুকু বুকে লুকাইয়াছিল কে জানিত কত ব্যথা!
ফুলের মতন মুখখানি তার দেখিতাম যবে চেয়ে,
তোমার দাদির ছবিখানি মোর হদয়ে উঠিত ছেয়ে।
বুকেতে তাহারে জড়ায়ে ধরিয়া কেঁদে হইতাম সারা,
রঙিন সাঁঝেরে ধুয়ে মুছে দিত মোদের চোখের ধারা।

একদিন গেনু গজনার হাটে তাহারে রাখিয়া ঘরে,
ফিরে এসে দেখি সোনার প্রতিমা লুটায় পথের পরে।
সেই সোনামুখ গোলগাল হাত সকলি তেমন আছে।
কী জানি সাপের দংশন পেয়ে মা আমার চলে গেছে।
আপন হস্তে সোনার প্রতিমা কবরে দিলাম গাড়ি,
দাদু! ধর­ধর­ বুক ফেটে যায়, আর বুঝি নাহি পারি।
এইখানে এই কবরের পাশে আরও কাছে আয় দাদু,
কথা কস নাকো, জাগিয়া উটিবে ঘুম­ভোলা মোর যাদু।
আস্তে আস্তে খুঁড়ে দেখ দেখি কঠিন মাটির তলে,
দীন দুনিয়ার ভেস্ত আমার ঘুমায় কিসের ছলে !

ওই দূর বনে সন্ধ্যা নামিয়ে ঘন আবিরের রাগে,
অমনি করিয়া লুটায়ে পড়িতে বড় সাধ আজ জাগে।
মজিদ হইতে আযান হাঁকিছে বড় সুকরুণ সুরে,
মোর জীবনের রোজকেয়ামত ভাবিতেছি কত দূরে।
জোড়হাত দাদু মোনাজাত কর, আয় খোদা! রহমান।
ভেস্ত নসিব করিও সকল মৃত্যু­ব্যথিত প্রাণ।

 

ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 9 BENGALI QUESTIONS & ANSWERS

সেবা অসম নবম শ্রেনী বাংলা প্রশ্ন এবং উত্তর

পাঠ কবর, কবি : জসীম উদ্দিন

কবি পরিচিতি :

১৯০৪ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার (বর্তমানে বাংলাদেশ) অম্বিকাপুর গ্রামে মামার বাড়িতে জন্ম জসীম উদ্দীনের। তার নিজের গ্রামের নাম গোবিন্দপুর। তাঁর পিতার নাম মৌলবী আনসারউদ্দীন আহমদ। মাতার নামআমেনা খাতুন। বাবা পেশায় শিক্ষক ছিলেন। ফরিদপুর হিতৈষী এম ইস্কুলে বাবা আনসার উদ্দীনের কাছে প্রাথমিক শিক্ষা পান। পরে ফরিদপুর জেলা স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯২১ সালে দ্বিতীয় বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করেন।

দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় (মতান্তরে ইন্টার মিডিয়েট) কল্লোল পত্রিকার তৃতীয় বর্ষের তৃতীয় সংখ্যায় তাঁর বিখ্যাত কবিতা কবর১৯২৬ সালে প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রধান ড. দীনেশচন্দ্র সেনের সংস্পর্শে আসেন। মূলত ড. দীনেশচন্দ্র সেনের প্রচেষ্টার ফলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাট্রিকুলেশন সিলেবাসে কবর গৃহীত হয়। ছাত্র সজীস উদ্দীনের এই সম্মান বাংলা সাহিত্যে বিরল। জসীমউদ্দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম. এ. পাশ করেন। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি. লিট উপাধিতে সম্মানিত করেছিলেন। কবি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির একুশে পদকউপাধিতেও সম্মানিত হন। তার পেশা। ছিল শিক্ষকতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুকাল অধ্যাপনা করেন। ১৯২৭-এ প্রথম কাব্যগ্রন্থ রাখালীপ্রকাশিত হয়। ১৯২৯-এ প্রকাশিত হয় বিখ্যাত কাহিনী কাব্য নকসী কাঁথার মাঠ'। পরবর্তী উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলি হলো১৯৩০ বালুচর কাব্যগ্রন্থের প্রকাশ। ১৯৩১-এ ধানখেতএবং ১৯৩৩-এ শ্রেষ্ঠ কাব্যোপন্যাস সোজনাদিয়ার ঘাট' প্রকাশিত হয়। তারপর হাসু, রূপবতী’, ‘এক পয়সার বাঁশীপ্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ লোকনাট্যের বই পদ্মাপার’, ভ্রমণ কাহিনিমূলক রচনা চিলে মুসাফিরএবং অন্যান্য অনেক কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মার্চ শ্বাসকষ্টজনিত কারণে তার দেহাবসান ঘটে। ওইদিনই সরকারি উদ্যোগে হেলিকপ্টারে তাঁর মরদেহ নিজের গ্রাম গোবিন্দপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর পূর্ব ইচ্ছানুযায়ী তার দাদির কবরের পাশে তাকে ডালিম গাছের তলায় সমাধিস্থ করা হয়। এই স্থানটিকে কবি সবচেয়ে পবিত্র মনে করতেন।

 ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 9 BENGALI QUESTIONS & ANSWERS

সেবা অসম নবম শ্রেনী বাংলা প্রশ্ন এবং উত্তর

পাঠ কবর, কবি : জসীম উদ্দিন

জসীমউদ্দীন:

জসীম উদ্দীন (জানুয়ারি ১, ১৯০৩ - মার্চ ১৩, ১৯৭৬) একজন বিখ্যাত কবি। তিনি বাংলাদেশে 'পল্লী কবি' হিসেবে পরিচিত। তাঁর লেখা কবর কবিতাটি বাংলা সাহিত্যে এক অবিস্মরণীয় অবদান। পুরো নাম জসীম উদ্ দীন মোল্লা হলেও তিনি জসীম উদ্ দীন নামেই পরিচিত। নকশী কাঁথার মাঠ কবির শ্রেষ্ঠ রচনা যা বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে।

তিনি ১৯০৩ সনের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার বাড়ি ছিল একই জেলার গোবিন্দপুর গ্রামে। বাবার নাম আনসার উদ্দিন মোল্লা। তিনি পেশায় এক জন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। মা আমিনা খাতুন ওরফে রাঙাছুট। জসীম উদ্ দীন ফরিদপুর ওয়েলফেয়ার স্কুল, ও পরবর্তীতে ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে পড়ালেখা করেন। সেখান থেকে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় ১৯২১ সনে উত্তীর্ন হন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ও এমএ করেন যথাক্রমে ১৯২৯ ও ১৯৩১ সালে। ১৯৩৩ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীনেশচন্দ্র সেনের অধীনে রামতনু লাহিড়ী গবেষণা সহকারী পদে যোগ দেন। এর পর ১৯৩৮ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।

১৯৬৯ সনে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মান সূচক ডি লিট উপাধিতে ভূষিত করেন। তিনি ১৩ মার্চ ১৯৭৬ সনে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

পুরস্কার প্রাপ্তি :

* প্রেসিডেন্টস অ্যাওয়ার্ড ফর প্রাইড অফ পারফরমেন্স ১৯৫৮। * একুশে পদক ১৯৭৬। * স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ১৯৭৮ (মরণোত্তর)। * ১৯৭৪ সনে তিনি বাংলা অ্যাকাডেমি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। * রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট ডিগ্রি (১৯৬৯)।

কাব্যগ্রন্থ

* রাখালী। (১৯২৭) * নকশী কাঁথার মাঠ। (১৯২৯) * বালুচর। (১৯৩০) * ধানখেত। (১৯৩৩) * সোজন বাদিয়ার ঘাট। (১৯৩৪) * হাসু। (১৯৩৮) * রঙিলা নায়ের মাঝি।(১৯৩৫) * রুপবতি। (১৯৪৬) * মাটির কান্না। (১৯৫১) * এক পয়সার বাঁশী। (১৯৫৬) * সকিনা। (১৯৫৯) * সুচয়নী। (১৯৬১) * ভয়াবহ সেই দিনগুলিতে। (১৯৬২) * মা যে জননী কান্দে। (১৯৬৩) * হলুদ বরণী। (১৯৬৬) * জলে লেখন। (১৯৬৯) * কাফনের মিছিল। (১৯৮৮)

 

কবিতাটির মূলভাব :

প্রিয়তমা পত্নীর মৃত্যুর পটভূমিতে সাংসারিক স্নেহ প্রেমের আশ্চর্য করুণাঘন রূপ ফুটে উঠেছে কবিতাটিতে। জীবন সমুদ্রের বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে অতীত জীবনের সুখের স্মৃতিগুলো রোমন্থন করছে দাদু, তার একমাত্র নাতির কাছে। ত্রিশ বছরের বিপত্নীক জীবন দাদুর কাছে বড় দুঃসহ হয়ে ওঠে। দাদুর স্ত্রী ছিল অত্যন্ত সুন্দরী। ছোট্ট সুন্দরী বধূর রূপ লাবণ্যে সারা বাড়ি সোনালি রঙে উজ্জ্বল হতো। দাদু লাঙল নিয়ে মাঠে যাবার সময় আড়চোখে বারবার স্ত্রীকে দেখে নিতেন। দাদির স্বতঃস্ফুর্ত প্রেমঘন সান্নিধ্য দাদুর মনকে অভিষিক্ত করে দিয়েছিল। দাদি বাপের বাড়ি যাবার সময় দাদুকে বারবার অনুরোধ করতেন যেন মাঝেমাঝেই তাঁকে দেখে আসেন। বৃদ্ধা দাদু শাপলার হাট থেকে তরমুজ বিক্রি করে কিছু পয়সা বাঁচিয়ে স্ত্রীর জন্য তামাক, মাজন ও পুঁতির মালা নিয়ে সন্ধ্যাবেলা শ্বশুর বাড়িতে যেতেন। এই সমস্ত উপহার পেয়ে দাদি ভীষণ খুশি হতো এবং দাদুর আসার আশায় কত যে অপেক্ষা করতো সে কথাও হাসি মুখে জানিয়ে দিত। কবিতাটি সরল সুন্দর গ্রামবাংলার ঘরোয়া জীবনচিত্র।

 ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 9 BENGALI QUESTIONS & ANSWERS

সেবা অসম নবম শ্রেনী বাংলা প্রশ্ন এবং উত্তর

পাঠ কবর, কবি : জসীম উদ্দিন

উৎস :

কল্লোল পত্রিকার আষাঢ় সংখ্যায় জসীম উদ্দীনের বিখ্যাত কবিতাটি ১৯২৭ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ রাখালীতে স্থান করে নেয় কবর

 

পাঠের উদ্দেশ্য :

মৃত্যুর পটভূমিতে সংসারিক স্নেহ-প্রেমের আশ্চর্য করুণাঘন রূপে কবিতাটি ফুটে উঠেছে। উপহার সামগ্রী নয়, ভালবাসার গভীরতা দিয়ে ভালোবাসাকে বিচার করতে হয়। বিশ্বজনীন আবেদনের প্রেক্ষিতে রচিত জীবনবোধের এক অপূর্ব ফসল কবরকবিতা। অনাড়ম্বর জীবনের মধুরতা কত মাহাত্মবোধক তা এই কবিতায় বর্ণিত হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীর পক্ষে এটি শিক্ষণীয় বিষয়।

 

 ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 9 BENGALI QUESTIONS & ANSWERS

সেবা অসম নবম শ্রেনী বাংলা প্রশ্ন এবং উত্তর

পাঠ – কবরকবি জসীম উদ্দিন

শব্দার্থ :

কবর - সমাধি। নয়ন - চোখ। ঊষা - সূর্য, ভোরবেলা। তামাশা - কৌতুক, মজা। লাঙ্গল - জমি চাষ করার যন্ত্র, হাল। গাঁটে - ট্যাঁকে, বাঁধনে। বাটে পথে। নথ - নাকের একপাশে পরার গয়না। দাদির পিতামহীর। খেত - কৃষিক্ষেত্রের, মাঠে। ভাবিসাব-জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার পত্নী, বৌদি। দিশে দিশা, দিক। গাঁ - গ্রাম। দেড়ী - দেড় শব্দ থেকে দেড়া। ছড়া - ছড়ি বা মালার আকারবিশিষ্ট বস্তু। দোয়া মাঙ - প্রার্থনা করো। খোদা ঈশ্বর, ভগবান। তরেতে - জন্যে। ভেস্ত স্বর্গ। পাড়ি পাড়, জলাশয়ের তীর। কাফেনের মুসলমানদের শবাচ্ছাদন বস্ত্র। গণিয়া গুণে, গণনা করে। নাওয়াচয় স্নান করিয়ে। মোর আমার। নিরালায় - নির্জনে, নিভৃতে। নিঝঝুম - নীরব ; নিঃস্পন্দ।

 

 ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 9 BENGALI QUESTIONS & ANSWERS

সেবা অসম নবম শ্রেনী বাংলা প্রশ্ন এবং উত্তর

পাঠ – কবরকবি জসীম উদ্দিন

টীকা :

1. কবর : ইসলাম ধর্মাবলম্বী ব্যক্তির মৃত্যুর পর মাটি খুঁড়ে মৃত দেহকে শুইয়ে দিয়ে মাটি চাপা দেওয়া হয়। মৃত ব্যক্তির এই অন্তিম শয্যার নাম কবর।

2. তামাক : এখানে গুড় দিয়ে মাখা তামাক পাতার কথাই সম্ভবত বলা হয়েছে। এই মাখা তামাক দিয়ে আগেকার দিনে অনেকে দাঁত মাজতেন। তাছাড়া, নেশার দ্রব্য হিসাবে তার ব্যবহার তো ছিলই। দাঁতের মাজন হিসাবে যারা এই মাখা তামাক ব্যবহার করতেন। তাদের এক কাজে দুই কাজই হতো।

3. মাজন : দাঁত পরিষ্কার করার গুঁড়ো বা অনুরূপ দ্রব্য। সেকালে তামাকপাতা গুড়িয়ে গুড়ো করে এবং তার সঙ্গে নিশাদল ইত্যাদি মিশিয়ে দাঁতের মাজন হিসেবে অনেকে ব্যবহার করতেন। এই বস্তুটি মিশিনামে পরিচিত। ছিল।

 

 ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 9 BENGALI QUESTIONS & ANSWERS

সেবা অসম নবম শ্রেনী বাংলা প্রশ্ন এবং উত্তর

পাঠ – কবরকবি জসীম উদ্দিন


-:ক্রিয়াকলাপ:-

 

A. শুদ্ধ উত্তরটি লেখোঃ

Q.1. দাদির কবর কোন গাছের নীচে?

(১) আমগাছ (৩) ডালিম গা; (৪) কমলা গাছ

ANS:- (৩) দাদির কবর ডালিম গাছের নীচে।

Q.2. দাদুর বিপত্নীক জীবন কত বছরের? (

১) ২০ বস্ত্র (২) ৩০ বছর (৩) ৪০ বছর (৪) ৫০ বছর

ANS:- (২) দাদুর বিপত্নীক জীবন ৩০ বছরের।

Q.3. শাপলার হাটে দাদু কী বিক্রি করতেন?

(১) তরমুজ (২) নারকেল (৩) কলা (৪) আম।

ANS:- (১) শাপলার হাটে দাদু তরমুজ বিক্রি করতেন।

Q.4. দাদু শ্বশুর বাড়িতে কোন সময় যেতেন?

(১) সকাল (২) বিকেল (৩) সন্ধ্যা (৪) রাতে

ANS:- (৩) দাদু শ্বশুর বাড়িতে সন্ধ্যার সময় যেতেন।

 

B. শূন্যস্থান পূর্ণ করো। (কবিতা অবলম্বনে)

Q.1. এইখানে তোর কবর ডামিল গাছের তলে।

ANS:- এইখানে তোর দাদির কবর ডামিল গাছের তলে।।

Q.2.  বিয়ে ভেঙ্গে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত কুল।

ANS:- পুতুলের বিয়ে ভেঙ্গে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত কুল।

Q.3. সোনালি সোনামুখ তার আমার নয়নে ভরি।

ANS:- সোনালি ঊষার সোনামুখ তার আমার নয়নে ভরি।

Q.4. দেড় পয়সার তামাক এবং মাজন লইয়া

ANS:- দেড় পয়সার তামাক এবং মাজন লইয়া গাঁটে

 

 ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 9 BENGALI QUESTIONS & ANSWERS

সেবা অসম নবম শ্রেনী বাংলা প্রশ্ন এবং উত্তর

পাঠ – কবরকবি জসীম উদ্দিন

C. অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও।

Q.1. কবর' কবিতার কবি কে?

ANS:- কবর কবিতার কবি জসীমউদ্দিন।

Q.2. কোন গাছের নীচে দাদির কবর ?

ANS:- ডালিম গাছের নীচে দাদির কবর।

Q.3. দাদু কোন হাটে তরমুজ বিক্রি করতেন?

ANS:- দাদু শাপলার হাটে তরমুজ বিক্রি করতেন।

Q.4. দাদিকে দেবার জন্য দাদু কীসের মালা কিনতেন?

ANS:- দাদিকে দেবার জন্য দাদু পুঁতির মালা কিনতেন।

Q.5. তামাক এবং মাজনের দাম কত?

ANS:- তামাক এবং মাজনের দাম দেড় পয়সা।

 

 ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 9 BENGALI QUESTIONS & ANSWERS

সেবা অসম নবম শ্রেনী বাংলা প্রশ্ন এবং উত্তর

পাঠ – কবরকবি জসীম উদ্দিন

D. ৩/৪ টি বাক্যে উত্তর দাও।

Q.1. ছোটো বয়সের স্ত্রীকে বিয়ে করার পর দাদুর মনোভাব কেমন ছিল?

ANS:- ছোটো বয়সের স্ত্রীকে বিয়ে করার পর দাদু তাকে আপন ঘরে পরম সমাদরে এনে তুলেছিলেন। ছোটো ছোটো দুটি পায়ে সে যখন বাড়িময় এঘর থেকে ওঘরে ঘুরে বেড়াত, মুহূর্তের জন্য চোখের আড়ালে চলে যেত তখন তাকে হারানোর অমূলক আশংকায় কেঁপে উঠত যুবক স্বামীর অন্তর। এছাড়া সেই সঙ্গে এক বিচিত্র অনুভূতিতেও তাঁর স্বামীর হৃদয় পরিপূর্ণ হয়ে যেত। স্বর্ণকান্তি, রূপবতী সেই কন্যা রূপের ঢেউ তুলে, মেলার আলো ছড়িয়ে যখন বাড়িময় অবাধে ঘুরে বেড়াত, তখন তাকে দেখে মনে হত, কে বা কারা যেন সারা বাড়ি জুড়ে মুঠো মুঠো সোনা বিছিয়ে দিয়ে গেছে।

Q.2. শ্বশুর বাড়িতে যাবার সময় দাদু স্ত্রীর জন্য যে সব জিনিস নিতেন তা উল্লেখ করো।

ANS:- পত্নী বাপের বাড়ি গেলে পর দাদু সময় সুযোগমতো শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে মাঝে-মধ্যে তাকে দেখে আসতেন। তখন প্রিয় মিলনের প্রত্যাশায় তার বুক দরুদুরু করতো। যাওয়ার আগে শাপলার হাটে ছয় পয়সা পাল্লা রেমুজ বিক্রুি করে বন্ধুর জন্য একছড়া পুঁতির মালা, দেড় পয়সার তামাক এবং মাজন সঙ্গে নিয়ে যেতে তাঁর কখনোই ভুল হতো না।

Q.3. উপহার পেয়ে দাদির খুশি কবি কীভাবে প্রকাশ করেছেন?

ANS:- সামান্য পুঁতির মালা, তামাক ও মাজন উপহার পেয়ে দাদি প্রচণ্ড খুশি হতেন। কবি দাদির খুশির এই ভাবকে প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছেন যে দাদি নথ নেড়ে নেড়ে হেসে উঠতেন। মৃদু অনুযোগের সুরে বলতেন, এতদিন পরে দাদুর আসা হলো কেন?

 

 ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 9 BENGALI QUESTIONS & ANSWERS

সেবা অসম নবম শ্রেনী বাংলা প্রশ্ন এবং উত্তর

পাঠ – কবরকবি জসীম উদ্দিন

E. রচনাধর্মী উত্তর লেখো।

Q.1. কবরকবিতার সারমর্ম লেখো।

ANS:- প্রিয়তমা পত্নীর মৃত্যুর পটভূমিতে সাংসারিক স্নেহ প্রেমের আশ্চর্য করুণাঘন রূপ ফুটে উঠেছে কবিতাটিতে। জীবন সমুদ্রের বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে অতীত জীবনের সুখের স্মৃতিগুলো রোমন্থন করছে দাদু, তার একমাত্র নাতির কাছে। ত্রিশ বছরের বিপত্নীক জীবন দাদুর কাছে বড় দুঃসহ হয়ে ওঠে। দাদুর স্ত্রী ছিল অত্যন্ত সুন্দরী। ছোট্ট সুন্দরী বধূর রূপ লাবণ্যে সারা বাড়ি সোনালি রঙে উজ্জ্বল হতো। দাদু লাঙল নিয়ে মাঠে যাবার সময় আড়চোখে বারবার স্ত্রীকে দেখে নিতেন। দাদির স্বতঃস্ফুর্ত প্রেমঘন সান্নিধ্য দাদুর মনকে অভিষিক্ত করে দিয়েছিল। দাদি বাপের বাড়ি যাবার সময় দাদুকে বারবার অনুরোধ করতেন যেন মাঝেমাঝেই তাঁকে দেখে আসেন। বৃদ্ধা দাদু শাপলার হাট থেকে তরমুজ বিক্রি করে কিছু পয়সা বাঁচিয়ে স্ত্রীর জন্য তামাক, মাজন ও পুঁতির মালা নিয়ে সন্ধ্যাবেলা শ্বশুর বাড়িতে যেতেন। এই সমস্ত উপহার পেয়ে দাদি ভীষণ খুশি হতো এবং দাদুর আসার আশায় কত যে অপেক্ষা করতো সে কথাও হাসি মুখে জানিয়ে দিত। কবিতাটি সরল সুন্দর গ্রামবাংলার ঘরোয়া

জীবনচিত্র।

Q.2. কবর' কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা আলোচনা কর।

ANS:- কবরকবিতাটির সূচনাই হয়েছে কবরের প্রসঙ্গ দিয়ে। বিপত্নীক এক বৃদ্ধ তিরিশ বছর আগে প্রয়াত তার স্ত্রীর কবরের প্রতি নিজের নাতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে কবিতাটির সূচনা করেছে। আর এই কবরকে কেন্দ্র করেই নারি কাছে তিনি উন্মুক্ত করে দিয়েছেন তাঁর হৃদয়ের রুদ্ধদ্বার। সেই দ্বারপথে একদিকে যেমন দাম্পত্য প্রেমের উজ্জ্বল, মধুর চিত্র প্রস্ফুটিত হয়েছে, তেমনি পত্নীবিয়োগকাতর স্বামীর যন্ত্রণাদগ্ধ হৃদয়ের রক্তাক্ত ছবিও প্রস্ফুটিত হয়েছে একদিন যে রূপবতী বালিকাকে তিনি বধূরূপে বরণ করে ঘরে এনেছিলেন, তার সঙ্গে দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনযাপনের কত সুখস্মৃতিই না তিনি নিজ মুখে ব্যক্ত করেছেন। পবিত্র ভালোবাসার বন্ধন উভয়ের জীবন একসূত্রে গ্রথিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন করে প্রিয় স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের যন্ত্রণা উপেক্ষা করে তাঁর প্রিয় পত্নী আজ কেমন করে নীরব নিভৃত স্মরের তলদেশে চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে আছে, বৃদ্ধের হাহাকার মথিত কণ্ঠে এই নিরুত্তর প্রশ্নই আজ বড়ো হয়ে উঠেছে। এইভাবেই দেখা যায়, পরলোকগতা জীবন সঙ্গিনীর কবরকে কেন্দ্র করেই বর্তমানে বৃদ্ধ স্বামীর হৃদয়াবেগ কবর' কবিতার প্রথম দুই স্তবকে বাণীবদ্ধ হয়েছে। অপরদিকে কবিতাটির তৃতীয় স্তবকেও প্রায় অনুরূপ প্রসঙ্গ পরিস্থিতিতে বৃদ্ধের শূন্য হৃদয়ের তথা শূন্য জীবনের হাহাকার ধ্বনিত হয়ে উঠেছে। পত্নী বিয়োগের পরবর্তীকালেও এই মানুষটি অন্তরের স্বাভাবিক প্রেরণায় যেসব প্রিয়জনকে বুক ভরা স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে আঁকড়ে ধরেছিলেন, তারা সবাই একে একে তঁাকে ফাঁকি দিয়ে কোন নিরুদ্দেশের পথে পাড়ি দিয়েছে। সবচেয়ে মর্মন্তুদ ব্যাপার হলো এই যে, ছোটো বড় হিসেব করে। সেইসব প্রিয়জনের সকলের কাফন ও কবরের ব্যবস্থা তাকেই নিজ হাতে করতে হয়েছে। সেই দুঃখময় অভিজ্ঞতার স্মৃতি তিনি আজো ভুলতে পারেননি। এইরূপে দেখা যায় যে, কবরকবিতার বিষয়বস্তু কোনো না কোনো প্রিয়জনের কবরকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে এবং পাঠক মনে সাড়া জাগিয়েছে। সুতরাং বিষয়বস্তুর সঙ্গে সংগতিসূত্রে কবিতাটির কবরনামকরণ সম্পূর্ণ সার্থক।

Q.3. বালিকাবধূর রূপ লাবণ্যে বিমোহিত বৃদ্ধ দাদু তার স্ত্রীর রূপের যে বর্ণনা দিয়েছেন, সে বিষয়ে আলোচনা করো।

ANS:- যৌবনের সূচনাকালে সোনার প্রতিমার মতো সুন্দরী ছোট্ট মেয়েটিকে বিয়ে করে তিনি ঘরে এনেছিলেন। সেই স্বর্ণকান্তি ছোট্ট মেয়েটি যখন বাড়ির ভিতর এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াত, মনে হত, কারা যেন বাড়িময় রাশি রাশি সোনা ছড়িয়ে দিয়েছে। সেই অপরূপ দৃশ্য দেখে বিস্ময়ে তিনি মুগ্ধ হয়ে যেনে। ভোরবেলার সোনালি আলোয় নতুন বউয়ের সুন্দর মুখখানি যখন আরো সুন্দর, আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠত। তখন সেই সুন্দর মুখের ছবি দুই চোখে ভরে নিয়ে, লাল কাঁধে করে, গ্রামের পথ ধরে তিনি চাষের খেতের দিকে এগিয়ে যেতেন। কিন্তু চলার পথে অতৃপ্ত বাসনায় তিনি সেই সুন্দরী বধূর লাবণ্যময় মুখখানি বারবার ফিরে চেয়ে দেখতেন। তাঁর ভাবি-সাব তাকে এ নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করলেও তিনি তাতে কিছু মনে করতেন না। এইভাবে প্রতিদিনের ক্ষুদ্র সুখ-দুঃখের মধ্য দিয়ে দুটি জীবনের ধারা কখন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে, তার হিসাব রাখা সম্ভব নয়।

 Q.4.কবরকবিতা অবলম্বনে বৃদ্ধদাদুর গভীর দাম্পত্য প্রেমের সৌন্দর্য কিভাবে প্রকাশিত হয়েছে তা নিজের ভাষায় লেখো।

ANS:- এক বৃদ্ধের স্ত্রীর কবর যা তিনি তার নাতিকে দেখিয়েছেন। বিগত তিরিশ বছরের অশ্রুজলে সিক্ত এই কবর। এই সূত্রে বৃদ্ধের মনে পড়েছে সেই বিগতদিনের স্মৃতিকথা যখন সেই বালিকা তার পুতুলের সংসার ভেঙে দিয়ে। চলে আসে স্বামীর সংসার করবে বলে। তার উপস্থিতিতে স্বামীর সংসার স্বর্ণময়। চত যা ধরা পড়েছে কবিতার পংক্তিতে

এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে হইতাম সারা,

সারা বাড়ি ভরি সোনার মোর ছড়াইয়া গেল কারা।

পূর্বদিগন্তে সূর্যোদয়ের পূর্বে ঊষাকালে ওই বালিকাসোনামুখঅবলোকন করতেন নয়ন ভরে। তাঁর সমস্ত কাজের প্রেরণাদাত্রীরূপে ওই বালিকার অস্তিত্ব। ছিল। লাঙল নিয়ে তিনি বখন মাঠে যেনে তখন বারবার ফিরে ফিরে তাকাতেন কারণ তাকে দেখে দেখে আঁখি না ফিরে। এই নিয়ে তার বৌদি প্রভৃতি বাড়ির আত্মীয় স্বজনেরা ঠাট্টা তামাশা করতেন। যা তার জীবনকে আনন্দে দিশেহারা করে দিত

এমনি করিয়া জানি না কখন জীবনের সাথে মিশে,

ছোটো খাটো তার হাসি ব্যথা মাঝে হারা হয়ে গেনু দিশে।

ওই বালিকাটির দিদা যখন পিতৃগৃহে যেত তখন বারবার স্মরণ করিয়ে দিত—“আমারে দেখিতে যাইও কিন্তু, উজান-তলীর গাঁ।এবং তার দাদুও পুতির একছড়া মালা নিয়ে, দেড় পয়সার তামাক এবং মাজন গাঁটে করে শ্বশুর বাড়ির পথে সন্ধ্যাকালে উপস্থিত হত। এই সামান্য উপহারে তার দাদিকত না আনন্দ পেত। সঙ্গে সঙ্গে অভিমান করে অভিযোগও জানাত

- এতদিন পরে এলে, পথ পানে চেয়ে আমি যে হেথায় কেঁদে মরি আঁখি জলে। এত যাদের ভালোবাসা, দাম্পত্যের অঙ্গাঙ্গি বন্ধন কিন্তু জীবনের নিষ্ঠুর মত মৃত্যু এসে তাদের সুখের সংসার ভেঙ্গে দিল। তাইতো বুদ্ধের প্রশ্ন

আমারে ছাড়িয়া এত ব্যথা যার কেমন করিয়া যায়,

কবর দেশেতে ঘুমায়ে রয়েছে নিঝঝুম নিরালায়।''

আর নাতিকে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে বলেছে যেন তার জন্য স্বর্গের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যায়।

 

 ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 9 BENGALI QUESTIONS & ANSWERS

সেবা অসম নবম শ্রেনী বাংলা প্রশ্ন এবং উত্তর

পাঠ – কবরকবি জসীম উদ্দিন

F. সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করো।

Q.1.         এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে হইতাম সারা,

সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা।

ANS:- আলোচ্য অংশটি কবি জসীম উদ্দীনের লেখা কবর কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। উদ্ধৃত পঙক্তিটিতে কবি কল্পিত বৃদ্ধের স্মৃতিচারণায় তার বালিকা বধূর অপরিমিত সৌন্দর্য বর্ণনা প্রসঙ্গে সোনা ছড়ানোর তুলনা করা হয়েছে। উপমাটির অত্যাশ্চর্য প্রয়োগ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। দাদির মুখখানা সোনার মতো তিনি বালিকাসুলভ চাপল্যের কারণে সারা বাড়িময় ছোটাছুটি করলে সোনার আভায় চারিদিক যেন আলোকিত হয়ে উঠত। প্রভাতের স্বর্ণবর্ণের সূর্যের রঙের সঙ্গে বক্তার স্ত্রীর গায়ের রং যেন মিলেমিশে প্রভাতের ঔজ্বল্যকে আরও বাড়িয়ে দিত।।

Q.2.         এমনি করিয়া জানি না কখন জীবনের সাথে মিশে

ছোটখাট তার হাসিব্যথা মাঝে হারা হয়ে গেনু দিশে।

ANS:- আলোচ্য অংশটি কবি জসীম উদ্দীনের লেখা কবর কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। উদ্ধৃতাংশে দাদুর বিবাহের প্রসঙ্গে উপরের পঙক্তি দুটির অবতারণা করা হয়েছে। বিবাহের পর দাদু ও দাদির জীবন চলার পথ মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। একস্রোতে প্রবাহিত হয়েছিল। প্রবল সহানুভূতির এবং ভালোবাসার অমোঘ প্রভাবে বধূর ক্ষুদ্র সুখ, ক্ষুদ্র দুঃখ, হাসিকান্না, আনন্দ বেদনাকে নিজের বলে মেনে নিয়ে তারই মাঝে তিনি আত্মহারা হয়ে গেছে। নিজের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ভুলে গেছে।

Q.3.         দেড় পয়সার তামাক এবং মাজন লইয়া গাঁটে,

সন্ধ্যাবেলায় ছুটে যাইতাম শ্বশুর বাড়ির বাটে।

ANS:- আলোচ্য অংশটি কবি জসীম উদ্দীনের লেখা কবরকবিতা থেকে নগ্ন হয়েছে। আলোচ্য কবিতায় কল্পিত বৃদ্ধ পিতামহ, একদিন তিনিই ছিলেন সময় স্বামী। আর তখন তার বয়সও তেমন বেশি ছিল না। সেজন্য ক্ষুদ্র আশা আকাঙক্ষায় ঘেরা জীবনের শরিক বা অংশীদার তরুণী পত্নীর নিতান্ত অন্য শখ আহলাদ তিনি আগ্রহের সঙ্গে হাসিমুখে পরিপূর্ণ করতে এগিয়ে আসতেন। এ ব্যাপারে তার কোনো ত্রুটি বা গাফিলতি ছিল না। সেজন্য বাপের বাড়িতে স্বামীর পথ চেয়ে বসে থাকা তরুণী পত্নীর সাধের তামাক-মাজন হাট থেকে কিনে নিয়ে হাট থেকে ফেরার সময় কৃষক স্বামী শ্বশুরবাড়ির পথ ধরে দ্রুত পায়ে এসে সেখানে হাজির হলে।

 

 ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 9 BENGALI QUESTIONS & ANSWERS

সেবা অসম নবম শ্রেনী বাংলা প্রশ্ন এবং উত্তর

পাঠ – কবরকবি জসীম উদ্দিন

G. ভাষা ব্যাকরণ

Q.1. প্রত্যয় নির্ণয় করো।

সোনালি ; হাসি ; উজান ; মাজন ; হাসিয়া।

ANS:- সোনালিসোনা+আলি। হাসি-হাস্+ই। উজান উদ্যান। মাজন-মাল্+অন্। হাসিয়া হাইয়া।

Q.2. কবরকবিতা থেকে পাঁচটি অসমাপিকা ক্রিয়াপদের উল্লেখ করো।

ANS:- নীচে কবরকবিতা থেকে পাঁচটি অসমাপিকা ক্রিয়াপদের উল্লেখ করা হচ্ছে

ভিজায়ে, ঘুরিয়া, লইয়া, হাসিয়া, জড়ায়ে।।

Q.3. বাক্য রচনা করো ?

কবর ; নয়ন ; পুতুল ; তামাশা ; গাঁটে।

ANS:-

কবর : মুসলমানরা মারা গেলে মৃতদেহ কবর দেওয়া হয়।

নয়ন : নয়ন ভরা জল গো তোমার, আঁচল ভরা ফুল।

পুতুল : ছোট মেয়েরা পুতুল নিয়ে খেলতে ভালোবাসে।

তামাশা : গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলাকালীন তামাশা চলে না।

গাটে : গাঁটে যথেষ্ট টাকাকড়ি নিয়ে বাজারে যেতে হয়।

 

 ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 9 BENGALI QUESTIONS & ANSWERS

সেবা অসম নবম শ্রেনী বাংলা প্রশ্ন এবং উত্তর

পাঠ – কবরকবি জসীম উদ্দিন

 

*************

'কবর' কবিতার মর্মভাব

'কবর' কবিতায় বৃদ্ধের জীবন-বাস্তবের রূপকে আমরা দেখতে পাই সাংসারিক স্নেহ-প্রেমের নিয়তি-নিহত আরক্তিম মূর্তি। তার অপরাধ সংসারে সে স্নেহ-ভালোবাসার নীড় বেঁধে সুখী হতে চেয়েছিল। স্নেহনীড় সে বেঁধেছিল, সুখের স্পর্শও সে পেয়েছিল। কিন্তু সে সৌভাগ্যের বিদ্যুত্-চমকের পেছেনেই চরম দুঃখের বজ্রাঘাত নেমে এসেছিল তার জীবনে। তারই চোখের সামনে একের পর এক মৃত্যুর হাত ধরে বিদায় নিয়েছে তার প্রেমময়ী স্ত্রী, উপযুক্ত পুত্র, লক্ষ্মী পুত্রবধূ, আদরের নাতনি এবং স্নেহের পুত্তলী মেয়ে। শুধু তাকে স্নেহস্মৃতি স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যেই বোধহয় বেঁচে রইল বংশের একমাত্র প্রদীপ নাতিটি। তার স্নেহের নীড় ভেঙে গেল, জীবন হয়ে উঠলো দুঃস্বপ্নময়। চারদিকে দেখা দিল মরুর ঊষরতা। এক দুঃসহ বেদনায় তার অস্তিত্বকে বহন করে সে বেঁচে রইল। দিনরাত মৃত্যু কামনা তার সকল ভাবনার সার হরয় দাঁড়ালো। কবির ভাষায়-


ওই দূর বনে সন্ধ্যা নামিছে ঘন আবিরের রাগে

অমনি করিয়া লুটায়ে পড়িতে বড় সাধ আজ জাগে।


বাস্তব জীবন অভিজ্ঞতা, পারিপার্শ্বিকের অকুণ্ঠ স্বীকৃতি ও হূদয়ানুভূতির সার্থক সমাবেশে 'কবর' কবিতাটি দুর্লভ শিল্পসার্থকতার অধিকারী। পল্লি বৃদ্ধের দুঃসাহস বেদনার চিত্র যেন সকল পল্লিবাসীরই দুঃখ বেদনার আন্তরিক ও প্রতিনিধি স্থানীয় চিত্র। বৃদ্ধের মুখে সকল পল্লিবাসীর যুগ-যুগান্তের পুঞ্জিভূত শোক-বেদনায় যেন ভাষা পেয়েছে 'কবর' কবিতায়। ব্যক্তিগত সুখ এখানে সার্বিক শোক-চেতনায় রূপান্তরিত হযেছে। বাংলা কাব্যে সাধারণ মানুষের জীবনের দুঃখ-বেদনার এমন মহিমাময় শিল্পসম্মত প্রকাশ আর দেখা যায় না। অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্ত 'কবর' কবিতাকে বাংলা কবিতার নতুন দিগদর্শন বলে চিহ্নিত করে এর অনন্য সৃষ্টি-মহিমারই স্বীকৃতি জানিয়েছেন।

 

 ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 9 BENGALI QUESTIONS & ANSWERS

সেবা অসম নবম শ্রেনী বাংলা প্রশ্ন এবং উত্তর

পাঠ – কবরকবি জসীম উদ্দিন

অতিরিক্ত প্রশ্ন:

ক. কবরকবিতাটি প্রথম কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়?

উত্তর: জসীমউদ্দীন রচিত প্রথম কল্লোল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

খ. মোর জীবনের রোজ কেয়ামতবলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: পল্লীকবি জসীমউদ্দীন রচিত কবরকবিতায় মোর জীবনের রোজ কেয়ামতবলতে বৃদ্ধের জীবনের শেষ দিনটির কথা বোঝানো হয়েছে।

কবরকবিতায় প্রধান হয়ে উঠেছে এক গ্রামীণ বৃদ্ধের জীবনের গভীর বেদনাগাথা। জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ তার জীবনের শোকার্ত অধ্যায়গুলো উন্মোচন করেছেন তার নাতির কাছে। গোরস্থানে গিয়ে তিনি নাতিকে এক এক করে তার স্ত্রীর, পুত্র, পুত্রবধূ, নাতনি ও কন্যার কবর দেখিয়ে বেদনার্ত কণ্ঠে বর্ণনা করেছেন তাদের মৃত্যুর মর্মান্তিক স্মৃতিগুলো। বৃদ্ধ তাঁর জীবনের শেষ দিনটির অপেক্ষা করছেন। মানুষ নিজের জীবনের শেষ কবে তা জানে না। তাই বৃদ্ধ আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

গ. ওপরের কবিতাংশের সঙ্গে কবরকবিতার ভাবগত পার্থক্য নিরূপণ করো।

উত্তর: উদ্দীপকের কবিতাংশের সঙ্গে কবরকবিতার ভাবগত পার্থক্য হলোকবিতাংশটিতে আনন্দের ছায়াপাত ঘটেছে আর কবরকবিতার সর্বত্রই বিষাদের সুর ধ্বনিত হয়েছে।

পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের কবরকবিতাটি বৃদ্ধ দাদুর আর্তহাহাকার এবং স্বজন হারানোর বেদনার মর্মস্পর্শী আলেখ্য। জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ অতীতের শোকার্ত অধ্যায়গুলো খুলে বলছেন তাঁর একমাত্র অবলম্বন নাতির কাছে। কিন্তু আলোচ্য কবিতাংশটিতে বিষাদের কোনো ছায়াপাত ঘটেনি।

উদ্দীপকের কবিতাংশে আনন্দের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। ভোরের রোদ ধানের ওপর যেন মাথা পেতে শোয়। ধানের বুকে ঘাসের গন্ধ, চোখে যেন তার শিশিরের ঘ্রাণ। তার অস্বাদ পেয়ে যেন ধান সোনালি রঙের হয়ে ওঠে। কৃষকের মুখে হাসি ফোটায়। যেন আনন্দেরই এক নিরবচ্ছিন্ন অংশ।

অপর পক্ষে কবরকবিতাটিতে নাতিকে সঙ্গে নিয়ে বৃদ্ধ কবরস্থানে গিয়ে এক এক করে তার স্ত্রী, পুত্র ও পুত্রবধূ, নাতনি ও কন্যার কবর দেখিয়ে অত্যন্ত বেদনার্ত কণ্ঠে তাদের মর্মান্তিক দৃশ্যগুলো সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। আজ থেকে ৩০ বছর আগে বৃদ্ধের স্ত্রী মারা গেছেন। অতঃপর কোনো এক ফাল্গুনে তাঁর একমাত্র পুত্র হঠাৎ ছটফট করতে করতে মারা যায়। স্বামী শোক সহ্য করতে না পেরে পুত্রবধূও অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। তারপর তাঁর আদরের নাতনি শ্বশুরবাড়ির নির্যাতনে অকালে মৃত্যুবরণ করে। সবশেষে সাত বছরের ছোট মেয়েটিও সাপের কামড়ে মারা যায়। তাই বলা যায় যে আলোচ্য কবিতাংশে যেখানে রয়েছে আনন্দের ছোঁয়া, ‘কবরকবিতার সর্বত্রই সেখানে রয়েছে বিষাদের ছোঁয়াএ দিক থেকে কবিতাংশটিতে কবরকবিতার ভাবগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. অনুচ্ছেদটির সঙ্গে কবরকবিতার ভাষাশৈলী কি সাদৃশ্যপূর্ণ? দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে মতামত দাও।

উত্তর: ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশের সঙ্গে কবরকবিতার ভাষাশৈলী অনেকটাই সাদৃশ্যপূর্ণ।

কবরপল্লীকবি জসীমউদ্দীন রচিত এক বিস্ময়কর শোকাবহ কবিতা। জীবন-মৃত্যুর অনিবার্য বাস্তবতার কাছে নতজানু এক শোকার্ত বৃদ্ধের দুঃসহ স্মৃতি, উপযুক্ত শব্দ, উপমা ও অনিন্দ্যসুন্দর চিত্রকল্পের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে কবিতাটিতে।

সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার পটভূমিতে রচিত কবরকবিতার বৃদ্ধ দাদু জীবনের শেষ সীমায় দাঁড়িয়ে স্বজন হারানোর বেদনাময় হূদয়ের উন্মোচন করেছেন। কবিতার প্রতিটি ছত্রে মিশে আছে প্রিয় মানুষের মৃত্যুর ছবিবৃদ্ধের হূদয়ে রক্তক্ষরণ করছে। কবি অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় কবিতাটিতে তা ব্যক্ত করেছেন।

অনুচ্ছেদটি উপযুক্ত শব্দচয়ন ও অনিন্দ্যসুন্দর চিত্রকল্পের মাধ্যমে যেমন জীবন্ত হয়ে উঠেছে, আলোচ্য কবরকবিতাটিও শব্দ, উপমা ও চিত্রকল্পের মাধ্যমে মূর্ত হয়ে উঠেছে। এদিক থেকে অনুচ্ছেদটির সঙ্গে কবরকবিতার ভাষাশৈলীর অনেকাংশেই মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

অনুচ্ছেদটির কবিতাংশে সহজ-সরল ভাষার প্রয়োগ ঘটেছে। সুনিপুণ শব্দ চয়ন করা হয়েছে প্রতিটি পঙিক্ততে। আলোচ্য কবরকবিতায় ভাষাশৈলীর চমৎকার সমন্বয় ঘটেছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ পঙিক্তদ্বয় উল্লেখ করা যায়—‘সোনালি ঊষার সোনামুখ তার আমার নয়নে ভরি/ লাঙল লইয়া ক্ষেতে ছুটিতাম গাঁয়ের ওপথ ধরি।আলোচ্য পঙিক্তদ্বয়ে শব্দ, উপমা ও অনিন্দ্যসুন্দর চিত্রকল্পের সমন্বয় ঘটেছে। স্ত্রীর কনক লাবণ্যে ভরা মুখ-চোখ ভেবে ভেবে বৃদ্ধ লাঙল নিয়ে ক্ষেতে যেতেন এবং পেছন ফিরে বারবার দেখতেন। কবি এমন সুনিপুণভাবে সহজ-সরল ও প্রাঞ্জল ভাষা ব্যবহার করেছেন কবিতাটির প্রতিটি ছত্রে। সুতরাং সার্বিক বিবেচনায় দেখা যায় যে অনুচ্ছেদটির সঙ্গে কবরকবিতার ভাষাশৈলীর অনেকাংশেই সাদৃশ্য বিদ্যমান।

প্রশ্ন : জসীমউদদীনের বিখ্যাত কবরকবিতার লাইন কয়টি?

উত্তর : ১১৮টি।


 ASSAM SEBA/SMEBA CLASS 9 BENGALI QUESTIONS & ANSWERS

সেবা অসম নবম শ্রেনী বাংলা প্রশ্ন এবং উত্তর

পাঠ – কবরকবি জসীম উদ্দিন


**************************






 

Post a Comment

1 Comments

HELLO VIEWERS, PLEASE SEND YOUR COMMENTS AND SUGGESTION ON THE POST AND SHARE THE POST TO YOUR FRIEND CIRCLE.