কারক ও বিভক্তি
বাংলা ব্যাকরণ : কারক ও বিভক্তি
Visit – www.smartlearningservice.com
কারক
বাক্যের ক্রিয়াপদের
সঙ্গে অন্যান্য পদের যে সম্পর্ক তাকে কারক বলে।
কারক ছয় প্রকার-
(১)কর্তৃকারক,
(২) কর্মকারক,
(৩)করণকারক,
(৪)নিমিত্তকারক,
(৫)অপাদনকারক ও
(৬)অধিকরণকারক।
* বাক্যের মধ্যে যে কাজ করে তাকে বলে কর্তৃকারক।
* কর্তা যা করে, দেখে, শোনে তাই কর্মকারক।
* কর্তা যা দিয়ে কাজটি করে তাকে বলে করণকারক।
* যদি নিজের স্বত্ব বা অধিকার ত্যাগ করে কাউকে কিছু দান করা হয় তাকে বলে
নিমিত্তকারক বা সম্প্রদানকারক।
* কর্তা যদি ভীত, চকিত, পতিত, উৎপন্নযুক্ত প্রভৃতি হয়, তাহলে তাকে অপাদানকারক বলে।
* যে পদে ক্রিয়ার স্থান, কাল, বিষয় ইত্যাদি বোঝায় তাকে
অধিকরণকারক বলে।
* যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের সঙ্গে অন্য কোনো বিশেষ্য পদের সম্বন্ধ থাকে তাকেই
সম্বন্ধপদ বলে।
* যে বিশেষ্য পদের দ্বারা কাউকে ডাকা বোঝায়, তাকে সম্বোধন পদ বলে।
* সম্বন্ধ ও সম্বোধন দুইটি পদের সঙ্গেই ক্রিয়ার কোনো সম্পর্ক নেই, এইজন্য এদের কারক বলা হয় না।
* কারক বা সম্বন্ধ পদ বোঝার জন্য যে সব চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে বিভক্তি বলে।
কারক
বাক্যের মধ্যে ক্রিয়াপদের সঙ্গে বিশেষ্য ও সর্বনাম
পদের কোনো না কোনো সম্পর্ক থাকে, ক্রিয়ার সঙ্গে এই সম্বন্ধযুক্ত পদকে কারক বলা হয়।
রাজামশাই সিন্দুক থেকে নিজের হাতে সন্ধ্যাবেলায় প্রজাদের টাকা
দিলেন।
ওপরের এই বাক্যটি পড়ে অনেক প্রশ্ন করা যায় তার উত্তরও
পাওয়া যায়।
* কে দিলেন? — রাজামশাই।
* কী দিলেন? — টাকা দিলেন।
* কাকে দিলেন? — প্রজাদের দিলেন।
* কখন দিলেন? — সন্ধ্যাবেলায়।
* কোথা থেকে দিলেন? — সিন্দুক থেকে।
* কীসের সাহায্যে দিলেন? — নিজের হাতে।
অতএব “দিলেন” এই ক্রিয়াপদের সঙ্গে
অন্য প্রত্যেকটি পদেরই একটা সম্পর্ক আছে, এর ফলে রাজামশাই, টাকা, প্রজাদের, সন্ধ্যাবেলায়, সিন্দুক থেকে, নিজের হাতে এই পদগুলি কারক।
বাংলা ব্যাকরণ : কারক ও বিভক্তি
Visit – www.smartlearningservice.com
কারক সাধারণত ছয় প্রকারের।
|
কর্তৃকারক
বাক্যের মধ্যে যে পদ ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে বলা হয়
কর্তৃকারক। কর্তৃকারকে সাধারণত প্রথমা বিভক্তি বা শূন্য বিভক্তি হয়ে থাকে।
কর্তৃকারকে ‘এ’ বিভক্তি প্রয়োগ হয়।
“ক্রিয়া” কথার মানে হলো কাজ করা। বাক্যে যে কাজ করে, সেই হল “কর্তা”।
(i) মুকুল ছবি আঁকে।
(ii) আহমদ কোরান পড়ে।
(iii) পাখি আকাশে ওড়ে।
(iv) গাড়িতে করে আমরা স্কুলে
যাই।
ওপরের প্রথম বাক্যে “আঁকে” ক্রিয়ার কর্তা হল মুকুল। দ্বিতীয় বাক্যে পড়ে
ক্রিয়ার কর্তা হল আহমদ। তৃতীয় বাক্যে 'ওড়ে’ ক্রিয়ার কর্তা হল ‘পাখি’। চতুর্থ বাক্যে ‘যাই’ ক্রিয়ার কর্তা হল ‘গাড়ি'।
প্রথম তিনটি বাক্যকে ‘কে’ ও চতুর্থ বাক্যটিতে ‘কী’ দিয়ে প্রশ্ন করলে ‘মুকুল’, ‘আহমদ’, ‘পাখি’, ‘গাড়ি’ কর্তৃ সম্পর্কে বেরিয়ে আসে।
কর্মকারক
‘কর্ম’ শব্দের অর্থ হল কাজ।
কর্তা যে পদকে অবলম্বন করে কাজ করে তা-ই হল কর্ম।
নিচের বাক্যগুলি দেখ -
(i) বাঘেরা মাংস খায়।
(ii) চাষিরা মাঠে ধান কাটে।
(iii) মাছরাঙা পাখি মাছ ধরে।
(iv) খোকা চাঁদ দেখে।
ওপরের-
প্রথম বাক্যে “বাঘেরা” “মাংস” পদকে অবলন করে খায়।
দ্বিতীয় বাক্যে “চাষিরা” “ধান” পদকে অবলম্বন করে কাজটি করে।
তৃতীয় বাক্যে “মাছরাঙা” “মাছ” পদকে অবলম্বন করে ধরা কাজটি সম্পাদন করে।
চতুর্থ বাক্যে “খোকা” “চাঁদ” পদকে অবলম্বন করে দেখা কাজটি সম্পাদন করে। মাংস, ধান, মাছ, চাঁদ এর কর্ম সম্পর্কে
বেরিয়ে আসে।
করণকারক
কর্তা যা দিয়ে বা যার সাহায্যে ক্রিয়া সম্পন্ন করে
তাকে বলা হয় করণকারক
করণকারক সাধারণত তৃতীয়া বিভক্তি হয়।
যার সাহায্যে বা যাকে দিয়ে কর্তা কাজ করে, তা হল করণ।
নিচের বাক্যগুলি দেখ -
(i) বলপয়েন্ট কলমে ভালো লেখা
হয়।
(ii) মামনি পেনসিল দিয়ে
লেখে।
(iii) এই ছুরি দিয়ে নারকেল
কাটা হয়।
(iv) নিলম কাঁচি দিয়ে কাপড় কাটে।
ওপরের-
প্রথম বাক্যে ভালো “লেখার” কাজ “বলপয়েন্ট কলমে” হয়।
দ্বিতীয় বাক্যে “লেখার” কাজ “পেনসিল” দিয়ে হয়।
তৃতীয় বাক্যে “কাটা” কাজ “ছুরি” দিয়ে হয়।
চতুর্থ বাক্যে “কাঁচি” দিয়ে কাজ হয় “কাপড়” কাটা।
নিমিত্তকারক বা সম্প্রদানকারক
কর্তাই যখন স্বত্ব ত্যাগ করে কোন কিছু দেয় অর্থাৎ আর
ফেরত নেওয়া হয় না কোন কিছুর নিমিত্ত কিছু হয় বা ঘটে, ত খন তাকে বলা হয় নিমিত্তকারক। নিমিত্তকারকে সাধারণত
চতুর্থ বিভক্তি হয়।
নিমিত্ত অর্থে “কে”, “এ” প্রভৃতি বিভক্তির
প্রয়োগ হয় “জন্য” “নিমিত্ত” অনুসর্গেরও প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
নিচের বাক্যগুলি দেখ -
(i) বৃষ্টির জন্যে আজ স্কুল
যেতে পারিনি।
(ii) প্রভুর নিমিত্তে ভিক্ষা
মাগি।
(iii) ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও।
(iv) অন্নের জন্যে কাজ করি।
ওপরের-
প্রথম বাক্যে স্কুল খেতে পারেনি = বৃষ্টির জন্যে।
দ্বিতীয় বাক্যে ভিক্ষা দাও = প্রভুর নিমিত্তে।
তৃতীয় বাক্যে ভিক্ষা দাও = ভিক্ষুককে।
চতুর্থ বাক্যে কাজ করে = অন্নের জন্যে।
বাংলা ব্যাকরণ : কারক ও বিভক্তি
Visit – www.smartlearningservice.com
অপাদানকারক
কোনো কিছু থেকে কোনো কিছু ঘটা, উৎপন্ন হওয়া, পালিয়ে আসা, পড়ে যাওয়া, আলাদা হওয়া ইত্যাদি
বোঝালে তাকে বলা হয় অপাদানকারক। অপাদানকারকে সাধারণত পঞ্চমী বিভক্তি হয়।
কর্তা যদি ভীত, চকিত, পতিত, উৎপন্ন যুক্ত প্রভৃতি হয়, তখনই তাকে বলা হয় অপাদানকারক।
নিচের বাক্যগুলি দেখ -
(i) তিল থেকে তেল হয়।
(ii) টাকা থেকে বিদ্যা বড়ো।
(iii) এখন বাদল মেঘে বৃষ্টি
হবে।
(iv) ছেলেটি ঘর থেকে পালিয়ে
এসেছে।
ওপরের-
প্রথম বাক্যে “তিল থেকে” তেল হয়।
দ্বিতীয় বাক্যে “টাকা থেকে” বিদ্যা বড়ো।
তৃতীয় বাক্যে “বাদল মেঘে” বৃষ্টি হওয়া।
চতুর্থ বাক্যে “ঘর থেকে” পালিয়ে আসা।
অধিকরণকারক
যে পদে ক্রিয়ার স্থান, কাল, বিষয় ইত্যাদি বোঝায়, তাকে বলা হয় অধিকরণকারক। অধিকরণকারকে সাধারণত পঞ্চমী
বিভক্তি হয়।
নিচের বাক্যগুলি দেখ -
বনে বাঘ থাকে।
গাছে থাকে পাখি।
হেমন্তে শিশির ঝরে।
নদীতে নৌকো চলে।
ওপরের-
প্রথম বাক্যে “বাঘ থাকার” জায়গা হল “বন”।
দ্বিতীয় বাক্যে “পাখি থাকার” আশ্রয় হল “গাছ”।
তৃতীয় বাক্যে “শিশির ঝরার” সময় হল “হেমন্ত”।
চতুর্থ বাক্যে “নৌকা চলার” জায়গা হল “নদী”।
যে পদ ক্রিয়ার স্থান, কাল, পাত্র ইত্যাদি বোঝায়
তাকে বলা হয় অধিকরণকারক।
অধিকরণকারককে আবার তিনভাগে ভাগ করা হয়।
(i) আধারাধিকরণ
(ii) কালাধিকরণ
(iii) বিষয়াধিকরণ
আধারাধিকরণ :- যে স্থানে ক্রিয়া নিষ্পন্ন হয়, তাকে বলা হয়
আধারাধিকরণ। যেমন- বনে বাঘ থাকে। এখানে “বনে” পদটি “আধারাধিকরণ” হয়েছে।
কালাধিকরণ :- যে কালে ক্রিয়া নিম্পন্ন হয়, তাকে বলা হয় কালাধিকরণ।
যেমন-বর্ষাকালে বৃষ্টি হয়। এখানে “বর্ষাকালে” পদটি “কালাধিকরণ” হয়েছে।
বিষয়াধিকরণ :- যে বিষয়ে ক্রিয়া নিষ্পন্ন হয়, তাকে বলা হয়
বিষয়াধিকরণ। যেমন—সুমন “অঙ্কে” কাচা। এখানে “অঙ্কে” পদটি “বিষয়াধিকরণ” হয়েছে।
অকারক
ক্রিয়ার সঙ্গে নামপদের (বিশেষ্য, সর্বনাম ইত্যাদি)
সম্পর্ক হল কারক। আর ক্রিয়ার সঙ্গে নামপদের সম্পর্ক না থাকাই হল অকারক।
বাংলা ব্যাকরণ : কারক ও বিভক্তি
Visit – www.smartlearningservice.com
সম্বন্ধ পদ
একটি বিশেষ্য পদের সঙ্গে
অপর একটি বিশেষ্য পদের সম্বন্ধ থাকলে বাক্যটির কর্তা বিশেষ্য পদের সঙ্গে ‘র’, ‘এর’, ‘দের’ ইত্যাদি যোগ হয়। এদেরই বলা হয় সম্বন্ধ পদ।
নিচের বাক্যগুলি দেখ -
(i) বিমলের কলমটি হারিয়েছে।
(ii) মামনের কলমখানা ভালো।
(iii) পাখিটির ডানা ভেঙেছে।
ওপরের-
বাক্যগুলিতে বিমলের সঙ্গে কলমটির, মামনের সঙ্গে কলমের, পাখির সঙ্গে ডানার একটা
সম্পর্ক আছে। “হারিয়েছে”, “ভেঙেছে” ক্রিয়ার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। সেইজন্য এইগুলি কারক
নয়, অকারক।
সম্বোধন পদ
নিচের বাক্যগুলি দেখ -
(i) ওরে গিরি! এখানে একবার
আসিস।
(ii) ওগো! কে এসেছে দেখে যাও।
(iii) ওহে! মধু কোথায় চললে।
ওপরের ‘ওরে’, ‘ওগো’, ‘ওহে’ প্রভৃতি পদগুলি কোনো ক্রিয়ার সম্বন্ধ বোঝায় না, তাই এগুলি কারক নয়! 'সাম্বোধন’ কোনো কারক নয়।
বিভক্তি
যেসব চিহ্নের দ্বারা
কারকগুলিকে বোঝানো হয়, তাদের বিভক্তি বলে।
কারকগুলি ছাড়াও সম্বন্ধ পদে বিভক্তি ব্যবহৃত হয়।
বিভক্তি আবার দুই রকমের –
(১) শব্দ বিভক্তি ও
(২) ক্রিয়া বিভক্তি।
|
শব্দ বিভক্তি
শব্দের কারক ও বচন
বোঝাবার জন্য যে চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে শব্দ
বিভক্তি বলে।
শব্দ বিভক্তি আবার সাত
রকম—প্রথমা, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পণ্চমী, ষষ্ঠী, ও সপ্তমী।
ক্রিয়া বিভক্তি
ধাতুর সঙ্গে যে
চিহ্রগুলি যোগ হয়ে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়, তাকে ক্রিয়া বিভক্তিবলা হয়।
সাধারণত কর্তার প্রথমা, কর্মে দ্বিতীয়া, করণে তৃতীয়া, সম্প্রদানে চতুর্থী, অপাদানে পণ্চমী, সম্বন্ধ পদে ষষ্ঠী, অধিকরণে সপ্তমী ও সম্বোধন পদে
প্রথমা বিভক্তি হয়।
শব্দ বিভক্তির একবচন ও
বহুবচন রূপ
কারক |
একবচন |
|
কর্তৃকারক |
(০) শূন্য বিভক্তি |
রা, এরা, গণ, গুলি, গুলা, গুলো, |
কর্মকারক |
কে, রে |
দিগকে, দিগরে |
করণকারক |
দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক |
দিগের, দ্বারা, দিগ, দিয়া, দের, কর্তৃক |
নিমিত্তকারক |
কে, রে, জন্য, নিমিত্ত |
দের, জন্য, দিগের, নিমিত্ত, দিগকে, দিগের |
অপাদানকারক |
হতে, থেকে, চেয়ে, অপেক্ষা |
দিগ, হতে, দের, থেকে |
অধিকরণকারক |
এ, য়, তে, এতে |
দিগেতে |
সম্বন্ধ পদ (কারক নয়) |
র, এর |
দের, গণের, দিগের |
বাংলা ব্যাকরণ : কারক ও বিভক্তি
Visit – www.smartlearningservice.com
***********
0 Comments
HELLO VIEWERS, PLEASE SEND YOUR COMMENTS AND SUGGESTION ON THE POST AND SHARE THE POST TO YOUR FRIEND CIRCLE.